নিউইয়র্ক ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মালয়েশিয়ায় সহজে কর্মী পাঠাতে চায় বাংলাদেশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৯০ বার পঠিত

চার বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেট ও সিস্টেম জটিলতায় এর সুফল নিতে পারছে না বাংলাদেশ। আর তাই বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে মালয়েশিয়াকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিদ্যমান চুক্তি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার তাগিদও দেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের সফরে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশে এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। রোববার সকাল ১০টায় তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, সহজ ও দ্রুততর করার বিষয়ে আলোচনা হবে।

সিন্ডিকেট জটিলতায় চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু বিদ্যমান সিস্টেমে এসব এজেন্সির মধ্যে সমানভাবে ভিসা বণ্টন হয় না। মূলত ২৫টি এজেন্সির পূরোনো সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে এই বাজার। যার ফলে কর্মীর যাওয়ার গতি শ্লথ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হয়েছে ৬৬ হাজার ১৭৩ জন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ায় এখন নতুন সরকার এসেছে। কোভিড-১৯-পরবর্তীকালে অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশটির শিল্প-কারখানাগুলোতে এখন কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে হওয়া চুক্তি এবং সিন্ডিকেট জটিলতা নিয়ে দেশটির নতুন সরকার অবগত। এ কারণে ক্ষমতায় আসার পরেই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করেছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ঢাকায় এসেছেন। এর মানে কুয়ালালামপুরও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি সহজ করতে আগ্রহী।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়ে গেছে, সেটি বদলানোর সুযোগ নেই। তবে নতুন করে কীভাবে এই প্রক্রিয়া সহজ করা যায়, সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে। নির্দিষ্ট কয়েকটি নয়, বরং সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রমবাজার। তাদেরও কর্মী চাহিদা রয়েছে। আমাদেরও পাঠানোর মতো প্রচুর কর্মী রয়েছে। তাই কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কীভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের যে দেড় হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, তারা সবাই যাতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ‍সুযোগ পায়।’

দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এমওইউ অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।

সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মাত্র ২৫টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী (সাব-এজেন্ট) হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অবধি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল দেশটি।

এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হন সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। ২৫টি এজেন্সির বাইরে সিন্ডিকেটবিরোধীদের ২৫ থেকে ৭৫টি, পরে ১০০টি এজেন্সি যুক্ত হয়। কর্মীপ্রতি প্রায় ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানে বাংলাদেশিদের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। সূত্র :দৈনিক বাংলা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মালয়েশিয়ায় সহজে কর্মী পাঠাতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

চার বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেট ও সিস্টেম জটিলতায় এর সুফল নিতে পারছে না বাংলাদেশ। আর তাই বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে মালয়েশিয়াকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিদ্যমান চুক্তি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার তাগিদও দেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের সফরে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশে এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। রোববার সকাল ১০টায় তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, সহজ ও দ্রুততর করার বিষয়ে আলোচনা হবে।

সিন্ডিকেট জটিলতায় চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু বিদ্যমান সিস্টেমে এসব এজেন্সির মধ্যে সমানভাবে ভিসা বণ্টন হয় না। মূলত ২৫টি এজেন্সির পূরোনো সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে এই বাজার। যার ফলে কর্মীর যাওয়ার গতি শ্লথ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হয়েছে ৬৬ হাজার ১৭৩ জন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ায় এখন নতুন সরকার এসেছে। কোভিড-১৯-পরবর্তীকালে অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশটির শিল্প-কারখানাগুলোতে এখন কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে হওয়া চুক্তি এবং সিন্ডিকেট জটিলতা নিয়ে দেশটির নতুন সরকার অবগত। এ কারণে ক্ষমতায় আসার পরেই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করেছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ঢাকায় এসেছেন। এর মানে কুয়ালালামপুরও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি সহজ করতে আগ্রহী।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়ে গেছে, সেটি বদলানোর সুযোগ নেই। তবে নতুন করে কীভাবে এই প্রক্রিয়া সহজ করা যায়, সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে। নির্দিষ্ট কয়েকটি নয়, বরং সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রমবাজার। তাদেরও কর্মী চাহিদা রয়েছে। আমাদেরও পাঠানোর মতো প্রচুর কর্মী রয়েছে। তাই কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কীভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের যে দেড় হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, তারা সবাই যাতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ‍সুযোগ পায়।’

দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এমওইউ অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।

সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মাত্র ২৫টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী (সাব-এজেন্ট) হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অবধি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল দেশটি।

এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হন সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। ২৫টি এজেন্সির বাইরে সিন্ডিকেটবিরোধীদের ২৫ থেকে ৭৫টি, পরে ১০০টি এজেন্সি যুক্ত হয়। কর্মীপ্রতি প্রায় ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানে বাংলাদেশিদের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। সূত্র :দৈনিক বাংলা