নিউইয়র্ক ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা জালিয়াতি যেভাবে হয়, সতর্ক থাকতে করণীয়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৬৬ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের আশায় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এমনকি দালালদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও কিছু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। গত শুক্রবার প্রতারণার মাধ্যমে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

জালিয়াতির এই বিষয়টি সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নজরে আসে গত ১৮ই জানুয়ারী। এরপর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সিকিউরিটি এটাশে মাইকেল লি বাদী হয়ে গুলশান থানায় ওই দুই পাসপোর্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনের জন্য দুটি পাসপোর্ট জমা পড়ে।

পাসপোর্ট দুটির তথ্য তদন্ত করতে গিয়ে দূতাবাস জানতে পারে, আবেদনকারীরা পাসপোর্টটি গুরুত্বপূর্ণ দেখাতে মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও ক্যাম্বোডিয়া ভ্রমণের জাল এন্ট্রি এবং এক্সিট সিল বসিয়েছে। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে এবং ছয় জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয় বলেও দাবি করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুইজন ছিলেন আবেদনকারী এবং বাকি চারজন দুটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নাহলে কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।

প্রতারণা হয়েছে যেভাবে

পুলিশ বলছে আমেরিকার ভিসা পেতে, প্রত্যেক গ্রাহকের সাথে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতো এই দুটি এজেন্সি। এভাবে প্রতারণা করে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আড়াই বছর ধরে তারা এই জালিয়াতির ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আমেরিকার ভিসা বা নাগরিকত্ব পেতে আরও বিভিন্ন প্রতারণার খবরও পুলিশ জানতে পেরেছে।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, “তারা হয়তো ভেবেছে অন্য দেশের ভিসা থাকলেই ইউএস ভিসা পেয়ে যাবেন, কোন তদন্ত হবে না। কিন্তু অন্য দেশের ভিসা থাকলেই আমেরিকার ভিসা হবে, এমন কোন গ্যারেন্টি নাই। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে দালাল বা এজেন্সিরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।” তবে যারা ট্রাভেল এজেন্সির কাছে ভিসা পেতে টাকা দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে আগ্রহীদের সাথে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতো। পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা এবং জাল সিল পাসপোর্টে সংযুক্ত করতো। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য মার্কিন দূতাবাসে সেই জাল সিল/ভিসা সংযুক্ত পাসপোর্ট জমা দিতো। এরমধ্যে গ্রেফতার ছয় জনের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিবি। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানা গিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নাহলে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের জানিয়ে বা না জানিয়ে এই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো জাল ভিসা সরবরাহ করতো। পরে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা সব টাকা পরিশোধের পরও জাল ভিসার কারণে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দেশে যেতে পারতেন না।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সতর্কতা, করণীয় কী

ভিসা জালিয়াত চক্র গ্রেফতার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ২০শে জানুয়ারি এ বিষয়ে সতর্কতামূলক বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করার জন্য কোনও এজেন্সি বা দালালের সহায়তার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা আবেদনকারীরা নিজেরাই অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ও নির্দেশিকা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা আবেদনকারীরা ভিসা আবেদনপত্রে যে তথ্য দেয়, সাক্ষাৎকারে তারা যে নথি দেয়, তার দায়ভার আবেদনকারীর হওয়ায় নিজের আবেদন নিজে দেয়ার ব্যাপারেই উৎসাহ দেয় দূতাবাস। এক্ষেত্রে মূলত চারটি বিষয়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছে, সেগুলো হল: মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটের সব তথ্য পর্যালোচনা করা, প্রয়োজনীয় ও সঠিক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থাকা, ভিসা প্রক্রিয়া এবং সাক্ষাৎকারের সময় নির্ভুল উত্তর দেওয়া। ভিসা আবেদনে মিথ্যা তথ্য ও নথি উপস্থাপনের ফলে শুধু ভিসা প্রত্যাখ্যানই নয়, প্রার্থীর অযোগ্যতাও বিবেচিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে বলে বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়। সূত্র : বিবিসি নিউজ বাংলা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা জালিয়াতি যেভাবে হয়, সতর্ক থাকতে করণীয়

প্রকাশের সময় : ০৪:২৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের আশায় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এমনকি দালালদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও কিছু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। গত শুক্রবার প্রতারণার মাধ্যমে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

জালিয়াতির এই বিষয়টি সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নজরে আসে গত ১৮ই জানুয়ারী। এরপর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সিকিউরিটি এটাশে মাইকেল লি বাদী হয়ে গুলশান থানায় ওই দুই পাসপোর্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনের জন্য দুটি পাসপোর্ট জমা পড়ে।

পাসপোর্ট দুটির তথ্য তদন্ত করতে গিয়ে দূতাবাস জানতে পারে, আবেদনকারীরা পাসপোর্টটি গুরুত্বপূর্ণ দেখাতে মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও ক্যাম্বোডিয়া ভ্রমণের জাল এন্ট্রি এবং এক্সিট সিল বসিয়েছে। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে এবং ছয় জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয় বলেও দাবি করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুইজন ছিলেন আবেদনকারী এবং বাকি চারজন দুটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নাহলে কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।

প্রতারণা হয়েছে যেভাবে

পুলিশ বলছে আমেরিকার ভিসা পেতে, প্রত্যেক গ্রাহকের সাথে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতো এই দুটি এজেন্সি। এভাবে প্রতারণা করে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আড়াই বছর ধরে তারা এই জালিয়াতির ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আমেরিকার ভিসা বা নাগরিকত্ব পেতে আরও বিভিন্ন প্রতারণার খবরও পুলিশ জানতে পেরেছে।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, “তারা হয়তো ভেবেছে অন্য দেশের ভিসা থাকলেই ইউএস ভিসা পেয়ে যাবেন, কোন তদন্ত হবে না। কিন্তু অন্য দেশের ভিসা থাকলেই আমেরিকার ভিসা হবে, এমন কোন গ্যারেন্টি নাই। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে দালাল বা এজেন্সিরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।” তবে যারা ট্রাভেল এজেন্সির কাছে ভিসা পেতে টাকা দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে আগ্রহীদের সাথে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করতো। পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা এবং জাল সিল পাসপোর্টে সংযুক্ত করতো। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য মার্কিন দূতাবাসে সেই জাল সিল/ভিসা সংযুক্ত পাসপোর্ট জমা দিতো। এরমধ্যে গ্রেফতার ছয় জনের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিবি। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানা গিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নাহলে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের জানিয়ে বা না জানিয়ে এই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো জাল ভিসা সরবরাহ করতো। পরে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা সব টাকা পরিশোধের পরও জাল ভিসার কারণে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দেশে যেতে পারতেন না।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সতর্কতা, করণীয় কী

ভিসা জালিয়াত চক্র গ্রেফতার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ২০শে জানুয়ারি এ বিষয়ে সতর্কতামূলক বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করার জন্য কোনও এজেন্সি বা দালালের সহায়তার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা আবেদনকারীরা নিজেরাই অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ও নির্দেশিকা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা আবেদনকারীরা ভিসা আবেদনপত্রে যে তথ্য দেয়, সাক্ষাৎকারে তারা যে নথি দেয়, তার দায়ভার আবেদনকারীর হওয়ায় নিজের আবেদন নিজে দেয়ার ব্যাপারেই উৎসাহ দেয় দূতাবাস। এক্ষেত্রে মূলত চারটি বিষয়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছে, সেগুলো হল: মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটের সব তথ্য পর্যালোচনা করা, প্রয়োজনীয় ও সঠিক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থাকা, ভিসা প্রক্রিয়া এবং সাক্ষাৎকারের সময় নির্ভুল উত্তর দেওয়া। ভিসা আবেদনে মিথ্যা তথ্য ও নথি উপস্থাপনের ফলে শুধু ভিসা প্রত্যাখ্যানই নয়, প্রার্থীর অযোগ্যতাও বিবেচিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে বলে বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়। সূত্র : বিবিসি নিউজ বাংলা