অধ্যাপক সিতারা পারভীন
- প্রকাশের সময় : ১০:৩২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০১৫
- / ২০৭৭ বার পঠিত
মিজান শাজাহান: ২০০৫ সালের ২৩ জুন। এ দিনে নিউইয়র্কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারপারসন অধ্যাপক সিতারা পারভীন। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের স্নেহের কন্যা সিতারা পারভীন ছোটবেলা থেকেই অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সবসময় সাধারণ শাড়ি পরতেন, মনেপ্রাণে বাঙালী হতে পেরেছিলেন। তার ছাত্রছাত্রীদের বলতেন আমাকে ‘ম্যাডাম’ নয়, ‘আপা’ বলবে। ২০০৩ সালে আমি উলানিয়া করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। এক সময় স্বপ্ন দেখতাম, ব্যারিস্টার হবো। কিন্তু ২৩ জুন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তৎকালীন সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, এখনো থেমে যায়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের কান্না। কারণ পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ বহনের মতো কষ্টের কাজ জগতে আর কিছু নেই…।’
আমি সাংবাদিকতার ছাত্র। এর প্রধান প্রেরণা সিতারা আপা। কারণ, ২০০৪ সালে ঢাকা নটর ডেম কলেজে ভর্তির আগে অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে হিসেবে অনেক বিষয়েই অন্ধকারে ছিলাম। মফস্বলের তথাকথিত সাংবাদিকরূপী মাস্তান, চাঁদাবাজদের দেখে এ মহৎ পেশা সম্বন্ধেও একসময় নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়। কিন্তু যখন জানলাম সাবেক প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি তার কন্যাকে সাংবাদিকতা পড়িয়েছেন, তখন ভুল ভেঙে গেল। পরবর্তী সময়ে পেশাদার ও সত্যিকার সাংবাদিকদের সংস্পর্শে এসে উপলব্ধি করেছি সাংবাদিকতা জীবনঘনিষ্ঠ একটি শিল্প, সাংবাদিকেরা শিল্পী। তাই প্রতি বছর ২৩ জুন এলেই সিতারা আপাকে খুব মনে পড়ে। দুঃখ হয়, কেন তার নিয়মিত অথবা প্রাইভেট ছাত্র হতে পারলাম না। বছরের পর বছর ধরে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সিতারা আপার স্বামী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী স্যারের। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রিয় ভাবীর অভাব অনুভব করেন আজো। ১৭৫৭ সালে সে একই দিন, ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়। ২০০৭ সালের ২৩ জুন আমার দাদী জহুরা খাতুন পরপারে পাড়ি জমান। সিতারা আপা বলতেন, বিভাগের পুরুষ প্রধানকে ‘চেয়ারম্যান’ বলা হলে মহিলা প্রধানকে ‘চেয়ারওম্যান’ বলা উচিত। আমি মনে করি, এখন থেকে পুরুষ, মহিলা যেই হোন বিভাগীয় প্রধানকে বলা উচিত ‘চেয়ারপারসন’। সিতারা আপা, আপনি আপনার অবদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খীদের মনে বেঁচে থাকবেন।
লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, এটিএন বাংলা