সংকটেও ৫ বিলিয়নের রেকর্ড রপ্তানি
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
- / ২৩ বার পঠিত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটেও বাংলাদেশ এক মাসে রপ্তানি আয়ের রেকর্ড করেছে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি পরিমাণ রপ্তানি আর হয়নি কখনো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। আর এই পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে এক মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী নভেম্বরে ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। ইপিবির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানির রেকর্ড ছিল ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছর ডিসেম্বরে এ রেকর্ড হয়েছিল। এ বছরের নভেম্বরে এসে সেই রেকর্ড ভেঙে গেল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের দুই মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে নভেম্বরের ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ব্যবসায়ীদের আস্থা জোগাতে সহায়তা করবে। সংকটেও রপ্তানিতে রেকর্ড দেশের উদ্যোক্তাদের উৎপাদনে প্রণোদনা দেবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের কারণে যেখানে দেশের কারখানাগুলো উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে, সেখানে রেকর্ড পরিমাণ এ রপ্তানি আয় অর্জিত হওয়ার কারণগুলো প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করেছে ইপিবি।
প্রতিষ্ঠানটির পর্যালোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো : (১) ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন উপলক্ষে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে; (২) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপে সংকট হলেও যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি বেড়েছে; (৩) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সেপ্টেম্বরে যেখানে ১ শতাংশ ছিল, নভেম্বরে বেড়ে সেটি ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; এবং (৪) ইউরোপের বাইরে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বা ৩৭ কোটি ডলার কম। ওই মাসে ওভেন পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২০৭ কোটি ডলার এবং নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১৬০ কোটি ডলারের। নভেম্বরে ওভেন পোশাক রপ্তানি বেড়ে ২৩৯ কোটি ডলার এবং নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়ে ১৯৯ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। বড়দিনের কারণে উন্নত দেশগুলোতে পোশাক খাতের চাহিদা বেড়েছে। একই কারণে রপ্তানিপণ্যের শিপমেন্টও বেড়েছে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। আমাদের ধারণা, যুদ্ধের কারণে ক্রেতারা তাদের অর্ডার শিপমেন্ট করার বিষয়টিকে বিলম্বিত করেছিল। এখন বড়দিনের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে তারা তৈরি পোশাকের শিপমেন্ট বাড়িয়েছে। এর ফলে অক্টোবরের যেসব শিপমেন্ট বাকি ছিল সেগুলো নভেম্বরে ঢুকে যেতে পারে। আর এ কারণেই এ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয়ের তথ্য এসেছে। তবে যেভাবেই হোক, রপ্তানি আয়ের এই রেকর্ড দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।’
ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ : ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ডলারের পোশাক নিয়েছে তারা। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ইউরোপের কেনা পোশাকের ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এর মধ্যেও আমরা আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবৃদ্ধিটা ভালোভাবে ধরে রাখতে পেরেছি।’