‘৯০-এর আনন্দ এখনও মনে লেগে আছে

- প্রকাশের সময় : ০৫:০৫:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২
- / ৪৭ বার পঠিত
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯; দিনটি আমার জন্য বিশেষ ছিল। পছন্দের ক্লাব মনশেনগ্লাডবাখের হয়ে মাঠে নামার ইচ্ছাটা যে পূরণ হতে চলেছে। প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পাই কাইজারস্লটার্নকে। আমার বয়স তখন ১৮; অভিষেকের দিনই অনেক বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম। আমি প্রস্তুত ছিলাম নিজেকে প্রমাণ করতে, জার্মান ফুটবলে নিজের দক্ষতার জানান দিতে। শুরুর একাদশেই ছিলাম। সেই ছোটবেলায় যে স্বপ্নটা দেখেছি, সেটা মনের গভীরে উঁকি দিচ্ছিল। যদিও ম্যাচটি আমরা জিততে পারিনি। আর আমি নিজেও সেরাটা দিয়ে খেলতে পারিনি। তবু সেটাই আমার নতুন মিশনের শুরু। এর পর অনেকটা সময় গ্লাডবাখের সঙ্গে থাকা। সত্যিই আমি ওই সময়টা দারুণভাবে উপভোগ করেছি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাকে তারা এতটা সুযোগ করে দিয়েছে।
এর পর ১৯৮২ বিশ্বকাপের কথা বেশ মনে আছে। তখন বিশ্ব আসরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল জার্মানি। তার আগে লাতিনের দুই জনপ্রিয় দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় আমাদের। প্রথম ম্যাচে আমি জিকোর মুখোমুখি হই। পরের ম্যাচে দিয়েগো ম্যারাডোনার। আমি সবে জার্মান দলে। এখনও সেভাবে সবকিছু বুঝে ওঠাও হয়নি। ম্যাচটি বুয়েন্স আয়ার্সে ছিল। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, তবুও নিজের ভেতরে যে উত্তেজনা কাজ করছিল- আমার এখনও তা মনে পড়ে। দিয়েগো এরই মধ্যে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হয়ে গেলেন। বল নিয়ে তাঁর যে কারুকাজ, সেটা আর নতুন করে কী বলব! আসলে আমি নিজেও সেরাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাইতাম। সেবার সেই দুই ম্যাচ আমাকে সুযোগ করে দেয়। পুরো ৯০ মিনিট আমি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাই। আর পারফরম্যান্সটা আমাকে পরে জায়গা দেয় জাতীয় দলে খেলতে। আমি মনে করি, আমার ক্যারিয়ারের বাঁক বদলে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দুটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। নব্বই বিশ্বকাপে তো আমাকে বড় সুযোগই করে দেয় জার্মানি। সারাদেশ তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে। সবার আস্থা ছিল আমরা দারুণ কিছু করতে পারব। আসলে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচই বলে দেয়, সামনে আপনার জন্য কী অপেক্ষা করছে কিংবা এই টুর্নামেন্টে আপনি কতটুকু কী করতে পারবেন।
সেবার আমরা পরিস্কার ফেভারিট ছিলাম এবং বিশ্বাস ছিল, যাত্রাতেই আমরা দারুণ কিছু করতে পারব। সান সিরোতে সেদিন সেই বিশ্বাস অনুযায়ী ফলটা পাই। যুগোস্লাভিয়াও শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল। কিন্তু আমরা এমন ফুটবল খেলি, তারা দাঁড়াতেই পারেনি। সম্ভবত সে পর্যন্ত আমি আমার জীবনের সেরা ম্যাচটাই খেলি। শুরুতেই জার্মানিকে সাফল্য এনে দিই। এর পর দ্বিতীয়ার্ধে স্কোর ৩-১ হয়। যদিও যুগোস্লাভিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক চেষ্টাই করেছে। একটা গোল দেওয়ার পর তারা আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত পারেনি। আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো ফুটবলই খেলে যাই। যে বিজয় আমাদের বিশ্বকাপ ট্রফিটাও জিততে সাহায্য করেছিল।
সবাই নতুন উদ্যমে বাকি পথটা লড়াই করে যাই। ফাইনালের টিকিটও আমরা কেটে ফেলি। আমার ওপর নেতৃত্বের ভার। এত বড় ফাইনাল কীভাবে কী করব- মাথায় কিছু আসছিল না। যাক, সেটাও স্বপ্নের মধ্য দিয়ে কেটে যায়। আর দিনটাও বোধ হয় আমার জন্যই সেজেছিল।
আমরা যে আর্জেন্টিনার কাছে ‘৮৬ বিশ্বকাপ হেরে যাই, এবার তাদের আবার ফাইনালে পেয়ে যাই। ম্যারাডোনা তখন দারুণ ফর্মে। তবে ‘৯০-এর বিশ্বকাপে আমাদের দলটা আগের তুলনায় একটু ভালো ছিল। আমরা প্রতি ম্যাচেই সলিড ফুটবল খেলেছিলাম। দিয়েগোর সঙ্গে ফাইনালের লড়াইটা উপভোগ করি। আসলে যখন আপনি নিজ দেশের ফুটবল দলের দলনেতা হিসেবে বিশ্বকাপের মতো ট্রফি হাতে পাবেন, তখন অনুভূতিটাই অন্য রকম হবে। যেটা আপনাকে অনেক ওপরে নিয়ে যাবে। আমি পেরেছি। তাই তো ‘৯০-এর ভালো লাগাটা অনেক দিন ধরেই থাকবে। লোকে দেখা হলে কিংবা টিভিতে বা বইয়ে আমার গল্পটা নিয়ে বলবে, লিখবে। রোমের সেই দিনটি আমার জীবনের সেরা।