‘কুনু-রহীম’র জয় আর ‘কামাল-সানী’র পরাজয়ের নেপথ্যে-
- প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০১৪
- / ১৩৪৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্কের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কমিউনিটি মুখরিত। বিশেষ করে নির্বাচনে ‘কুনু-রহীম’-এর জয় আর ‘কামাল-সানী’র পরাজয়ের কারণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। নির্বাচনে ‘কুনু-রহীম’ প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদের মধ্যে ১০টি এবং ‘কামাল-সানী’ প্যানেল সিনিয়র সহ সভাপতি পদসহ ৮টি পদে জয়লাভ করেন। কার্যকরী পরিষদের একটি পদে উভয় প্যানেলের দুই প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় ঐ পদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন বরাবর ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম’-এর অভিযোগ এনে একটি আপত্তি দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অভিযোগটি গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর রোববার বাংলাদেশ সোসাইটির দ্বি-বার্ষিক (২০১৫-২০১৬) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পর নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ‘কুনু-রহীম’ ও ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি পৃথক পৃথকভাবে পর্যালোচনা সভা করেছে। সভায় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, সর্বপরি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে উভয় প্যানেলের প্রার্থী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সোসাইটির নির্বাচনে ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের বিজয় আর ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের পরাজয়ের নেপথ্যে একাধিক কারণ জানা গেছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনকে অনেকেই অঘোষিত বিএনপি-আওয়ামী লীগের নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছেন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও সোসাইটির বর্তমান সভাপতি কামাল আহমেদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। অপরদিকে ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী (নির্বাচনে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত) আজমল হোসেন কুনু বিএনপি দলীয় রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি কন্দ্রীয় জাসাস-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দসহ একাধিক ভোটারের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের বিজয় আর ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের পরাজয়ের নেপথ্যে রয়েছে: ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের ঐক্যবদ্ধ অথচ নীরব প্রচার-প্রচারণা, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক আর ভক্তদের পরিপূর্ণ সমর্থন ও প্যানেলের পক্ষে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার প্রকাশ্যে সমর্থন, সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম আজিজের পূর্ণ সমর্থন, নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে ‘কামাল-সানী’র ‘ওভার কনফিডেন্স’, প্যানেলের সমর্থক বলে বিবেচিত অনেক ভোটারের মত পাল্টানো, ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র না হওয়ায় সেই এলাকার ভোটারদের ক্ষোভ, বিভক্ত সিলেটবাসীর পাশাপাশি বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর ঐক্য এবং সর্বোপরি বহুল আলোচিত ভোটার লিস্টে যোগ হওয়া সাড়ে ৩০০ ভোট। এই সাড়ে ৩০০ ভোটই ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের শীর্ষ বিজয় নিশ্চিত করে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র সফররত লন্ডন প্রবাসী, কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য বিএনপি’র প্রধান উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে আজমল হোসেন কুনুর পক্ষে প্রবাসী সিলেটবাসীদের সুদৃষ্টি কামনা করে একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে প্রচারণার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা।
অপরদিকে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের ‘ওভার কনফিডেন্স’, শেষ প্রচার-প্রচারণাকালে এই প্যানেলের নেতৃস্থানীয় একাধিক নেতার ‘কুনু-রহীম’ প্যানেলের সাথে সমঝোতার গুঞ্জণ, ব্রঙ্কসে ভোট কেন্দ্র না হওয়া, জ্যামাইকা আর ওজনপার্ক এলাকায় ভোটারদের সাথে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’, ভোটার তালিকা চুড়ান্তকরণ করার সময় সোসাইটি কার্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনায় কামাল আহমেদ কর্তৃক ‘হু ইজ আজীজ’, ‘গেট আউট ফ্রম হেয়ার’ মন্তব্যে সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম আজিজ ও তার সমর্থকদের ‘আন্ডার গ্রাউন্ডের চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ, সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাম্প্রতিক নিউইয়র্ক সফরকালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ মুহুর্তে বাতিল হওয়ার সাথে কামাল আহমেদের সমর্থকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর তার (কামাল আহমেদ) বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সোসাইটির নির্বাচনে ‘কামাল-সানী’ প্যানেলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবেও মনে করছেন অনেকে। সবমিলিয়ে নির্বাচনে ‘কামাল-সানী’র পরাজয়কে ‘আন প্রিডেক্টেবল’ আখ্যায়িত করেছেন এই প্যানেলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের ভাষায় ‘ভোট আমাদের, প্রচার-প্রচারণা আমাদের, জনমতও আমাদের। তারপরও পরাজয়’। কেউ কেউ বলেন ‘নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপি’ হয়েছে। তানাহলে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে অপর প্যানেল সমর্থনকারী কারো কারো ‘জয় নিশ্চিত’ হওয়ায় প্রচারণা নির্বাচনী ফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। (বাংলা পত্রিকা)