টাইম টিভি এবং একজন মোনালিসা
- প্রকাশের সময় : ১২:৩১:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০১৪
- / ২৩৯৭ বার পঠিত
মোনালিসা। মডেল কন্যা। অভিনেত্রী। বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি মুখ। এখন তিনি কোথায় আছেন, কি করছেন জানার কৌতূহল অনেক দিনের। কারণ, টিভির পর্দায় মোনালিসা অনুপস্থিত মেলা দিন। তার সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটি কখনও ভোলার নয়। অনেকটা আচমকা পেয়ে গেলাম নিউ ইয়র্কে। টাইম টেলিভিশন ভবনে দেখছি একটি মেয়ে এ রুম থেকে ও রুমে যাচ্ছে। একবার দেখলাম স্টুডিও থেকে বের হয়ে আসছে। আগে দু’ একবার দেখা হয়েছে। ঘনিষ্ঠতা নেই তেমন। টাইম টিভির কর্ণধার আবু তাহেরের সঙ্গে নিউজ রুমে ঢুকতেই মোনালিসা রাখঢাক না করে একগাদা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধেই করে বসলেন। মানবজমিন-এ তার সম্পর্কে নাকি পেটবানানো কি রিপোর্ট করা হয়েছে। আমার মনে নেই। মোনালিসা শেষ করতেই বললাম, সরি ভাইয়া। সব তো সম্পাদক দেখে দেন না। মোনালিসা তো আমার প্রিয় শিল্পী। তাকে নিয়ে কেন গালগল্প লেখা হবে। এমন যে কখনও হয়নি তা কিন্তু হলফ করে বলা যায় না। অনেক শিল্পী আহত হয়েছেন। অনুযোগ করেছেন। তাদের বক্তব্য শুনেছি। ব্যবস্থা নিয়েছি। মোনালিসার অভিযোগ সঠিক, সহকর্মী রুমী কবুল করেছেন। বলেছেন, এটা তার অনুপস্থিতিতে হয়েছিল। যে রিপোর্টার এমন কাজটি করেছিলেন তিনি এখন আমাদের সঙ্গে নেই। একজন রিপোর্টারের পুঁজি হচ্ছে পেশার প্রতি দরদ ও সততা। সে রিপোর্টার তা না মানায় চাকরি হারিয়েছেন। একজন শিল্পীকে অবমূল্যায়ন করার কোন অধিকার কারও নেই। কলম থাকলেই আপনি যা ইচ্ছে লিখে দিতে পারেন না। যাই হোক, মোনালিসা থামলেন। কবে এলেন। একদিন হলো। জানেন তো বোধ হয় টাইম টিভির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আমার ভাগ্য। একরাশ হতাশা। দেশ ছেড়ে আটলান্টিকের এপারে ঠাঁই হয়েছে আমার। কেন এমন হলো। প্রশ্ন করতেই মোনালিসার জবাব, ভাগ্যে ছিল তাই। তা না হলে হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিলাম কেন? এটা তো জরুরি ছিল না। আত্মীয়-স্বজনের পছন্দের সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ জড়ালাম কেন? আবেগ কাজ করেছে মনে হয়। তাও না। বোনের বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়, তারপর সিদ্ধান্ত। ভাবা উচিত ছিল। কি করবো? নিয়তি হয়তো আমাকে সেখানে টেনে নিয়েছিল। জীবনে কতো ছেলে প্রেম নিবেদন করলো। সবিনয়ে ফিরিয়ে দিলাম। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত বিয়ে করবো না এটাই ছিল সিদ্ধান্ত। ১২-১২-১২ ম্যাজিক ডে-তে বিয়ের সিদ্ধান্ত। এটা ছিল অন্য এক ধরনের উন্মাদনা। আমেরিকা প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। ঢাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে তেমন ধুমধাম না থাকলেও জৌলুস ছিল। অনেক তারকা সেখানে ভিড় করেছিলেন। অল্প দিনের মাথায় মোনালিসা বুঝতে পারলেন কোথায় যেন গোলমাল হয়ে গেছে। মাত্র দু’ সপ্তাহের মধ্যে অন্য এক ফাইয়াজকে আবিষ্কার করলেন। তখন তো সর্বনাশ হয়ে গেছে। জীবনের মূল্যবান সবকিছু তো বিলিয়ে দিয়েছেন। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের ইতিও টেনে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। আমেরিকা প্রবাসী হওয়ার স্বপ্নে তিনি বিভোর। কি দেখলেন ফাইয়াজকে? মোনালিসার সোজাসাপ্টা জবাব, বিয়ের আগে যা বলেছিল সবই মিথ্যে। সাজানো এক গল্প। নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম। ফাইয়াজের সঙ্গে আর নয়। তাই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলাম। বলতে পারেন জীবনের দুটো কঠিন সিদ্ধান্ত। এখন কেমন লাগে? খারাপ লাগে। নিজেকে অপরাধী ভাবি। প্রশ্ন করি, এমন হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলাম কেন? তবে এখন আর পেছনে তাকাই না। লাভ কি বলুন। সবকিছু ভুলে থাকতে চাই। জীবনকে অন্যভাবে গড়তে চাই। ভবিষ্যতের কথা বলছেন? ফাইট করে যাচ্ছি। ঢাকাকে মিস করি। পরিবারকে মিস করি। মিডিয়া ছিল আমার প্রাণ। এখানে একটা মিডিয়ায় আছি বটে। তবে বুঝতেই পারেন মোনালিসা ঢাকার মিডিয়া জগত কিভাবে দখল করে রেখেছিল। যোগ্যতা দিয়ে, কাজ দিয়ে। অগণিত দর্শক ছিলেন আমার শক্তি, সাহস। তাদের ভালবাসা, তাদের ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না। এখন লাইফ স্টাইল বদলে গেছে। ব্যস্ততা আছে। তবে ঢাকার মতো নয়। হরেক রকম কাজের মধ্যে ডুবে ছিলাম ঢাকায়। এখানে অন্য ধরনের কাজ। পর্দার সামনে ছিলাম। এখন অনেকটা নেপথ্যে। খারাপ লাগে না? অবশ্যই লাগে। কি করবো? ঢাকার লাইফে আমি ছিলাম রানীর মতো। এখন তো একাকীত্ব কাবু করছে আমাকে। মা কিংবা দুই বোন কাছে থাকলে হয়তো এমনটা হতো না। এতো কিছুর মধ্যেও মোনালিসা বসে নেই। পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিবিএ’র ছাত্রী। নিউ ইয়র্কে বসে ঢাকার মিডিয়াকে কেমন দেখছেন? ভাল। এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অস্থিরতা আছে। নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা আসছে। তারা চাইলে বদলে দিতে পারে ঢাকার মিডিয়া জগৎ। বলে রাখি, হঠাৎ সাফল্য পাওয়ার আশায় যারা আসছে তারা টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ১৭ বছরে অনেক দেখেছি। অনেক শিখেছি। শেখার আসলে শেষ নেই। ঢাকায় ফিরবেন সহসা? আশা রাখি। আপনি তো জানেন, আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সব শেষ হয়ে গেলে অন্য এক জীবন হয়তো বেছে নেবো। কি সেটা? থাক, এটা এখন নাইবা বললাম।