নির্বাচনে সভা-সমাবেশ, মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া জরুরি : মিশেল ব্যাচেলেট

- প্রকাশের সময় : ১২:৫০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২
- / ৭৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একটি উত্তেজনাকর অবস্থা ও মেরুকরণের দিকে যাচ্ছে। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকালে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকদের সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া জরুরি। তাদের অধিকার থেকে যদি বঞ্চিত করা হয়, তাহলে সামাজিক অস্থিরতার জন্ম হতে পারে। নারী, সংখ্যালঘু, তরুণদের দাবি বা চাওয়া শুনতে হবে। ঐ সময়টাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে, সেখানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
চার দিনের সফর শেষে ফিরে যাওয়ার আগে গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মিশেল ব্যাচেলেট এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন অধিকার কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। বিধিনিষেধ ও ভয় ভীতির মধ্যে তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
ব্যাচেলেট বলেন, নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম- এমন সব অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধে। আমি সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, স্বাধীন, স্বচ্ছ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের কথা বলেছি। সেইসঙ্গে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্যাচেলেট বলেন, এই আইনটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য সরকারের সঙ্গে আগের আলোচনায় পরামর্শ দিয়েছি। ওটিটি প্ল্যাটফরম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রস্তাবিত আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছি।
চার দিনের সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাচেলেট
ব্যাচেলেট বলেন, আমি বিভিন্ন পর্যায়ের যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, সেটা সরকারি বা বেসরকারি সবার কাছেই মানবাধিকার ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ তুলে ধরেছি। আমি বলেছি, যতগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে সেটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আমাদের জানাতে হবে এবং জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমি মনে করি, জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরাটা জরুরি। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করলেই লঙ্ঘনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।
ব্যাচেলেট আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আমি এই আহ্বান জানিয়েছি যে, অভিযোগ অস্বীকার না করে আমলে নিন। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মেকানিজমের মাধ্যমে তদন্ত করুন। তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদ, তবে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিন। বিশ্বের সব দেশকেই এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে একই পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
ঢাকা সফর নিয়ে তিনি বলেন, কাকতালীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। ৭৫-এর এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এই দিনটি বাংলাদেশকে সবচেয়ে দুঃখজনক অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে সব স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে বসে, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় সুনাম অর্জন করছে। তাই বাংলাদেশের সরকারের এমন একটা ব্যবস্থা করা উচিত যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কাজ করতে পারে। এখানে তাদের বিরুদ্ধে কেন এমন অভিযোগ আসবে? অর্থনৈতিক, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক এসব নিয়ে সামনের দিনগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ক চ্যালেঞ্জ থাকলেও সবাই একযোগে কাজ করলে তা মোকাবিলা করা সম্ভব।
গত রবিবার চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন মিশেল ব্যাচেলেট। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি এই সফরের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ যে কার্যক্রম রয়েছে সেটি আরও জোরদার হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, আমি কক্সবাজার সফর করেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে যে, তারা ফেরত যেতে চায়, যদি সেখানকার পরিস্থিতি ভালো থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানকার পরিস্থিতি এখনো সহায়ক হয়নি। যদি এখন ফেরত পাঠানো হয় তবে তারা আবার ফেরত আসবে।
‘অন্তভুর্ক্তিমূলক সমাজ দরকার’
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন মিশেল ব্যাচেলেট। গতকাল সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য প্রশংসা করে তিনি বলেন, বৈষম্য কমানোর জন্য বাংলাদেশকে অনেক কিছু করতে হবে। এজন্য আইনের শাসন এবং দায়বদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সুশীল সমাজের জন্য জায়গা থাকতে হবে।
গুম-হত্যার পরিস্থিতি জানাল বিএনপি
ঢাকায় সফররত মানবাধিকার বিষয়ক জা?তিসংঘ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলেসহ বিএনপির প্রতিনিধিদল গতকাল দুপুরে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রধান রোরি মআংগোভেনের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠক করে। বৈঠকে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি তারা তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ জানান, বৈঠকে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির নিজস্ব আগ্রহ বা উদ্যোগে এই বৈঠক হয়েছে, নাকি জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শামা ওবায়েদ বলেন, জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের আগ্রহ ছিল বলেই এই বৈঠক হয়েছে।
শামা ওবায়েদ ছাড়াও বিএনপি প্রতিনিধিদলে ছিলেন মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, তাবিথ আউয়াল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর ছেলে ও বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবরার ইলিয়াস। সূএ : দৈনিক ইত্তেফাক
হককথা/এমউএ