‘ছুরির ফলায়’ দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের নতুন সরকার

- প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
- / ৯৩ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পার্লামেন্ট থেকে ছিটকে পরে রাজপথে নেমেছেন পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরইমধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতা শাহবাজ শরিফ। তবে তিনিও একক আধিপত্যে ক্ষমতায় আসীন হতে পারেননি। এজন্যে সহযোগিতা নিয়েছেন ভিন্ন মতের দলগুলোর। ফলে শাহবাজকেও ইমরানের মতো অনাস্থার সামনে পড়তে হবে না এমনটা বলতে পারছেন না কেউই। শুধু তাই নয় নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে রয়েছে আরো বহু চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ছুরির ফলায়’ দাঁড়িয়েই সরকার চালাতে হবে এই সরকারকে। এমনকি তারা কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের অনলাইনে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এমন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। সাম্প্রতিক দেশকাল অনলাইনের পাঠকদের জন্যে সেই বিশ্লেষণটি তুলে ধরা হল-
অনাস্থা ভোটে পিটিআইকে ক্ষমতাচ্যুত করে অনায়াসেই প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন শাহবাজ শরিফ। কয়েকদিনের মধ্যে সরকারও গঠন করে ফেলবেন তিনি। তবে সেই সরকারের চলার পথে পুরোটাই কাটা বিছানো রয়েছে। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পশ্চিমাদের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক ও জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি রয়েছে।
তাছাড়া যেসব দলের সঙ্গে শাহবাজের এই জোট। তাদের অভ্যন্তরেই রয়েছে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে মতাদর্শগত বিরোধ। এই বিরোধ কতটা মীমাংসা হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে প্রায় সবার মধ্যেই। আপাতত ইমরান খানকে সরাতে পারলেও সরকার চালাতে তাদের ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা কতটা এগোল তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই খোদ নেতাদের মধ্যেও। ফলে বড় ঝুঁকি রয়েছে জোটের ভেতরেই।
ইমরান সরকারের পতনের পর জাতীয় পরিষদ থেকে বেরিয়ে গেছে পিটিআই, এমনকি আগাম নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দেয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে তারা। ফলে নিয়মিত রাজনৈতিক অস্থিরতা যে অনুমেয় সে কথাও মাথায় রাখতে হবে এই সরকারকে।
দরিদ্র অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই সরকারকে ভেঙে পড়া অর্থনীতি ঠিক করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে খুব স্থিরতার সঙ্গে। ততদিন জনগণের হাল যে আরো খারাপ হবে সেটাও একটা চাপ সৃষ্টি করবে শাহবাজ শরিফ সরকারের ওপর।
এদিকে রয়েছে বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের চড়া দামের বোঝা। দাম কমিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনাও এগিয়ে নিতে হবে। এমনকি সেজন্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতেও জোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।
প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে এসব প্রয়োজন অতটা জনপ্রিয় না হলেও গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং। ফলে আগাম নির্বাচনের আগে এসব সিদ্ধান্তে কতটা অটল থাকবে ও উৎরে যেতে পারবে সরকার তা এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন!
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পরেই পার্লামেন্টের বক্তৃতায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন ১০ শতাংশ বাড়ানো এবং গম-আটায় ভর্তুকি দেওয়ার মতো জনপন্থি ঘোষণা দেয়াকে শাহবাজ শরিফের ওপর মারাত্মক চাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
ফলে একদিকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা আরেকদিকে জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা। দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সংকট উত্তরণ কঠিনই হবে। ফলে এই মুহূর্তে নির্বাচনী আইন সংস্কার করা ও শিগগির নতুন নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়াটাই হবে সবচেয়ে কৌশলী সিদ্ধান্ত।
নাহয় এই সরকারকেও হয়তো নতুন কোন পরিণতিই বরণ করতে হবে। আর পাকিস্তানের মতো আনপ্রেডিক্টেবল রাষ্ট্রে সেই পরিণতি ঠিক কি হবে তা আগে থেকে বলা মুশকিল। যেমনটা ভাবা যায়নি ইমরান খানের সরকারের বেলায়ও।
হককথা/এমউএ