চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফের বিষয়ে রিটের পরামর্শ

- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৭:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ৪০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দাখিল করা চিঠি জমা রেখে এ সংক্রান্ত একটি রিট দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন। আদালতে দুদক কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী এ চিঠি প্রেরণ করেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর বরাবর চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল।
চিঠি স্বাক্ষর করেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আব্দুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী।
মঙ্গলবার চিঠির বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তখন আদালত বলেন, ‘আপনি তো এসেছেন ব্যক্তিস্বার্থে, জনস্বার্থে নয়। জনস্বার্থে হলে চিঠি বিবেচনায় নেয়া হয়।’
জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘জনস্বার্থে এসেছি। কারণ এ ঘটনায় দুদকের ইমেজ রক্ষার বিষয়টি রয়েছে। এটা সংরক্ষণ করা সকলের দায়িত্ব। আমি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই।’
পরে আদালত চিঠিটি জমা রাখেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিট দায়েরের পরামর্শ দেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮’ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে সাড়ে ৩ বছর তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। সেখানে থাকাকালে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি, যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকরাও ছিলেন।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক, সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।
এই ১০ আইনজীবী আরো বলেন, ‘এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ। পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএল এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাবেক বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে ২০২১ সালের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ। আলোচিত সেই মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’
চিঠিতে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের দেয়া বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার পর ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এবং কয়েকটি সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করে তাকে অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাই হাইকোর্ট রুলসের ১১ক এর বিধি ১০ অনুযায়ী প্রেরিত চিঠিতে শরীফ উদ্দিনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে এবং শরীফ উদ্দীনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল
হককথা/এমউএ