নিউইয়র্ক ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে সবসময় কাজ করে যাব

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৫
  • / ৭৬৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলেও বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের জন্য সবসময় কাজ করে যাবার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন অটিজম বিষয়ক জাতীয় অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারপারসন, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কন্যা সায়মা হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করছি। ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকালে (স্থানীয় সময়) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন সায়মা হোসেন।
এর আগে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজমের চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশে গৃহীত নানান পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও কাতার স্থায়ী মিশন এবং অটিজম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘে আয়েজিত আলোচনা সভায় ‘বিশ্ব অটিজম সম্প্রদায়ের জন্য বিজ্ঞান, সহযোগিতা ও উত্তর’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে বক্তব্য দেন সায়মা হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তার বক্তব্য দেন। তিনি একে একে বিভিন্ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অটিজমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এযাবৎ কালের সকল উদ্যোগ এবং সাফল্য তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজম মোকাবেলায় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার, সীমিত সেবা, সেবাদানকারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অটিজমের বহুমাত্রিক কৌশল’ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা ও সেবা নিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, অটিজম বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং কারিগরি নির্দেশক কমিটির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অটিজম সচেতনতা, দ্রুত চিহ্নিতকরণ, সেবা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এজন্য ১৩টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় টেকসই কৌশল করে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী আইন করা হয়েছে। নিউরো-প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট আইন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে কারিগরী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনগত বিষয়ে সেবা দেয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাতটি খাতে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- মা-বাবাকে ক্ষমতাবান ও শিক্ষিত করা, নীতি ও আইনগত কাঠামো চিহ্নিত করা, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, বেসরকারিসংস্থা ও মা-বাবার সাথে সহযোগিতা সমন্বয় করা, দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলা ও অধিকতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য বাড়ানো, প্রচলিত জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণের সাথে অটিজমকে সম্পৃক্ত করা; দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও গবেষণা।
সায়মা হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে ছয় স্তরে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
অটিজমের ওপর এসব উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরেন সায়মা হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরোডিভালাপমেন্ট এন্ড অটিজম ইন চিল্ড্রেন সেন্টার’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি‘ বিভাগ এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও মা-বাবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অটিস্টিকদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীসহ তাদের সৃষ্টিশীল মনের বিকাশের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অটিজমের ক্ষেত্রে বিশ্বের করণীয়ের ওপর আলোকপাত করে সায়মা হোসেন বলেন, সহযোগিতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জীবনের পুরোটা সময় সেবা নিশ্চিত করা, দেশভিত্তিক বহু খাত ও স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, টেকসই ও সাশ্রয়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক সেবাসহ প্রতিটি খাতে অটিস্টিকদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন সম্ভব হবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলীয়া আহমেদ আল-যানীর সঞ্চালনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পতœী বান সুনটেক, মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা আমিনা মোহাম্মদ, অটিজম স্পিকস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজান রাইট, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখার্জীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বহুজাতিক কোম্পানীর নির্বাহী বক্তৃতা করেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিস্টিক জনগোষ্ঠীকে জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডার মূলভাগে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ফলে দেশে অটিজম সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিকেলের আলোচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সফররত শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সকালের অধিবেশনে ‘কর্মসংস্থান: অটিজম সুবিধা’ বিষয়ে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের কম্যুনিকেশন ও পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টিনা গ্যালাচের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বলেন, অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর বিশাল সামর্থ্য আছে। স্বাভাবিক চাকরির সুযোগ করে দিলে তারাও সমাজে সমান অবদান রাখতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও মানুষের সম্পৃক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা, চাকরিদাতা, বেসরকারী সংস্থাসহ সকলকেই তৈরী হতে হবে।
অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের দেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জ্যাক মারকেল। অধিবেশনে মাইক্রোসফট, এসএপিসহ বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, বিশ্ববিদ্যালয়, অটিজম সংস্থা অটিজম জনগোষ্ঠীর চাকরির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তারা জানান, বিশ্বের মোট অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ এখনও বেকার। এ চ্যালেঞ্জ উপলব্ধি করার জন্য তারা চাকুরীদাতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সকালের অধিবেশনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সায়মা হোসেন বলেন, অটিস্টিক জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের মূলধারার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত করার লক্ষ্যে তাদেরকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবা দিয়ে কর্মোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি বিশ্বের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
উভয় অধিবেশনেই বিশ্বের অনেক বক্তা অটিজম সচেতনতা সৃষ্টি এবং অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা অটিজম আন্দোলনকে মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। উভয় অধিবেশনেই বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন সহ-আয়োজক ছিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্দ শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।(দৈনিক ইত্তেফাক)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে সবসময় কাজ করে যাব

প্রকাশের সময় : ০৩:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৫

নিউইয়র্ক: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলেও বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের জন্য সবসময় কাজ করে যাবার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন অটিজম বিষয়ক জাতীয় অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারপারসন, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কন্যা সায়মা হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করছি। ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকালে (স্থানীয় সময়) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন সায়মা হোসেন।
এর আগে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজমের চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশে গৃহীত নানান পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও কাতার স্থায়ী মিশন এবং অটিজম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘে আয়েজিত আলোচনা সভায় ‘বিশ্ব অটিজম সম্প্রদায়ের জন্য বিজ্ঞান, সহযোগিতা ও উত্তর’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে বক্তব্য দেন সায়মা হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তার বক্তব্য দেন। তিনি একে একে বিভিন্ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অটিজমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এযাবৎ কালের সকল উদ্যোগ এবং সাফল্য তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজম মোকাবেলায় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার, সীমিত সেবা, সেবাদানকারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অটিজমের বহুমাত্রিক কৌশল’ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা ও সেবা নিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, অটিজম বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং কারিগরি নির্দেশক কমিটির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অটিজম সচেতনতা, দ্রুত চিহ্নিতকরণ, সেবা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এজন্য ১৩টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় টেকসই কৌশল করে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সায়মা হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী আইন করা হয়েছে। নিউরো-প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট আইন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে কারিগরী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনগত বিষয়ে সেবা দেয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাতটি খাতে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- মা-বাবাকে ক্ষমতাবান ও শিক্ষিত করা, নীতি ও আইনগত কাঠামো চিহ্নিত করা, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, বেসরকারিসংস্থা ও মা-বাবার সাথে সহযোগিতা সমন্বয় করা, দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলা ও অধিকতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য বাড়ানো, প্রচলিত জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণের সাথে অটিজমকে সম্পৃক্ত করা; দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও গবেষণা।
সায়মা হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে ছয় স্তরে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
অটিজমের ওপর এসব উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরেন সায়মা হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরোডিভালাপমেন্ট এন্ড অটিজম ইন চিল্ড্রেন সেন্টার’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি‘ বিভাগ এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও মা-বাবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অটিস্টিকদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীসহ তাদের সৃষ্টিশীল মনের বিকাশের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অটিজমের ক্ষেত্রে বিশ্বের করণীয়ের ওপর আলোকপাত করে সায়মা হোসেন বলেন, সহযোগিতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জীবনের পুরোটা সময় সেবা নিশ্চিত করা, দেশভিত্তিক বহু খাত ও স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, টেকসই ও সাশ্রয়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক সেবাসহ প্রতিটি খাতে অটিস্টিকদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন সম্ভব হবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলীয়া আহমেদ আল-যানীর সঞ্চালনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পতœী বান সুনটেক, মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা আমিনা মোহাম্মদ, অটিজম স্পিকস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজান রাইট, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখার্জীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বহুজাতিক কোম্পানীর নির্বাহী বক্তৃতা করেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিস্টিক জনগোষ্ঠীকে জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডার মূলভাগে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ফলে দেশে অটিজম সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিকেলের আলোচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সফররত শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সকালের অধিবেশনে ‘কর্মসংস্থান: অটিজম সুবিধা’ বিষয়ে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের কম্যুনিকেশন ও পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টিনা গ্যালাচের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বলেন, অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর বিশাল সামর্থ্য আছে। স্বাভাবিক চাকরির সুযোগ করে দিলে তারাও সমাজে সমান অবদান রাখতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও মানুষের সম্পৃক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা, চাকরিদাতা, বেসরকারী সংস্থাসহ সকলকেই তৈরী হতে হবে।
অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের দেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জ্যাক মারকেল। অধিবেশনে মাইক্রোসফট, এসএপিসহ বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, বিশ্ববিদ্যালয়, অটিজম সংস্থা অটিজম জনগোষ্ঠীর চাকরির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তারা জানান, বিশ্বের মোট অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ এখনও বেকার। এ চ্যালেঞ্জ উপলব্ধি করার জন্য তারা চাকুরীদাতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সকালের অধিবেশনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সায়মা হোসেন বলেন, অটিস্টিক জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের মূলধারার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত করার লক্ষ্যে তাদেরকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবা দিয়ে কর্মোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি বিশ্বের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
উভয় অধিবেশনেই বিশ্বের অনেক বক্তা অটিজম সচেতনতা সৃষ্টি এবং অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা অটিজম আন্দোলনকে মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। উভয় অধিবেশনেই বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন সহ-আয়োজক ছিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্দ শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।(দৈনিক ইত্তেফাক)