নিউইয়র্ক ০৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কলম্বো পোর্ট সিটি: ভবিষ্যতের এই ঝকঝকে নগরী কি নতুন দুবাই, নাকি শ্রীলংকার ভেতরে এক চীনা ছিটমহল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৬৮ বার পঠিত

শ্রীলংকার রাজধানীর সাগরতীরে কলম্বো পোর্ট সিটি নামে যে ঝকঝকে নতুন নগরী মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, কর্মকর্তাদের ভাষায়, সেটি হতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কলম্বোর সবুজ বাণিজ্যিক এলাকার উল্টোদিকে সাগরের বুকে বালি ফেলে যে বিশাল এলাকা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে গড়ে তোলা হবে এক হাই-টেক নগরী। এটি হবে শ্রীলংকার অফশোর আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র। এখানে থাকবে আবাসিক এলাকা, একটি মেরিনা – যাকে তুলনা করা হচ্ছে দুবাই, মোনাকো কিংবা হংকং এর সঙ্গে। “সাগর ভরাট করে উদ্ধার করা এই জমি শ্রীলংকাকে তার মানচিত্র বদলে দেয়া এবং এমন এক বিশ্বমানের নগরী গড়ার সুযোগ দেবে- যা কীনা দুবাই কিংবা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে,” বলছেন কলম্বো পোর্ট সিটি ইকোনমিক কমিশনের একজন সদস্য সালিয়া বিক্রমাসুরিয়া। কিন্তু এই নগরী আসলেই শ্রীলংকার অর্থনীতির কতটা পালাবদল ঘটাতে পারবে তা নিয়ে সমালোচকদের মনে অনেক প্রশ্ন। সাগর ভরাট করে ৬৬৫ একর (২.৬ বর্গকিলোমিটার) ভূমি উদ্ধারের জন্য শ্রীলংকা দায়িত্ব দিয়েছে চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে, যারা এখানে বিনিয়োগ করছে ১৪০ কোটি ডলার। তবে এর এর বিনিময়ে এই চীনা কোম্পানিকে ৯৯ বছরের জন্য দিয়ে দিতে হচ্ছে মোট ভূমির ৪৩ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে ড্রেজিং এর পর ভরাট করা জমিতে এখন পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ, ধীরে ধীরে নতুন নগরীর অবয়ব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। চীনা প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে বিশাল বিশাল সব ক্রেন দিয়ে সরানো হচ্ছে কংক্রিটের স্ল্যাব, মাটি খনন যন্ত্র দিয়ে টন টন বালি সরানো হচ্ছে ট্রাকে করে। ভরাট করা জমির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে যে নদী, সেটি এরই মধ্যে খনন করা হয়েছে। ফলে ছোট নৌকা এবং প্রমোদতরী এর ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। কর্মকর্তারা অনুমান করছেন, পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২৫ বছর। এটি হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরণের প্রথম কোন নগরী। শ্রীলংকা বলছে, উদ্ধার করা ভূমির যে অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং যে অংশ চীনাদের দেয়া হবে, সেগুলো বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যাংক এবং অন্যান্য কোম্পানিকে লিজ দেয়া হবে। সরকার তাদের রাজস্বের ওপর একটা করও বসাবে। আশা করা হচ্ছে, প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই নগরীতে বাস করবে। যারা সেখানে বিনিয়োগ করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, তাদের ট্যাক্স হলিডের সুযোগ দেয়া হবে। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব আর্থিক লেন-দেন হবে মার্কিন ডলারে, এমনকি বেতনও দেয়া হবে ডলারে। দু’হাজার চৌদ্দ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন কলম্বো সফরে যান, তখন এই পোর্ট সিটি প্রকল্পের কথা জানানো হয়। এর মাত্র এক বছর আগে চীনা প্রেসিডেন্ট তার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামের উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে সড়ক, রেল এবং নৌপথ অবকাঠামো গড়ে তুলে বাণিজ্য বাড়ানো। শ্রীলংকায় ২০০৯ সালে যখন তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে, তখন দেশটি পুনর্গঠন কাজের জন্য সাহায্য চেয়েছিল চীনের কাছে। কারণ গৃহযুদ্ধের সময় যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হয়েছিল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কলম্বো পোর্ট সিটি: ভবিষ্যতের এই ঝকঝকে নগরী কি নতুন দুবাই, নাকি শ্রীলংকার ভেতরে এক চীনা ছিটমহল

প্রকাশের সময় : ০৭:২০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

শ্রীলংকার রাজধানীর সাগরতীরে কলম্বো পোর্ট সিটি নামে যে ঝকঝকে নতুন নগরী মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, কর্মকর্তাদের ভাষায়, সেটি হতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কলম্বোর সবুজ বাণিজ্যিক এলাকার উল্টোদিকে সাগরের বুকে বালি ফেলে যে বিশাল এলাকা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে গড়ে তোলা হবে এক হাই-টেক নগরী। এটি হবে শ্রীলংকার অফশোর আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র। এখানে থাকবে আবাসিক এলাকা, একটি মেরিনা – যাকে তুলনা করা হচ্ছে দুবাই, মোনাকো কিংবা হংকং এর সঙ্গে। “সাগর ভরাট করে উদ্ধার করা এই জমি শ্রীলংকাকে তার মানচিত্র বদলে দেয়া এবং এমন এক বিশ্বমানের নগরী গড়ার সুযোগ দেবে- যা কীনা দুবাই কিংবা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে,” বলছেন কলম্বো পোর্ট সিটি ইকোনমিক কমিশনের একজন সদস্য সালিয়া বিক্রমাসুরিয়া। কিন্তু এই নগরী আসলেই শ্রীলংকার অর্থনীতির কতটা পালাবদল ঘটাতে পারবে তা নিয়ে সমালোচকদের মনে অনেক প্রশ্ন। সাগর ভরাট করে ৬৬৫ একর (২.৬ বর্গকিলোমিটার) ভূমি উদ্ধারের জন্য শ্রীলংকা দায়িত্ব দিয়েছে চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে, যারা এখানে বিনিয়োগ করছে ১৪০ কোটি ডলার। তবে এর এর বিনিময়ে এই চীনা কোম্পানিকে ৯৯ বছরের জন্য দিয়ে দিতে হচ্ছে মোট ভূমির ৪৩ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে ড্রেজিং এর পর ভরাট করা জমিতে এখন পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ, ধীরে ধীরে নতুন নগরীর অবয়ব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। চীনা প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে বিশাল বিশাল সব ক্রেন দিয়ে সরানো হচ্ছে কংক্রিটের স্ল্যাব, মাটি খনন যন্ত্র দিয়ে টন টন বালি সরানো হচ্ছে ট্রাকে করে। ভরাট করা জমির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে যে নদী, সেটি এরই মধ্যে খনন করা হয়েছে। ফলে ছোট নৌকা এবং প্রমোদতরী এর ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। কর্মকর্তারা অনুমান করছেন, পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২৫ বছর। এটি হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরণের প্রথম কোন নগরী। শ্রীলংকা বলছে, উদ্ধার করা ভূমির যে অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং যে অংশ চীনাদের দেয়া হবে, সেগুলো বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যাংক এবং অন্যান্য কোম্পানিকে লিজ দেয়া হবে। সরকার তাদের রাজস্বের ওপর একটা করও বসাবে। আশা করা হচ্ছে, প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই নগরীতে বাস করবে। যারা সেখানে বিনিয়োগ করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, তাদের ট্যাক্স হলিডের সুযোগ দেয়া হবে। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব আর্থিক লেন-দেন হবে মার্কিন ডলারে, এমনকি বেতনও দেয়া হবে ডলারে। দু’হাজার চৌদ্দ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন কলম্বো সফরে যান, তখন এই পোর্ট সিটি প্রকল্পের কথা জানানো হয়। এর মাত্র এক বছর আগে চীনা প্রেসিডেন্ট তার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামের উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে সড়ক, রেল এবং নৌপথ অবকাঠামো গড়ে তুলে বাণিজ্য বাড়ানো। শ্রীলংকায় ২০০৯ সালে যখন তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে, তখন দেশটি পুনর্গঠন কাজের জন্য সাহায্য চেয়েছিল চীনের কাছে। কারণ গৃহযুদ্ধের সময় যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হয়েছিল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো।