বিশ্বকাপ ক্রিকেট : ফাইনালে নিউজিল্যান্ড দ. আফ্রিকার বিদায়
- প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০১৫
- / ৭৬৫ বার পঠিত
ঢাকা: ম্যাচের ভাগ্য তখনও পেন্ডুলামের মতো দুলছে। শেষ ছয় বলে নিউজিল্যন্ডের প্রয়োজন ১২ রান। ডেল স্টেইনের হাতে বল তুলে দিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। স্টেইন-গানের গর্জন থামিয়ে শেষ ওভারের পঞ্চম বলটিকে সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন গ্রান্ট এলিয়ট। ইতিহাসের খাঁচা ভেঙে অকল্যান্ডের মুক্ত আকাশে উড়াল দিল কিউই পাখি। ঐতিহাসিক ছক্কায় ঐতিহাসিক জয়। ২৪ মার্চ মঙ্গলবার ইডেন পার্কের গ্যালারি থেকে উৎসবের ঢেউ ততক্ষণে আছড়ে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রতিটি প্রান্তে। আর সেই জয়ের নায়ক তখন পিচেই গা এলিয়ে দেয়া স্টেইনকে সান্তনা দিতে ব্যস্ত! অনেকেই ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলবেন। কিন্তু এলিয়টের মনে তখন কী খেলা করছিল, কখনোই তা জানা যাবে না। অসীম আনন্দের সঙ্গে সামান্য অপরাধবোধ? সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেয়া যায় না। দুর্ভাগ্যের অনুষঙ্গ হিসেবে ছিল চিরশত্রু বৃষ্টি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন দক্ষিণ আফ্রিকানই কাল হল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। এক ভূমিপুত্রের কাছে হেরে গেল প্রোটিয়ারা। হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডের হিরো গ্রান্ট এলিয়টের নাড়ি পোঁতা দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে!
সাত সংখ্যাটা সত্যিই শুভ। সাতবারের চেষ্টায় অবশেষে সেমির গেরো খুলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখল নিউজিল্যান্ড। হৃদস্পন্ধন থামিয়ে দেয়া স্নায়ুচাপের ম্যাচে এক বল বাকি থাকতে চার উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ে নতুন ইতিহাস লিখলেন ম্যাককালামরা। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের অনেক না-পাওয়ার বেদনায় হৃদ্য দুর্ভাগ্যের ইতিহাসটা আরও সমৃদ্ধ করল। চারবার সেমিফাইনালে খেলেও ফাইনালের ভুবনটা অদেখাই রয়ে গেল। দায়টা কার কাঁধে চাপাবেন ডি ভিলিয়ার্স? দুই ঘণ্টার বৃষ্টি-বিরতিতে ম্যাচ নেমে এসেছিল ৪৩ ওভারে। বৃষ্টির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার শত্রুতা আজকের নয়। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই বৃষ্টিই এক বলে ২২ রানের এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছিল তাদের। ক্রিকেটের বৃষ্টি-আইন যেন প্রোটিয়াদের জন্য মৃত্যুপরোয়ানা! এদিনও দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ব্যাহত হয়েছে বৃষ্টিতে। ফাফ ডু প্লেসিস (৮২) ও ডি ভিলিয়ার্সের (৬৫*) দুই ফিফটির পাশাপাশি শেষদিকে ডেভিড মিলারের (১৮ বলে ৪৯) তান্ডবে ৪৩ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২৮১ তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু বৃষ্টি-আইনে নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ২৯৮। এমন চাপের ম্যাচে বৃষ্টি-আইনের বোঝা কাঁধে নিয়ে রান তাড়া করতে হয়েছে কিউইদের। বৃষ্টিকে তাই ঢাল বানানোর সুযোগ নেই দক্ষিণ আফ্রিকার। সত্যটা হল, আরও একবার ‘চোক’ করেছে তারা। চাপের মুখে ভেঙে পড়ে প্রমাণ করেছে, সত্যিই তারা চোকার! না হলে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডিং কেন এত জঘন্য হবে? নিশ্চিত রানআউটের সুযোগ নষ্ট করে কোরি অ্যান্ডারসনকে কেন নতুন জীবন দেবেন ডি ভিলিয়ার্স? ক্যাচ মিসের মহড়া ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটু। গ্রান্ট এলিয়টের ক্যাচও পড়েছে। এবার আসা যাক বোলিং প্রসঙ্গে। স্টেইনের মতো বোলার ৮.৫ ওভারে কীভাবে ৭৬ রান দিতে পারেন? সব প্রশ্নের উত্তর একটাই- চাপ নিতে পারে না প্রোটিয়ারা।
আটে আট জয়ে মেলবোর্নের মেগা ফাইনালের টিকিট কেটে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। প্রতিপক্ষের নাম জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারত সামনে যেই পড়ুক- সোনালি ট্রফিটা এবার নিজের হাতেই দেখছেন কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সেমির যুদ্ধে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন একদম সামনে থেকেই। ৪৩ ওভারে করতে হতো ২৯৮। শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলার কোনো বিকল্প ছিল না। ২৬ বলে ৫৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে প্রোটিয়াদের শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন ম্যাককালাম। আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান গাপটিল রানআউটে কাটা পড়েন ৩৪ রানে। উইলিয়ামসন ও টেইলরও খেলতে ব্যর্থ। কিন্তু ম্যাককালামের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পঞ্চম উইকেটে ১০৩ রানের জুটিতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন অ্যান্ডারসন ও এলিয়ট। অ্যান্ডারসন ৫৮ করে ফিরে গেলেও এলিয়ট অপরাজিত থাকেন ৮৪ রানে। সাত চার ও তিন ছয়ে সাজানো তার ৭৩ বলের ইনিংসটিই ‘চোকার’ বানিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেও ম্যাককালামের রুদ্ররূপ দেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। স্টিপেই পাঁচ ফিল্ডার! ম্যাককালামের আগ্রাসী নেতৃত্বে একটি নমুনামাত্র। বোল্টোর তোপে ৩১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে পথে ফিরিয়েছিলেন প্লেসিস ও ডি ভিলিয়ার্স। ৩৮ ওভারে তাদের সংগ্রহ যখন ২১৬/৩, তখনই বৃষ্টির বাগড়া। পুরো ৫০ ওভার খেলা হলে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, বলা মুশকিল। তবে বৃষ্টি-বিরতির পর মিলার-ঝড়ে বাকি পাঁচ ওভারেই ৬৫ তুলে ফেলেছিল তারা। তাতে অবশ্য দুর্ভাগ্যের ছবিটা বদলায়নি। চার বছর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে হারার পর ঢাকা দেখেছিল অশ্রুসিক্ত ডি ভিলিয়ার্সের বিধ্বস্ত রূপ। কাল অকল্যান্ডও দেখল হতাশার সেই একই পোস্টার! (দৈনিক যুগান্তর)