নিউইয়র্ক ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ সবচেয়ে ভয়াবহ, উদ্বেগ বাড়ছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১
  • / ৪১ বার পঠিত

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি ব্যাপকভাবে মিউটেট (আচরণ পরিবর্তন) করেছে। প্রাথমিকভাবে এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেয়া হয় বি.১.১.৫২৯।

বলা হচ্ছে, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর নতুন এই করোনাভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি। এর মানে হলো করোনার যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্স’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে।

এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি প্রদেশে কিছু মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে বাস্তবে এটি আরও ছড়িয়ে গেছে।

এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি দেশ – দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, এসওয়াতিনি – থেকে সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে।

এই ভ্যারিয়েন্টটি কতটা দ্রুত ছড়াতে পারে, প্রচলিত টিকার মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ থেকে কতটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা পেতে কী করা যেতে পারে – তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন নুতন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি অনেক ভিন্ন। এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসেবে ও পরবর্তী মিউটেশনের হিসেব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভিয়েরা বলেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশেনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের যে অংশটি – রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন – আমাদের শরীরের কোষের সাথে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নুতন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি। অনেকগুলো মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তা নয়। কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে – তা জানা জরুরি।

চিন্তার বিষয় হলো, চীনের উহান শহরে প্রথম উদ্ভূত ধরণের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন। এর অর্থ হলো, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা – যেগুলো মূল ধরণটি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল – নতুন ধরণের জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।

এই ভ্যারিয়েন্টটিতে দেখা যাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। যেমন, এন৫০১ওয়াই করোনাকে সহজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়। নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরো কিছু মিউটেশন রয়েছে যার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে না এবং ভ্যাকসিনকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন, মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে সংক্রমণে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।

এর আগেও করোনার নতুন আবিষ্কৃত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আতঙ্ক শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ বছরের শুরুতে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছিল বেটা ভ্যারিয়েন্ট, কারণ ইমিউন সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ছিল ওই ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি ভয়াবহ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন, বেটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতো, আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি। নতুন ভ্যারিয়ন্টের এই দুই ধরণের ক্ষতি করারই সামর্থ্য রয়েছে।

ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলে আরো দ্রুত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

দক্ষিণ আফ্রিকার গওতেং প্রদেশে এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া বতসোয়ানায় চারজন ও হংকংয়ে একজন এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন।

পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টটি কিছুটা অদ্ভুত ফল দেয় (এস-জিন ড্রপ আউট নামে পরিচিত) এবং তার মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ধারা অনুসরণ করা সম্ভব। তাই ধারণা করা হচ্ছে, গওতেং প্রদেশের ৯০% কেসই আসলে এই ভ্যারিয়েন্ট এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ প্রদেশেই এর উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এখনো ধারণা দেয়া যাচ্ছে না যে ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টার চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়াবে কিনা বা এটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা। -বিবিসি

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ সবচেয়ে ভয়াবহ, উদ্বেগ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ১১:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি ব্যাপকভাবে মিউটেট (আচরণ পরিবর্তন) করেছে। প্রাথমিকভাবে এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেয়া হয় বি.১.১.৫২৯।

বলা হচ্ছে, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর নতুন এই করোনাভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি। এর মানে হলো করোনার যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্স’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে।

এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি প্রদেশে কিছু মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে বাস্তবে এটি আরও ছড়িয়ে গেছে।

এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি দেশ – দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, এসওয়াতিনি – থেকে সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে।

এই ভ্যারিয়েন্টটি কতটা দ্রুত ছড়াতে পারে, প্রচলিত টিকার মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ থেকে কতটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা পেতে কী করা যেতে পারে – তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন নুতন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি অনেক ভিন্ন। এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসেবে ও পরবর্তী মিউটেশনের হিসেব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভিয়েরা বলেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশেনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের যে অংশটি – রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন – আমাদের শরীরের কোষের সাথে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নুতন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি। অনেকগুলো মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তা নয়। কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে – তা জানা জরুরি।

চিন্তার বিষয় হলো, চীনের উহান শহরে প্রথম উদ্ভূত ধরণের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন। এর অর্থ হলো, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা – যেগুলো মূল ধরণটি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল – নতুন ধরণের জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।

এই ভ্যারিয়েন্টটিতে দেখা যাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। যেমন, এন৫০১ওয়াই করোনাকে সহজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়। নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরো কিছু মিউটেশন রয়েছে যার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে না এবং ভ্যাকসিনকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন, মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে সংক্রমণে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।

এর আগেও করোনার নতুন আবিষ্কৃত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আতঙ্ক শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ বছরের শুরুতে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছিল বেটা ভ্যারিয়েন্ট, কারণ ইমিউন সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ছিল ওই ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি ভয়াবহ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন, বেটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতো, আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি। নতুন ভ্যারিয়ন্টের এই দুই ধরণের ক্ষতি করারই সামর্থ্য রয়েছে।

ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলে আরো দ্রুত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

দক্ষিণ আফ্রিকার গওতেং প্রদেশে এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া বতসোয়ানায় চারজন ও হংকংয়ে একজন এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন।

পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টটি কিছুটা অদ্ভুত ফল দেয় (এস-জিন ড্রপ আউট নামে পরিচিত) এবং তার মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ধারা অনুসরণ করা সম্ভব। তাই ধারণা করা হচ্ছে, গওতেং প্রদেশের ৯০% কেসই আসলে এই ভ্যারিয়েন্ট এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ প্রদেশেই এর উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এখনো ধারণা দেয়া যাচ্ছে না যে ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টার চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়াবে কিনা বা এটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা। -বিবিসি