ঢাকা ডেস্ক : গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কেনার খরচ প্রকাশ করা হলেও সংসদে এ খাতের ব্যয় প্রকাশ করতে চাননি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের’ মাধ্যমে টিকা কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্ব সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল

এ পর্যন্ত দেশে কী পরিমাণ টিকা সংগ্রহ হয়েছে তা উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতার নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ সিনোফার্ম, ৭ কোটি ৫১ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক, ভারত থেকে ৩ কোটি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সের আওতায় ২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার সিনোফার্মে টিকা দেশে এসেছে।

তিনি বলেন, চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স থেকে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে টিকা কেনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে টিকা কেনা হয়েছে। নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে টিকা কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।

এর আগে গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনা চিকিৎসা ব্যয় জানানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ ৩ হাজার টাকা হিসাবে মোট ৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজমের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য মোট ২৯ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকার সংস্থান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত (১৩ নভেম্বর) ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার ১৯০ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুষ্টিহীনতা বিষয়ে সার্বজনীন (সব বয়সের) মানুষের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিডিএইচএস-এর পরিসংখ্যান মতে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে একটি চিত্র তুলে ধরেন তিনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খর্বাকৃতির হার এসডিজি (২০৩০) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা আছে। ২০১৭-১৮ সালে এই হার ছিল ৩১ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ। কৃষকায় ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা। যা রয়েছে ৮ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ১৭ শতাংশ। কম ওজনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশের নিচে নামানোর কথা রয়েছে। ২০০১৮-১৯ সালে ছিল ২২ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। অতি ওজন ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৭-১৮ সালে ২ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের অপুষ্টিজনিত কম ওজন ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১২ শতাংশ; ২০০৭ সালে ছিল ৩০ শতাংশ। অতি ওজন ৩২ শতাংশ; যা ছিল ১২ শতাংশ। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের কম ওজনের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি অতি ওজনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।

ময়মনসিংহ-১১ আসনের এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে কঠোর সরকার। আর নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে সরকার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল কোর্টে এক হাজার ৭১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে হোমিও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১৭টি, হার্বাল ওষুধ উৎপাদনকারী চারটি, অ্যালোপ্যাথিক পাঁচটি, ইউনানী ছয়টি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি। একই সময়ে ১৪টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়।