লেখক-সাংবাদিক আহমেদ মুসার ইন্তেকাল

- প্রকাশের সময় : ০১:১৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১
- / ২১৯ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক আহমেদ মুসা ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৭ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের মিসৌরীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
জানা যায়, আহমেদ মূসা ২০১১ সালে নিউইয়র্কে আসেন। তার স্ত্রী ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় তিনি তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এসে প্রবাস জীবন শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে আসে তার ছেলে ও মেয়ে। আহমেদ মূসার ফুসফুসে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা ছিল এবং বছরখানেক আগে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। ফলে কেমোথেরাপি চলছিল। গত প্রায় এক দশক যাবত তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। প্রথমে নিউইয়র্কে পরবর্তীতে তার মেয়ের কাছে টেক্সাসের ওকলাহোমা সিটিতে এবং শেষে কানসাসের মিসৌরিতে ছেলের কাছে বসবাস করছিলেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি উপন্যাস, প্রবন্ধ, কলাম ও বিভিন্ন নাটক রচনা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্বল্পভাষী, হাসিখুশী, নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি প্রায় ৩ বছর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শোক প্রকাশ: সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, নাট্যকার, বহু গ্রন্থের প্রণেতা সাংবাদিক আহমেদ মূসার মৃত্যুতে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ও আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব-এর সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেনা প্রকাশ করেন।
আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, আহমেদ মূসা একজন বড় মাপের সাংবাদিক ছিলেন। তিনি আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তার লেখা অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে, যার মাধ্যমে সমাজ ও কমিউনিটির মানুষ উপকৃত হয়েছেন। তাঁর অকাল প্রয়াণে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সদস্যরা শোকাহত। একই সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ক্লাব পরিবারের সদস্যরা।
এছাড়াও গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমদ, বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এম শাহীন, মুক্তধারা নিউইয়র্কের স্বত্তাধিকারী বিশ্বজিত সাহা, সাংবাদিক শেখ সিরাজুল ইসলাম, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
আহমেদ মুসাকে নিয়ে কে কি বললেন-লিখলেন (ফেসবুক থেকে):
আওয়াল ঠাকুর, সাংবাদিক
মুসা চলে গেছেন খুব স্বাভাবিক নিয়মেই। অনেক দিন থেকেই লড়াই করে বেঁচে ছিলেন।মূলত আজীবনের এক লড়াকু সৈনিক শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করলেন মৃুতুর কাছে। শনিবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে যখন খবরটি পেলাম তখন অবাক হইনি শুধু ভেতরটা মচকে উঠল কারণ খুব বিশ্বস্ত এক বন্ধু হরালাম। কতদিন থেকে তার সাথে পরিচয় কতটা সময় একান্তে বা পরিবারের সাথে কাটিয়েছি সে আলোচনা আজ নিরর্থক। আমরা প্রতিবেশী ছিলাম ঢাকায় আর কথার সাথী ছিলাম বাইরে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকতার সুযোগে অন লাইনে থাকলেই কথা হোত। সে সূত্রেই জানতাম কতটা কষ্ট নিয়ে যাপন করছেন জীবন। তবু হাল ছাড়েন নি। তার সর্বশেষ লেখা বইটি পেয়েছি কিনা সেটা নিয়েই শেষ কথা হয়েছিল। তার প্রায় সবগুলো বই নিয়েই কথা হয়েছে। সমালোচকদের পূরনো কথা লেখাকে চিনতে হলে লেখককে চিনতে হয়। একজন লেখক মুসা ও ব্যক্তি মুসার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল। দুটোই কখনো শালীনতার বাইরে যায়নি। তার রচনায় যেমনি তিনি বলেছেন জীবনে কাউকে গালি দেননি। ব্যক্তি জীবনেও কাউকে গালি দিয়েছেন এমন উদাহরণ নেই। ছোট বেলায় মুয়াজ্জিন ছিলেন। জীবনের শেষপ্রান্তেও একজন আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন।
তার অনেক সমৃদ্ধ একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। তার বাসায় পাঠাগারের আলাদা ব্যবস্থা ছিল। মূলত সে এটি করেছিল পড়া ও লেখার জন্য। বৌদ্ধ আমল নিয়ে আমাদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি বইও তিনি লিখেছেন। আসলে যখন অনুভব করলেন সময় দ্রæত ফুরিয়ে যাচ্ছে তখন শেষবার যখন বাংলাদেশে এলেন তখন তার এলাকায় নিজ খরচে পাঠাগার করে দিয়েছেন। একান্ত আলোচনায় তার কষ্টের কথা শুনেছি বাংলাভিশন নিয়ে। আহত হয়েছেন সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে। বেদনার কারণ ছিল- এটি তার স্বপ্ন ছিল। রাজনৈতিক নানা আলোচনার প্রসঙ্গ তো রয়েছেই। সে সব থাক। মানুষের একান্ত বেদনা ভাবনা তা তো কেবল নিজেরই। সবকিছুর পরেও একটি আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতনাই তিনি ধারন করেছেন আমৃত্যু।
তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা হলো তা অপূরণীয়। আমি বা আমার মত অনেকেই একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারালাম। দেশ হারাল একজন দেশপ্রেমিককে। পরিজন হারাল একজন সুহৃদকে। ভাল থাকুন পরপারে এই আশা ব্যক্ত করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করছি।
কদ্দুস আফ্রাদ, সাংবাদিক
যাঁর হাত ধরে আমার সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ, যিনি নিজ হাতে কেটে-কুটে রিপোর্টকে পাঠোপযোগী করে দিতেন, সেই আহমেদ মুসা ভাই আজ চির বিদায় নিলেন। শোক ও শ্রদ্ধা।
জসিম মল্লিক, লেখক
চারদিন আগে মুসা ভাই শেষ পোষ্ট দিয়েছিলেন। লেখক, গবেষক আহমেদ মুসা। সম্ভবত বুঝেছিলেন তার সময় শেষ হয়ে আসছে। তিনি ক্যান্সার সারভাইভাল ছিলেন। ফ্লোরিডার টেম্পায় মারা গেছেন। ২০১৮ তে আমি নিউইয়র্ক বইমেলায় গিয়ে জ্যামাইকা এলাকায় এআরবিএনবিতে উঠেছিলাম। মুসা ভাইর সাথে দেখা হওয়ায় বললেন, আমার বাসায় থাকতে পারতেন! তখন তিনি নিউইয়র্ক থাকেন। ওটাই শেষ কথা। এই আন্তরিকতাটুকুই বুকে বাজে। চারিদিকে শুধু নাই নাই। টানেলটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।
তাসের মাহমুদ, সাংবাদিক
অপ্রতিরোধ্য এক মহাজাগতিক শক্তির দূর্বার আকর্ষণ মার্ক্সবাদী দর্শনে দীক্ষিত সাংবাদিক আহমেদ মূসার জীবন কেড়ে নিলো। চলে গেলেন তিনি না ফেরার দেশে, চেতনালোকের বাইরে। অগ্রজপ্রতিম সতীর্থ মূসা ভাই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, অচিরেই এই ধরাধামের মায়া ত্যাগ করে তাঁকে চলে যেতে হবে। মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল তার ফুঁসফুঁসে। সৃজনশীল লেখক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও গবেষক মূসা ভাই মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁর পরিবার-পরিজন, ভক্ত, অনুরক্ত, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব সুহৃদকে চিরবিদায় জানিয়ে, ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে এক অনন্যসাধারণ স্ট্যাটাস দিয়ে পরিচিত পরিমন্ডলের সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলেন! মৃত্যুর আগেই মূসা ভাই লিখে গেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘দাবড়ে গেল পাগলা ঘোড়া’। মুসা ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা হয় ছিলো করোনা মহামারীর আগের বছর, বসন্তের প্রারম্ভে এখানকার ডাইভার্সিটি প্লাজায়! কত্তো কথকতা! আহা, আমার প্রিয় মুসা ভাই! আমি বাকরুদ্ধ ! আমরা বড়ো কাছে ছিলাম, প্রতিদিন কাছে ছিলাম! মহান করুনাময় সত্য-সুন্দর এই গভীর মনের মানুষটিকে জান্নাতবাসী করুন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন!