নিউইয়র্ক ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

টেক্সাসে হত্যা-আতœহত্যার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭৬ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরের এক বাংলাদেশী পরিবারের মর্মান্তিক হত্যা-আতœহত্যার ঘটনায় নিহত ৬জন বাংলাদেশী-আমেরিকানের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অত্যন্ত বেদনা-বিধুঁর পরিবেশে হত্যার শিকার মা-বাবা-বোন আর নানীর কবরের কাছেই কবর দেয়া হয়েছে ঘাতক দুই ভাইয়ের।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল শুক্রবার অথবা শনিবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বোন ফারবিন তৌহিদ (১৯) ও নানি আলতাফুন্নেসাকে (৭৭) গুলি করে হত্যার পর একই পরিবারের দুই ভাই ফারহান (১৯) ও তানভীর (২১) নিজেরাও আত্মহত্যা করে। আতœস্বীকৃত ঘাতক দুই ভাই মানসিক বিষন্নতায় এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে নিজেরাও আতœহত্যা করে। এই ঘটনাটিকে পুলিশ ‘ফ্যামিল মার্ডার সুইসাইড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্থানীয় পুলিশ সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’-তে পরিণত হয়েছে।
পুরান ঢাকার সন্তান তৌহিদ ইসলাম ডিভি লটারী জয় হয়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এসে কয়েক বছর নিউইয়র্কে বসবাস করেন। এরপর টেক্সাসের ডালাসে বসবাসের পর ডালাসের সন্নিকটে অ্যালেন সিটিতে স্থায়ী বসবাস গড়েন। সর্বশেষ তিনি সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে আইরিন ইসলাম পাবনার সন্তান। তাদের দু’পুত্র পড়ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। একমাত্র কন্যা ফুল স্কলারশিপে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন।
টেক্সাস থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে স্থানীয় ডালাস সিটি সংলগ্ন অ্যালেন মসজিদে সকলের জানাজা শেষে ডেন্টন মুসলিম সিমেট্রিতে হত্যার শিকার মা-বাবা, বোন ও দাদী সহ আতœহত্যাকারী দুই ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি ও বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন অ্যালেন মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান। নিহত তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই হায়দার আলী ফ্লোরিডা থেকে এবং আইরিন ইসলামের ভাই নিউইয়র্ক থেকে টেক্সাসে গিয়ে জানাজা নামাজ ও মরদেহ দাফনে অংশ নেন। এছাড়াও জানাজার সময় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তৌহিদ পরিবারের নিকটাত্মীয়দের সাথে ভার্চুয়ালী কথা বলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম। রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি হিসেবে জানায় যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কন্স্যুলার) হাবিবুর রহমান। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগ দেন হাসমত মবিন, আদর চৌধুরী, শাহীন হাসান, ওয়ালি রহমান, কামরুল আহসান, মির্জা শহীদ, সাঈদ চৌধুরী হারুন প্রমুখ।
এদিকে অ্যালেন সিটি পুলিশের ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সভাপতি হাসমত মোবিন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, মা-বাবা-বোন-নানীর জন্যে দুটি করে মোট ৮টি বুলেট ব্যবহার করা হয়। এরপর দুটি বুলেট দিয়ে একভাই আরেক ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বাবাসহ দু’ভাইয়ের লাশ এবং পরদিন বুধবার (৭ এপ্রিল) মা-বোন-নানীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের দাফনের ব্যয় আপাতত: স্থানীয় মসজিদসমূহ প্রদান করছে। পরবর্তীতে তহবিল সংগ্রহ করে সে অর্থের সমন্বয় করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অপরদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় টেক্সাসের ডালাস সংলগ্ন অ্যালেন সিটির সেলিব্রেশন পার্কে নিহতদের স্মরণে ‘মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিটি মেয়র কেন ফাক-সহ দু’শতাধিক শোকার্ত মানুষের সমাগম ঘটে। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন দু’ভাইয়ের সহপাঠী এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিবেশী। এতে অংশগ্রহণকারী অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্মরণ কর্মসূচীতে বক্তারা তাদের প্রিয় ও পরিচিতজনদের হারিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন। তারা সন্তানদের ব্যাপারে যথাযথ খোঁজ-খবর রাখা এবং কাউন্সিলের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আজ শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিহতদের বাড়ির সামনে আরেকটি শোক-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বহুল আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকোতে হাসিব বিন রাব্বি কর্তৃক তার মা-বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। অপরদিকে কানাডার টরন্টোতে মেনহাজ জামান তার মা-বাবা, বোন ও নানীকে হত্যা করে। এই দুটি ঘটনায় দু’জনই যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

টেক্সাসে হত্যা-আতœহত্যার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন

প্রকাশের সময় : ০১:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরের এক বাংলাদেশী পরিবারের মর্মান্তিক হত্যা-আতœহত্যার ঘটনায় নিহত ৬জন বাংলাদেশী-আমেরিকানের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অত্যন্ত বেদনা-বিধুঁর পরিবেশে হত্যার শিকার মা-বাবা-বোন আর নানীর কবরের কাছেই কবর দেয়া হয়েছে ঘাতক দুই ভাইয়ের।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল শুক্রবার অথবা শনিবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বোন ফারবিন তৌহিদ (১৯) ও নানি আলতাফুন্নেসাকে (৭৭) গুলি করে হত্যার পর একই পরিবারের দুই ভাই ফারহান (১৯) ও তানভীর (২১) নিজেরাও আত্মহত্যা করে। আতœস্বীকৃত ঘাতক দুই ভাই মানসিক বিষন্নতায় এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে নিজেরাও আতœহত্যা করে। এই ঘটনাটিকে পুলিশ ‘ফ্যামিল মার্ডার সুইসাইড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্থানীয় পুলিশ সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’-তে পরিণত হয়েছে।
পুরান ঢাকার সন্তান তৌহিদ ইসলাম ডিভি লটারী জয় হয়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এসে কয়েক বছর নিউইয়র্কে বসবাস করেন। এরপর টেক্সাসের ডালাসে বসবাসের পর ডালাসের সন্নিকটে অ্যালেন সিটিতে স্থায়ী বসবাস গড়েন। সর্বশেষ তিনি সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে আইরিন ইসলাম পাবনার সন্তান। তাদের দু’পুত্র পড়ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। একমাত্র কন্যা ফুল স্কলারশিপে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন।
টেক্সাস থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে স্থানীয় ডালাস সিটি সংলগ্ন অ্যালেন মসজিদে সকলের জানাজা শেষে ডেন্টন মুসলিম সিমেট্রিতে হত্যার শিকার মা-বাবা, বোন ও দাদী সহ আতœহত্যাকারী দুই ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি ও বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন অ্যালেন মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান। নিহত তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই হায়দার আলী ফ্লোরিডা থেকে এবং আইরিন ইসলামের ভাই নিউইয়র্ক থেকে টেক্সাসে গিয়ে জানাজা নামাজ ও মরদেহ দাফনে অংশ নেন। এছাড়াও জানাজার সময় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তৌহিদ পরিবারের নিকটাত্মীয়দের সাথে ভার্চুয়ালী কথা বলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম। রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি হিসেবে জানায় যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কন্স্যুলার) হাবিবুর রহমান। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগ দেন হাসমত মবিন, আদর চৌধুরী, শাহীন হাসান, ওয়ালি রহমান, কামরুল আহসান, মির্জা শহীদ, সাঈদ চৌধুরী হারুন প্রমুখ।
এদিকে অ্যালেন সিটি পুলিশের ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সভাপতি হাসমত মোবিন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, মা-বাবা-বোন-নানীর জন্যে দুটি করে মোট ৮টি বুলেট ব্যবহার করা হয়। এরপর দুটি বুলেট দিয়ে একভাই আরেক ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বাবাসহ দু’ভাইয়ের লাশ এবং পরদিন বুধবার (৭ এপ্রিল) মা-বোন-নানীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের দাফনের ব্যয় আপাতত: স্থানীয় মসজিদসমূহ প্রদান করছে। পরবর্তীতে তহবিল সংগ্রহ করে সে অর্থের সমন্বয় করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অপরদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় টেক্সাসের ডালাস সংলগ্ন অ্যালেন সিটির সেলিব্রেশন পার্কে নিহতদের স্মরণে ‘মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিটি মেয়র কেন ফাক-সহ দু’শতাধিক শোকার্ত মানুষের সমাগম ঘটে। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন দু’ভাইয়ের সহপাঠী এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিবেশী। এতে অংশগ্রহণকারী অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্মরণ কর্মসূচীতে বক্তারা তাদের প্রিয় ও পরিচিতজনদের হারিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন। তারা সন্তানদের ব্যাপারে যথাযথ খোঁজ-খবর রাখা এবং কাউন্সিলের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আজ শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিহতদের বাড়ির সামনে আরেকটি শোক-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বহুল আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকোতে হাসিব বিন রাব্বি কর্তৃক তার মা-বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। অপরদিকে কানাডার টরন্টোতে মেনহাজ জামান তার মা-বাবা, বোন ও নানীকে হত্যা করে। এই দুটি ঘটনায় দু’জনই যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছে।