নিউইয়র্ক ০৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

টেক্সাসে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশী হত্যা-আত্মহত্যা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭১ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় অ্যালেন পুলিশ। সোমবার ভোরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই ফারহান এবং ফারবিন তৌহিদ, তাদের বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪) এবং মা ইরেন ইসলাম (৫৬)। এছাড়া তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন নেসারও (৭৭) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। খবরটি স্থানীয় মিডিয়া সহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।
টেক্সাস থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আলেন সিটির পাইন বøফ ড্রাইভ-এর ১৫০০ বøকে শুক্রবার (২ এপ্রিল) মধ্য রাত থেকে শনিবারের মধ্যে এই হত্যা-আতœহত্যার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন মর্মান্তিক আর হৃদয় বিদারক ঘটনা এই প্রথম। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় অ্যলেন সিটির পুলিশ ঘটনাটিকে ‘ফ্যামিলি মার্ডার সুইসাইড’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছে। সোমবার ভোরে কেউ পুলিশ কল করলে অ্যালেন সিটির পুলিশ আবাসিক এলাকার নিরিবিলি বাড়িটি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশী হেফাজতে স্থানীয় হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ বাড়িটি বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।
ফারহান তৌহিদ

অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যার জন্য দুইভাই দায়ী। মানসিক বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে তারা এ কাজটি করেছে বলেও প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা জন ফেলি জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবেশিদের ওপর কোনো হুমকি ছিল না ও এর আগে ওই বাড়িতে কোনো ধরনের সমস্যার কথাও শোনা যায়নি।
পুলিশ বলছে, ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোট পোস্ট করেছে। এতে সে লিখেছে “হাই সবাই। আমি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’ দীর্ঘ ওই সুসাইড নোটে ফারহান আরও লিখেছে ‘কিভাবে সে নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।’
ইনস্টাগ্রাম পেজে সুইসাইড নোটে ফারহান তৌহিদ চলতি বছরের ফেব্রæয়ারীতে উল্লেখ করে লিখে, ‘তার বড় ভাই যে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধেও লড়াই করছে সে তাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে।’ তার ভাই বলেছে, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি তবে আমরা নিজের এবং পরিবারকে হত্যা করব।’
এদিকে ফেসবুকে ঘটনার বিষয়ে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফারহান। সেখানে তিনি ২০১৬ সালে নবম গ্রেডে পড়াবস্থায় ‘বিষন্নতায় আক্রান্ত’ হওয়ার কথা চিকিৎসকের বরাতে জানান। এজন্য তার শিক্ষাজীবন বির্পযস্ত হয়। অবস্থা গুরুতর হলে বন্ধুরা তাকে ত্যাগ করে। এক পর্যায়ে জীবন দুর্বিষহ হলে তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে পরিবারের অন্যরা কষ্ট পাবেন। তাই তাদেরও হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর সাথে ভাইকে যুক্ত করে তারা বন্দুক কেনেন।
তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে গোটা পরিবার সারাটি জীবন কষ্ট পাবে। সেটি চাই না। সেজন্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বড় ভাইকে শামিল করলাম। দুই ভাই গেলাম বন্দুক ক্রয় করতে। আমি হত্যা করব ছোটবোন আর নানীকে। আমার ভাই হত্যা করবে মা-বাবাকে। এরপর উভয়ে আত্মহত্যা করব। কেউ থাকবে না কষ্ট পাবার।
বন্দুক ক্রয়ের ব্যাপারটি খুবই মামুলি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে তামাশা চলছে সর্বত্র। বড়ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে বন্দুক দরকার। দোকানি কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্খিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে।’
নিহতরা বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ২৪ এর চিফ ক্যামেরাপারসন হাসান হাফিজুর রহমান রিপনের মা, বোন, বোনের স্বামী, দুই ভাগ্নে ও এক ভাগ্নি। রিপনের বোন স্বামীর নাম তৌহিদুল ইসলাম।
হাসান হাফিজুর রহমান রিপনের মায়ের বাড়ি পাবনা শহরে। রিপনের মা, বোন আর বোন জামাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের পর নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। অন্যরা জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
টেক্সাসে বাংলাদেশী কমিউনিটি লীডার হাসমত মুবিন মিডিয়াকে জানান, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা রাজ্যে বসবাসকারী নিহদের স্বজনরা টেক্সাস পৌছার পর তাদের সাথে পরামর্শ করে বুধবার (৭ এপ্রিল) স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, হত্যা-আতœহত্যার শিকার পরিবার কিছুদিন নিউইয়র্কে বসবাস করার পর টেক্সাস রাজ্যের ডালাসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ২০ বছরের মতো বসবাসের পর ২/৩ বছর ধরে ডালাসের নিকটবর্তী অ্যালেন শহরে স্থায়ী নিবাস গড়েন। তিনি জানান, গুলি করে সবাইকে হত্যার পর দুই ভাই আতœহত্যা করেন। এই হঘটনার সাথে বাইরের কেউ জড়িত নন বলে পুলিশ ধারণা করছেন বলেও তিনি জানান।
একই পরিবারের ৬জন হত্যা-আতœহত্যার ঘটনার খবর শুনে তাদের পারিবারিক বন্ধু স্থানীয় বাংলাদেশী শাওন আহসান মিডিয়াকে জানান, ‘খবরটি শুনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০/৩০ মিনিটের মতো আমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। কিভাবে আমাদের মতো কমিউনিটিতে ঘটনাটি ঘটলো, তা বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তিনি জানান, আমরা কাছাকাছি বসবাস করি, আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে নিয়মিত কথা আর বাসায় যাতায়াত ছিলো। আমরা একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া করতাম, কিন্তু কখনোই জানতে পারিনি যে তাদের সন্তান মানসিকভাবে অসুখী। আমাদেন বুকের পাজর ভেঙ্গে গেছে। আমি আর কিছূ বলতে পারছি না……’।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সচিব নাহিদা আলী বলেন, ঘটনার সময় ওই বাড়িতে তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম নীলা (৫৫), দুই ছেলে তানভির তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯), মেয়ে পারভিন তৌহিদ (১৯) ও তার তৌহিদের শাশুড়ি আলতাফুন্নেসা (৭৭) ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, পারভিন পড়তেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি নিউইয়র্ক থেকে বাসায় যান। ফারহান গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। তানভিরও পড়তেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অস্টিনে। তার এবারই গ্র্যাজুয়েশনের কথা। ফারহান আর পারভিন ছিলেন যমজ। আর আলতাফুন্নেসার গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল। করোনাভাইরাস জটিলতায় তা স্থগিত হয়ে যায়। পুরান ঢাকার বাসিন্দা তৌহিদুল আট বছর আগে নিউইয়র্কে যান এবং পরে সেখান থেকে টেক্সাসের এলেন সিটি বসবাস শুরু করেন। তিনি সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

টেক্সাসে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশী হত্যা-আত্মহত্যা

প্রকাশের সময় : ০২:৩৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল ২০২১

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় অ্যালেন পুলিশ। সোমবার ভোরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই ফারহান এবং ফারবিন তৌহিদ, তাদের বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪) এবং মা ইরেন ইসলাম (৫৬)। এছাড়া তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন নেসারও (৭৭) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। খবরটি স্থানীয় মিডিয়া সহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।
টেক্সাস থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আলেন সিটির পাইন বøফ ড্রাইভ-এর ১৫০০ বøকে শুক্রবার (২ এপ্রিল) মধ্য রাত থেকে শনিবারের মধ্যে এই হত্যা-আতœহত্যার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন মর্মান্তিক আর হৃদয় বিদারক ঘটনা এই প্রথম। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় অ্যলেন সিটির পুলিশ ঘটনাটিকে ‘ফ্যামিলি মার্ডার সুইসাইড’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছে। সোমবার ভোরে কেউ পুলিশ কল করলে অ্যালেন সিটির পুলিশ আবাসিক এলাকার নিরিবিলি বাড়িটি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশী হেফাজতে স্থানীয় হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ বাড়িটি বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।
ফারহান তৌহিদ

অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যার জন্য দুইভাই দায়ী। মানসিক বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে তারা এ কাজটি করেছে বলেও প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা জন ফেলি জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবেশিদের ওপর কোনো হুমকি ছিল না ও এর আগে ওই বাড়িতে কোনো ধরনের সমস্যার কথাও শোনা যায়নি।
পুলিশ বলছে, ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোট পোস্ট করেছে। এতে সে লিখেছে “হাই সবাই। আমি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’ দীর্ঘ ওই সুসাইড নোটে ফারহান আরও লিখেছে ‘কিভাবে সে নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।’
ইনস্টাগ্রাম পেজে সুইসাইড নোটে ফারহান তৌহিদ চলতি বছরের ফেব্রæয়ারীতে উল্লেখ করে লিখে, ‘তার বড় ভাই যে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধেও লড়াই করছে সে তাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে।’ তার ভাই বলেছে, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি তবে আমরা নিজের এবং পরিবারকে হত্যা করব।’
এদিকে ফেসবুকে ঘটনার বিষয়ে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফারহান। সেখানে তিনি ২০১৬ সালে নবম গ্রেডে পড়াবস্থায় ‘বিষন্নতায় আক্রান্ত’ হওয়ার কথা চিকিৎসকের বরাতে জানান। এজন্য তার শিক্ষাজীবন বির্পযস্ত হয়। অবস্থা গুরুতর হলে বন্ধুরা তাকে ত্যাগ করে। এক পর্যায়ে জীবন দুর্বিষহ হলে তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে পরিবারের অন্যরা কষ্ট পাবেন। তাই তাদেরও হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর সাথে ভাইকে যুক্ত করে তারা বন্দুক কেনেন।
তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে গোটা পরিবার সারাটি জীবন কষ্ট পাবে। সেটি চাই না। সেজন্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বড় ভাইকে শামিল করলাম। দুই ভাই গেলাম বন্দুক ক্রয় করতে। আমি হত্যা করব ছোটবোন আর নানীকে। আমার ভাই হত্যা করবে মা-বাবাকে। এরপর উভয়ে আত্মহত্যা করব। কেউ থাকবে না কষ্ট পাবার।
বন্দুক ক্রয়ের ব্যাপারটি খুবই মামুলি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে তামাশা চলছে সর্বত্র। বড়ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে বন্দুক দরকার। দোকানি কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্খিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে।’
নিহতরা বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ২৪ এর চিফ ক্যামেরাপারসন হাসান হাফিজুর রহমান রিপনের মা, বোন, বোনের স্বামী, দুই ভাগ্নে ও এক ভাগ্নি। রিপনের বোন স্বামীর নাম তৌহিদুল ইসলাম।
হাসান হাফিজুর রহমান রিপনের মায়ের বাড়ি পাবনা শহরে। রিপনের মা, বোন আর বোন জামাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের পর নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। অন্যরা জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
টেক্সাসে বাংলাদেশী কমিউনিটি লীডার হাসমত মুবিন মিডিয়াকে জানান, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা রাজ্যে বসবাসকারী নিহদের স্বজনরা টেক্সাস পৌছার পর তাদের সাথে পরামর্শ করে বুধবার (৭ এপ্রিল) স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, হত্যা-আতœহত্যার শিকার পরিবার কিছুদিন নিউইয়র্কে বসবাস করার পর টেক্সাস রাজ্যের ডালাসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ২০ বছরের মতো বসবাসের পর ২/৩ বছর ধরে ডালাসের নিকটবর্তী অ্যালেন শহরে স্থায়ী নিবাস গড়েন। তিনি জানান, গুলি করে সবাইকে হত্যার পর দুই ভাই আতœহত্যা করেন। এই হঘটনার সাথে বাইরের কেউ জড়িত নন বলে পুলিশ ধারণা করছেন বলেও তিনি জানান।
একই পরিবারের ৬জন হত্যা-আতœহত্যার ঘটনার খবর শুনে তাদের পারিবারিক বন্ধু স্থানীয় বাংলাদেশী শাওন আহসান মিডিয়াকে জানান, ‘খবরটি শুনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০/৩০ মিনিটের মতো আমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। কিভাবে আমাদের মতো কমিউনিটিতে ঘটনাটি ঘটলো, তা বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তিনি জানান, আমরা কাছাকাছি বসবাস করি, আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে নিয়মিত কথা আর বাসায় যাতায়াত ছিলো। আমরা একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া করতাম, কিন্তু কখনোই জানতে পারিনি যে তাদের সন্তান মানসিকভাবে অসুখী। আমাদেন বুকের পাজর ভেঙ্গে গেছে। আমি আর কিছূ বলতে পারছি না……’।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সচিব নাহিদা আলী বলেন, ঘটনার সময় ওই বাড়িতে তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম নীলা (৫৫), দুই ছেলে তানভির তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯), মেয়ে পারভিন তৌহিদ (১৯) ও তার তৌহিদের শাশুড়ি আলতাফুন্নেসা (৭৭) ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, পারভিন পড়তেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি নিউইয়র্ক থেকে বাসায় যান। ফারহান গত বছর ভর্তি হয়েছিলেন অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। তানভিরও পড়তেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অস্টিনে। তার এবারই গ্র্যাজুয়েশনের কথা। ফারহান আর পারভিন ছিলেন যমজ। আর আলতাফুন্নেসার গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল। করোনাভাইরাস জটিলতায় তা স্থগিত হয়ে যায়। পুরান ঢাকার বাসিন্দা তৌহিদুল আট বছর আগে নিউইয়র্কে যান এবং পরে সেখান থেকে টেক্সাসের এলেন সিটি বসবাস শুরু করেন। তিনি সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন।