নিউইয়র্ক ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হেফাজত নেতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী : তাদের চরিত্র কেমন তা মানুষ দেখেছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭৩ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: স¤প্রতি হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন তার নিজস্বগতিতে চলবে, এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই সমস্ত ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনই মেনে নেবে না, জনগণ কখনই সহ্য করবে না। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে এটা কখনই মেনে নেয়া যায় না, জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ এগুলো বসে বসে সহ্য করবে না। শুধু হেফাজত তো একা না, হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতও জড়িত এবং তাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডেই তো দেখা যায়। দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহŸান জানানোর পাশাপাশি হেফাজত নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন নিয়ে খেলছেন, এক ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুন অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে- সেটা কি আপনাদের হিসেবে নেই? আমি শুধু এইটুকু বলবো, দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। আর অবাক লাগে বিএনপি’র কর্মকান্ড দেখে।
হেফাজতের সঙ্গে যত রকমের মদত দেয়া এবং জ্বালাও- পোড়াও করার যে পরামর্শ সেটাও তারা দিয়েছে। আবার হেফাজতের কর্মকান্ডে তারা সমর্থন দেয়। আসলে এদের (বিএনপি) কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই, কোনো আদর্শ নিয়ে তারা চলে না। রোববার (৪ মার্চ) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী বক্তব্যে অংশ নেন বিরোধী দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ।
প্রধানমন্ত্রী এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। গতকাল আমি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছি। হয়তো মানুষের একটু কষ্ট হবে। কিন্তু মানুষের জীবনটা তো আগে। আগে জীবনটা বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, সবকিছু আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু করবো। আরো টিকা আনা হবে, টিকা আনার ব্যবস্থা করবো।
এদের চরিত্রটা কী তা বলতে চাই না: হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পার্লারে কাজ করা এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে বিনোদন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নারীকে মামুনুল হক বউ হিসেবে পরিচয় দিলেও নিজের বউয়ের কাছে বলেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিচয় দিয়েছেন। এক নারী নিয়ে অবস্থান এবং সেখানে হেফাজতের ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের চরিত্রটা কী তা বলতে চাই না। গত শনিবারই আপনারা দেখেছেন। তাদের চরিত্রটা কি মানুষ দেখেছে। ধর্ম ও পবিত্রতার কথা বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়ে। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরো বলেন, সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধরা পড়লো। তা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা করেছে তারা (হেফাজত)। এক নারীকে বউ হিসেবে পরিচয় দেয়। আবার নিজের বউয়ের কাছে বলে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলেছি। যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এ রকম মিথ্যা কথা বলতে পারে, অসত্য কথা বলতে পারে? তারা কী ধর্ম পালন করবে, মানুষকে কী ধর্ম শেখাবে? কয়েকদিন আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, এখন সুন্দরী নারী নিয়ে বিনোদন করতে গেলেন! ইসলাম পবিত্র ধর্ম, সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করছে। বিনোদনের এসব অর্থ আসে কোথা থেকে?
এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক: হেফাজত কান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জনগণ কি শুধু এগুলো বসে বসে সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না। এখানে কেউ কেউ বলছেন পুলিশ কেন ধৈর্য্য দেখিয়েছে? আমরা ধৈর্য্য দেখিয়েছি, এগুলো বিরত করার চেষ্টা করেছি। কারণ সংঘাতে সংঘাত বাড়ে, আমরা তা চাইনি। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ভালোভাবে উদযাপন করতে চেয়েছি। কিন্তু যারা এসব অপকর্ম করেছে, দেশবাসীই এটার বিচার করবে, দেশবাসী দেখবে যে এদের চরিত্রটা কি? হেফাজতের সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটু বুঝে নিন কেমন নেতৃত্ব আপনাদের! আগুন লাগিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে বিনোদন করতে গেলেন একটা রিসোর্টে, তাও একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এটাই তো বাস্তবতা। অর্থাৎ এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে তারা ছোট করে দিচ্ছেন। কিছু লোকের জন্য এই পবিত্র ধর্মে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাম জুড়ে যাচ্ছে। আর এখন তো যে চরিত্র দেখালো (মামুনুল), তাদের দুশ্চরিত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছে। সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। যে ইসলাম ধর্ম সব থেকে সহনশীলতার কথা শিখিয়েছে, শান্তির কথা বলেছে, সাধারণ মানুষের কথা বলেছে, মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছে- সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করে দিচ্ছে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। এদের এতো অর্থ কোথায় থেকে আসে এই বিনোদনের জন্য, সেটাও একটা প্রশ্ন। কাজেই এটা দেশবাসী বিচার করবে, আর আইন তার আপন গতিতে চলবে। তিনি বলেন, একজন মুসলমান অপর এক মুসলমানের জানমাল হেফাজত করা, রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। আর হেফাজতের নামে তারা জ্বালাও পোড়াও করে যাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে তাদের মদতদাতা। এই লজ্জা শুধু বাংলাদেশের জনগণের না, এই লজ্জা বিশ্বব্যাপী, সমস্ত পৃথিবীতে মুসলমানদের জন্য। পবিত্র ধর্মটাকে এরা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের এই সমস্ত কর্মকান্ডের ফলে বহু মানুষের জীবন গেছে। এই কারণে ২৬ মার্চ অনেক মানুষের জীবন গেছে, এর জন্য দায়ী তো তারা (হেফাজত)। কাজেই আমি শুধু এইটুকু বলবো দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ অসম্মান করুক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করে, সেটাই করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। এই ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা মুখে ধর্মের কথা বলে, ইসলামের নাম বলে চলবেন আর অধর্মীয় কাজ করবেন- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, জনগণ এসব আর সহ্য করবে না।
সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় হামলা কেন?: প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যের সময় হেফাজতের তান্ডবের সচিত্র প্রতিবেদনগুলো সংসদে একে একে তুলে ধরে বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি, সেই সময় যে ঘটনাগুলো ঘটানো হলো এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় যে সময় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি ঠিক সেই সময় এসব তান্ডব চালানো হলো কেন? কারা এসবে খুশি হতে পারেনি, তা দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার। তিনি বলেন, ওই সময় আমাদের অনেক বিদেশি অতিথি আসছে। অনেকে বার্তা দিচ্ছেন। বৃটেনের রানী থেকে সৌদি আরবের বাদশা সকলের শুভেচ্ছা আমরা পাচ্ছি। ১১৬টি দেশ এবং জাতিসংঘসহ ৩৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এতো বড় একটা সম্মান বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেখানে কারা খুশি হতে পারে নাই? ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসার কথা। তাকে আসতে দেয়া যাবে না, বাধা দেয়া হবে কেন?
হেফাজতের প্রতি প্রশ্ন রেখে সংসদ নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়, তারা কি ভারতের দেওবন্দে যায় না শিক্ষা গ্রহণ করতে? তারা যদি এ সমস্ত ঘটনা ঘটায়, তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেওবন্দে যাবে কীভাবে সেটা কি তারা একবারও চিন্তা করেছে? আমরা তো কওমি মাদ্রাসায় সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। তাদের কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশে- বিদেশে চাকরি পায়, তার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। তারপরেও কেন তারা এই তান্ডব ঘটালো? বিএনপি তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন, সেখানে তাদের কি আপত্তি? বিএনপি’র রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ২১ মে রাজীব গান্ধী মৃত্যুবরণ করেন। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমরা যোগদান করেছিলাম। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে প্রায় সবাই এসেছিলেন। আমেরিকা, বৃটেনের প্রিন্স চার্লস, ইয়াসির আরাফাতসহ সকলে উপস্থিত। ইয়াসির আরাফাত সাহেব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালেন, কিন্তু খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার ছবি। সেই হাত যেন আর ছাড়ে না। শুধু তাই না তার সঙ্গে টেলিফোনের সময় যে খিলখিল হাসি, খালেদা জিয়ার হাসির আওয়াজ সেটাও তো সকলের কানে গেছে। আবার যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদি আসবেন, তখন বাধা দেয়া এবং হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি হাত মেলালো কেন? কী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করি, তখন হেফাজত শুরু করলো তান্ডব। হেফাজত তো একা নয়, হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপিও জড়িত। তাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডে দেখা যায়। হেফাজতের সকলেই যে এরমধ্যে জড়িত তাও কিন্তু না। এটাও বাস্তবতা। তারপরেও দেখেছি ২৬ মার্চ হেফাজত একটা গুজব ছড়ালো যে বায়তুল মোকাররম মসজিদে মানুষ মারা হয়েছে ইত্যাদি। তারা ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সহিংসতা চালায় এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজত এবং বিএনপি-জামায়াতের বিবৃতি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। ২৮ মার্চ হরতাল দিয়ে সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে তারা তান্ডব চালায়। আওয়ামী লীগ অফিস, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, সরকারি অফিস-আদালত, বাস-ট্রাক-ট্রেনসহ পরিবহনে হামলা ও ভাঙচুর এবং পোড়ানো হয়। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর বেছে বেছে পোড়ানো হয়। হেফাজতরা ছোট ছোট শিশুদের সামনে নিয়ে এসে তাদের হাতে লাঠি, অস্ত্র এবং সবার ব্যাগের ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা পবিত্র কোরআন শরীফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। এরা কি সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে যে তারা কোরআন শরীফ পর্যন্ত পোড়ায়? ইসলাম ধর্মের নামে এই জ্বালাও-পোড়াও এটা কীভাবে আসলো? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে দেখেছি বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে চলন্ত গাড়িতে আগুন দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কোনো কিছু হলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাসায় আগুন দেয়া। আগুন নিয়ে তারা খেলছে। কিন্তু এক ঘরে আগুন লাগলে তো সেই আগুন অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে। সেটা কি তাদের হিসেবে নেই। রেলস্টেশন, ভূমি অফিস, ডিসি অফিস সব জায়গায় তারা আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তাদের মাদ্রাসা, তাদের বাড়িঘর- সেগুলোতে যদি আগুন লাগে তখন তারা কি করবে? জনগণ কি বসে বসে এগুলো শুধু সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না।
লকডাউন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আবারো স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, হয়তো মানুষের একটু কষ্ট হবে, কিন্তু মানুষের জীবনটা আগে বাঁচাতে হবে। গত ২৮ থেকে ৩০ মার্চ হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেল। এরপর থেকে বাড়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি, এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। তিনি বলেন, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ হবে। তখন বেঁচে থাকবো না। কিন্তু বাংলাদেশ যাতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হয় সে পরিকল্পনা দিয়েছি। দুই হাজার একশ’ সালের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা দিয়েছি। একটা কাঠামো আমরা তৈরি করে গেলাম। পরবর্তী যেই আসবে দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে কোনো অসুবিধা হবে না। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হেফাজত নেতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী : তাদের চরিত্র কেমন তা মানুষ দেখেছে

প্রকাশের সময় : ১১:৪৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

ঢাকা ডেস্ক: স¤প্রতি হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন তার নিজস্বগতিতে চলবে, এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই সমস্ত ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনই মেনে নেবে না, জনগণ কখনই সহ্য করবে না। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে এটা কখনই মেনে নেয়া যায় না, জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ এগুলো বসে বসে সহ্য করবে না। শুধু হেফাজত তো একা না, হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতও জড়িত এবং তাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডেই তো দেখা যায়। দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহŸান জানানোর পাশাপাশি হেফাজত নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন নিয়ে খেলছেন, এক ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুন অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে- সেটা কি আপনাদের হিসেবে নেই? আমি শুধু এইটুকু বলবো, দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। আর অবাক লাগে বিএনপি’র কর্মকান্ড দেখে।
হেফাজতের সঙ্গে যত রকমের মদত দেয়া এবং জ্বালাও- পোড়াও করার যে পরামর্শ সেটাও তারা দিয়েছে। আবার হেফাজতের কর্মকান্ডে তারা সমর্থন দেয়। আসলে এদের (বিএনপি) কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই, কোনো আদর্শ নিয়ে তারা চলে না। রোববার (৪ মার্চ) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী বক্তব্যে অংশ নেন বিরোধী দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ।
প্রধানমন্ত্রী এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। গতকাল আমি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছি। হয়তো মানুষের একটু কষ্ট হবে। কিন্তু মানুষের জীবনটা তো আগে। আগে জীবনটা বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, সবকিছু আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু করবো। আরো টিকা আনা হবে, টিকা আনার ব্যবস্থা করবো।
এদের চরিত্রটা কী তা বলতে চাই না: হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পার্লারে কাজ করা এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে বিনোদন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নারীকে মামুনুল হক বউ হিসেবে পরিচয় দিলেও নিজের বউয়ের কাছে বলেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিচয় দিয়েছেন। এক নারী নিয়ে অবস্থান এবং সেখানে হেফাজতের ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের চরিত্রটা কী তা বলতে চাই না। গত শনিবারই আপনারা দেখেছেন। তাদের চরিত্রটা কি মানুষ দেখেছে। ধর্ম ও পবিত্রতার কথা বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়ে। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরো বলেন, সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধরা পড়লো। তা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা করেছে তারা (হেফাজত)। এক নারীকে বউ হিসেবে পরিচয় দেয়। আবার নিজের বউয়ের কাছে বলে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলেছি। যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এ রকম মিথ্যা কথা বলতে পারে, অসত্য কথা বলতে পারে? তারা কী ধর্ম পালন করবে, মানুষকে কী ধর্ম শেখাবে? কয়েকদিন আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, এখন সুন্দরী নারী নিয়ে বিনোদন করতে গেলেন! ইসলাম পবিত্র ধর্ম, সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করছে। বিনোদনের এসব অর্থ আসে কোথা থেকে?
এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক: হেফাজত কান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জনগণ কি শুধু এগুলো বসে বসে সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না। এখানে কেউ কেউ বলছেন পুলিশ কেন ধৈর্য্য দেখিয়েছে? আমরা ধৈর্য্য দেখিয়েছি, এগুলো বিরত করার চেষ্টা করেছি। কারণ সংঘাতে সংঘাত বাড়ে, আমরা তা চাইনি। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ভালোভাবে উদযাপন করতে চেয়েছি। কিন্তু যারা এসব অপকর্ম করেছে, দেশবাসীই এটার বিচার করবে, দেশবাসী দেখবে যে এদের চরিত্রটা কি? হেফাজতের সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটু বুঝে নিন কেমন নেতৃত্ব আপনাদের! আগুন লাগিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে বিনোদন করতে গেলেন একটা রিসোর্টে, তাও একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এটাই তো বাস্তবতা। অর্থাৎ এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে তারা ছোট করে দিচ্ছেন। কিছু লোকের জন্য এই পবিত্র ধর্মে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাম জুড়ে যাচ্ছে। আর এখন তো যে চরিত্র দেখালো (মামুনুল), তাদের দুশ্চরিত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছে। সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। যে ইসলাম ধর্ম সব থেকে সহনশীলতার কথা শিখিয়েছে, শান্তির কথা বলেছে, সাধারণ মানুষের কথা বলেছে, মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছে- সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করে দিচ্ছে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। এদের এতো অর্থ কোথায় থেকে আসে এই বিনোদনের জন্য, সেটাও একটা প্রশ্ন। কাজেই এটা দেশবাসী বিচার করবে, আর আইন তার আপন গতিতে চলবে। তিনি বলেন, একজন মুসলমান অপর এক মুসলমানের জানমাল হেফাজত করা, রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। আর হেফাজতের নামে তারা জ্বালাও পোড়াও করে যাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে তাদের মদতদাতা। এই লজ্জা শুধু বাংলাদেশের জনগণের না, এই লজ্জা বিশ্বব্যাপী, সমস্ত পৃথিবীতে মুসলমানদের জন্য। পবিত্র ধর্মটাকে এরা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের এই সমস্ত কর্মকান্ডের ফলে বহু মানুষের জীবন গেছে। এই কারণে ২৬ মার্চ অনেক মানুষের জীবন গেছে, এর জন্য দায়ী তো তারা (হেফাজত)। কাজেই আমি শুধু এইটুকু বলবো দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ অসম্মান করুক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করে, সেটাই করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। এই ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা মুখে ধর্মের কথা বলে, ইসলামের নাম বলে চলবেন আর অধর্মীয় কাজ করবেন- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, জনগণ এসব আর সহ্য করবে না।
সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় হামলা কেন?: প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যের সময় হেফাজতের তান্ডবের সচিত্র প্রতিবেদনগুলো সংসদে একে একে তুলে ধরে বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি, সেই সময় যে ঘটনাগুলো ঘটানো হলো এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় যে সময় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি ঠিক সেই সময় এসব তান্ডব চালানো হলো কেন? কারা এসবে খুশি হতে পারেনি, তা দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার। তিনি বলেন, ওই সময় আমাদের অনেক বিদেশি অতিথি আসছে। অনেকে বার্তা দিচ্ছেন। বৃটেনের রানী থেকে সৌদি আরবের বাদশা সকলের শুভেচ্ছা আমরা পাচ্ছি। ১১৬টি দেশ এবং জাতিসংঘসহ ৩৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এতো বড় একটা সম্মান বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেখানে কারা খুশি হতে পারে নাই? ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসার কথা। তাকে আসতে দেয়া যাবে না, বাধা দেয়া হবে কেন?
হেফাজতের প্রতি প্রশ্ন রেখে সংসদ নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়, তারা কি ভারতের দেওবন্দে যায় না শিক্ষা গ্রহণ করতে? তারা যদি এ সমস্ত ঘটনা ঘটায়, তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেওবন্দে যাবে কীভাবে সেটা কি তারা একবারও চিন্তা করেছে? আমরা তো কওমি মাদ্রাসায় সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। তাদের কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশে- বিদেশে চাকরি পায়, তার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। তারপরেও কেন তারা এই তান্ডব ঘটালো? বিএনপি তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন, সেখানে তাদের কি আপত্তি? বিএনপি’র রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ২১ মে রাজীব গান্ধী মৃত্যুবরণ করেন। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমরা যোগদান করেছিলাম। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে প্রায় সবাই এসেছিলেন। আমেরিকা, বৃটেনের প্রিন্স চার্লস, ইয়াসির আরাফাতসহ সকলে উপস্থিত। ইয়াসির আরাফাত সাহেব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালেন, কিন্তু খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার ছবি। সেই হাত যেন আর ছাড়ে না। শুধু তাই না তার সঙ্গে টেলিফোনের সময় যে খিলখিল হাসি, খালেদা জিয়ার হাসির আওয়াজ সেটাও তো সকলের কানে গেছে। আবার যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদি আসবেন, তখন বাধা দেয়া এবং হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি হাত মেলালো কেন? কী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করি, তখন হেফাজত শুরু করলো তান্ডব। হেফাজত তো একা নয়, হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপিও জড়িত। তাদের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডে দেখা যায়। হেফাজতের সকলেই যে এরমধ্যে জড়িত তাও কিন্তু না। এটাও বাস্তবতা। তারপরেও দেখেছি ২৬ মার্চ হেফাজত একটা গুজব ছড়ালো যে বায়তুল মোকাররম মসজিদে মানুষ মারা হয়েছে ইত্যাদি। তারা ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সহিংসতা চালায় এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজত এবং বিএনপি-জামায়াতের বিবৃতি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। ২৮ মার্চ হরতাল দিয়ে সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে তারা তান্ডব চালায়। আওয়ামী লীগ অফিস, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, সরকারি অফিস-আদালত, বাস-ট্রাক-ট্রেনসহ পরিবহনে হামলা ও ভাঙচুর এবং পোড়ানো হয়। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর বেছে বেছে পোড়ানো হয়। হেফাজতরা ছোট ছোট শিশুদের সামনে নিয়ে এসে তাদের হাতে লাঠি, অস্ত্র এবং সবার ব্যাগের ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা পবিত্র কোরআন শরীফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। এরা কি সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে যে তারা কোরআন শরীফ পর্যন্ত পোড়ায়? ইসলাম ধর্মের নামে এই জ্বালাও-পোড়াও এটা কীভাবে আসলো? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে দেখেছি বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে চলন্ত গাড়িতে আগুন দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কোনো কিছু হলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাসায় আগুন দেয়া। আগুন নিয়ে তারা খেলছে। কিন্তু এক ঘরে আগুন লাগলে তো সেই আগুন অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে। সেটা কি তাদের হিসেবে নেই। রেলস্টেশন, ভূমি অফিস, ডিসি অফিস সব জায়গায় তারা আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তাদের মাদ্রাসা, তাদের বাড়িঘর- সেগুলোতে যদি আগুন লাগে তখন তারা কি করবে? জনগণ কি বসে বসে এগুলো শুধু সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না।
লকডাউন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আবারো স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, হয়তো মানুষের একটু কষ্ট হবে, কিন্তু মানুষের জীবনটা আগে বাঁচাতে হবে। গত ২৮ থেকে ৩০ মার্চ হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেল। এরপর থেকে বাড়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি, এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। তিনি বলেন, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ হবে। তখন বেঁচে থাকবো না। কিন্তু বাংলাদেশ যাতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হয় সে পরিকল্পনা দিয়েছি। দুই হাজার একশ’ সালের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা দিয়েছি। একটা কাঠামো আমরা তৈরি করে গেলাম। পরবর্তী যেই আসবে দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে কোনো অসুবিধা হবে না। (দৈনিক মানবজমিন)