ঐক্যের ডাক শেখ হাসিনার

- প্রকাশের সময় : ০৭:০২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
- / ৬৫ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: বাংলাদেশকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ বা দ্বিতীয় ঘর মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। বাংলাদেশ আর ভুটানের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিন ছিল বুধবার। এ দিনের ছিল থিম- ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বক্তব্য রাখেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধু রাষ্ট্র ভুটানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতাকালে লোটে শেরিং বলেন, বাংলাদেশকে আমার সেকেন্ড হোম মনে হয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমাদের দেশের রাজাও বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক’-এর কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই করোনার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ জিডিপি বাংলাদেশের। এগুলো জেনে আমাদের সত্যিই আনন্দ অনুভূত হয়। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই করেননি। তিনি বিশ্বের সব নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
তিনি আরো বলেন, ভুটানই প্রথম দেশ যে নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। দুই দেশের ব্যবসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের সম্মানিত অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
বিভিন্ন খাতে সহযোগিতায় একমত বাংলাদেশ-ভুটান: বাংলাদেশ এবং ভুটান দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে ঐকমত্য। বুধবার (২৪ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিকে লাভজনক করে তুলতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে জাহাজগুলো যাতে সহজে নোঙ্গর করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন। বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থে বিশেষ করে বাণিজ্য ও যোগাযোগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। দুই নেতা জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সহযোগিতায় দ্বিপক্ষীয় এবং ত্রিপাক্ষিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সমঝোতা স্মারক তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রিসহ পূর্ণমেয়াদি ভিসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।
জবাবে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ভুটানের প্রতি সহযোগিতা জোরদার করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম শহিদুল করিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েন্টিসিল এবং চিফ অব প্রটোকল দাসো ইউগেন গঙ্গোপেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ৪৫ মিনিট একান্তে বৈঠক করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসেন লোটে শেরিং। সফরের প্রথম দিনে লোটে শেরিং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বুধবার বিকালে বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন লোটে শেরিং। তিনদিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ভুটান ফিরবেন লোটে শেরিং। (দৈনিক মানবজমিন)