প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টায় ১৪ জনের ফাঁসি : ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ বা গুলি করে কার্যকর করার রায়

- প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
- / ৬৩ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ঢাকার দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১১ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ১৪ আসামির প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ বা গুলি করে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমেই এ ধরনের নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামি হলেন- মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান, তারেক, ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম খান।
রায় ঘোষণার আগে গতকাল সোমবার কারাগারে থাকা নয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ও তার আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি মামলার রায় বিচারিক আদালতে আগেই হয়। সোমবার (২২ মার্চ) অপর মামলাটির রায় হলো।
২০০০ সালের ২২ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে শেখ হাসিনার সমাবেশ করার কথা ছিল। ওই সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির সময় ২০ জুলাই কলেজের পাশ থেকে ৭৬ কেজি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার এসআই নূর হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেন।
ওই বছরের ২ জুলাই আদালত মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন। ৮৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। রায়ে নির্ধারিত পদ্ধতি মোতাবেক মৃত্যুদন্ডাপ্তদের গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়। গত ১৭ ফেব্রæয়ারী হাইকোর্টও ওই ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।
এদিকে, ৭৬ কেজি বোমা উদ্ধারের ঘটনায় ওই সময় কোটালীপাড়া থানার এসআই নূর হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা করেন। ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির তৎকালীন এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন।
এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন। ২৮ ফেব্রæয়ারী এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
উভয় মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ারুল হক চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে উভয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মৃত্যুদন্ডেও যেন বিচলিত নয় আসামিরা
তবে আদালতের এ রায়ে যেন বিচলিত নয় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা! আদালতে প্রবেশ করা থেকে রায় ঘোষণার শেষ পর্যন্ত এবং আদালত থেকে বের হওয়ার পরও হাস্যোজ্জ্বল থাকতে দেখা গেছে তাদের। ঢাকার দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর বিচারক এজলাসে আসা পর্যন্ত পুরো সময়জুড়ে আসামিদের নিজেদের মধ্যে হাসিখুশিভাবে কথা বলতে দেখা গেছে।
বিচারক এজলাসে আসার পর রায় পড়া শুরু করেন, তখন আসামিরা শান্ত থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে রায় পড়া শোনে। রায় ঘোষণা শেষ হলে আসামিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। এর আগে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর ও ইনকিলাব)