নিউইয়র্ক ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অজানা তথ্য : আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন মেগান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মার্চ ২০২১
  • / ১৪৬ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পদশালী ও আভিজাত্যে মোড়া। সেই আভিজাত্যে কালোর কোনও জায়গা নেই। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের পুত্রবধূ মেগান মার্কেল চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার গায়ের রং কালো। সেক্ষেত্রে আমার সন্তান হলে তাদের গায়ের রং কতটা কালো হবে তা নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলত রাজপ্রাসাদে।’ মেগান জানিয়েছে প্রিন্স হ্যারিকে বিয়ে করার পর ব্রিটিশ রাজপরিবারে এতটা বর্ণবাদী নিগ্রহ তাকে সইতে হয়েছে যে তিনি আত্মহত্যার খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে এর আগে সরব হয়েছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ব্রিটেনের রাজপরিবারের অন্দরমহলেও গায়ের রং নিয়ে এই বাছবিচারে অবাক গোটা বিশ্ব। মেগানের এই সাক্ষাৎকারের পর উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন। মেগানের দাবি, তিনি তখন গর্ভবতী। সেই সময় তার স্বামী তথা ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারিকে ডেকে বলা হয়েছিল, যদি তাদের ছেলের গায়ের রং কালো হয়, তাহলে তাকে রাজকুমার বলে মেনে নেয়া হবে না। রাজপরিবারের বড় ঘরে এই নিম্নস্তরের আলোচনার কারণে মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও মনে হত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য ডাচেস অব সাসেক্স মেগানের।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

আমেরিকান জনপ্রিয় উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রেকে দেওয়া দুই ঘন্টার এক সাক্ষাৎকারের বিস্ফোরক অনেক তথ্যই দিলেন মেগান ও হ্যারি। রোববার রাতে তার ওই সাক্ষাৎকার যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস চ্যানেলে প্রচারিত হয়। যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে সাক্ষাৎকারটি দেখানো হয় সোমবার রাত নটায়। গার্ডিয়ান সাক্ষাৎকারের আদ্যোপান্ত লিখেছে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবনে থেকেও ভালো ছিলেন না প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ও সাবেক আমেরিকান অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। বলেছেন, পরিবারের মধ্য থেকেও তিনি এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে একটা সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন। ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন।
অপরাহ্ উইনফ্রেকে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে কয়েক শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে অনেক অজানা ও অপ্রিয় কথা বলেছেন হ্যারি ও মেগান দম্পতি। ৭ মার্চ (রোববার) যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টিভিতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। ‘অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ টিভি শোটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতেও স্থানীয় সময় সোমবার রাতে প্রচার করা হয়।
রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই মেগানের দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে হ্যারিও প্রাসাদ জীবনে নিজের অনেক অপ্রিয় অভিজ্ঞতা-অনুভ‚তির কথা ব্যক্ত করেছেন। উইনফ্রের এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, বাকিংহাম প্যালেসের একজন শিকারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার ছেলে আর্চির গায়ের রং কত কালো হতে পারে, সে অনুমান করা থেকে শুরু করে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতবার মধ্যাহ্নভোজে গেছেন-সবকিছুতে নাক গলাত প্যালেস। মেগান বলেন, যখন আর্চি গর্ভে ছিল, তখন তাকে জানানো হয়, তার সন্তানকে প্রিন্স বা সিকিউরিটি উপাধিতে ভ‚ষিত করা হবে না; যদিও এটি ছিল প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম। এটি তাকে মর্মাহত করেছিল। তারা আশা করছিলেন তাদের দ্বিতীয় সন্তান হবে মেয়ে।
উইনফ্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজপরিবারে কাটানো জীবনের নানা জটিলতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আটকাতে চেষ্টা করেন মেগান। বলেন, বেঁচে থাকার ইচ্ছেই চলে গিয়েছিল। জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অনুভ‚তিগুলো ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। মেগান বলেন, ‘ওই সময় কথাগুলো প্রকাশ করতে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে হ্যারিকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেননা, আমি জানতাম, সে নিজেই এই পরিবারে কতটা ভুক্তভোগী। তবে এও জানতাম, আমি যদি না বলি, তবে তা (আত্মহত্যা) করেই ফেলব…আসলে আমি আর বেঁচে থাকতে চাইছিলাম না’, বলেন মেগান।
মেগান বলেন, রাজপরিবারে থাকাকালীন তার মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও শতাব্দী প্রাচীন বাকিংহাম প্যালেসের চক্রান্তের শিকার তিনি। রাজপরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ দেখার চেয়ে তাকে কেমনভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা চলছিল। হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবারে কীভাবে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে আরও কিছু অভিযোগ করেন মেগান মার্কেল। যেমন: তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খুব বেশি নজরে পড়ায় একপর্যায়ে বন্ধুদের সঙ্গে তার মধ্যাহ্নভোজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘অবস্থা এমন যে আমি সবখানে আছি, কিন্তু আমি কোথাও নেই’, বলেন তিনি। রাজপ্রাসাদে থাকা নিজের জন্য অসহনীয় বোঝা হয়ে উঠলে মেগান বাকিংহাম প্যালেসের মানবসম্পদ বিভাগের সহায়তা চান। এ সময় তাকে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী নন। তাই তাকে অন্য কোথাও সহায়তা চাইতে হবে।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

ডাচেস অব সাসেক্স বলেন, হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবার নিজে থেকেই তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু বাকিংহাম প্যালেসকে যারা চালান, তাদের থেকে পরিবারটির সদস্যরা ছিলেন আলাদা রকমের। তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সব সময়ই ছিলেন একজন চমৎকার, আন্তরিক ও শুভাকাঙ্খী মনের মানুষ। প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী ডাচেস অব কেমব্রিজ কেটের সঙ্গে নিজের বিরোধ নিয়ে প্রচলিত গুজব সম্পর্কেও কথা বলেন মেগান। বলেন, পোশাক নিয়ে কেটকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি, এমন খবর সঠিক নয়। বরং সত্য হলো, তিনি নিজেই কেঁদেছিলেন। হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, মেগান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজপরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায়নি। এ নিয়ে কথাও হতো না। হ্যারি আরও বলেন, মেগানের সঙ্গে তার সম্পর্কই তাকে বাঁচিয়েছে। এ সময় মেগান তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বরং হ্যারির সিদ্ধান্তই গোটা পরিবারকে টিকিয়েছে।’ তখন হ্যারি বলেন, ‘আমাদের যা করা উচিত ছিল, আমরা সেটিই করেছি।’
রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিষয়ে হ্যারি বলেন, তিনি সব সময় তার বাবা প্রিন্স চার্লসকে ভালোবাসবেন। কিন্তু তার আচরণ তাকে ‘হতাশ’ করেছে। ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে হ্যারি বলেন, তিনি তাকেও ভালোবাসেন; তবে তাদের দুজনের পথচলা ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে ভালোবাসি, আগেও যেমনটা বলেছি। তিনি আমার ভাই এবং আমরা একসঙ্গে একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা একই। তবে আমরা আলাদা পথে আছি।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে হ্যারি ও মেগান দুজনই বলেন, যদি প্যালেসের সবার সমর্থন পেতেন, তবে রাজপরিবারের সদস্য হয়েই তারা থেকে যেতে পারতেন। হ্যারি অপরাহকে জানান, মেগান ও রাজপরিবারের মধ্যে সম্পর্কের মোড় পাল্টে যায় অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সফরে যাওয়ার পর। সেখানে সাধারণ মানুষ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেগান যেভাবে নির্দ্বিধায় মিশে যান, তাতে রাজপরিবারের সদস্যরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে মেগানের মধ্যে মা প্রিন্সেস ডায়ানার পরিণতিই দেখতে পাচ্ছিলেন বলে জানান হ্যারি।
এক বছর আগে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে তাদের নেয়া এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রাজপরিবারে। ওই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। এই দম্পতি জানিয়েছিলেন, তারা স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান। সম্প্রতি হ্যারি ও মেগান জানিয়ে দেন, তারা আর কখনো রাজদায়িত্বে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্সকে তাদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর গত বছর হ্যারি ও মেগান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন। এরপর থেকে এক নতুন জীবন শুরু করেছেন এই দম্পতি।
প্রসঙ্গত, মেগানের বাবা শেতাঙ্গ হলেও মা আফ্রিকান বংশোদ্ভ‚ত। আর মায়ের গায়ের রং পেয়েছেন মেগান। ব্রিটিশ রাজপরিবার তাকে বাড়ির অন্দরমহলে স্বাদরে গ্রহণ করেছিল। হ্যারি-মেগানের বিয়ে ছিল চোখ ধাঁধানো। কিন্তু নতুন রানির গায়ের রং নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না রাজপরিবার, জানিয়েছেন মেগান। তিনি আরও বলেন, এই যাবতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য রাজপরিবারের অন্যতম প্রবীণ এবং ক্ষমতাশালী মানুষের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিও মেগানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

বৃটিশ ট্যাবলয়েডগুলো-কে লক্ষ্য করে মেগান বলেন, যখন ট্যাবলয়েডগুলো তাকে লক্ষ্য করে বর্ণবাদী আঘাতগুলো করতে লাগলো, তখনও রাজপরিবারের এক সদস্য তাদের রক্ষা তো দূরে থাক, উল্টো তার সন্তান আর্চিকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে না জানিয়ে দিলো। ট্যাবলয়েডের এই আক্রমণের বিষয়ে কিছু একটা করার জন্য বারবার আবেদন করা সত্তে¡ও রাজপরিবারের কেউ কর্ণপাত করেননি বলেও অভিযোগ করেন মেগান। “আমি কেন বেঁচে আছি, যেন সে কারণেই এসব হচ্ছিল”- কান্নায় ভেঙে পড়া মেগান বলেন। “আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি। মরেই যাবো,স্পষ্টভাবে এই ভয়াবহ চিন্তাটাই ছিল সার্বক্ষণিক।”
তার মিশ্র উত্তরাধিকার বা আগে বিয়ে হয়েছিল, এসব কারণেই কী অমন পরিস্থিতি হয়েছিল কিনা- অপরাহ’র এমন প্রশ্নে মেগান বলেন, “আমি মরার কথা ভেবেছিলাম, কারণ আমাকে তারা বাধ্য করেছিল এমন করে ভাবতে।” তবে মেগান বা হ্যারি সাক্ষাৎকারে রাণী এলিজাবেথের প্রশংসা করেছেন এবং রাজপরিবারের কোনো সদস্যদের নাম ধরে অভিযোগ করেননি। বরং তারাও যে কোনো সময় ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর শিকারে পরিণত হতে পারেন সেই ভয়েই থাকেন, যে কোনো সময় দৈত্য-দানব বানিয়ে ফেলতে পারেন। যেমনটা মেগানের ক্ষেত্রে হয়েছে।
মেগান ও হ্যারি দু’জনই অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করেন রাজপরিবার তাদের বিয়ের সময় কীভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু যখন মেগান জনপরিসরে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে শুরু করলেন, বিশেষ করে যখন আর্চি গর্ভে এলো তার, তখন থেকেই শুরু হয়ে গেলো সমস্যা।
একটির কথা মেগান বলেন। সেটা ছিল- যখন তিনদিনের মহাধুমধামের অনুষ্ঠানমালার পর তাদের বিয়ে পড়ানো হলো, তার পরপরই একটি ট্যাবলয়েডে খবর ছাপা হলো মেগান নাকি তার ভাবী, প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী কেইট মিডলটন যাকে ‘ডাচেস অব কেমকিব্রজ’ বলা হয়, তাকে কাঁদিয়েছেন।
মেগান বলছেন, আসলে ঘটনা ছিল পুরো উল্টো। কেইটই তাকে কাঁদিয়েছিলেন। পরে তার কাছে ক্ষমা চান, তাকে ফুল উপহার দেন। মেগানকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে যা- কেইট যে তাকে কষ্ট দিয়েছিলেন সেটা না, বরং রাজপরিবারের একটা মানুষ ট্যাবলয়েডের এই মিথ্যাচার নিয়ে একটা কথা বললো না!
মেগান বলেন, তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল রাজপরিবার যে তাকে বলেছিল তারা তাকে সুরক্ষা দেবে সেই কথায় বিশ্বাস করা। প্রথম থেকেই তারা বলে আসছিল সে যেন তার অভিনয় পেশা চালিয়ে যেতে থাকে, কেননা তাদের পরিপোষণের জন্য কোনো অর্থ রাজপরিবারের কোষাগারে নেই। তিনি যখন প্রাসাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গেলেন এ নিয়ে, তারা তাকে জানিয়ে দিলো, বিষয়টা নিয়ে তারা অত্যন্ত মর্মাহত কিন্তু তাদের কিছু করার নেই। রাজপরিবারে কর্মরতরা তাকে এ-ও বলেছে তার জন্য কোনো মানসিক সহায়তাও দিতে পারবে না তারা, কেননা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য তা কোনো ভালো ব্যাপার হবে না।
প্রিন্স হ্যারি যোগ করেন, “মনে হতো রাজপরিবারে আমার যত আত্মীয়-স্বজন আছেন তারা এ ব্যাপারে এরকমই করবেন এমন একটি ভাবনা ভেবে রেখেছিলন, আর তাদের করণীয় ছিল আমাদের জন্য পরিস্থিতিটা আরো কঠিন করে তোলা।” প্রিন্স হ্যারি বলেন, “আমার কাছে বর্ণের প্রসঙ্গটাই অন্যরকম লাগতো। আমি তাদের বলেছি, এটা আখেরে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।”

প্রিন্স হ্যারি-মেগান মার্কেল ও আর্চি

সাক্ষাৎকারে মেগান জানান, আর্চি পেটে থাকতে হ্যারির সঙ্গে রয়াল আলবার্ট হলে যে ছবি তোলা হয়েছিল, সেটা মানুষের সামনে নিজেকে জাহির করার জন্য নয়, বরং একা থাকলে যে বিপদ ঘটতে পারতো সে কথা ভেবেই অংশ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে হ্যারি শক্ত করে ধরেছিলেন মেগানের হাত।
ওই সকালেই তিনি হ্যারিকে জানিয়েছিলেন তার আত্মহত্যার চিন্তার কথা। মেগান বলেন, “আমি খুব লজ্জিত ছিলাম ওটা বলার জন্য। কিন্তু আমি জানি আমি যদি না বলতাম, আমি আত্মহত্যা করে ফেলতাম।”
এরপরই হ্যারি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। ওই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। হ্যারি তাকে বলেন, তার মার [ডায়না] সঙ্গে যা ঘটেছিল, সেরকম কিছু হতে দেবেন না তিনি। তাদের ছেলে আর্চি আসার ঘোষণা দেওয়ার পর এই দম্পতি রাজকীয় বিষয়াদি থেকে বিযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে। তারা প্রথম যায় কানাডায়। সেখানে তারা ভেবেছিল কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হওয়ায় তারা কোনো একটা ভূমিকা পালন করতে পারবে, কিন্তু পরে ব্রিটিশ রাজপরিবার তাদের নিরাপত্তা তুলে নেয়। সেসময় আবার করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলো।
তারপর নিজেদের অরক্ষিত বিবেচনা করে তখন তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। সেখানে প্রযোজক টাইলার পেরি তাদের কোনো একটা ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে থাকতে দেন এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। তারপর তারা দুজন মন্টেসিটোতে নিজেদের বাড়ি কেনে। তার পাশে সান্তা বারবারায় থাকেন সাক্ষাৎকার নেওয়া অপরাহ নিজেও। উভয়ে পরিচিত বন্ধুর বাড়ির বাগানে একটা বারান্দায় এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় জানানো হয়েছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।
এদিকে প্রিন্স হ্যাারি ও মেগানের এই সাক্ষাৎকার নিয়ে আরেক দফা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা দু’জন রাজপরিবারের দু’জন সদস্যকে লক্ষ্য করে বাজে কথা বলেছেন। আরেকজনকে ছোট করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দু’জনের মুখপাত্র বলেছে, “হিসেব কষে বদনাম ছড়ানো হচ্ছে, বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর তথ্য দিয়ে।” যাই হোক, রাজপরিবার বলছে, সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে।
অপরদিকে সানডে টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে রাণী বলেছেন- এই সাক্ষাৎকার তিনি দেখবেন না। তবে কাউকে যদি আঘাত করা হয়, রাজপরিবার ব্যবস্থা নেবে।
হ্যারি সাক্ষাৎকারে আরো জানায়, রাজপরিবার থেকে তাদের কোনো ধরনের আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া যে টাকাগুলো ছিল তা দিয়ে তারা একটি থাকার জায়গা করেছেন। এছাড়া নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রযোজনায় নামার বিষয়ে।
ওই সাক্ষাৎকারে হ্যারি জানিয়েছেন, তার ভাই উইলিয়ামের সঙ্গে তার ‘দুরত্ব’ আছে। বাবা প্রিন্স চার্লস তার কল ধরেন না। এ নিয়ে কিছু একটা করার কথাও বলেন তিনি। প্রিন্স চার্লস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “খুব খারাপ লাগে। অনেক আঘাতের ঘটনা ঘটেছে।” সূত্র: বিবিসি, সিএনএন ও সিবিএস নিউজ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অজানা তথ্য : আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন মেগান

প্রকাশের সময় : ০১:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মার্চ ২০২১

হককথা ডেস্ক: ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পদশালী ও আভিজাত্যে মোড়া। সেই আভিজাত্যে কালোর কোনও জায়গা নেই। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের পুত্রবধূ মেগান মার্কেল চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার গায়ের রং কালো। সেক্ষেত্রে আমার সন্তান হলে তাদের গায়ের রং কতটা কালো হবে তা নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলত রাজপ্রাসাদে।’ মেগান জানিয়েছে প্রিন্স হ্যারিকে বিয়ে করার পর ব্রিটিশ রাজপরিবারে এতটা বর্ণবাদী নিগ্রহ তাকে সইতে হয়েছে যে তিনি আত্মহত্যার খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে এর আগে সরব হয়েছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ব্রিটেনের রাজপরিবারের অন্দরমহলেও গায়ের রং নিয়ে এই বাছবিচারে অবাক গোটা বিশ্ব। মেগানের এই সাক্ষাৎকারের পর উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন। মেগানের দাবি, তিনি তখন গর্ভবতী। সেই সময় তার স্বামী তথা ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারিকে ডেকে বলা হয়েছিল, যদি তাদের ছেলের গায়ের রং কালো হয়, তাহলে তাকে রাজকুমার বলে মেনে নেয়া হবে না। রাজপরিবারের বড় ঘরে এই নিম্নস্তরের আলোচনার কারণে মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও মনে হত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য ডাচেস অব সাসেক্স মেগানের।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

আমেরিকান জনপ্রিয় উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রেকে দেওয়া দুই ঘন্টার এক সাক্ষাৎকারের বিস্ফোরক অনেক তথ্যই দিলেন মেগান ও হ্যারি। রোববার রাতে তার ওই সাক্ষাৎকার যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস চ্যানেলে প্রচারিত হয়। যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে সাক্ষাৎকারটি দেখানো হয় সোমবার রাত নটায়। গার্ডিয়ান সাক্ষাৎকারের আদ্যোপান্ত লিখেছে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবনে থেকেও ভালো ছিলেন না প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ও সাবেক আমেরিকান অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। বলেছেন, পরিবারের মধ্য থেকেও তিনি এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে একটা সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন। ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন।
অপরাহ্ উইনফ্রেকে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে কয়েক শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে অনেক অজানা ও অপ্রিয় কথা বলেছেন হ্যারি ও মেগান দম্পতি। ৭ মার্চ (রোববার) যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টিভিতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। ‘অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ টিভি শোটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতেও স্থানীয় সময় সোমবার রাতে প্রচার করা হয়।
রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই মেগানের দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে হ্যারিও প্রাসাদ জীবনে নিজের অনেক অপ্রিয় অভিজ্ঞতা-অনুভ‚তির কথা ব্যক্ত করেছেন। উইনফ্রের এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, বাকিংহাম প্যালেসের একজন শিকারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার ছেলে আর্চির গায়ের রং কত কালো হতে পারে, সে অনুমান করা থেকে শুরু করে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতবার মধ্যাহ্নভোজে গেছেন-সবকিছুতে নাক গলাত প্যালেস। মেগান বলেন, যখন আর্চি গর্ভে ছিল, তখন তাকে জানানো হয়, তার সন্তানকে প্রিন্স বা সিকিউরিটি উপাধিতে ভ‚ষিত করা হবে না; যদিও এটি ছিল প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম। এটি তাকে মর্মাহত করেছিল। তারা আশা করছিলেন তাদের দ্বিতীয় সন্তান হবে মেয়ে।
উইনফ্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজপরিবারে কাটানো জীবনের নানা জটিলতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আটকাতে চেষ্টা করেন মেগান। বলেন, বেঁচে থাকার ইচ্ছেই চলে গিয়েছিল। জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অনুভ‚তিগুলো ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। মেগান বলেন, ‘ওই সময় কথাগুলো প্রকাশ করতে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে হ্যারিকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেননা, আমি জানতাম, সে নিজেই এই পরিবারে কতটা ভুক্তভোগী। তবে এও জানতাম, আমি যদি না বলি, তবে তা (আত্মহত্যা) করেই ফেলব…আসলে আমি আর বেঁচে থাকতে চাইছিলাম না’, বলেন মেগান।
মেগান বলেন, রাজপরিবারে থাকাকালীন তার মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও শতাব্দী প্রাচীন বাকিংহাম প্যালেসের চক্রান্তের শিকার তিনি। রাজপরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ দেখার চেয়ে তাকে কেমনভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা চলছিল। হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবারে কীভাবে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে আরও কিছু অভিযোগ করেন মেগান মার্কেল। যেমন: তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খুব বেশি নজরে পড়ায় একপর্যায়ে বন্ধুদের সঙ্গে তার মধ্যাহ্নভোজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘অবস্থা এমন যে আমি সবখানে আছি, কিন্তু আমি কোথাও নেই’, বলেন তিনি। রাজপ্রাসাদে থাকা নিজের জন্য অসহনীয় বোঝা হয়ে উঠলে মেগান বাকিংহাম প্যালেসের মানবসম্পদ বিভাগের সহায়তা চান। এ সময় তাকে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী নন। তাই তাকে অন্য কোথাও সহায়তা চাইতে হবে।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

ডাচেস অব সাসেক্স বলেন, হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবার নিজে থেকেই তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু বাকিংহাম প্যালেসকে যারা চালান, তাদের থেকে পরিবারটির সদস্যরা ছিলেন আলাদা রকমের। তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সব সময়ই ছিলেন একজন চমৎকার, আন্তরিক ও শুভাকাঙ্খী মনের মানুষ। প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী ডাচেস অব কেমব্রিজ কেটের সঙ্গে নিজের বিরোধ নিয়ে প্রচলিত গুজব সম্পর্কেও কথা বলেন মেগান। বলেন, পোশাক নিয়ে কেটকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি, এমন খবর সঠিক নয়। বরং সত্য হলো, তিনি নিজেই কেঁদেছিলেন। হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, মেগান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজপরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায়নি। এ নিয়ে কথাও হতো না। হ্যারি আরও বলেন, মেগানের সঙ্গে তার সম্পর্কই তাকে বাঁচিয়েছে। এ সময় মেগান তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বরং হ্যারির সিদ্ধান্তই গোটা পরিবারকে টিকিয়েছে।’ তখন হ্যারি বলেন, ‘আমাদের যা করা উচিত ছিল, আমরা সেটিই করেছি।’
রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিষয়ে হ্যারি বলেন, তিনি সব সময় তার বাবা প্রিন্স চার্লসকে ভালোবাসবেন। কিন্তু তার আচরণ তাকে ‘হতাশ’ করেছে। ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে হ্যারি বলেন, তিনি তাকেও ভালোবাসেন; তবে তাদের দুজনের পথচলা ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে ভালোবাসি, আগেও যেমনটা বলেছি। তিনি আমার ভাই এবং আমরা একসঙ্গে একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা একই। তবে আমরা আলাদা পথে আছি।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে হ্যারি ও মেগান দুজনই বলেন, যদি প্যালেসের সবার সমর্থন পেতেন, তবে রাজপরিবারের সদস্য হয়েই তারা থেকে যেতে পারতেন। হ্যারি অপরাহকে জানান, মেগান ও রাজপরিবারের মধ্যে সম্পর্কের মোড় পাল্টে যায় অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সফরে যাওয়ার পর। সেখানে সাধারণ মানুষ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেগান যেভাবে নির্দ্বিধায় মিশে যান, তাতে রাজপরিবারের সদস্যরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে মেগানের মধ্যে মা প্রিন্সেস ডায়ানার পরিণতিই দেখতে পাচ্ছিলেন বলে জানান হ্যারি।
এক বছর আগে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে তাদের নেয়া এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রাজপরিবারে। ওই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। এই দম্পতি জানিয়েছিলেন, তারা স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান। সম্প্রতি হ্যারি ও মেগান জানিয়ে দেন, তারা আর কখনো রাজদায়িত্বে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্সকে তাদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর গত বছর হ্যারি ও মেগান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন। এরপর থেকে এক নতুন জীবন শুরু করেছেন এই দম্পতি।
প্রসঙ্গত, মেগানের বাবা শেতাঙ্গ হলেও মা আফ্রিকান বংশোদ্ভ‚ত। আর মায়ের গায়ের রং পেয়েছেন মেগান। ব্রিটিশ রাজপরিবার তাকে বাড়ির অন্দরমহলে স্বাদরে গ্রহণ করেছিল। হ্যারি-মেগানের বিয়ে ছিল চোখ ধাঁধানো। কিন্তু নতুন রানির গায়ের রং নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না রাজপরিবার, জানিয়েছেন মেগান। তিনি আরও বলেন, এই যাবতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য রাজপরিবারের অন্যতম প্রবীণ এবং ক্ষমতাশালী মানুষের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিও মেগানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল

বৃটিশ ট্যাবলয়েডগুলো-কে লক্ষ্য করে মেগান বলেন, যখন ট্যাবলয়েডগুলো তাকে লক্ষ্য করে বর্ণবাদী আঘাতগুলো করতে লাগলো, তখনও রাজপরিবারের এক সদস্য তাদের রক্ষা তো দূরে থাক, উল্টো তার সন্তান আর্চিকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে না জানিয়ে দিলো। ট্যাবলয়েডের এই আক্রমণের বিষয়ে কিছু একটা করার জন্য বারবার আবেদন করা সত্তে¡ও রাজপরিবারের কেউ কর্ণপাত করেননি বলেও অভিযোগ করেন মেগান। “আমি কেন বেঁচে আছি, যেন সে কারণেই এসব হচ্ছিল”- কান্নায় ভেঙে পড়া মেগান বলেন। “আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি। মরেই যাবো,স্পষ্টভাবে এই ভয়াবহ চিন্তাটাই ছিল সার্বক্ষণিক।”
তার মিশ্র উত্তরাধিকার বা আগে বিয়ে হয়েছিল, এসব কারণেই কী অমন পরিস্থিতি হয়েছিল কিনা- অপরাহ’র এমন প্রশ্নে মেগান বলেন, “আমি মরার কথা ভেবেছিলাম, কারণ আমাকে তারা বাধ্য করেছিল এমন করে ভাবতে।” তবে মেগান বা হ্যারি সাক্ষাৎকারে রাণী এলিজাবেথের প্রশংসা করেছেন এবং রাজপরিবারের কোনো সদস্যদের নাম ধরে অভিযোগ করেননি। বরং তারাও যে কোনো সময় ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর শিকারে পরিণত হতে পারেন সেই ভয়েই থাকেন, যে কোনো সময় দৈত্য-দানব বানিয়ে ফেলতে পারেন। যেমনটা মেগানের ক্ষেত্রে হয়েছে।
মেগান ও হ্যারি দু’জনই অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করেন রাজপরিবার তাদের বিয়ের সময় কীভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু যখন মেগান জনপরিসরে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে শুরু করলেন, বিশেষ করে যখন আর্চি গর্ভে এলো তার, তখন থেকেই শুরু হয়ে গেলো সমস্যা।
একটির কথা মেগান বলেন। সেটা ছিল- যখন তিনদিনের মহাধুমধামের অনুষ্ঠানমালার পর তাদের বিয়ে পড়ানো হলো, তার পরপরই একটি ট্যাবলয়েডে খবর ছাপা হলো মেগান নাকি তার ভাবী, প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী কেইট মিডলটন যাকে ‘ডাচেস অব কেমকিব্রজ’ বলা হয়, তাকে কাঁদিয়েছেন।
মেগান বলছেন, আসলে ঘটনা ছিল পুরো উল্টো। কেইটই তাকে কাঁদিয়েছিলেন। পরে তার কাছে ক্ষমা চান, তাকে ফুল উপহার দেন। মেগানকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে যা- কেইট যে তাকে কষ্ট দিয়েছিলেন সেটা না, বরং রাজপরিবারের একটা মানুষ ট্যাবলয়েডের এই মিথ্যাচার নিয়ে একটা কথা বললো না!
মেগান বলেন, তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল রাজপরিবার যে তাকে বলেছিল তারা তাকে সুরক্ষা দেবে সেই কথায় বিশ্বাস করা। প্রথম থেকেই তারা বলে আসছিল সে যেন তার অভিনয় পেশা চালিয়ে যেতে থাকে, কেননা তাদের পরিপোষণের জন্য কোনো অর্থ রাজপরিবারের কোষাগারে নেই। তিনি যখন প্রাসাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গেলেন এ নিয়ে, তারা তাকে জানিয়ে দিলো, বিষয়টা নিয়ে তারা অত্যন্ত মর্মাহত কিন্তু তাদের কিছু করার নেই। রাজপরিবারে কর্মরতরা তাকে এ-ও বলেছে তার জন্য কোনো মানসিক সহায়তাও দিতে পারবে না তারা, কেননা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য তা কোনো ভালো ব্যাপার হবে না।
প্রিন্স হ্যারি যোগ করেন, “মনে হতো রাজপরিবারে আমার যত আত্মীয়-স্বজন আছেন তারা এ ব্যাপারে এরকমই করবেন এমন একটি ভাবনা ভেবে রেখেছিলন, আর তাদের করণীয় ছিল আমাদের জন্য পরিস্থিতিটা আরো কঠিন করে তোলা।” প্রিন্স হ্যারি বলেন, “আমার কাছে বর্ণের প্রসঙ্গটাই অন্যরকম লাগতো। আমি তাদের বলেছি, এটা আখেরে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।”

প্রিন্স হ্যারি-মেগান মার্কেল ও আর্চি

সাক্ষাৎকারে মেগান জানান, আর্চি পেটে থাকতে হ্যারির সঙ্গে রয়াল আলবার্ট হলে যে ছবি তোলা হয়েছিল, সেটা মানুষের সামনে নিজেকে জাহির করার জন্য নয়, বরং একা থাকলে যে বিপদ ঘটতে পারতো সে কথা ভেবেই অংশ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে হ্যারি শক্ত করে ধরেছিলেন মেগানের হাত।
ওই সকালেই তিনি হ্যারিকে জানিয়েছিলেন তার আত্মহত্যার চিন্তার কথা। মেগান বলেন, “আমি খুব লজ্জিত ছিলাম ওটা বলার জন্য। কিন্তু আমি জানি আমি যদি না বলতাম, আমি আত্মহত্যা করে ফেলতাম।”
এরপরই হ্যারি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। ওই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। হ্যারি তাকে বলেন, তার মার [ডায়না] সঙ্গে যা ঘটেছিল, সেরকম কিছু হতে দেবেন না তিনি। তাদের ছেলে আর্চি আসার ঘোষণা দেওয়ার পর এই দম্পতি রাজকীয় বিষয়াদি থেকে বিযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে। তারা প্রথম যায় কানাডায়। সেখানে তারা ভেবেছিল কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হওয়ায় তারা কোনো একটা ভূমিকা পালন করতে পারবে, কিন্তু পরে ব্রিটিশ রাজপরিবার তাদের নিরাপত্তা তুলে নেয়। সেসময় আবার করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলো।
তারপর নিজেদের অরক্ষিত বিবেচনা করে তখন তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। সেখানে প্রযোজক টাইলার পেরি তাদের কোনো একটা ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে থাকতে দেন এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। তারপর তারা দুজন মন্টেসিটোতে নিজেদের বাড়ি কেনে। তার পাশে সান্তা বারবারায় থাকেন সাক্ষাৎকার নেওয়া অপরাহ নিজেও। উভয়ে পরিচিত বন্ধুর বাড়ির বাগানে একটা বারান্দায় এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় জানানো হয়েছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।
এদিকে প্রিন্স হ্যাারি ও মেগানের এই সাক্ষাৎকার নিয়ে আরেক দফা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা দু’জন রাজপরিবারের দু’জন সদস্যকে লক্ষ্য করে বাজে কথা বলেছেন। আরেকজনকে ছোট করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দু’জনের মুখপাত্র বলেছে, “হিসেব কষে বদনাম ছড়ানো হচ্ছে, বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর তথ্য দিয়ে।” যাই হোক, রাজপরিবার বলছে, সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে।
অপরদিকে সানডে টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে রাণী বলেছেন- এই সাক্ষাৎকার তিনি দেখবেন না। তবে কাউকে যদি আঘাত করা হয়, রাজপরিবার ব্যবস্থা নেবে।
হ্যারি সাক্ষাৎকারে আরো জানায়, রাজপরিবার থেকে তাদের কোনো ধরনের আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া যে টাকাগুলো ছিল তা দিয়ে তারা একটি থাকার জায়গা করেছেন। এছাড়া নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রযোজনায় নামার বিষয়ে।
ওই সাক্ষাৎকারে হ্যারি জানিয়েছেন, তার ভাই উইলিয়ামের সঙ্গে তার ‘দুরত্ব’ আছে। বাবা প্রিন্স চার্লস তার কল ধরেন না। এ নিয়ে কিছু একটা করার কথাও বলেন তিনি। প্রিন্স চার্লস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “খুব খারাপ লাগে। অনেক আঘাতের ঘটনা ঘটেছে।” সূত্র: বিবিসি, সিএনএন ও সিবিএস নিউজ।