নিউইয়র্ক ১২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফাহিম সালেহের একাউন্টে ৬০ লাখ ডলার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ১৪৪ বার পঠিত

আবু তাহেরঃ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন এক স্বপ্নবাজ যুবক। অনেকের অজান্তেই বিশ্বের শীর্ষ লোকজনের নজরে আসা ফাহিম সালেহ বাংলাদেশের লোকজনের কাছে এক বেদনার নিঃশ্বাস হয়ে উঠেছেন। গত বছরের (২০২০ সাল) জুলাই মাসে নিউইয়র্ক নগরীর ম্যানহাটনে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন ফাহিম। তার এ অকাল মৃত্যু শুধু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীই নয় দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা স্বদেশীদের শোকগ্রস্ত করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে।
বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ ৬০ লাখ ডলারের নগদ অর্থ রেখে গেছেন। উন্নয়নশীল দেশের ‘ইলন মাস্ক’ হিসেবে পরিচিত মাত্র ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম সালেহ গত বছরের জুলাই মাসে নিউইয়র্কের হাউস্টন স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্টে খুন হয়েছিলেন। তার হত্যাকারী হিসেবে গ্রেফতার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিল নামের যুবকটির বিচার এখনো চলছে আদলতে।
ফাহিম সালেহ

মৃত্যুর আগে ফাহিম সালেহ কোন ‘উইল’ (আইনগত উত্তরাধিকারপত্র) রেখে যাননি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সারোগেট আদালতে তার এক বোন রিফায়েত সালেহ ফাহিম সালেহ’র সম্পত্তির ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এ আবেদনের সূত্র ধরে জানা গেছে, মৃত্যুর সময় ফাহিম ৬০ লাখ ডলার রেখে গেছেন।
গত বছর ১৪ জুলাই বিকেলে নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটানে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহর খন্ড-বিখন্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে এই হত্যাকান্ডকে চরম পেশাদার কোনো খুনির কাজ বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ফাহিম সালেহর সাবেক ব্যক্তিগত নির্বাহী, মাত্র ২১ বছরের টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলকে পুলিশ ১৭ জুলাই সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারের পর ঘাতক হ্যাসপিল রহস্যজনক আচরণ করেছে। নিজেকে মানসিক বিভ্রান্ত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আদালত থেকে হ্যাসপিলকে মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছে।
ফাহিম অবিবাহিত ছিলেন। ম্যানহাটনের অ্যাপার্টম্যান্টের জন্য তার ১৮ লাখ ডলারের ব্যাংক ঋণের তথ্য রয়েছে আদালতে করা রিফায়েত সালেহ’র আবেদনে। নিউইয়র্কের রাজ্য আইন অনুযায়ী সালেহ বিবাহিত না থাকা এবং কোন উইল না থাকায় তার সমুদয় অর্থের আইনগত উত্তরাধিকার মা রায়হানা সালেহ এবং বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদের।
পরিবারের পক্ষ থেকে রিফায়েত সালেহ আদালতে দেয়া নথিতে দ্রæততার সাথে ফাহিম সালেহ’র রেখে যাওয়া অর্থের জন্য প্রশাসক নিয়োগের আবেদন জানিয়েছেন। তার রেখে যাওয়া ব্যবসার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য এর প্রয়োজন বলে আবেদনে বলা হয়েছে।
আদালতের আবেদনে বলা হয়েছে, বাবা মা এবং বোনেরা ফাহিম সালেহ’র ব্যবসা এবং তার উচ্চাকাংখা এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। নিষ্ঠুরতার সাথে ফাহিম সালেহ’র চূড়ান্ত সাফল্যের আগেই তাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারক ফাহম সালেহ’র অর্থ থেকে ৪০ লাখ ডলার অর্থ উত্তোলন অনুমোদন দিয়েছেন আবেদনকারীকে। এব্যাপারে নিউইয়র্ক পোস্ট সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যম পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে কোন মন্তব্য না করার কথা জানিয়েছেন।
ফাহিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিল

ফাহিম সালেহ’র হত্যাকান্ডের পর তার বোন এক আবেগঘন ভিডিও বার্তায় স্মরণ করেছিলেন, হত্যাকান্ডের দিন ১৩ জুলাই ফাহিম সালেহ কেমন করে তিন মাইল দৌড়ে ম্যানহাটানের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছিলেন। এরপরই তিনি হত্যাকান্ডের শিকার হোন। রবী সালেহ বলেছিলেন, ‘১৪ জুলাই সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে যখন আমার ফোন বেজে ওঠে, তখনো আমি ছিলাম বিছানায়।’
এই ফোনটি ছিল আত্মীয়ের, যিনি এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ফোনে তিনি যখন বলেন যে একটি দুঃসংবাদ আছে, তখনো বোনের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না যে ঠিক কী শুনতে যাচ্ছেন তিনি। ভেবেছিলেন, তার মা-বাবা বা পরিবারের কারও হয়তো কোভিড-১৯ হয়েছে। এই ভেবেই তিনি শঙ্কিত হন। কিন্তু যখন শোনেন যে দুঃসংবাদটি তাঁর ভাই ফাহিম সালেহ সম্পর্কিত, তখন তিনি স্বম্ভিত হয়ে যান। বলেছিলেন ‘ফাহিম আর আমাদের মধ্যে নেই’ এই কথাটা তাঁর কাছে কোনো অর্থই তৈরি করছিল না।
গত ১১ ডিসেম্বর ছিল ফাহিম সালেহ’র জন্মদিন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নাম অকাল প্রয়াত সন্তান ফাহিম সালেহ’র স্মৃতি নিয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ লিখেছেন। তার লেখায় ‘পাঠাও’ প্রতিষ্ঠার শুরুর গল্প বলতে গিয়ে বিমর্ষ হয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বাবা পুত্রকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ফাহিমের ৩৪তম জন্মদিন! কাকে জানাব জন্মদিনের শুভেচ্ছা! কাকে গিফট পাঠাব? কাকে জড়িয়ে ধরব? কাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যানহাটনে গিয়ে ডিনার করব? কোনো কিছুরই কোনো উত্তর নেই। আমি শুধু চোখ দুটো শূন্যে মেলে চেয়ে থাকি!
এদিকে ফাহিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলকে জামিন দেয়া হয়নি। নিউইয়র্কের নির্জন কারাগারে অবস্থান করা হ্যাসপিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। ১৮ জুলাই হ্যাসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমরা সত্য ঘটনার খুবই প্রারম্ভিক অবস্থায়। এ মামলা দীর্ঘ এবং জটিল হবে।’ টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলের আইনজীবী জনসাধারণকে এ নিয়ে মন খোলা রাখার আহŸান জানিয়েছিলেন। এ মামলা একজনের গ্রেপ্তার ও অভিযোগের চেয়ে আরও বিস্তৃত বলে টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলের আইনজীবী অ্যাটর্নি রবার্টস তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন। করোনা ভাইরাস, লকডাউন সহ নানা কারনে নিউইয়র্কের আদালতগুলোর কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
ফাহিম সালেহ’র হত্যায় জড়িত ২১ বছরের তরুণ হ্যাসপিল সম্পর্কে বিস্তারিত আর কোন নতুন তথ্য পুলিশ জানায়নি।
প্রসিকিউশন এই হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে অর্থের লেনদেন এবং ব্যক্তিগত বিরোধের কথা জানিয়েছিলো। ধার নেয়া ৯০ হাজার ডলার ফেরত না দেয়ার জন্য হ্যাসপিল হত্যাকান্ডে প্ররোচিত হয়েছিলো বলেই পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছিলো। শুরুতে দ্বিতীয় মাত্রা (সেকেন্ড ডিগ্রী)’ র হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হলেও হত্যাকান্ডের জন্য দাঁয়ের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে প্রথম মাত্রা ( ফার্স্ট ডিগ্রী)’র অভিযোগ আনা হয়। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ফাহিম সালেহের একাউন্টে ৬০ লাখ ডলার

প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

আবু তাহেরঃ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন এক স্বপ্নবাজ যুবক। অনেকের অজান্তেই বিশ্বের শীর্ষ লোকজনের নজরে আসা ফাহিম সালেহ বাংলাদেশের লোকজনের কাছে এক বেদনার নিঃশ্বাস হয়ে উঠেছেন। গত বছরের (২০২০ সাল) জুলাই মাসে নিউইয়র্ক নগরীর ম্যানহাটনে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন ফাহিম। তার এ অকাল মৃত্যু শুধু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীই নয় দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা স্বদেশীদের শোকগ্রস্ত করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে।
বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ ৬০ লাখ ডলারের নগদ অর্থ রেখে গেছেন। উন্নয়নশীল দেশের ‘ইলন মাস্ক’ হিসেবে পরিচিত মাত্র ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম সালেহ গত বছরের জুলাই মাসে নিউইয়র্কের হাউস্টন স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্টে খুন হয়েছিলেন। তার হত্যাকারী হিসেবে গ্রেফতার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিল নামের যুবকটির বিচার এখনো চলছে আদলতে।
ফাহিম সালেহ

মৃত্যুর আগে ফাহিম সালেহ কোন ‘উইল’ (আইনগত উত্তরাধিকারপত্র) রেখে যাননি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সারোগেট আদালতে তার এক বোন রিফায়েত সালেহ ফাহিম সালেহ’র সম্পত্তির ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এ আবেদনের সূত্র ধরে জানা গেছে, মৃত্যুর সময় ফাহিম ৬০ লাখ ডলার রেখে গেছেন।
গত বছর ১৪ জুলাই বিকেলে নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটানে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহর খন্ড-বিখন্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে এই হত্যাকান্ডকে চরম পেশাদার কোনো খুনির কাজ বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ফাহিম সালেহর সাবেক ব্যক্তিগত নির্বাহী, মাত্র ২১ বছরের টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলকে পুলিশ ১৭ জুলাই সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারের পর ঘাতক হ্যাসপিল রহস্যজনক আচরণ করেছে। নিজেকে মানসিক বিভ্রান্ত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আদালত থেকে হ্যাসপিলকে মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছে।
ফাহিম অবিবাহিত ছিলেন। ম্যানহাটনের অ্যাপার্টম্যান্টের জন্য তার ১৮ লাখ ডলারের ব্যাংক ঋণের তথ্য রয়েছে আদালতে করা রিফায়েত সালেহ’র আবেদনে। নিউইয়র্কের রাজ্য আইন অনুযায়ী সালেহ বিবাহিত না থাকা এবং কোন উইল না থাকায় তার সমুদয় অর্থের আইনগত উত্তরাধিকার মা রায়হানা সালেহ এবং বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদের।
পরিবারের পক্ষ থেকে রিফায়েত সালেহ আদালতে দেয়া নথিতে দ্রæততার সাথে ফাহিম সালেহ’র রেখে যাওয়া অর্থের জন্য প্রশাসক নিয়োগের আবেদন জানিয়েছেন। তার রেখে যাওয়া ব্যবসার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য এর প্রয়োজন বলে আবেদনে বলা হয়েছে।
আদালতের আবেদনে বলা হয়েছে, বাবা মা এবং বোনেরা ফাহিম সালেহ’র ব্যবসা এবং তার উচ্চাকাংখা এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। নিষ্ঠুরতার সাথে ফাহিম সালেহ’র চূড়ান্ত সাফল্যের আগেই তাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারক ফাহম সালেহ’র অর্থ থেকে ৪০ লাখ ডলার অর্থ উত্তোলন অনুমোদন দিয়েছেন আবেদনকারীকে। এব্যাপারে নিউইয়র্ক পোস্ট সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যম পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে কোন মন্তব্য না করার কথা জানিয়েছেন।
ফাহিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিল

ফাহিম সালেহ’র হত্যাকান্ডের পর তার বোন এক আবেগঘন ভিডিও বার্তায় স্মরণ করেছিলেন, হত্যাকান্ডের দিন ১৩ জুলাই ফাহিম সালেহ কেমন করে তিন মাইল দৌড়ে ম্যানহাটানের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছিলেন। এরপরই তিনি হত্যাকান্ডের শিকার হোন। রবী সালেহ বলেছিলেন, ‘১৪ জুলাই সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে যখন আমার ফোন বেজে ওঠে, তখনো আমি ছিলাম বিছানায়।’
এই ফোনটি ছিল আত্মীয়ের, যিনি এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ফোনে তিনি যখন বলেন যে একটি দুঃসংবাদ আছে, তখনো বোনের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না যে ঠিক কী শুনতে যাচ্ছেন তিনি। ভেবেছিলেন, তার মা-বাবা বা পরিবারের কারও হয়তো কোভিড-১৯ হয়েছে। এই ভেবেই তিনি শঙ্কিত হন। কিন্তু যখন শোনেন যে দুঃসংবাদটি তাঁর ভাই ফাহিম সালেহ সম্পর্কিত, তখন তিনি স্বম্ভিত হয়ে যান। বলেছিলেন ‘ফাহিম আর আমাদের মধ্যে নেই’ এই কথাটা তাঁর কাছে কোনো অর্থই তৈরি করছিল না।
গত ১১ ডিসেম্বর ছিল ফাহিম সালেহ’র জন্মদিন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নাম অকাল প্রয়াত সন্তান ফাহিম সালেহ’র স্মৃতি নিয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ লিখেছেন। তার লেখায় ‘পাঠাও’ প্রতিষ্ঠার শুরুর গল্প বলতে গিয়ে বিমর্ষ হয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বাবা পুত্রকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ফাহিমের ৩৪তম জন্মদিন! কাকে জানাব জন্মদিনের শুভেচ্ছা! কাকে গিফট পাঠাব? কাকে জড়িয়ে ধরব? কাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যানহাটনে গিয়ে ডিনার করব? কোনো কিছুরই কোনো উত্তর নেই। আমি শুধু চোখ দুটো শূন্যে মেলে চেয়ে থাকি!
এদিকে ফাহিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলকে জামিন দেয়া হয়নি। নিউইয়র্কের নির্জন কারাগারে অবস্থান করা হ্যাসপিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। ১৮ জুলাই হ্যাসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমরা সত্য ঘটনার খুবই প্রারম্ভিক অবস্থায়। এ মামলা দীর্ঘ এবং জটিল হবে।’ টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলের আইনজীবী জনসাধারণকে এ নিয়ে মন খোলা রাখার আহŸান জানিয়েছিলেন। এ মামলা একজনের গ্রেপ্তার ও অভিযোগের চেয়ে আরও বিস্তৃত বলে টাইরেস ডেভো হ্যাসপিলের আইনজীবী অ্যাটর্নি রবার্টস তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন। করোনা ভাইরাস, লকডাউন সহ নানা কারনে নিউইয়র্কের আদালতগুলোর কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
ফাহিম সালেহ’র হত্যায় জড়িত ২১ বছরের তরুণ হ্যাসপিল সম্পর্কে বিস্তারিত আর কোন নতুন তথ্য পুলিশ জানায়নি।
প্রসিকিউশন এই হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে অর্থের লেনদেন এবং ব্যক্তিগত বিরোধের কথা জানিয়েছিলো। ধার নেয়া ৯০ হাজার ডলার ফেরত না দেয়ার জন্য হ্যাসপিল হত্যাকান্ডে প্ররোচিত হয়েছিলো বলেই পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছিলো। শুরুতে দ্বিতীয় মাত্রা (সেকেন্ড ডিগ্রী)’ র হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হলেও হত্যাকান্ডের জন্য দাঁয়ের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে প্রথম মাত্রা ( ফার্স্ট ডিগ্রী)’র অভিযোগ আনা হয়। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)