নিউইয়র্ক ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উল আলম-এর ইন্তেকাল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ২৩০ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: বিজয়ের মাসেই চলে গেলেন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাম্বাসাডর ও সচিব কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ (৭৩)। টাঙ্গাইল তথা দেশের এই কৃতি সন্তান বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। তাঁর বড় সখ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী পালন করা। মরণঘাতি করোনা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ হতে দিলো না। তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সহ বহু আতœীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খী রেখে যান।
জানা যায়, গত ১ নভেম্বর তার মাথায় টিউমারের জটিল অপারেশন হয় ১১ ঘন্টা ধরে। তিনি পরবর্তিতে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হাসপাতালে থাকাকালেই তিনি করেনাক্রান্ত হন। এরপর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামে ১৯৪৭ সালে কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ-এর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম, টাঙ্গাইলে ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের সহচর মৌলভী আব্দুর রহিম ইছাপুরী এবং মাতার নাম বেগম ঈদ উন নেছা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করছেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুর পাশে (ডানে) দাঁড়িয়ে আনোয়ারুল আলম শহীদ। ছবি: সংগ্রহ
আনোয়ার উল আলম শহীদ ১৯৬২ সালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত এবং বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আনোয়ার উল আলম এসএম হলের জিএস ছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয় গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় তিনি মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর সাথে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন ওই বাহিনীর উপ প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁকে রক্ষী বাহিনীর উপ পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৫- এর পর আনোয়ার উল আলমকে সেনাবাহিনীতে লে. কর্নেল হিসাবে আত্মীকরণ করা হয়। ১৯৭৭ সালে তাঁকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে তাঁর চাকুরী ন্যাস্ত করেন তদানীন্তন সরকার। সেই থেকে চাকুরী শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন পদে দেশে-বিদেশে কাজ করেছেন।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আনোয়ারুল আলম শহীদ। সাথে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। ছবি: সংগ্রহ
আনোয়ার উল আলম জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারী ছিলেন। জাকার্তা থেকে বদলি হয়ে যান কুয়ালালামপুরে, পরে ব্রæনাই, হংকংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসেও চাকরি করেন তিনি। শেষে সচিব মর্যাদায় বাহরাইন ও স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। বাহরাইন, স্পেনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালন সহ তিনি ১৯৯১ সালের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চীফ অফ প্রটোকল ছিলেন। ২০০৭ সালে সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ করেন। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর টাঙ্গাইলে পৈতৃক ভিটায় ‘শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ গড়ে তোলেন আনোয়ার উল আলম।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আনোয়ার উল আলম শহীদের অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদেরীয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য ১৯৭১ সালে কাদেরীয়া বাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে প্রকাশিত মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র ‘রণাঙ্গন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘রণদূত’ ছদ্মনামে আনোয়ার উল আলম শহীদ সেই পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সা।দি চৌধুরীর সাথে আনোয়ারুল আলম শহীদ। ছবি: সংগ্রহ
মরহুম আনোয়ার উল আলম শহীদের স্ত্রী ডা. সাঈদা আলম মিডিয়াকে জানান, তিনি (আনোয়ার উল আলম শহীদ) দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাদ জুমা ঢাকার বনানী আর্মি কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
শোক প্রকাশ: টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাম্বাসাডর ও সচিব কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ-এর ইন্তেকালে তাঁর রণাঙ্গনের সাথী, একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিউজার্সীর প্লেইন্স বরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরনি নবী এক শোক বার্তায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
এছাড়াও টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ এক শোক বার্তায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উল আলম-এর ইন্তেকাল

প্রকাশের সময় : ০১:৩৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

হককথা রিপোর্ট: বিজয়ের মাসেই চলে গেলেন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাম্বাসাডর ও সচিব কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ (৭৩)। টাঙ্গাইল তথা দেশের এই কৃতি সন্তান বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। তাঁর বড় সখ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী পালন করা। মরণঘাতি করোনা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ হতে দিলো না। তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সহ বহু আতœীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খী রেখে যান।
জানা যায়, গত ১ নভেম্বর তার মাথায় টিউমারের জটিল অপারেশন হয় ১১ ঘন্টা ধরে। তিনি পরবর্তিতে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হাসপাতালে থাকাকালেই তিনি করেনাক্রান্ত হন। এরপর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামে ১৯৪৭ সালে কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ-এর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম, টাঙ্গাইলে ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের সহচর মৌলভী আব্দুর রহিম ইছাপুরী এবং মাতার নাম বেগম ঈদ উন নেছা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করছেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুর পাশে (ডানে) দাঁড়িয়ে আনোয়ারুল আলম শহীদ। ছবি: সংগ্রহ
আনোয়ার উল আলম শহীদ ১৯৬২ সালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত এবং বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আনোয়ার উল আলম এসএম হলের জিএস ছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয় গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় তিনি মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর সাথে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন ওই বাহিনীর উপ প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁকে রক্ষী বাহিনীর উপ পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৫- এর পর আনোয়ার উল আলমকে সেনাবাহিনীতে লে. কর্নেল হিসাবে আত্মীকরণ করা হয়। ১৯৭৭ সালে তাঁকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে তাঁর চাকুরী ন্যাস্ত করেন তদানীন্তন সরকার। সেই থেকে চাকুরী শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন পদে দেশে-বিদেশে কাজ করেছেন।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আনোয়ারুল আলম শহীদ। সাথে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। ছবি: সংগ্রহ
আনোয়ার উল আলম জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারী ছিলেন। জাকার্তা থেকে বদলি হয়ে যান কুয়ালালামপুরে, পরে ব্রæনাই, হংকংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসেও চাকরি করেন তিনি। শেষে সচিব মর্যাদায় বাহরাইন ও স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। বাহরাইন, স্পেনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালন সহ তিনি ১৯৯১ সালের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চীফ অফ প্রটোকল ছিলেন। ২০০৭ সালে সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ করেন। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর টাঙ্গাইলে পৈতৃক ভিটায় ‘শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ গড়ে তোলেন আনোয়ার উল আলম।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আনোয়ার উল আলম শহীদের অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদেরীয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য ১৯৭১ সালে কাদেরীয়া বাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে প্রকাশিত মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র ‘রণাঙ্গন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘রণদূত’ ছদ্মনামে আনোয়ার উল আলম শহীদ সেই পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সা।দি চৌধুরীর সাথে আনোয়ারুল আলম শহীদ। ছবি: সংগ্রহ
মরহুম আনোয়ার উল আলম শহীদের স্ত্রী ডা. সাঈদা আলম মিডিয়াকে জানান, তিনি (আনোয়ার উল আলম শহীদ) দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাদ জুমা ঢাকার বনানী আর্মি কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
শোক প্রকাশ: টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাম্বাসাডর ও সচিব কর্নেল আনোয়ার উল আলম শহীদ-এর ইন্তেকালে তাঁর রণাঙ্গনের সাথী, একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিউজার্সীর প্লেইন্স বরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরনি নবী এক শোক বার্তায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
এছাড়াও টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ এক শোক বার্তায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন।