ফ্যাশনের অংশ এখন মাস্ক

- প্রকাশের সময় : ১২:২৫:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০
- / ৮৩ বার পঠিত
মোরসালিন মিজান: আর কোন পথ আপাতত খোলা নেই। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিজেকে সুরক্ষার এই একটিই পথ। ফাঁকি, হ্যাঁ, দেয়াই যায়। তাতে নিজের ক্ষতি বৈ লাভ কিছু হবে না। বুদ্ধিমানরা তাই অনেক আগেই করণীয় ঠিক করে ফেলেছিলেন। নিউ নরমাল জীবনের অংশ করে নিয়েছিলেন মুখবন্ধনীকে। আর বর্তমানে? এটি ফ্যাশনেরও অংশ! কাজ তো হচ্ছেই। সেইসঙ্গে ফ্যাশন। শিল্পসুন্দর মাস্ক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্ব ফান রুচিকে দারুণভাবে প্রকাশ করছে।
গত মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। তখন থেকেই মাস্ক ব্যবহার শুরু। অচেনা ব্যাধি ঘিরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছিল। সে আতঙ্ক থেকেই টুকরো কাপড়ে নাক মুখ আড়াল করার সচেতন চেষ্টা। তারপর দেখতে দেখতে আট মাস গত হয়েছে। অতিমারী দূর হওয়ার কোন লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু দ্বিতীয় ওয়েভের শঙ্কা জোড়ালো হচ্ছে। ভ্যাকসিনও আসার দিনক্ষণ পেছাচ্ছে শুধু। ‘আসি’ ‘আসি।’ আসছে আর না। এ অবস্থায় প্রতিষেধক হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মাস্ককেই ভ্যাকসিন হিসেবে নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সা¤প্রতিক সময়ে দেশে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া বের হলে জরিমানা করার জন্য বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সব মিলিয়ে মাস্কের ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে।
চাহিদা বাড়ায় বিপুল পরিমাণ মাস্ক তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। আসছে বিদেশ থেকেও। এন-৯৫ বা কেএন-৯৫ মাস্ক, বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে নিরাপদ। ডাক্তারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এ মাস্ক বর্তমানে সাধারণ মানুষও ব্যবহার করছেন। বাজারের ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি মাস্ক দোকানে, ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে প্রথম থেকেই বেশি দেখা গেছে কয়েক স্তরবিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক। হাল্কা আকাশী রঙের মাস্ক আশপাশের সব মানুষকে প্রায় একই মানুষ বানিয়ে ছেড়েছে। বহুল ব্যবহৃত মাস্ক পরা মুখগুলোকে দেখে বারবার মনে পড়ে যায়, করোনা আছে। কিছুটা হলেও আতঙ্ক বাড়ায়।
তবে পরিবর্তনের সূচনা গেঞ্জির কাপড়ে তৈরি মাস্ক দিয়ে। প্রথম প্রথম এগুলো ছিল যে কোন একটি রঙের। ক্রমে মূল রঙের ওপর ফুল লতা পাতার প্রিন্টজুড়ে দিতে দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় কাজ শুরু করে দেয় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ড পোশাক তৈরির পাশাপাশি এ কাজে হাত দেয়। ফ্যাশন ডিজাইনাররা যুক্ত হওয়ায় ক্রমে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে মাস্ক। নানা রঙ ও আকর্ষণীয় স্ক্রিনপ্রিন্ট শোরুমগুলোতে পাওয়া যায়। গায়ের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে পরা যাবে, এমন চিন্তা থেকে এসব মাস্ক তৈরি করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে পোশাকের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘ইয়োলো’র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শোরুমের এক কর্মকর্তা জানান, নিজেদের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় অর্ধশত ডিজাইনের মাস্ক তৈরি করছেন তারা। এগুলো ব্যবহার করলে করোনা থেকে যেমন সুরক্ষিত থাকা যাবে, তেমনি অনুসঙ্গ হবে ফ্যাশনের।
তবে সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটিয়েছে কিছু অনলাইন শপ। শপগুলো ঘুরে দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। কোন কোন প্রতিষ্ঠান মাস্ককে পুরোদস্তুর শিল্পকর্মে উত্তীর্ণ করেছে। এ ক্ষেত্রে ‘মাস্ক ইউ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশীয় নানা মোটিফ, লোকজ ফর্ম নিখুঁতভাবে মাস্ক তৈরিতে ব্যবহার করেছে তারা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নক্সীকাঁথা, তার মিহি সেলাই আর উজ্জ্বল রঙ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এমনকি বেছে নেয়া হয়েছে গামছা চ্যাক। দেখে চোখ আটকে যায়। বেশিরভাগ মাস্কই যখন চীনের, তখন এগুলো দেখে আপন আপন লাগে। নিজের মনে হয়। মাস্কে খুঁজে পাওয়া যায় রিক্সা পেইন্টিংসও। চেনা ফর্মের নতুন ব্যবহার কী যে মুগ্ধ করে রাখে। মাস্কগুলোর দামও খুব বেশি নয়। ২৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। সাবান দিয়ে কেঁচে নিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতিদিন আমরা পোশাক পরি। আকর্ষণীয় ডিজাইনের পোশাক পরলে আমাদের আনন্দ হয়। আমরা চাইছি মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এ আনন্দটা যোগ হোক। অনেকেই প্রচলিত মাস্কগুলো প্রতিদিন ব্যবহার করতে করতে বিরক্ত। একঘেয়ে বোধ করছেন। কিন্তু শিল্পসুন্দর মাস্ক তাদের নতুন করে আকৃষ্ট করছে। পাশাপাশি এগুলো ব্যবহার করলে রাস্তার মুখগুলোকে আর এক মনে হবে না। বৈচিত্র পাওয়া যাবে। ফ্যাশন ফান ব্যক্তিত্ব সব কিছুকেই বাড়িয়ে দেবে অনিন্দ্য সুন্দর মাস্ক। ভ্রæ কুচকে থাকার পরিবর্তে হাসি ফুটবে মুখে। দেখা যাক বা না যাক, হাসি ফুটুক মুখগুলোতে। (দৈনিক জনকন্ঠ)