নিউইয়র্ক ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
  • / ৬৬ বার পঠিত

মিজানুর রহমান খান আপেল: আমৃত্যু গণমানুষের কল্যাণে যে মানুষটি সা¤্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন তার নাম আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যার জন্ম হয়েছিল ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে। তার পিতা হাজী শারাফাত আলী ও মাতা বেগম শারাফত আলী। তাদের চার সন্তানের মধ্যে আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। শৈশবে পিতামাতা হারানো ছেলেটিই জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে হয়ে উঠেন এক সংগ্রামী নেতা, যার কারণে তাকে তার ভক্তরা ‘মজলুম জননেতা’ বলে সম্বোধন করতেন। ছোট বয়সেই পিতামাতা হারানো আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রাতিষ্ঠানিক পড়া-লেখার কড়াকড়ি অপছন্দের কারণে অল্প কিছুকাল স্কুল ও মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেছেন। ১৯০৭ সাল থেকে দু’বছর তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও সেখানে বিদ্যাশিক্ষার তালিম না নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামী রাজনৈতিক চেতনায় বেশি দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর সাদামাঠা জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইলের সন্তোষে এক অতি সাধারণ ঘরে। প্রথমত তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত: বাংলা ও আসামের কৃষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, তারপর তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯১৭ সালে জাতীয়তাবাদী দলে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মত কিছুদিনের জন্য কারাবাস করেছিলেন, যখন অনেক খ্যাতনামা রাজনৈতিক কর্মী ও নেতার মধ্যেও তিনি টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকে, আজীবন তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
মিজানুর রহমান খান আপেল

তাঁর চাওয়া ছিল শুধুই অসাম্প্রদায়িক এক সমাজ ব্যবস্থা, পারস্পরিক অধিকার ও জনগণের মুক্তি। তাই তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেবার পক্ষে ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর উদ্যোগেই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ পরে। মওলানা ভাসানী নিজে একজন মওলানা ও হকপন্থী পীর ছিলেন। তাই, তাঁর কাছে স্বাধীনতার অর্থ রাষ্ট্রের চরিত্রে, মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে তাঁর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে এক উজ্জল নক্ষত্র। যার কারণে পঞ্চাশের দশকেই তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হবে একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৬৮ সালে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তা দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছিল সকল পেশাজীবি ও নিম্ন-আয়ের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই ছাত্র অসন্তোষ গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হয় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে। ১৯৭০ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘোষণা দেন, যার পর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম। ঐসময় তিনি ভারতে নজর বন্দী থাকার পর চলে আসেন স্বাধীন বাংলায় এবং এসে একটি গঠনমূলক বিরোধী রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। তিনি যখন লক্ষ্য করলেন প্রতিবেশী দেশ ভারত যুদ্ধ বিধ্বস্থ বাংলাদেশের ওপর কিছু কিছু শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, তখন তিনি তারও প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে ভারতকে প্রকৃত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভারত যখন তার স্বার্থে ফারাক্কা বাঁধ দিল তখন বাংলাদেশ মরুকরণে পরিণত হলো।
এই মহান নেতা সারা জীবন অধিকার বঞ্চিত মেহনতী মানুষের কল্যাণার্থে যে আন্দোলনগুলো গড়ে তুলে ছিলেন তা হলো খিলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ফারাক্কা লং মার্চ। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর এই বরেন্দ্র নেতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাজার অংশগ্রহণ করেন। তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ পীর শাহজামান দীঘির পাশে। মৃত্যু পরবর্তী ১৯৭৭ সনে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। কিংবদন্তী এ মহান সংগ্রামী নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন
লেখক: কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০

মিজানুর রহমান খান আপেল: আমৃত্যু গণমানুষের কল্যাণে যে মানুষটি সা¤্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন তার নাম আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যার জন্ম হয়েছিল ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে। তার পিতা হাজী শারাফাত আলী ও মাতা বেগম শারাফত আলী। তাদের চার সন্তানের মধ্যে আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। শৈশবে পিতামাতা হারানো ছেলেটিই জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে হয়ে উঠেন এক সংগ্রামী নেতা, যার কারণে তাকে তার ভক্তরা ‘মজলুম জননেতা’ বলে সম্বোধন করতেন। ছোট বয়সেই পিতামাতা হারানো আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রাতিষ্ঠানিক পড়া-লেখার কড়াকড়ি অপছন্দের কারণে অল্প কিছুকাল স্কুল ও মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেছেন। ১৯০৭ সাল থেকে দু’বছর তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও সেখানে বিদ্যাশিক্ষার তালিম না নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামী রাজনৈতিক চেতনায় বেশি দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর সাদামাঠা জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইলের সন্তোষে এক অতি সাধারণ ঘরে। প্রথমত তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত: বাংলা ও আসামের কৃষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, তারপর তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯১৭ সালে জাতীয়তাবাদী দলে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মত কিছুদিনের জন্য কারাবাস করেছিলেন, যখন অনেক খ্যাতনামা রাজনৈতিক কর্মী ও নেতার মধ্যেও তিনি টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকে, আজীবন তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
মিজানুর রহমান খান আপেল

তাঁর চাওয়া ছিল শুধুই অসাম্প্রদায়িক এক সমাজ ব্যবস্থা, পারস্পরিক অধিকার ও জনগণের মুক্তি। তাই তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেবার পক্ষে ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর উদ্যোগেই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ পরে। মওলানা ভাসানী নিজে একজন মওলানা ও হকপন্থী পীর ছিলেন। তাই, তাঁর কাছে স্বাধীনতার অর্থ রাষ্ট্রের চরিত্রে, মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে তাঁর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে এক উজ্জল নক্ষত্র। যার কারণে পঞ্চাশের দশকেই তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হবে একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৬৮ সালে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তা দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছিল সকল পেশাজীবি ও নিম্ন-আয়ের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই ছাত্র অসন্তোষ গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হয় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে। ১৯৭০ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘোষণা দেন, যার পর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম। ঐসময় তিনি ভারতে নজর বন্দী থাকার পর চলে আসেন স্বাধীন বাংলায় এবং এসে একটি গঠনমূলক বিরোধী রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। তিনি যখন লক্ষ্য করলেন প্রতিবেশী দেশ ভারত যুদ্ধ বিধ্বস্থ বাংলাদেশের ওপর কিছু কিছু শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, তখন তিনি তারও প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে ভারতকে প্রকৃত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভারত যখন তার স্বার্থে ফারাক্কা বাঁধ দিল তখন বাংলাদেশ মরুকরণে পরিণত হলো।
এই মহান নেতা সারা জীবন অধিকার বঞ্চিত মেহনতী মানুষের কল্যাণার্থে যে আন্দোলনগুলো গড়ে তুলে ছিলেন তা হলো খিলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ফারাক্কা লং মার্চ। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর এই বরেন্দ্র নেতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাজার অংশগ্রহণ করেন। তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ পীর শাহজামান দীঘির পাশে। মৃত্যু পরবর্তী ১৯৭৭ সনে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। কিংবদন্তী এ মহান সংগ্রামী নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন
লেখক: কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক