যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী কিছু বিজয়, সর্বোচ্চ ক্ষমতায় হিজড়া

- প্রকাশের সময় : ০৩:২৮:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০২০
- / ৭৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: আমেরিকায় ২০২০ সালের নির্বাচন নানা কারণে ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন এবং চরম তিক্ততার বহিঃপ্রকাশের জন্য যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তেমনই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি ইউএস কংগ্রেসের যে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও কিছু কিছু ব্যতিক্রমী নজির দেশটির জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাকে বলে কংগ্রেস। এটি দুই কক্ষবিশিষ্ট- নিম্নকক্ষকে বলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদ, আর উচ্চকক্ষকে বলে সিনেট। এই প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে এবারে বিজয়ী হয়েছেন এমন এক নারী, যিনি এমন এক ষড়যন্ত্র তত্তে¡ বিশ্বাসী গোষ্ঠীর সমর্থক, যারা মনে করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গোপন ব্রত হলো শিশুদের যৌন নিপীড়নকারী ও শয়তানের দমন।
এই গোষ্ঠী কিউঅ্যানোন-এর কট্টর সমর্থক রিপাবলিকান মার্জোরি টেইলর গ্রিন, হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হয়েছেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি আসনে বিজয়ী হয়ে। এই বিতর্কিত গোষ্ঠীর সমর্থক হিসাবে তিনি প্রথম কংগ্রেসে আসন পেলেন।
ব্যবসায়ী গ্রিন রাজনীতিতে নতুন। তিনি জর্জিয়ার একটি রক্ষণশীল এলাকায় তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্ব›দ্বীকে হারিয়ে দিয়েছেন।
সা¤প্রতিক সময়ে আত্মপ্রকাশ করা ষড়যন্ত্র তত্তে¡ বিশ্বাসী এই গোষ্ঠী কিউঅ্যানোনের অন্ধ বিশ্বাস যে, শিশুদের যৌন নিপীড়নকারী এবং শয়তানে বিশ্বাসী এক চক্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে আমেরিকান সরকারে, যারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। তাদের দমনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোপন রাজনৈতিক মিশন। এই তত্তে¡ বিশ্বাসীদের গোপন প্রতীক হল ইংরেজি ‘কিউ’ অক্ষর। ইউটিউবে এক ভিডিওতে গ্রিন এই অক্ষরটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ট্রাম্পকে দেশপ্রেমী বলে বর্ণনা করেছেন। তবে এই গোষ্ঠীর যে ভাবমূর্তি আছে, প্রচারাভিযানের সময় তিনি তার সাথে নিজের একাত্মতা দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন।
যদিও কোন কোন রিপাবলিকান প্রার্থী অতীতে কিউঅ্যানোনের প্রতি খোলাখুলিভাবে তাদের সমর্থন দিয়েছেন, কিন্তু গ্রিন প্রথম থেকেই এর অন্যতম কট্টর সমর্থক হিসাবে পরিচিত। এবং তিনিই এই মতবাদের প্রথম প্রতিনিধি যিনি এখন ইউএস কংগ্রেসে বসবেন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে, গ্রিন তার স্বামীর সাথে মিলে একটি নির্মাণ কোম্পানী চালাতেন।
গর্ভপাতের বিরোধিতা, অস্ত্র রাখার অধিকার, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার মত বিষয়গুলোর পক্ষে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন। তার বিজয়ের পর ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘মার্জোরি ভবিষ্যতের এক রিপাবলিকান স্টার’। তবে রিপাবলিকান দলের ভেতরে তাকে প্রার্থিতা দেয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। গ্রিন কৃষ্ণাঙ্গ, ইহুদী এবং মুসলমানদের নিয়ে অপমানসূচক মন্তব্য করে যেসব ভিডিও অতীতে পোস্ট করেছেন, তা নিয়ে অনেক রিপাবিলকান নির্বাচনে তাকে টিকিট দেবার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন।
কিউঅ্যানোন
ইন্টারনেটে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ফোরাম প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ২০১৭’র অক্টোবরে, যখন একজন অজ্ঞাতপরিচয় ‘কিউ’ নামে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন যে তিনি আমেরিকান সরকারের সদস্য এবং আমেরিকার নিরাপত্তা জগতের ভেতরের খবরাখবর তিনি রাখেন। সেখান থেকেই আসে এই গোষ্ঠীর নাম- কিউ অক্ষর আর অ্যানোন হল ‘ধহড়হুসড়ঁং’ ( অজ্ঞাত)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বলেন যে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সাথে রাশিয়ার যোগাযোগ নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়, সেটা ছিল আসলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যক্তির বিষয়ে তদন্তের অংশ। তিনি বলেন, ভেতরের খবর অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের গোপন মিশন ছিল দুর্নীতিবাজ ও শিশুদের যৌন নির্যাতনকারী রাজনীতিক, সংবাদমাধ্যম কর্মী এবং হলিউড তারকাদের গ্রেফতার করা।
সিনেটে প্রথম ট্রান্স (হিজড়া) সদস্য
ডেলাওয়ার থেকে জেতা স্যারা ম্যাকব্রাইড হলেন ইউএস সিনেটের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সদস্য। ডেমোক্র্যাট স্যারা ম্যাকব্রাইটের বয়স ৩০। তিনি হিউমান রাইটস ক্যাম্পেইন নামে এলজিবিটিকিউ বা সমকামী, উভকামী ও হিজড়া স¤প্রদায়ের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী একটি সংগঠনের প্রচার সচিব এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি হোয়াইট হাউসে শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করেছেন।
২০২০-র উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে হাতে গোনা যে কয়জন প্রার্থী ইতিহাস গড়েছেন স্যারা ম্যাকব্রাইট তাদের একজন। তিনি হতে চলেছেন আমেরিকান রাজনীতিতে সর্বোচ্চ পদে একজন ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া স¤প্রদায়ের সদস্য।
জয়ের পর স্যারা ম্যাকব্রাইট এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমি আশা করব আমার বিজয় এলজিবিটিকিউ স¤প্রদায়ের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবে যে আমেরিকান গণতন্ত্র সবার জন্য জায়গা করে দেবার মানসিকতা রাখে।’ তিনি সিনেটর প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সদস্য হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করলেও আমেরিকার রাজনীতিতে এবারের নির্বাচনে তিনিই এই স¤প্রদায়ের একমাত্র প্রতিনিধি নন, যাকে ভোটাররা জয়যুক্ত করেছে।
ভারমন্ট থেকে ২৬ বছরের ট্রান্সজেন্ডার টেলার স্মল নির্বাচিত হয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অফ রিপ্রেজেনটিটিভে আর ক্যানসাস থেকে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ট্রান্সজেন্ডার স্টেফানি বায়ার্স।
ব্যতিক্রমী আরো দুটি মুখ
নর্থ ক্যারোললিনা থেকে বিজয়ী রিপাবলিকান সদস্য ম্যাডিসন কথর্ন মাত্র ২৫ বছর বয়সে কংগ্রেসের সদস্য হয়েছেন। কংগ্রেসে যাওয়ার নূন্যতম বয়সই হলো ২৫। এই অগাস্টে তিনি ২৫ পূর্ণ করলেন। তিনি কংগ্রেসের প্রথম সদস্য যার জন্ম ৯০-এর দশকে।
নভোচারী মার্ক কেলি সিনেটের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তবে তিনি প্রথম সাবেক কোন নভোচারী নন, যিনি সিনেটে আসন পেলেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে ওহাইও থেকে সিনেটার হয়েছিলেন নাসার প্রথম নভোচারীদের একজন, জন গেøন। কেলি মহাকাশে কাটিয়েছেন ৫৪ দিন। তার এক যমজ ভাই আছে, স্কট কেলি। তিনিও নাসার একজন নভোচারী ছিলেন, তবে এখন অবসর নিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি