অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ইন্তেকাল

- প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ৪৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমণমুক্ত হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলেন না রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
অ্যাটর্নি জেনারেলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জ্বর ও গলা ব্যথা নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর সিএমএইচে ভর্তি হন। ওই দিনই তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর তিনি করোনামুক্ত হন। সেদিন পরীক্ষায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু এর পরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাহবুবে আলম স্ত্রী বিনতা মাহবুব, ছেলে সুমন মাহবুব ও মেয়ে শিশির কনাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারী রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) হিসেবে নিয়োগ পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ১১ বছর তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। তাঁর দক্ষতার কারণেই বর্তমান সরকার তাঁকে এতটা সময় অ্যাটর্নি জেনারেল পদে বহাল রাখে। পদাধিকারবলে তিনি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। মাহবুবে আলম অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থেকে রাষ্ট্রপক্ষে তথা সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
সুপ্রিম কোর্টে ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার বিচারকালে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন মাহবুবে আলম। এ ছাড়া সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা মামলা পরিচালনা করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলা, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা এবং তাঁর জামিন আবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে বিরোধিতার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু হলে মাহবুবে আলম প্রথম রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবে বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলাও তিনি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন। তিনিই অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামে ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের নামে বিদেশে থাকা টাকা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
মাহবুবে আলম ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারী মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৯ সালে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লির ‘ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ’ থেকে সাংবিধানিক আইন ও সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে মনোনীত হন তিনি। ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহবুবে আলম ১৯৯৩-১৯৯৪ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০০৫-২০০৬ মেয়াদে সভাপতিও নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৪-২০০৭ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে মুন্সীগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সদালাপী মাহবুবে আলম এলাকায় একজন দানশীল হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দদ্র্রি লোকদের তিনি পূজা-পার্বণে সহযোগিতা করেছেন প্রতিবছরই। মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজেও তাঁর দান অপরিসীম। (দৈনিক কালের কন্ঠ)