বাংলাদেশ : চলচ্চিত্রাঙ্গনে ৭০০ কোটি টাকার ফাঁকা আওয়াজ

- প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ১০৫ বার পঠিত
আলমগীর কবির: ভালো কিছু করে দেখানোর চেয়ে তার ক্রেডিট নেয়ার লোকের সংখ্যা ইদানিং বেশি চোখে পরে। গত ২৫ আষ্ট একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমা হল চালু করতে ঋণ তহবিল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই খবর শুনে হল মালিক, প্রযোজক, পরিচালকরা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের চলচ্চিত্রের সুদিনের দরজা খুলবে।
তবে কবে নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তহবিল আলোর মুখ দেখবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে যানা যায়, ‘প্রধানমন্ত্রী যেকোনো কিছু ঘোষণা দেয়ার পর সেটা নথি আকারে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে কিছু সময় লাগে। আর নথি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলার সুযোগ থাকে না। অথচ একটি মহল ফাঁকা আওয়াজ তুলেছে দসিনেমা হলের জন্য সরকারের বরাদ্দ ৭০০ কোটি টাকা।’
সরকারের বরাদ্দ দেয়া ওই টাকা কোথায় কিভাবে বণ্টন হবে বা কে কত ঋণ পাবেন তা নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে মিডিয়াপাড়ায়। অথচ সরকারিভাবে ঋণের পরিমাণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই জানানো হয়নি। কি পদ্ধতিতে ঋণ পাওয়া যাবে তা নিয়েও আলোচনা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে দ৭০০ কোটি’ টাকার আওয়াজটি কিভাবে ছড়াল মিডিয়াপাড়ায়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুননাহার বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা গুজব নিয়ে কথা বলা হবে আরেকটা গুজব সৃষ্টি করা। কারণ, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার অফিসিয়াললি কোনো কিছুই এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তথ্যমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি ফিরলে হয়তো অফিসিয়াললি কিছু একটা জানানো যাবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও চলচ্চিত্র বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন বলেছেন, ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। একই কথা বলেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সাইফুল ইসলাম। তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, ‘৭০০ কোটির বিষয়টি হাওয়া থেকে পাওয়া খবর। এতে আমরা কিছুটা অবাক হয়েছি । এসব গুজন নিয়ে কোনো মন্তব্য করার কোনো পারমিশন আমার নেই।’
ছবিতে- (বাঁ দিক থেকে) তথ্যমন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দিন আহম্মদ, মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ও পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার
এ বিষয়ে মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেছেন, ‘আমরা এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজে জেনেছি। তারা কিসের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের নিউজ করেছে তা জানি না। যদি সরকারি কোনো সূত্র থেকে এ ধরনের নিউজ না এসে থাকে তবে আমি বলব, এটা চলচ্চিত্রাঙ্গনের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। আমরা যারা চলচ্চিত্রের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তারা এমনিতে অনেক লোকসানের মধ্যে আছি। এখন যদি মিথ্যা তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে আমাদের আরো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলা হয় তার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তথ্যমন্ত্রীর সাথে একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘হলগুলো চালুর জন্য কতটাকা বরাদ্দ হবে সেই অঙ্ক নিয়ে আমাদের সাথে মন্ত্রীর কোনো কথা হয়নি। তবে আমরা মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি, দ্রæত যেন আমাদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়।’
পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আর্থিক সহযোগিতা কত হবে তা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ যদি অতিরঞ্জিত করে কিছু লেখেন বা প্রচার করেন তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। এখন সব খাতই খারাপ সময় পার করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হাবে। তা না করে ফাঁকা আওয়াজ তুললে সবাইকে ফাঁকা মাঠেই পড়ে থাকতে হবে।’
করোনার এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠদের নতুন করে শুরু করতে অনুপ্রেরণা জোগবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ‘৭০০’ কোটির আওয়াজটা ওই ‘পন্ডশ্রম’ কবিতার মতো ‘এই নিয়েছে ওই নিলো যা! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত)