নিউইয়র্ক ০৫:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রণব মুখার্জি : ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য চলে গেলেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০
  • / ৫২ বার পঠিত

জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে: প্রায় ছ’ দশক ধরে রাজনীতির পথ চলা স্তব্ধ হলো। জীবনাবসান হলো ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (যিনি প্রণব মুখার্জি নামে অধিক পরিচিত)। সোমবার (৩১ আগষ্ট) সন্ধ্যা সোয়া ছটা নাগাদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় টুইট করে বাবার মৃত্যু সংবাদটি জানান। রাজাজি মার্গ-এর বাড়িতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। তাঁকে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রুটিন পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে তিনি করোনা পজেটিভ। টুইট করে প্রণব বাবু সেই কথা দুনিয়াকে জানান। সেটিই ছিল তাঁর শেষ টুইট।
দিল্লির হাসপাতালের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে তাঁর মস্তিষ্ক থেকে একটি জমাট রক্তপিন্ড অপসারণ করেন। এরপরই কোমায় চলে যান প্রণব বাবু। সেই ঘুম আর ভাঙেনি। রোববার রাত থেকে অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার বিকালে জীবনাবসান হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ভারতীয় রাজনীতির একটি যুগের অবসান হলো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শোকবার্তায় বলেছেন, ২০১৪-তে যখন দিল্লিতে আসি তখন আমি ছিলাম আউটসাইডার। প্রণব দা’র অভিভাবকসুলভ গাইডেন্স আমি পেয়েছিলাম। তাঁর প্রয়াণ আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেছেন, আমার সংসদীয় জীবনের শুরু থেকে আমি প্রণব দা’র সাহচর্য পেয়েছি। আমি আমার দাদাকে হারালাম।
প্রণব বাবুর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তার শ্বশুরবাড়ি ছিল বাংলাদেশের নড়াইলে। প্রয়াত স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি নড়াইলেও গেছেন। উনিশশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় যুবক প্রণব মুখোপাধ্যায় মানসিক উদ্দীপনা জোগান মুক্তিযোদ্ধাদের। ঢাকা সফরে গিয়ে বারবার তিনি বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী বৃহৎ শক্তিকে ভীত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কে আলাদা একটি আবেগ কাজ করতো প্রণব বাবুর মনে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম এক বন্ধু। বেহালার একটি কলেজে এবং পরবর্তী পর্বে সিউড়ি কলেজে তিনি অধ্যাপনা করতেন।
বীরভূমের কীর্ণাহারের সন্তান প্রণব বাবু এই চুরাশি বছর বয়সেও নিজের বাড়ির পুজো নিজের হাতে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি পল্টু দা। পুরোটা গ্রামে দিদির কাছে তিনি স্নেহের পল্টু। মন্ত্রী থাকাকালীন তো বটেই রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সময়েও প্রণব বাবু নিজের বাড়ির পুজো নিজের হাতে করেছেন। এবারও পুজো হবে। থাকলেন না শুধু প্রণব বাবু। উনিশশো ঊনসত্তর সালে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হিসেবে প্রণব বাবুর সংসদীয় জীবনের সূত্রপাত হয়। উনিশশো তিয়াত্তর সালে তিনি মন্ত্রী হন। অচিরেই হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রধান পরামর্শদাতা। প্রণব বাবু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, শিল্প, জাহাজ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। পঁচাত্তর, একাশি, তিরানব্বই ও নিরানব্বই সালে তিনি রাজ্য সভার সংসদ সদস্য হন। উনিশশো চুরাশি সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গড়েন। কিন্তু ঘরের ছেলে আবার ঘরে ফিরে আসেন ঊননব্বই সালে সব তিক্ততার অবসানে। ২০০৪ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনটি জিতে লোকসভার সদস্য হন তিনি। রাহুল গান্ধীর রাজনীতিতে সক্রিয় হতেই ধীরে ধীরে প্রণব বাবু নিষ্ক্রিয় হতে আরম্ভ করেন। ২০১২ সালে কংগ্রেস সরকার তাঁকে দেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি করে। মোদি সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে ভারতরতœ দেয়।
২০১১ সালের শেষদিকে প্রণব বাবুর একান্ত একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম বহরমপুরের সার্কিট হাউসে। ব্যস্ত অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা অধীর চৌধুরী। সারাদিনের কর্মসূচির ক্লান্তির পর রাত দশটায় টেলিভিশন ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়া সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। প্রণব বাবু শুকনো মুড়ি আর চা খাচ্ছিলেন। একটু শ্লথ, আলগা আলস্য। কিন্তু, স্টার্ট-ক্যামেরা-অ্যাকশন হতেই এ যেন এক অন্য প্রণব বাবু। ক্ষিপ্র, কম্বুকণ্ঠে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। মাঝে মাঝে কব্জির পেছন দিকে রিস্টওয়াচ ফেলছেন, অর্থাৎ এবার শেষ করো বাপু। কিন্তু ভারতের অর্থমন্ত্রীকে এরকম এক্সক্লুসিভ আর কখনো পাবো? ইনক্লুসিভ ব্যাংকিং নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন- তা পরবর্তী পর্বে ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল। সাক্ষাৎকারের শেষে ভেবেছিলাম বিরক্ত হয়েছেন। একটি কথাতে সব ভুল ভেঙে গেল- ওরে অধীর, দেখিস এরা যেন না খেয়ে চলে যায় না। রাত অনেকটা গড়িয়ে গেল… অভিভাবক তো একেই বলে!
প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর শোক: ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৩১ আগষ্ট) পৃথক বার্তায় তারা শোক প্রকাশ করেন। শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখার্জির ভূমিকা আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অন্যদিকে প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখার্জির অনন্য অবদান কখনো বিস্মৃত হবার নয়। আমি সব সময় মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সব সময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন, যেকোন প্রয়োজনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যেকোন সংকটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রণব মুখার্জি : ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য চলে গেলেন

প্রকাশের সময় : ১১:৫৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০

জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে: প্রায় ছ’ দশক ধরে রাজনীতির পথ চলা স্তব্ধ হলো। জীবনাবসান হলো ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (যিনি প্রণব মুখার্জি নামে অধিক পরিচিত)। সোমবার (৩১ আগষ্ট) সন্ধ্যা সোয়া ছটা নাগাদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় টুইট করে বাবার মৃত্যু সংবাদটি জানান। রাজাজি মার্গ-এর বাড়িতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। তাঁকে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রুটিন পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে তিনি করোনা পজেটিভ। টুইট করে প্রণব বাবু সেই কথা দুনিয়াকে জানান। সেটিই ছিল তাঁর শেষ টুইট।
দিল্লির হাসপাতালের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে তাঁর মস্তিষ্ক থেকে একটি জমাট রক্তপিন্ড অপসারণ করেন। এরপরই কোমায় চলে যান প্রণব বাবু। সেই ঘুম আর ভাঙেনি। রোববার রাত থেকে অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার বিকালে জীবনাবসান হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ভারতীয় রাজনীতির একটি যুগের অবসান হলো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শোকবার্তায় বলেছেন, ২০১৪-তে যখন দিল্লিতে আসি তখন আমি ছিলাম আউটসাইডার। প্রণব দা’র অভিভাবকসুলভ গাইডেন্স আমি পেয়েছিলাম। তাঁর প্রয়াণ আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেছেন, আমার সংসদীয় জীবনের শুরু থেকে আমি প্রণব দা’র সাহচর্য পেয়েছি। আমি আমার দাদাকে হারালাম।
প্রণব বাবুর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তার শ্বশুরবাড়ি ছিল বাংলাদেশের নড়াইলে। প্রয়াত স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি নড়াইলেও গেছেন। উনিশশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় যুবক প্রণব মুখোপাধ্যায় মানসিক উদ্দীপনা জোগান মুক্তিযোদ্ধাদের। ঢাকা সফরে গিয়ে বারবার তিনি বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী বৃহৎ শক্তিকে ভীত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কে আলাদা একটি আবেগ কাজ করতো প্রণব বাবুর মনে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম এক বন্ধু। বেহালার একটি কলেজে এবং পরবর্তী পর্বে সিউড়ি কলেজে তিনি অধ্যাপনা করতেন।
বীরভূমের কীর্ণাহারের সন্তান প্রণব বাবু এই চুরাশি বছর বয়সেও নিজের বাড়ির পুজো নিজের হাতে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি পল্টু দা। পুরোটা গ্রামে দিদির কাছে তিনি স্নেহের পল্টু। মন্ত্রী থাকাকালীন তো বটেই রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সময়েও প্রণব বাবু নিজের বাড়ির পুজো নিজের হাতে করেছেন। এবারও পুজো হবে। থাকলেন না শুধু প্রণব বাবু। উনিশশো ঊনসত্তর সালে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হিসেবে প্রণব বাবুর সংসদীয় জীবনের সূত্রপাত হয়। উনিশশো তিয়াত্তর সালে তিনি মন্ত্রী হন। অচিরেই হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রধান পরামর্শদাতা। প্রণব বাবু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, শিল্প, জাহাজ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। পঁচাত্তর, একাশি, তিরানব্বই ও নিরানব্বই সালে তিনি রাজ্য সভার সংসদ সদস্য হন। উনিশশো চুরাশি সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গড়েন। কিন্তু ঘরের ছেলে আবার ঘরে ফিরে আসেন ঊননব্বই সালে সব তিক্ততার অবসানে। ২০০৪ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনটি জিতে লোকসভার সদস্য হন তিনি। রাহুল গান্ধীর রাজনীতিতে সক্রিয় হতেই ধীরে ধীরে প্রণব বাবু নিষ্ক্রিয় হতে আরম্ভ করেন। ২০১২ সালে কংগ্রেস সরকার তাঁকে দেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি করে। মোদি সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে ভারতরতœ দেয়।
২০১১ সালের শেষদিকে প্রণব বাবুর একান্ত একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম বহরমপুরের সার্কিট হাউসে। ব্যস্ত অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা অধীর চৌধুরী। সারাদিনের কর্মসূচির ক্লান্তির পর রাত দশটায় টেলিভিশন ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়া সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। প্রণব বাবু শুকনো মুড়ি আর চা খাচ্ছিলেন। একটু শ্লথ, আলগা আলস্য। কিন্তু, স্টার্ট-ক্যামেরা-অ্যাকশন হতেই এ যেন এক অন্য প্রণব বাবু। ক্ষিপ্র, কম্বুকণ্ঠে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। মাঝে মাঝে কব্জির পেছন দিকে রিস্টওয়াচ ফেলছেন, অর্থাৎ এবার শেষ করো বাপু। কিন্তু ভারতের অর্থমন্ত্রীকে এরকম এক্সক্লুসিভ আর কখনো পাবো? ইনক্লুসিভ ব্যাংকিং নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন- তা পরবর্তী পর্বে ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল। সাক্ষাৎকারের শেষে ভেবেছিলাম বিরক্ত হয়েছেন। একটি কথাতে সব ভুল ভেঙে গেল- ওরে অধীর, দেখিস এরা যেন না খেয়ে চলে যায় না। রাত অনেকটা গড়িয়ে গেল… অভিভাবক তো একেই বলে!
প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর শোক: ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৩১ আগষ্ট) পৃথক বার্তায় তারা শোক প্রকাশ করেন। শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখার্জির ভূমিকা আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অন্যদিকে প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখার্জির অনন্য অবদান কখনো বিস্মৃত হবার নয়। আমি সব সময় মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সব সময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন, যেকোন প্রয়োজনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যেকোন সংকটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন। (দৈনিক মানবজমিন)