নিউইয়র্কে একদিনে ৩ যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু : কমিউনিটিতে শোকের ছায়া

- প্রকাশের সময় : ১২:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০২০
- / ৩৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কে পৃথক তিনটি ঘটনায় একদিনে অর্থাৎ গত ৫ আগষ্ট বুধবার তিনজন বাংলাদেশী-আমেরিকান যুবক মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাদের অকাল আর মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবার তিনটিতে যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রæকলীন, ওজনপার্ক আর ব্রঙ্কসবাসীরা চরমভাবে শোকাহত। মৃত্যুবরণকারী যুবকরা হচ্ছেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা’র সাংবাদিক ও লেখক মাহবুব রহমানের দ্বিতীয় ছেলে মার্যান রহমান (২৫), কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট তানভির মিয়া (২৮) ও নিউইয়র্কের জামিআ ইসলামিক সেন্টার (মসজিদ অফ উডহ্যাভেন)-এর ইমাম ও খতীব, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শায়েখ আসআ’দ আহমদ-এর বড় ছেলে মহসিন আহমদ (২৮)। এদের মধ্যে মার্যান একটি সুইমিং পুলে, তানভির লেক জর্জে সাঁতার কাটতে গিয়ে মৃত্যুকরণ করেন এবং মহসিন আহমদ-কে তার গাড়ীতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তাদের নামাজে জানাজা শুক্রবার (৭ আগষ্ট) পৃথক পৃথক স্থানে বা মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। খবর ইউএনএ’র।
সন্তানের সাথে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সাংবাদিক মাহবুব রহমান
মার্যান রহমানের মৃত্যু: প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সাংবাদিক ও লেখক মাহবুব রহমানের দ্বিতীয় ছেলে মার্যান রহমান (২৫) ইন্তেকাল করেছেন। মার্যান সাংবাদিক মাহবুব রহমান ও উষা রহমান দম্পতির চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। জানা যায়, বুধবার (৫ আগষ্ট) রাত ১০টার দিকে কুইন্স এলাকার একটি সুইমিং পুল থেকে মার্যানকে উদ্ধার করে জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানেই মধ্যরাতে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মার্যান রহমানের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের ফলাফল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
জানা গেছে, মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত মার্যান রহমান নিউইয়র্কের বিখ্যাত ব্রæকলীন টেকে লেখাপড়া করেছেন। পরে পেনস্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক সম্পন্নের আগেই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বুধবার দিনভর প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসে ছিলেন মাহবুব রহমান। সন্ধ্যার পর বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতের দিকে তার অন্য ছেলে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোন করে মার্যান রহমানের জীবন সংকটের কথা জানান এবং তাকে হাসপাতালে যেতে বলেন। এক পুত্রের কাছ থেকে আরেক পুত্রের খবর পেয়ে মাহবুব দম্পতি দ্রæত জ্যামাইকা হাসপাতালে ছুটে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সন্তানের মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করেন। মার্যান রহমানের জানাজার নামাজ শুক্রবার (৭ আগষ্ট) বাদ জুমা (বেলা সোয়া ১টা) জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। এর আধ ঘণ্টা আগে থেকেই তার মরদেহ শেষবারের মতো দেখার ব্যবস্থা থাকবে। জানাজা শেষে তাকে লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল-এর মুসলিম কবর স্থানে দাফন করা হবে।
সাবেক ছাত্রনেতা, লেখক, সাংবাদিক ও রিয়েলটর ব্যবসায়ী এবং সিলেট সদর থানা এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমানের সন্তানের অকাল মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সিলেট সদর থানা এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র অন্যতম উপদেষ্টা হাজী এনাম তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মার্যানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
লেক জর্জ-এ তানভিরের মর্মান্তিক মৃত্যু
নিউইয়র্কের আপষ্টেটে লেক জর্জ-এ অবসর সময় কাটানোর জন্য ‘নৌ ভ্রমণ’ করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মর্মান্তিভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তানভির মিয়া (২৮)। ব্রঙ্কসে বসবাসকারী ও কমিউনিটির পরিচিত মুখ তানভির তার বন্ধুদের সাথে ঐ লেকে ভ্রমণে যান। বুধবার (৫ আগষ্ট) সকালের দিকে তারা একটি স্প্রীডবোট নিয়ে লেকের মাঝে চলেযোন। সেখানে সাতাঁর কাটার এক পর্যায়ে তানভির পানিতে তলিয়ে এবং হারিয়ে যান। পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ আগষ্ট) তার মরদেহ লেক জর্জ থেকে উদ্ধার করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক, সমাজসেবী ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী তানভীর তার পরিবারের দায়িত্ব পালন করতেন।
বন্ধুদের সাথে তানভীর
এদিকে ঘটনার সময় তাদের এক বন্ধুর মোবাইলে লাইভ ভিডিও করা হয়। এতে দেখা যায় স্পীডবোটে তানভীর সহ ৪/৫জন ছিলেন। আনন্দ-বিনোদনের এক পর্যায়ে প্রথমে তানভির পানিতে সাঁতার কাটার জন্য ঝাঁপ দেয় এবং কিছু দূর সাঁতার কেটে আবার বোটের কাছে ফিরে আসে। এসময় সে বোটে উঠার চেষ্টা করে এবং তার এক বন্ধু তাকে উঠাতে সাহায্য করে। কিন্তু তানভীর আর বোটে উঠেনি। এসময় পর পর আরো দুই বন্ধু বোট থেকে লেকের পানিতে ঝাঁপ দেয় এবং সাঁতার কাঁটতে দেখা যায়। এই পর্যায়ে হঠাৎ তানভীরের কন্ঠে ‘হেল্প মি, হেল্প মি’ আওয়াজ শুনা যায়। তানভিরের সাহায্যেও আওয়াজ পেয়ে বন্ধুদ্বয় এগিয়ে আসলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সময় তাদের বোটটির স্টার্ট বন্ধ ছিলো এবং সেসময় বোট নিয়ে তানভীরকে উদ্ধারের জন্য শত চেষ্টা করেও স্পীডবোটটি আর স্টার্ট দেয়া সম্ভব হয়নি।
নিজ গাড়ী থেকে মহসীন আহমদ’র মরদেহ উদ্ধার
এদিকে মহসীন আহমদ (২৮) নামে অপর বাংলাদেশী-আমেরিকান যুবকের মরদেহ তার নিজ গাড়ী থেকে উদ্ধার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গাড়ী ড্রাইভ করার সময় অকস্মাৎ হার্ট আটাকে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মহসীন নিউইয়র্কেও বায়তুল গাফফার মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম এবং জামিআ ইসলামিক সেন্টার (মসজিদ অফ উডহ্যাভেন)-এর ইমাম ও খতীব, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শায়েখ আসআ’দ আহমদ-এর বড় ছেলে এবং নিউইয়র্কের প্রবীণ আলেমে দ্বীন, লেখক-গবেষক অধ্যাপক মাওলানা মুহিব্বুর রহমান-এর ভাগিনা। মহসীনের বাড়ী সিলেট জেলার বিয়াানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গজুকাটা গ্রামে। মৃত্যুকালে মহসীন বাবা, মা ও ৪ বোন ও ২ ভাই সহ অনেক আত্বীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
জানা গেছে, বুধবার (৫ আগষ্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নিউইয়র্কের ওজনপার্কের পিএস ২১৪ (স্কুল)-এর সামনে থেকে তার মৃতদেহ নিজস্ব গাড়ী থেকে সিটি পুলিশ উদ্ধার করে। মহসীন আহমদ কিভাবে, কখন মারা গেছে তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তানভীরের প্রাথমিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকদের মতে সম্ভবত এটা হার্ট অ্যাটাক-এ তিনি মারা গেছেন। গত দু’দিন যাবৎ তার কোন খবর পওয়া যাচ্ছিলো না। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বার বার ফোন করেও তার হদিস মেলেনি। বুধবার সকালে কে বা কারা একটি গাড়ীতে একজন লোক দেখে ৯১১-এ কল দিলে পুলিশ এসে স্টার্ট থাকা পার্কিং করা গাড়ীর গøাস ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে এক সপ্তাহ আগে মহসীন আহমদ-এর নানী ইন্তেকাল করেন। ধর্মপ্রাণ এই পরিবারের একটি শোক কাটাতে না কাটাতেই আরেকটি শোকের সাগরে পতিত হতে হলো পরিবারটিকে। মহসীন আহমদ-এর নামাজে জানাজা শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশী সেন্টার বাজারের কাছে (৮৩-০৮ ৯৫ এভিনিউ, ওজনপার্ক) অনুষ্ঠিত হবে।