যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন ইসাইয়াস’র তান্ডবে নিহত ৫

- প্রকাশের সময় : ০৯:২২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০
- / ৭৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত ভয়াবহ তান্ডব চালিয়েছে হারিকেন ইসাইয়াস। ঘণ্টাখানেকের আঘাতে এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন নর্থ ক্যারোলিনা এবং অপর দু’জন নিউইয়র্কে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ, বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। এদিকে ইসাইয়াসের হানায় উত্তর ক্যারোলাইনা থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত উপকূলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক গাছপালা। ইসাইয়াসের কারণে মঙ্গলবারজুড়ে ছিল তুমুল বৃষ্টিপাত, একারণে দেখা দিয়েছে বন্যা এবং কয়েক ডজন মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝড়টি ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে মঙ্গলবার (৪ আগষ্ট) অপরাহ্নে নিউইয়র্কের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি নেমে আসে। মাত্র ৪০ মাইল বেগে ঝড়টি উত্তরমুখী হয়ে কানাডার দিকে বয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান, সিএনএন।
নিউইয়র্ক পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, শহরের কুইন্সে ব্রায়ারউডে গাছ ভেঙে পড়ে ঘর ভেঙে মারিও সাইলস নামে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। এ ছাড়া নর্থ ক্যারোলাইনায় দুজন, মেরিল্যান্ডে একজন, ডেলোয়ারে এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও বাহামায় ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় আরও দু’জন মারা যায় বলে খবরে বলা হয়েছে।
নিউইয়র্কে ঘূর্ণিঝড় আইসায়াসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ মাইল। শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে ও গাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। কোথাও কোথাও ঘর-বাড়িও ভেঙে পড়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে হাডসন নদীর অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। নিউজার্সী ট্রানজিটসহ কিছু স্থানে ফেরি ও রেল যোগাযোগও বন্ধ হয়ে পড়ে। নিউজার্সীর গভর্নর ঝড়ের তান্ডবের কারণে রাজ্যে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন।
ঝড়ের সময় গাছের চাপায় শহীদুল ইসলাম খান ও জহিরুল ইসলাম-এর বাড়ী
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা ও রিচমন্ডহীল সহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ক্ষয়খতির সম্মুখীন হয়েছেন। গাছের চাপায় অনেকের বাড়ী অথবা গাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রিচমন্ডহীলে বসবাসকারী বাংলাদেশী-আমেরিকান মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম খান ও জহিরুল ইসলাম জানান, তারা দুই বন্ধু মিলে ১১৬ স্ট্রীট এন্ড আটলান্টিক এভিনিউতে ইটের তৈরী দ্বিতল বাসায় বসবাস করেন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রচÐ ঝড়রের সময় তাদের বাসার সাথে আটলান্টিক এভিনিউর উপরের বড় একটি গাছের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে বাড়ীর উপর পড়ে। এতে বাড়ীর ছাদের অংশ বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া গাছটি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। ঘটনার সময় বাড়ীতে অবস্থানকারী তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বিকট শব্দ আর ঘর কাঁপনির ফলে তার ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েন এবং বাইরে এসে দেখেন বাড়ীর উপর বড় একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। পরবর্তীতে জরুরী নম্বর ৯১১-এ কল করে দীর্ঘ সময় কোন প্রতিউত্তর না পেয়ে ৩১১-এ কল করে সিটি কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানানো হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহীদুল ইসলাম খান ও জহিরুল ইসলাম-এর দুই পরিবারের ৮জন সদস্য আত্বীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
ঝড়ের সময় গাছের চাপায় সাংবাদিক ফরিদ আলমের গাড়ী
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকায় বসবাসকারী সাংবাদিক ফরিদ আলম জানান, ঝড়ের সময় তার গাড়ীটি বড় একটি গাছের চাপায় পড়ে। দীর্ঘক্ষণ ৯৯১ কল করে কোন উত্তর না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি মঙ্গলবার তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন- ‘নিউইয়র্ক সিটিতে ৯১১ রেসপন্স করছে না। আমার গাড়ীর উপরে বিশাল গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু ৯১১ কল করে শুধু ভয়েস ম্যাসেজ পাচ্ছি। আমেরিকার এই হালও দেখতে হচ্ছে। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।’
জ্যামাইকায় বসবাসকারী সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ সিরাজুল ইসলাম জানান, তা বাসায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎ নেই। ঝড়ের তান্ডতে তার বাসার বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি মোমবাতির আলোয় রাত পাড়ি দিচ্ছেন।
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ও কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ঝড়ে তার বাসার ব্যাকইয়ার্ডেও বড় গাছ আছড়ে পড়েছে। এতে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঝড়ের মুহুর্ত ছিলো ভয়াবহ এবং পরিবারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তিনি জানান, পরিস্থিতি এতেই ভয়াবহ যে, জরুরী প্রয়োজনে ৯১১-এ ফোন করেও সারা পাওয়া যায়নি।
হারিকেন ইসাইয়াস সোমবার (৩ আগষ্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রথমে নর্থ ক্যারোলিনার দক্ষিণাঞ্চলের আঘাত হানে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গত সপ্তাহে আঘাত হেনে দু’জনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার পর ইসাইয়াস ক্যাটাগরি ওয়ন হারিকেনে পরিণত হয়েছিল। নতুন করে শক্তি অর্জন করার পর এটি এখন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে নর্থ ক্যারোলিনায় আঘাত হানে। এর পর এটি সাউথ ক্যারোলিনা হয়ে নিউইয়র্কের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। ইসাইয়াসের প্রভাবে বজ্রপাতসহ প্রচন্ড বৃষ্টি একই সঙ্গে বইতে থাকে দমকা হওয়া। এদিকে বৃষ্টির কারণে দুই ক্যারোলিনার পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বেড়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নিউয়র্কের অনেক এলাকাও আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে।
ম্যারিল্যান্ডে গাছচাপায় ভেঙে গেছে মোবাইল বাড়ি
ঘূর্ণিঝড় আইসায়াস মঙ্গলবার (৪ আগষ্ট) ভোরে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে উত্তর ক্যারোলাইনার উইলমিংটন ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনার মার্টল সৈকতে আঘাত হানে। ঝড়টি এদিন দুপুরে সর্বশেষ আঘাত হানে নিউইয়র্কে। এত বহুপার্ক ও ঘরবাড়ি এ ঝড়ের তান্ডবে ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। ইসাইয়াস এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা নবম ঝড়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঝড়ের কারণে উত্তর ক্যারোলাইনা ও নিউইয়র্কের ৩৪ লাখের বেশি মানুষ অন্ধকারে। এতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গাছপালা উপড়ে পড়েছে, বন্যা ও অগ্নিকান্ডের দেখা দিয়েছে।
এর আগে নর্থ ক্যারোলিনার উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে হারিকেন ইসাইয়াস। ঝড়ের পূর্বভাস পেয়ে নর্থ ও সাউথ ক্যারোলিনার উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আগেই অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। ঝড়টি সোমবার (৩ আগষ্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রথমে নর্থ ক্যারোলিনার দক্ষিণাঞ্চলের আঘাত হানে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনে দুজনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার পর ইসাইয়াস একটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হয়েছিল। নতুন করে শক্তি অর্জন করার পর এটি এখন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থান করে। এদিকে ইসাইয়াসের প্রভাবে বজ্রপাতসহ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়। একই সঙ্গে বইছে দমকা হওয়া। বৃষ্টির কারণে সাউথ ও নর্থ এই দুই ক্যারোলিনার পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বেড়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
ঝড়ে নিউইয়র্ক