লেবাননে বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশী নিহত : ধ্বংস্তুপে প্রাণের খোঁজে ফরেনসিক টিম

- প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০
- / ৯৩ বার পঠিত

TOPSHOT - EDITORS NOTE: Graphic content / This picture taken on August 4, 2020 shows a general view of the scene of an explosion at the port of Lebanon's capital Beirut. - Two huge explosion rocked the Lebanese capital Beirut, wounding dozens of people, shaking buildings and sending huge plumes of smoke billowing into the sky. Lebanese media carried images of people trapped under rubble, some bloodied, after the massive explosions, the cause of which was not immediately known. (Photo by STR / AFP) (Photo by STR/AFP via Getty Images)
হককথা ডেস্ক: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি ওয়্যার হাউজে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ বিজয়ের ২১ জন সদস্যসহ প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন। খবর বাসস’র।
বুধবার লেবাননস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আবদুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আহতদের মধ্যে ৭৮ জন পপ্রবাসী বাংলাদেশী ও ২১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নিহতরা হচ্ছে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান ও রাসেল, মাদারিপুরের মিজান এবং কুমিল্লার রেজাউল। আহতদের মধ্যে একজন নৌ সেনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদেরকে ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার বা অ্যাম্বুলেন্সযোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত। শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌসদস্যদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
ধ্বংস্তুপে প্রাণের খোঁজে ফরেনসিক টিম
এদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রবন্দর এলাকায় মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে বুধবার (৫ আগষ্ট) পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ১২৮ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষকে। এখনও কয়েকশ’ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী বহু পরিবার। ধ্বংস্তুপে প্রাণের খোঁজে ফরেনসিক টিম নামিয়েছে লেবানিজ রেডক্রস।
বুধবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, আমাদের টিম এখনও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্তুপ সরাতে এখনও কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার (৪ আগষ্ট) রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় সময় বিকাল ৬টার পর পর ওই বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের তীব্রতা ছড়ায় বহুদূর পর্যন্ত। কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ঘরবাড়ির কাচ ভেঙে যায়। দেয়াল ও বড় প্রাচীরগুলো উড়ে যায়। কম্পন অনুভূত হয় ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও, সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি ও স্থাপনা উড়ে যেতে দেখা যায়।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, বন্দরের এক বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণের সূত্রপাত। বিস্ফোরণের পর পরই বৈরুত যেন এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এদিকে সেদিকে পড়ে আছে ভাঙা কাচ। ভবনগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের মূল এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিস্ফোরণকে কেউ কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গেও তুলনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি¡বক সংস্থা বলছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের সমান।
বিস্ফোরণস্থলের কাছেই ২০০৫ সালে এক গাড়ি বোমা হামলায় লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি নিহত হয়েছিলেন। শুক্রবার (৭ আগষ্ট) নেদারল্যান্ডসে জাতিসংঘের এক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দেড় দশক আগের ওই হত্যাকান্ড নিয়ে রায় হওয়ার কথা। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত লেবানন এমনিতেই পুরনো গোষ্ঠীদ্ব›েদ্ব ও নতুন করোনা সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি অবস্থানের কারণেও দেশটি নাজুক অবস্থানে আছে।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে অসংখ্য মৃতদেহ ও ধ্বংস্তুপে দেখার কথা জানিয়েছেন বিবিসির এক সাংবাদিক। হাসপাতালগুলোতে ছিল আহত ও রক্তাক্তদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় গণমাধ্যমের ছবিতে ধ্বংস্তুপের নিচে বহু মানুষকে আটকে পড়া অবস্থায় দেখা যায়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে তার কানে তালা লেগে গিয়েছিল। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন।
বিস্ফোরণের পরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। চারদিকে সারি সারি মরদেহ। দিশেহারা রক্তাক্ত মানুষ। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না আহতদের। বিলাসবহুল হোটেল, আবাসিক ভবন সব কিছু পরিণত হয়েছে অচেনা ধ্বংসস্তুপে। আহতদের চিৎকার আর নিখোঁজের স্বজনদের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ। চিকিৎসা নিতে আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নেয়া হয়েছে কয়েক হাজার আহতকে। বিস্ফোরণে হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বিস্ফোরণের এই ধ্বংসলীলার মধ্যে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে লেবাননের সরকার।
সাইপ্রাস থেকে বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী টুইটারে জানিয়েছেন, তারা নিজেদের বাসভবনে বিস্ফোরণের প্রভাব অনুভব করেছেন। ইলিয়াস ম্যাভরোকফ্যালোস টুইটারে লিখেছেন, ‘সাইপ্রাসের লিমাসোলে বিস্ফোরণের প্রভাব অনুভূত হয়েছে। আমাদের (ভবনের) জানালা কেঁপে উঠেছিল।’
লিমাসোলের আরেক বাসিন্দা টুইট করেছেন, ‘আমি তো খোঁজা শুরু করেছিলাম যে আমাদের এখানে বোমা হামলা হল কিনা।’ আরেক টুইটার ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, সাইপ্রাসের নিকোসিয়া শহরেও বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে এবং ‘মৃদু কম্পন’ অনুভূত হয়েছে। সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইকোস ক্রিস্টোদুলাইদেস টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি লেবানন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং লেবাননকে যে কোনো সহায়তার জন্য সাইপ্রাস প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)