যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই পারবে ঘুরে দাঁড়াতে!

- প্রকাশের সময় : ০৯:২৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
- / ১১৭ বার পঠিত
মোস্তাকিম ভুঞা: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আমাদের সবারই কম বেশি ক্ষতি করেছে। কিন্তু এটা অনেকটাই ব্যক্তি পর্যায়ে। যদি বলি কোন একটা দেশের কথা। কোন একক দেশের কথা। তাহলে বোধ হয় যুক্তরাষ্ট্রের নামই নিতে হবে। করোনা শেষে আমাদের জীবন জীবিকা অনেকাংশে পাল্টে যেতে পারে। বিজ্ঞানী ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা অন্তত তাই বলছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে পারে পৃথিবীর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে। অনেকেই ভাবছেন করোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অনেকাংশে কমে যাবে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে আলোচনা হচ্ছে পরাশক্তিগুলো নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, করোনা সংক্রমণ বিশ্ব রাজনীতিতে চীনকে এগিয়ে দিয়েছে। একটা সময় চীন পরাশক্তি কিনা তা নিয়ে অনেক সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখন এই সন্দেহ যেন নেই বললেই চলে। বরং সন্দেহ দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা? তা নিয়ে।
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে হলে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা অনেক ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বিষয়ে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত। অভ্যন্তরীণ সমস্যা না থাকলে দেশটি এই অঞ্চলে চীনের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারত। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও প্রতিবেশি দেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি না থাকাই দেশটির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেন কেবল বাড়ছেই। চিকিৎসা সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে বেকারত্ব। সেইসাথে সাম্প্রতিক ‘বøাক লাইভ’স ম্যাটার’ আন্দোলন সবকিছুতেই যেন অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার প্রমাণ করে। আর এতে করেই এক সময় পিছিয়ে পড়তে পারে দেশটি। এই রকমটা মনে করছেন অনেকেই।
আর্থিক চাপ
আর্থনৈতিক চাপের কথা শুনে অনেকেই চমকে উঠতে পারেন। বিস্মিত হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক চাপের কথা শুনে। কিন্তু আপনি বিস্মিত হলেও সত্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থেই চাপে আছে। কারণ করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে পুঁজিবাদী আর্থনৈতিক দেশগুলোতে। কারণ এই দেশগুলোর অর্থনীতি ভোগবাদীতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। করোনার সময়ে সবাই এখন মৌলিক চাহিদার মধ্যে আছে। কারণ উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় কম বেশি সবাই বিলাসী পণ্য পরিহার করে চলছে। আর এতে করে দেশটির অর্থনীতি অনেকখানি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্টেটের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেকেরই ঘুরে দাঁড়াতে বা আগের অবস্থানে ফিরে আসতে বেশ কয়েক বৎসর সময় লেগে যাবে। এক নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যই বলছে যে, তারা চার থেকে পাঁচ বৎসরের আগে দাঁড়াতে পারবে না।
অপরাধ
করোনা সংকটের শুরুর দিকে পৃথিবীর অনেক দেশেই অপরাধের হার কমে গিয়েছিল। এমনটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন স্টেটের প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশটিতে চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অপরাধের মাত্রা কমে গেছে। কিন্তু তখনও শিশু নির্যাতন ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের মতো বেশ কিছু অপরাধের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে দেশটিতে আবার বিভিন্ন ধরণের অপরাধ বেড়ে গেছে। এক নিউইয়র্ক নগরী যেন অনেকটাই আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া সহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় স্টেটগুলোতে। আর সেইসাথে বেড়েছে জাতিগত সংঘাতও। শুধু কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষীই নয়। চীন বা এশিয়া বিদ্বেষীর মতো ঘটনাও ঘটছে বেশ কিছু শহরে। এই কয়েক মাস আগেই এমন ঘটনার কারণে দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই পারবে ঘুরে দাঁড়াতে! (বাংলা ইনসাইডার)