ওয়েব সিরিজে আসছে কঠোর নীতিমালা

- প্রকাশের সময় : ০৭:০৮:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০
- / ১৯১ বার পঠিত
বিনোদন ডেস্ক: বিনোদন জগতের নতুন জোয়ারের নাম ওয়েব সিরিজ। শুরুতে নাটক ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ধুম ফেলে দেন নির্মাতারা। অনেক সিনিয়র তারকারও এই জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা লগ্নি করে নির্মাণ হলেও বেশির ভাগ ওয়েব সিরিজই পড়েছে ফ্লপের তালিকায়। তাই টাকা ফেরত আনতে কৌশলে ভিন্ন পথ অবলম্বন করছেন নির্মাতারা। অনলাইনের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় যে যার মতো ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে ক্রমেই অশ্লীলতা ও আপত্তিকর দৃশ্যে ছেয়ে যাচ্ছে এসব ওয়েব সিরিজ। নাটক বা ওয়েব সিরিজের কোনো সেন্সর না থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ। সরকার যেখানে পর্নোগ্রাফি বন্ধে তৎপর, সেখানে ওয়েব সিরিজের নামে এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে যারা টেলিভিশনে নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রেখে অভিনয় করছেন, তাদেরই ওয়েব সিরিজে অশালীন দৃশ্য, অশালীন ও বিকৃত সংলাপসহ নানা অসংগতি দেখে বিস্মিত হচ্ছেন অনেকে। লাগামহীন এই কনটেন্টের লাগাম ধরতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আসছে নীতিমালাও। সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। ওয়েব সিরিজে আপত্তিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত ১৭ জুন বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’ ও ‘বুমেরাং’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ধরনের কনটেন্ট বা পর্নোগ্রাফির মতো আপত্তিকর কনটেন্ট আপলোড করা উচিত নয় বলে মন্তব্য তথ্যমন্ত্রীর। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের আগেই বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামীণফোন ও রবি দুটি মোবাইল কোম্পানির দুটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে আপলোড করা এ ধরনের যে কনটেন্টগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে, তা আমরা বিটিআরসিকে জানিয়েছি।’ তথ্যমন্ত্রী জানান, বিটিআরসির মাধ্যমে এ ধরনের কনটেন্ট আপলোড করার আইনগত অনুমোদন আছে কি না সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। যদি আইনগত অনুমোদন না থাকে তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর যদি আইনগত অনুমোদন থাকেও, ভিডিও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কনটেন্টগুলোর আইনভঙ্গ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’ এর একটি দৃশ্য এতে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা
গত ২৭ মে অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘আগস্ট ১৪’। ২০১৩ সালে ঐশী নামের বখে যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে বাবা ও মাকে হত্যা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে সিরিজটি। এতে বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, বাসায় নীল ছবি দেখাসহ নানা ধরনের অসামাজিক দৃশ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা, শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনিরা মিঠু, শাওন, তানভীর প্রমুখ। একইভাবে ‘বুমেরাং’ সিরিজ নিয়েও সমালোচনা। ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, চুম্বন ও কয়েকবার শয্যার দৃশ্য দেখে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা। এতে অভিনয় করেছেন নাজিয়া হক অর্ষা, আদনান ফারুক হিলেস্নাল, মৌটুসী বিশ্বাস, আবু হোরায়রা তানভীর ও শ্যামল মাওলা প্রমুখ। অনেকেই ওয়েব সিরিজকে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে তুলনা করেছেন। পাশাপাশি এ ধরনের সিরিজ নির্মাণ নিয়ন্ত্রণে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র অভিনয় শিল্পী।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘ওয়েব সিরিজ নিয়ে আমার আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। এর একটি সেন্সর বোর্ড বা নীতিমালা থাকা দরকার।’ কেউ কেউ বলেছেন, ‘দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও সুষ্ঠু বিনোদন নষ্ট করতেই এসব ওয়েব সিরিজ নির্মিত হচ্ছে। অতি দ্রæত এসব কনটেন্টই নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।’
এ বিষয়ে টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড-এর সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘নির্মাতা নির্মাণ করবেন- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি অসামাজিক হয় তবে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যদি এ রকম মানহীন নির্মাণ চলতে থাকে তবে এ অঙ্গন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ওয়েব সিরিজ যাতে সেন্সরের মাধ্যমে প্রচারে যায় তার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত দাবি জানাবেন।’
ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ এর একটি দৃশ্য
উল্লেখ্য, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ‘নেশা’ নামক এক মিউজিক ভিডিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে পর্নোগ্রাফি মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার নাজমুল আহসান। এ ধরনের মামলা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজের নামে যা শুরু হয়েছে, তাতে আগামীতে এ ধরনের মামলার পুনরাবৃত্তি হলে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২তে ‘পর্নোগ্রাফি’ মানে, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য; যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিক্স বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই। অনেকেই মনে করেন এ সংজ্ঞামতে, ‘বুমেরাং’-এর মতো ওয়েব সিরিজগুলো ‘পর্নোগ্রাফি’র কাতারে পড়ে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অপরাধের মাত্রানুযায়ী সর্বোচ্চ ২-৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১-২ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে [ধারা-২, ৮]। (দৈনিক যায়যায়দিন)