যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, শনাক্তে রেকর্ড
- প্রকাশের সময় : ০১:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০২০
- / ৫১ বার পঠিত
► বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় সহযোগিতার আহ্বান জাতিসংঘের ► ভারতে মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়াল
হককথা ডেস্ক: প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ১৮৪ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। আগের দিন শনাক্ত হয় ৩৮ হাজার ৩৮৬ জন, যা এক দিনের হিসাবে গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৭২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্থোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের আহবান জানিয়েছেন।
সংক্রমণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। আক্রান্ত বাড়তে বাড়তে চলতি মাসের শুরুতে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। তবে সপ্তাহখানেক বাদেই সেখানে ফের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। সর্বশেষ দু-তিন দিন ধরে প্রতিদিনই আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানায়নি দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তবে দেশটিতে মৃত্যুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা মার্চের মাঝামাঝি শুরু হলেও মে মাসের শুরু থেকে প্রাণহানি কমতে শুরু করে। অবশ্য কয়েক দিন ধরে আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুও বাড়ছে।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর নিরিখে এখন পর্যন্ত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (২৬ জুন) পর্যন্ত দেশটিতে তিন কোটি সাত লাখেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৫ লাখেরও বেশি মানুষের। প্রাণহানি হয়েছে অন্তত এক লাখ ২৬ হাজার জনের। সুস্থ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখেরও বেশি রোগী।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্যে দ্রæত করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক, নিউজার্সী ও কানেকটিকাট রাজ্য একযোগে নতুন ভ্রমণ নির্দেশনা জারি করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ তিনটি রাজ্যই একসময় করোনাভাইরাসের হটস্পট ছিল। এবার এ রাজ্যগুলোর গভর্নররা অন্য রাজ্য থেকে সেখানে ভ্রমণের ওপর এ কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। আপাতত এই বিধি-নিষেধ জারি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি রাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে। রাজ্যগুলো হলো—অ্যালাবামা, আরকানসাস, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ইউটাহ ও টেক্সাস।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গত ডিসেম্বরে চীনের উহানের একটি বন্য প্রাণীর বাজার থেকে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনা সংক্রমিত হয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ের একটি মাছ-মাংসের বাজারকে করোনার গুচ্ছ সংক্রমণের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই অবস্থা দেখা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ সংস্থায়। অবশ্য এখনো করোনার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে নথিভুক্ত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ১১ হাজারের বেশি। এ সময়ে মারা গেছে চার লাখ ৯৪ হাজারের বেশি মানুষ। সুস্থ হয়েছে ৫৩ লাখের বেশি।
‘যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত জনসংখ্যার ৫-৮%’
যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার ৫ থেকে ৮ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থা গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গর্ভবতী নারীদের জন্য কভিড-১৯ সংক্রমণ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন দেশব্যাপী অ্যান্টিবডি টেস্টের জরিপের ভিত্তিতে এই হিসাব প্রকাশ করেছে। তবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা ১০ গুণ বেশি।
অনুমিত হিসাবে বলা হয়, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৯৮ লাখ। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রকাশিত হয়েছে এবং যাদের সংখ্যা এখনো প্রকাশ পায়নি তাদের মোট সংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ থেকে দুই কোটি ৬৪ লাখ।
বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় সহযোগিতার আহ্বান জাতিসংঘের
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত বৃহস্পতিবার কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের আহবান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ সনদের ৭৫তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে তিনি বলেন, বিশ্ব অশান্তিতে রয়েছে, করোনাভাইরাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বর্ণবৈষম্য এবং অসমতা মোকাবেলায় নতুন করে বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার সবচেয়ে উত্তম উপায়।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম সে অবস্থায় আবার ফিরে যেতে পারি না এবং আমরা পুনরায় এমন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারি না, যা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের নতুন করে ভাবতে এবং অভিন্ন বিশ্বের উদ্ভাবনায় অবশ্যই আমাদের একত্র হতে হবে।’ গুতেরেস বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। শিশুদের শিক্ষা এবং পরিবার ও শিশুদের পরিচর্যাকারীদের সহায়ক হিসেবে বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে ২৫ কোটি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭৫ বছর আগে গৃহীত জাতিসংঘের বহুপক্ষীয় সম্পর্কের নীতি অনুসরণ করে করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য জাতিসংঘ সহযোগিতা দিচ্ছে। করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে গত মার্চে জাতিসংঘ নিজস্ব উদ্যোগে অনেক গোলযোগপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতে মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়াল
ভারতে শুক্রবার রাত ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আরো ৩৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৯-এ। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৮ হাজার জনের করোনা ধরা পড়েছে, যা এক দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে মোট পাঁচ লাখ ৯ হাজার ১৭০-এ দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে মোট আক্রান্তদের মধ্যে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯১৭ জন সুস্থ হয়ে উঠায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৬৪। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫৮.২৪ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে মারা যাওয়া ৪০৭ জনের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রে ১৯২ জন, দিল্লিতে ৬৪ জন, তামিলনাড়ুতে ৪৫ জন, গুজরাটে ১৮ জন, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশে ১৫ জন করে, অন্ধ্র প্রদেশে ১২ জন, হরিয়ানায় ১০ জন, মধ্য প্রদেশে আটজন, পাঞ্জাবে সাতজন, কর্ণাটকে ছয়জন, তেলেঙ্গানায় পাঁচজন, রাজস্থানে চারজন এবং জম্মু ও কাশ্মীরে দুজন। এ ছাড়া অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খন্ড ও উত্তরা খন্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে একজন করে প্রাণ হারায়। সূত্র : এএফপি, ওয়ার্ল্ডোমিটার।