প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশনা কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে
- প্রকাশের সময় : ০৫:০২:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০
- / ৮৮ বার পঠিত
মরণঘাতক করোনাভাইরাস প্রভাবে নিউইয়র্কের প্রায় দুই ডজন বাংলা প্রিন্ট মিডিয়ার প্রিন্ট সংস্করণ সাময়িক বন্ধ থাকায় ক্রমশ: পাঠকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনন পত্রিকা। নিউইয়র্কের পুরনো পত্রিকাগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক বাঙালী, সাপ্তাহিক পরিচয়, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক জন্মভূমি, সাপ্তাহিক আজকাল তাদের অনলাইন প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। তবে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে পত্রিকাসমূহের প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশনা কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে বলে মিডিয়া মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে পত্রিকার অনলাই সংস্করণে বিজ্ঞাপন প্রদানের বিষয়টি এখনো প্রচলিত হয়নি। অবশ্য কিছু বিজ্ঞাপনদাতারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে একাধিক প্রকাশক জানিয়েছেন। তবে প্রিন্ট ভার্সনের বিজ্ঞাপন হ্রাস পেলে চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হবে পত্রিকার প্রকাশকদের। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণ আর নতুন প্রকাশিত সাপ্তাহিক নবযুগ তাদের প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাংলা সাপ্তাহিকের রিপোর্ট বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সনাক্ত আর মৃত্যুবরণকারীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান ঘটছে না। ফলে পাঠকমহলে এমনকি দেশে ও প্রবাসের বাংলাদেশীদের মাঝে প্রতিক্রিয়াও বাড়ছে। সংবাদকর্মীরা বা সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে আতœপক্ষ সমর্থন নেয়ার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে করোনাভারাসে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণকারী বা লক ডাউনে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য সামগ্রী সাহায্যে সুসম বন্টন হচ্ছে না। এ ব্যাপারেও মিডিয়াগুলোতে সঠিক দিক নির্দেশনামূলক তেমন কোন রিপোর্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আবার দেখা যাচ্ছে নিউইয়র্কের বাসা-বাড়ীর মর্টগেজ বা অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া দেয়া না দেয়া নিয়েও কোন কোন খবরে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এবিষয়ে প্রথম আলো’র উত্তর আমেরিকা অফিসের গত সপ্তাহের একটি খবর কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যদিও প্রথম আলো’র আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী তাদের খবরের পক্ষাবলম্বনে ব্যাখা দিয়েছেন।
সম্প্রতি ঢাকার বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত একটি খবরও নিউইয়র্কের পাঠক মহলে আলোচিত হয়েছে। পত্রিকাটির নিউইয়র্ক প্রতিনিধির বরাত দিয়ে সম্প্রতি (১৬ এপ্রিল) অন লাইনে ‘করোনায় নিউইয়র্কে আরো ৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি খবরের ভিত্তিতে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক জন্মভূমি’র অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ‘হিন্দু ঝন্টু সরকার-কে মুসলমান ঝন্টু মিয়া বানিয়ে ভুল খবর পরিবেশন’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এর ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ‘দায়িত্বশীল’ সাংবাদিকতা।
অপরদিকে সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক ও একাত্তুর টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান এই সপ্তাহে তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশীদের মৃতের সংখ্যা ২০০ পেরিয়ে গেলেও মিথ্যা প্রচারণা ও প্রকাশনার ধারার মৃত্যু হলো না!’
লেখক-সাংবাদিক দর্পণ কবীর গত সপ্তাহে তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘…….নিউইয়র্কে কয়েকজন ব্যবসায়ী গত ২১ এপ্রিল কিছু খাবার বিতরণ করেছেন। তারা বলেছেন- রমজান উপলক্ষে খাদ্য বিতরণ করেছেন। কারা নিয়েছেন? কতজন নিয়েছেন? যারা নিয়েছেন তারা কেউ দুর্গত বা দুস্থ নন। বিনা পয়সায় খাবার পেয়ে তারা নিয়েছেন। আর এই সংবাদকে ‘দুর্গত ও দুঃস্থ’দের মধ্যে খাবার বিতরণ করার কথা বলে মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন তারা। এই সংবাদ তারা নিজের স্বার্থে কাজে লাগাবেন।’
নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউএনএ’র সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ আলাপকালে জানান, প্রথম দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ও মৃত্যু সহ অন্যান্য বিষয়ে যথাযথ খবর পরিবেশনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের অভাবে নিউজ পরিবেশনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
সচেতন পাঠকদের দাবী বস্তুনিষ্ঠ আর দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা, সঠিক তথ্য। সবার আগে খবর পরিবেশন করতে গিয়ে যেনো মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত না হয়। এজন্য যেকোন খবর বিশেষ করে সেনসেটিভ ও মানবিক বিষয় সম্পর্কিত খবরাখবর প্রকাশের আগে একাধিকবার নির্ভর সূত্র থেকে ক্রস চেক করা উচিৎ।
প্রিয় পাঠক, করোনাভাইরাস যুগের এই মহামারীর সময়ে ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, পরিবারকে সুস্থ্য রাখুন। পাশাপাশি অন্যকে সুস্থ্য থাকতে উদ্বুদ্ধ করুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, রাষ্ট্র ও স্থানীয় প্রশাসনের আইন-কানুন মেনে চলুন।
(প্রতিবেদনটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা ও ওয়েব সাইট-এর সহযোগিতায় তৈরী।)
-মিশুক
০১ মে, ২০২০
নিউইয়র্ক।