ইরাকে আমেরিকান ঘাঁটিতে ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৮০ : যুক্তরাষ্ট্রের অস্বীকার

- প্রকাশের সময় : ০৯:০০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২০
- / ৫৩৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: ইরাকে আমেরিকান দুটি সেনাঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলায় ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স, বিবিসি, ইরনা, আল মায়াদিন। খবরে বলা হয়, ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে আমেরিকান সেনাদের উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমেরিকান সন্ত্রাসী’ হিসেবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খোমেনি বলেছেন, ‘মিসাইল হামলা ছিল আমেরিকার সৈন্যদের জন্য একটি চপেটাঘাত’। তিনি এ অঞ্চল (মধ্যপ্রাচ্য) থেকে আমেরিকান সেনাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে হামলার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১০০টি টার্গেট ঠিক করে রাখা আছে বলে জানিয়েছেন, রেভ্যুলশনারি গার্ডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা। এর আগে কাসেম সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে ইরবিল ও আইন আল আসাদে দুটি আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিতে ডজনখানেক মিসাইল ছুঁড়ে তেহরান। আামেরিকান প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন এ হামলার কথা স্বীকার করলেও কোনো প্রাণহানির কথা জানায়নি। এই প্রথম ইরানের পক্ষ থেকে হতাহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হল। ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ওই অঞ্চলে ১০০টির বেশি টার্গেট তাদের নজরদারিতে আছে। আমেরিকানরা আবারও হামলা চালালে ওসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হবে। মিসাইল ছুড়ে আমেরিকান হেলিকপ্টার ও সামরিকযানের মারাত্মক ক্ষতিরও দাবি করেছে ইরানের অভিজাত এই সামরিক বাহিনীটি। সোলাইমানি হত্যার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে কড়া প্রতিশোধের মুখে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশি সশস্ত্র শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে আমেরিকান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর ভিডিও প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি ইরাকে অবস্থিত আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদের’ ওপর বুধবার (৮ জানুয়ারী) ভোরে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। আমেরিকান প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরাকের আল-আসাদ আমেরিকান ঘাঁটিতে হামলার এক ঘণ্টা পর ইরবিল আমেরিকান ঘাটিতেঁও আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরাকে আমেরিকান বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আইআরজিসি বুধবার ভোররাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানির উপর আগ্রাসী আমেরিকান সেনাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক হামলার কঠোর জবাব দিতে আইন আল-আসাদ ঘাঁটিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ সোলাইমানি’ এবং এই অভিযানের মাধ্যমে যে ‘বিজয়’ অর্জিত হয়েছে বলে আইআরজিসির বিবৃতিতে দাবি করে ইরানের মুসলিম জাতিকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
আইআরজিসির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার কাপুরুষোচিত পদক্ষেপের ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বুধবার ভোররাতে ইরাকে অবস্থিত আমেরিকান বিমানঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদ’র ওপর ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করে ঘাঁটিটিতে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আমেরিকান প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, তাদের ঘাঁটিতে এক ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া, ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় ইরবিল শহরের আমেরিকান ঘাঁটিতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য, ৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশি সশস্ত্র শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটল।
অপরদিকে আমেরিকান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় টুইটারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটবার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘অল ইজ ওয়েল’ অর্থাৎ সবকিছু ঠিকঠাক আছে। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ইরানী হামলায় হতাহতের খবর অস্বীকার করেছেন। বুধবারের টুইটে ট্রাম্প আরও লেখেন, ইরাকে আমাদের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার ঘটনায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষা হচ্ছে। বিশ্বের সব প্রান্তে আমাদের শক্তিশালী আর সুসজ্জিত বাহিনী আছে। আমি এ ব্যাপারে ৯ জানুয়ারী বিবৃতি দেব। এর আগে মঙ্গলবার ট্রাম্প ইরানকে কড়া সতর্কতা জানিয়ে বলেন, ইরান কোনো আমেরিকান স্থাপনা বা স্বার্থে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, এ হামলা ছিল গত বৃহস্পতিবার রাতে আমেরিকান বাহিনীর গুপ্ত হামলায় জেনারেল কাসেম সোলেমানি হত্যার বদলা। কিন্তু আমরা যুদ্ধ চাই না। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির খবরে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আমেরিকান ড্রোন হামলায় গুপ্তহত্যার শিকার হন ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।(দৈনিক সংগ্রাম)