বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার
- প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯
- / ২৩৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমূখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক এর যৌথ আয়োজনে ৪৯তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের শুভ সূচনা হয়। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সন্ধ্যার অনুষ্ঠান শুরু হয় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে। আলোচনা অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি প্রবাসী বাঙালিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে উঠে আসে ‘জাতির পিতা’র অবিসংবাদিত নেতৃত্বে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, বাঙালীর বিজয় অর্জনের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতি, দেশের ব্যাপক উন্নয়ন এবং রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক। আলোচকগণ জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী সামনে রেখে বাংলাদেশকে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার লক্ষ্যে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং এরপর শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অত:পর দিবসটি উপলক্ষে দেয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সর্বস্তরের প্রবাসী বাঙালীদের সমাগমে মুখরিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। রাষ্ট্রদূত তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল, একটি দায়িত্বশীল ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত। জাতিসংঘেও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের”। তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণ, রোহিঙ্গা ইস্যু, এসডিজি বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্ব শান্তি রক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মকান্ড বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে মর্মে উল্লেখ করেন রাবাব ফাতিমা। তিনি রেমিট্যান্স প্রেরণ ছাড়াও প্রবাসীদের দক্ষতা, নলেজ রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি দেশের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাতির পিতা’র জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বত:স্ফুর্ত সহযোগিতা আহ্বান করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ‘জাতির পিতা’র স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বিজয়ের এইদিনে দেশের উন্নয়নে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনারাই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের প্রকৃত প্রতিনিধি। আপনাদের প্রেরিত রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে”। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা শিশুদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান। সফলভাবে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপনের কথা উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন”। তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা কামনা করেন।
বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাগণকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণের সন্তানদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ডা: মাসুদুল হাসান ও ফাহিম রেজা নুর। এছাড়া প্রবাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইরিন পারভীন, শাহনাজ মমতাজ ও মুজাহিদুল ইসলাম। প্রবাসী বিশিষ্টজনের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাইমা খান ও শেলী এ মুরাদ। মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল বক্তাগণ রাজাকারের তালিকা প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তাঁরা একাত্তরের রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ ও তাদের দোসরদের যে কোনো দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে মুক্তিযুদ্ধেও স্বপক্ষ শক্তিকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ও জাতির উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আলোচনা পর্ব শেষে স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আটর্স (বাপা)’ দেশাত্ববোধক ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করে। সঙ্গীত ও কবিতার সাথে নৃত্যের পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোর শিল্পীদের উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি প্রদান করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদেও বাংলাদেশী খাবারে আপ্যায়ন করা হয়। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।