বিএনপির ৬ এমপি’র শপথ গ্রহণ নিয়ে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টির অপচেষ্টা?
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯
- / ৫১৪ বার পঠিত
মোহাম্মদ সামছুদ্দীন আজাদ: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচনে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের ভরাডুবির পর ভাবলাম বিএনপি ও তার মিত্রদের নিয়ে আপাততঃ আর লিখবনা। কারণ এখন তারা আপাতত মাঠেও নেই, ঘাটেও নেই। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই তারা সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রূপকথার গল্প সাজিয়ে নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি যেমন মুছতে চায়, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে রাজনীতির মাঠে নতুন করে উত্তাপ ছড়াতেও চায়। আর তখনই ভাবলাম অনেকগুলো ইস্যু সামনে চলে এসেছে, যা নিয়ে এই মুহূর্তে লিখা দরকার। তাছাড়া একজন অতি সাধারণ আওয়ামী লীগ কর্মী হিসাবে বিবেক আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করে, বিএনপি নামক অশুভ ভয়াল অন্ধকারাচ্ছন্ন অপশক্তি যেভাবে সুন্দর সম্ভাবনাময়ী আলোক উজ্জল, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে শুকুনের থাবায় ব্যর্থ ও অকার্যকর জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রের তালিকায় নিয়ে গিয়েছিল, সে অবস্থার পূনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের লক্ষ কোটি নেতা-কর্মীদের সচেতন করার জন্যই এই লিখা।
২০১৪ সালের প্রথমে বিএনপি বলেছিল তারা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সংসদ নির্বাচন তো নয় এমন কি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পর্যন্তও না। এমনকি তারা কথায় কথায় সরকারকে অবৈধ সরকার বলে নিজদের অন্তর জ্বালার উপশম করার পরও তারা সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সরকারী সব সুযোগ সুবিধাও নিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও একই শব্দের পুনরাবৃত্তি করে আবারও সরকারের অধীনে সকল মিত্ররা মিলে মিশে গলায় গলায় মিলন ঘটিয়ে স্বগৌরবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এবার শুধু বিএনপি একা নয়, তাদের সব মিত্ররা মিলেই একযোগে সরকারকে বৈধতা দিল। তারা নিশ্চিত ছিল এবার তারা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে বাংলার সংসদ দখল করবে। এদেশের জনগণ তাদেরকে এত ভালোবাসে, তাদের অতীতের গণতন্ত্রের আর উন্নয়নের নমুনা দেখে আর তাদের নেত্রী বেগম জিয়ার দূর্নীতি আর লুটপাটের ইতিহাস ভুলে গিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। এমন আশায় তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়ে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে, সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, লুটেরা বিএনপির দিন শেষ। এখন দেশে উন্নয়ন প্রয়োজন, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহ্ত রাখতে এদেশের জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে। বিএনপি ধানের শীর্ষ প্রতীকে বিজয়ী হয়েছে ৬টি আসনে, আর ঐক্যফ্রন্টের ২জনসহ মোট ৮টি আসনে তারা জয়ী হয়েছে। আর বাকী সব কয়টি আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোট বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। বিএনপি পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করেছে, আর তাদের অতীতের স্বভাব সূলভ আচরনে সরকারের সমালোচনায় কাগজে-কলমে, টিভির পর্দায়, প্রতীকি আন্দোলনে স্বরব থেকেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন তাদের ৮ জন এমপি শপথ নেবেন না এবং কেউ শপথ নিতে চাইলে তাকেও শপথ করতে দেবেন না। অর্থাৎ তারা বলতে চান সংসদে গিয়ে সরকারের বৈধতা দেবে না। সাংবিধানিক নিয়মানুযায়ী গেজেট নোটিফিশনের ৯০ দিনের মধ্যে কোন সংসদ সদস্য শপথ না নিলে তার আসন শূণ্য বলে ঘোষণা করে সে আসনে পুননির্বাচন দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই হিসাবে ২৯ এপ্রিল ছিলো শপথ নেয়ার শেষ তারিখ। এরি মধ্যে ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির হোসেন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিয়ে ফেলেছেন। তারা জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার বাধ্যবাদকতায় শপথ নিয়ে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধাও নিতে শুরু করেছেন। এখন বাকী থাকল বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্য। ২৯ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের আসন শুণ্য হবে। নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল ঘোষণা দিয়ে শূণ্যস্থান পূরনের পথে হাঁটা ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না। ৬ জনের ১ জন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও রয়েছেন। এদের দুজনও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু দলের পরাজিত নেতাদের হুংকারে তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এরি মধ্যে, শপথ নেয়ার বিষয়টি রাজনীতির মাঠে এনে বিএনপি নতুন করে উত্তাপ ছড়াতে চাচ্ছে। এবার বিএনপি থেকে বলা হল তাদের ৬ সংসদ সদস্য শপথ করতে পারে এক শতে, তার আগে তাদের নেত্রী বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। আবার তারা বলছে তাদের নেত্রীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আবার বলছে আপাতত পেরোলে মুক্তি হলেও চলবে। এখন প্রশ্ন হলো সরকারের এমন কি ঠেকা পড়েছে বিএনপির শর্ত মেনে তাদের ৬ সংসদ সদস্যদের শপথ পড়িয়ে সংসদে আনার। সরকারের তো এমন কোন প্রয়োজন পড়েনি, যে তাদের হাতে-পায়ে ধরে হলেও তাদের সংসদে আনতে হবে। সরকার একাই নির্বাচনে ব্রুট মেজরিটি পেয়ে সরকার গঠনে সক্ষম হয়েছে, তাছাড়া জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য শরিকসহ ২৯২টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে মন্ত্রী সভা গঠন করে, সরকারের কার্যক্রমের ১০০ দিন পূর্ণ করতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। সুতরাং বিএনপির ৬ জন দিয়ে সরকারের কিছুই হবে না বরং তারা তাদের প্রয়োজনে, অস্তীত্বের সংকট পাড়ি দিতে নিজেদের সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে নিজেরাই শপথ নিতে বাধ্য হবেন। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির সাথে ৬ সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার কোন সম্পর্ক নেই। সরকারও বলেনি, যে কোন মূল্যে তাদের সংসদে আনতে হবে, প্রয়োজনে তাদের নেত্রীর মুক্তিও মিলবে। মাঠ গরম করার জন্য, উত্তাপ ছড়ানোর জন্য সামনে নিয়ে এসেছে এই বিষয়টি। যে কোন মূল্যে বেগম জিয়াকে জেল থেকে বের করে আনবেন অথবা সরকারকে বাধ্য করাবেন।
খালেদা জিয়া জেলে আছেন দীর্ঘ এক বছরের বেশী সময় ধরে। তার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলো হল- ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১১টি আর্জেস গ্রেনেড হামলার মামলা। যে হামলায় আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আওয়ামী লীগের সব সিনিয়র নেতাদের বোমা মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। যেখানে বেগম আইভি রহমান সহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং শতাধিক নেতকর্মী আহত ও চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের নামে সৌদি আরব থেকে এতিমের জন্য টাকা এনে সে টাকা, নিজের এতিম দুই পুত্রের একাউন্টে ট্রান্সফার করে এনে তাদের নামে সহায় সম্পদ ক্রয় করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানী করে, যা পরে ধরা পড়েছিল তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী কুখ্যাত রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে। যিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপর মামলা হল ২০১৪ সালে হরতালের নামে পেট্রোল বোমা মেরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রাত্রের বাসে ঘুমন্ত যাত্রীদের পুড়িয়ে দগ্ধ করার মামলা। এভাবে আরো অসংখ্য মামলা রয়েছে যা খালেদা জিয়ার নির্দেশে এবং তিনি ক্ষমতায় থেকে এসব করিয়েছেন। আদলত সমস্ত অপকর্মের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে, এমনকি দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়েই খালেদার সম্পৃক্ততার প্রমান পেয়ে তাকে শাস্তি দিয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। যার বদৌলতে তিনি আজ জেলে অন্তরীণ থেকে শাস্তি ভোগ করছেন। আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেই জেলে দিয়েছেন। শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেই কেবল তিনি বের হতে পারবেন আদলতের নির্দেশে, এখানে সরকারের কোন ক্ষমতা নেই তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার। এখানে কোন রাজনৈতিক মামলা নেই, যদি তা হতো, তাহলে হয়ত সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায়, তার বয়সের বিষয়, অসুস্থতার বিষয়টি ভাবনায় নিয়ে তার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতো।
বিএনপি বলছে এসব নাকী গায়েবী মামলা। সব মামলা মিথ্যা মামলা। সুতরাং তারা আন্দোলন করে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করে আনবেন কিন্তু দেখা গেল নেত্রীর কারাবাসের মেয়াদ একবছর পার হয়ে গেল, বিএনপির কোন নেতা নেত্রী একদিনের জন্য রাজপথে নেমে তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবীতে মিছিলও করতে পারেনি। আবার বলছে সরকার মুক্তি না দিলে শর্ত সাপেক্ষে প্যারোলে হলেও তাদের নেত্রীকে বের করে এনে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ভাল করে তুলবেন অথবা লন্ডনে পাঠাবেন। তবুও তারা নেত্রীর মুক্তি চায়। এতে দুই পক্ষ সৃষ্টি হয়েছে, এক পক্ষ বলছে আন্দোলন করে জেল থেকে বের করে আনবেন, আরেক পক্ষ বলছে প্যারোলে শর্ত সাপেক্ষ জামিন নেবেন। প্রথম পক্ষ বলছেন, প্যারোলে বের হওয়া মানে সরকারের সাথে বুঝাপড়া করে শর্ত সাপেক্ষে জামিন নেয়া, তার মানে, সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তাদের নেত্রীর আত্মসমর্পণ করবেন না কারণ তিনি নাকি আপোষহীন। এই আপোষহীনতার কাল বেল্টের মালিক তিনিই, আর কেউ নন। অথচ তিনি জেল খাটছেন দূর্নীতির দায়ে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের দায়ে, তিনি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, তার আমলে জঙ্গী তালেবানরা একে ৪৭ রাইফেল উচিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে মিছিল করেছে। আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান। তিনি সৌদি আরবে ৪০০ শত লাগেজ গোপনে পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রের কোষাগারের টাকা লুটপাট করে। দূর্নীতিতে পর পর ৫ বার বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। বাংলাদেশকে ব্যার্থ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায় স্থান করে দিয়ে গেছেন। তার দুই পুত্রের লুটপাটের ফাইল জাতিসংঘের সদর দফতরে, তার পরও তিনি নাকী আপোষহীন? প্রয়োজনে সারাজীবন তিনি জেল খাটবেন,দূর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগে, তবু তিনি আপোষহীন থাকতে চান।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি।