নিউইয়র্ক ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বৃহত্তর ঢাকা বিভাগ : বেশীর ভাগ জেলার একাধিক, ফরিদপুরের মাত্র একটি সংগঠন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৫
  • / ৪৯৫৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: উত্তর আমিরকাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা নানা সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসে অঞ্চল ভিত্তিক এসব সংগঠনের নেপথ্যের খবর। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে একাধিক সংগঠনের পেছনে কী কী বিষয় কাজ করছে প্রবাসীদের মাঝে। এবারের আয়োজনে থাকছে বৃহত্তর ঢাকা জেলা। বলা যায় বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগ  হচ্ছে পুরো দেশের প্রাণ। এই ঢাকার রয়েছে নানা ইতিহাস ঐতিহ্য। স্বাধীনতার আগে এবং পরে ঢাকাকে ঘিরেই নানা সময়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কালের সাক্ষী ঢাকা হচ্ছে দেশের রাজধানী। বরিশাল, সিলেট, চিটাগাং-এর সন্দ্বীপের মত শুধু রাজধানী ঢাকার নামে সংগঠনের সংখ্যা অত বেশী না হলেও রয়েছে অত্র বিভাগের অধীনে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কিংবা একাধিক সমিতি-সংগঠন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা প্রবাসীদের এসব সাংগঠনিক বিভাজনের মধ্যে রয়েছে, ক্ষমতার মোহ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তি স্বার্থ তথা আধিপত্য বিস্তার রক্ষার লড়াই।
নবগঠিত রংপুর’সহ বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে সবচে প্রভাবশালী এবং বেশী জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগের অবস্থান। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের রয়েছে রাজধানী ঢাকা’সহ মোট ১৭টি জেলা। যেমন-(১) ঢাকা (২). ফরিদপুর, (৩). গাজীপুর, (৪), গোপালগঞ্জ, (৫). জামালপুর, (৬). কিশোরগঞ্জ, (৭). মাদারীপুর, (৮). মানিকগঞ্জ, (৯). মুন্সিগঞ্জ, (১০). ময়মনসিংহ, (১১) নারায়ণগঞ্জ, (১২). নরসিংদী (১৩). নেত্রকোনা, (১৪). রাজবাড়ী, (১৫). শরিয়তপুর, (১৬) শেরপুর ও (১৭). টাঙ্গাইল জেলা। বাংলাদেশের অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠির মতই এ অঞ্চলের মানুষের গর্ব হচ্ছে ‘আমরা ঢাকা’র মানুষ। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বহির্বিশ্বে ঢাকার অবস্থান অনেক সু-পরিচিত।
Dhaka Division Mapএবারের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ঢাকার বিভাগীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কেন্দ্রীক গড়ে উঠা বিভিন্ন সংগঠনের পরিসেবা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়। ঢাকা  জেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা হচ্ছে সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ। অন্যান্য বিভাগের একই নামে বেশ কয়েকটি সংগঠনের উৎপত্তি হলেও ২০১০ এর দিকে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা’ নামের এই সংগঠন। শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দু’টি প্যানেলের মধ্যে একটি প্যানেল দ্বন্দে জড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বিভাজন।
বিভাজন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন ঢাকা জেলা এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালিন উপদেষ্টা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বর্তমানে তিনি নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি। বিভাজন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসলে আমাদের ঢাকার আদি কিছু ঐতিহ্য রয়েছে। ঢাকা জেলার বাসিন্দারা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। দুর্ভাগ্য ঢাকা জেলা নামের এসোসিয়েশন নিয়ে শুরু হয় গ্রুপিং। বিভাজনের সৃষ্টি হয় নির্বাচনকে ঘিরে। দু’পক্ষের মতবিরোধ থেকে। একটি পক্ষ নির্বাচনে না আসায় কমিশন অন্যপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। যদিও আহ্বায়ক কমিটি থেকেই ব্যরিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্ব দু’গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকতে পারেনি সংগঠনটির দু’পক্ষের নেতারা। বলতে পারেন সিলেকশনের মাধ্যমেই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়’। তিনি জানান, ‘২০১২ সালের আমরা গঠন করি নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি নিজেই। সেখানেও বিভাজন রয়েছে। আমাদের থেকে বেরিয়ে গঠন হয়েছে নবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন। যার নেতৃত্বে রয়েছেন রোকেয়া বেগম। এছাড়াও দোহার সমিতি ও কেরানীগঞ্জ ফাউন্ডেশন রয়েছে এখানে’।
Manikgong Dist. Mapবৃহত্তর ঢাকা বিভাগের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার বর্তমানে রয়েছে দুটি সংগঠন। মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইন্ক প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৮৯ সালের ১৯ আগষ্ট। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান হারুন। বর্তমানে সংগঠনটির তিনি প্রধান-উপদেষ্ঠার দায়িত্বে আছেন বলে জানান। আর অন্যটি রয়েছে ‘মানিকগঞ্জ সোসাইটি’ নামে। মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান জানান, ‘আসলে আমরা সংগঠন করছি জনস্বার্থে। কারো ব্যক্তি স্বার্থে নয়। তবে মানিকগঞ্জ জেলার নামে আরো একটি সংগঠন রয়েছে উত্তর আমেরিকায়। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না’। মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইনক. এর বর্তমান সভাপতি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি পদ-পদবির জন্যই মূলত একটি সংগঠন থেকে আরেকটির সৃষ্টি। ঐক্যবদ্ধ হবার আমাদের একটা উদ্যোগ ছিল। ঢাকা ক্লাবে একটি পার্টিও করলাম। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি একই কারণে। এসব থেকে বেরিয়ে আসা না গেলে; আমরা কিছুই করতে পারবো না। আজকে আমাদের দেশের দিকে থাকালে দেখবেন বড় দলগুলো ভেঙ্গে ভেঁেঙ্গ যাচ্ছে। আর যারা মতের অমিলে আলাদা হচ্ছেন; জোর করে তো তাদের আটকে রাখা যাবে না’।
Tangail Zila Mapঢাকা বিভাগীয় অঞ্চলের আরেকটি জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। ঢাকা শহরের নিকটবর্তী এই জেলাটিতেও রয়েছে সাংগঠনিক বিভাজন। ২০০৪ সালের দিকে ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক’ এর যাত্রা শুরু হয়। মতের অমিল কিংবা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২০১২ সালে ভেঙ্গে তৈরী হয় আরেকটি। যার নাম ‘টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক’। প্রশ্ন ছিল ছোট্ট একটি জেলা সেখানেও বিভাজন? কিন্তু কেন? এর জবাবে ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক এর বর্তমান সভাপতি ফরিদ খান বলেন, ‘আসলে সমিতি কিংবা সংগঠন সৃষ্টি হয় কমিউনিটিকে একটি জায়গা নিয়ে আসার জন্য। পৃথিবীর যে-কোন দেশেই এর নজির আছে। কোন সামাজিক সংগঠন করতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমেই তৈরী হয় একটি কমিউনিটি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত দিকটি ফুটে উঠে। কমিউনিটির স্বার্থে গড়া সংগঠন বরং পৃথক হয়ে যাচ্ছে। বড় থেকে আরো ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। সংগঠন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। এর মাধ্যমে কারো ব্যক্তি কিংবা এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি  নানা রকম উপকারে আসা যায়। তা না করে উল্টো আমরা বিভাজন এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি’।
তবে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির উদাসীনতাও রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা চাইছি এক হতে। আর এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সোসাইটিকে। একটা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করা আমাদের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটি নিজেদের আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন দাবি করলেও বাস্তবে তার কোন ফল আমরা দেখছি না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, জালালাবাদের এত সদস্য সংখ্যা। অপরদিকে, বাংলাদেশ সোসাইটির তা নেই। এটাই আমাদের বড় বাধা। আমরা ভালোবেসে কিছু করতে পারি না। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকি’। প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক’ এর বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান আপেল। তিনি জানান, এর থেকে উত্তরণের আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা কেউ কারো শত্রু নই। তবু কেন জানি আমরা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই।
Faridpur Dist. Mapঢাকার বিভাগের মধ্যে অন্যতম আরেকটি জেলার নাম বৃহত্তর ফরিদপুর। খোঁজ নিয়ে উক্ত জেলায় কোন সাংগঠনিক বিভাজন পাওয়া যায়নি। জেলার নামে সমিতি রয়েছে একটি। যার নাম ‘ফরিদপুর জেলা কল্যাণ সমিতি ইন্ক’। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই সংগঠনটির। বিষয়টি আশ্চর্য মনে হলেও তথ্যটি বাস্তব বলে জানান বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ সাখাওয়াত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের ফরিদপুরে কোন বিভাজন নেই। অন্যান্য জেলা কিংবা বিভাগে একই নামে রয়েছে একাধিক সংগঠন। যা কাম্য নয়। এসবে আসলে আমাদের ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমরা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী হিসেব বসবাস করাই আগামীর প্রজন্মের জন্য ভালো। অন্যথায় আমরা দিনকে দিন পিছিয়ে পড়া জাতি গোষ্ঠিতে রুপান্তরিত হবো’।
ফরিদপুর জেলা একটি সংগঠন হলেও পাশের জেলা মাদারিপুরে রয়েছে একই নামের একাধিক সংগঠন। জেলাটির নামের আগে এবং পরে ‘সমিতি-সোসাইটি কিংবা এসোসিয়েশন’ যোগ করে গঠন হয় এসব সংগঠন। যার মূলে রয়েছে ক্ষমতার মোহ এবং আধিপত্য বিস্তার। ‘মাদারিপুর জেলা সমিতি’র বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন নাসির আহমেদ। অপর আরো তিনটি অংশের সভাপতি হচ্ছেন, আবদুল কাইয়্যুম, বিপ্লব ভু্ইঁয়া, জিয়াউর রহমান টিটু। এ বিষয়ে কথা বলেন, ‘মাদারীপুর জেলা সমিতি’র সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান কবির। তিনি জানান, আসলে এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক এবং দুঃখজনক। আমরা দেশের মত প্রবাসেও বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছি। আমরা সবাই বিদেশে আছি। প্রবাসীরা সবাই একসাথে থাকবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত। কিন্তু বিধি বাম। তা বাস্তবায়নে আমরা উদাসীন। এখানে আমরা তো বেশী লোক নই! তবুও কেন জানি আমাদের নেতা হওয়ার খায়েস। আর এ জন্যই বিভাজন। সবচে বড় কথা হচ্ছে, আমার একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। যা আমাদের এগিয়ে যাওয়ায় বড় বাধা। আর এসব চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা কী রেখে যাবো’?
কথা হয় ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রবাসী শরিয়তপুর জেলার সংগঠন সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় শরিয়তপুর জেলা প্রবাসীদের নিয়ে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি’। ১৯৯৬ সালের দিকে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যার বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন ইমতিয়াজ হাসান জামাল। এরপর মতের অমিল, গঠনতন্ত্র, ভোটার তালিকা তৈরী’সহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ব্যহত হওয়ার অভিযোগে বিভাজনের সৃষ্টি হয়। শরীয়তপুর সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় একটি পক্ষ বেরিয়ে গঠন করে আরেকটি সংগঠন। আর এভাবেই চলে সাংগঠনিক বিভাজন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের দিকে গঠন হয় ‘শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা’। যার বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন রতন সরকার। কথা হয় সংগঠনটির সহ-সভাপতি তৈয়ব হোসেনের। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আসলে এসবের পেছনে অনেক কারণ থাকে। শরীয়তপুর বাসিদের গড়া প্রথম সংগঠনটির কমিটিতে আমরাও ছিলাম। দুই বছর পরে ভোটার তালিকা তৈরী’সহ একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো আনার দাবি উঠে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা করেননি। বরং তারা নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরী করে নির্বাচনে যান। যার জন্যই ভাঙ্গনের সৃষ্টি। পছন্দের লোকদের নিয়ে তালিকা তৈরী করা কেউ মেনে নেয়নি। অনেকেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসেন। মতের অমিল হওয়ায় বেরিয়ে আসা পক্ষ গড়ে তোলেন আরেকটি সংগঠন। সত্যি বলতে এসব আমাদের কাম্য নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই জরুরি ছিল। দেশের মত বিদেশেও বিভক্তির রাজনীতি কিংবা সাংগঠনিক বিভাজন করে আমরা এখানকার মূলধারার কাছে নিজের তুলে ধরতে পারবো না। মতের অমিল থাকতে পারে। তবে অঞ্চল এবং দেশের স্বার্থে প্রবাসে বিভাজন আমাদের ভালো কিছু উপহার দেবে না’।
এছাড়াও ঢাকা বিভাগের মধ্যে আরেকটি জেলার হচ্ছে গোপালগঞ্জ। উত্তর আমেরিকাতে জেলাটির নামে রয়েছে দুটি সংগঠন। ‘গোপালগঞ্জ ডিস্ট্রিক সমিতি ইন্ক’ নামের এই দুটির মধ্যে একটির দায়িত্বে আছেন মতিউর রহমান ফুলু এবং অপর অংশের দায়িত্বে রয়েছেন বিএম জাকির হোসেন হিরু ভুঁইয়া। যদিও বাংলাদেশে এই অঞ্চলের লোকদের নিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন মন্তব্য-বক্তব্যও উঠে আসে বর্তমান সময়ে। একটি বিশেষ এলাকার প্রভাবশালীদের তালিকায় রাখা হয় তাদের। প্রশাসনের উচ্চ-পর্যায়ে এই জেলার বাসিন্দাদের অবস্থান বেশ শক্ত বলেও মনে করেন অনেকে। তবে, বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশী। বাংলা পত্রিকাকে তিনি জানান, ‘আমরা গর্বীত বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর তিনি আর গোপালগঞ্জের ছিলেন না। একটি এলাকার সন্তান থেকে হয়ে গেছেন পুরো দেশ ও জাতির পিতা। কিন্তু প্রবাসে আমরা এসব নিয়ে ভাবিনা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সবাই বাংলাদেশী। তবুও মতের অমিলে আমাদের ভেতরে কিছু বিভাজন সৃষ্টি হয়; তা ঠিক নয়। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার’।
ঢাকা বিভাগীয় বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত একাধিক সমিতি ও সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে। (১) ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা, (২) নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন, (৩) নবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন, (৪) দোহার সমিতি, (৫) কেরানীগঞ্জ ফাউন্ডেশন, (৬) মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইন্ক, ৭) মানিকগঞ্জ সোসাইটি, (৮) প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক, (৯) টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক., (১০) প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি, (১১) শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা,  (১২) মাদারিপুর জেলা সমিতি (মোট ৪টি সংগঠন), (১৩) প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি, (১৪) শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা, (১৫) গোপালগঞ্জ ডিস্ট্রিক সমিতি ইন্ক (২টি সংগঠন), এছাড়াও অন্যান্য জেলার মধ্যে  গাজীপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোনা, শেরপুরের নামেও রয়েছে এক বা একাধিক সংগঠন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন রয়েছে এখানে। যদিও সংগঠনটি কোন একটি এলাকা ভিত্তিক নয়। ঢাকা নামটা হচ্ছে বিশ্ব বিদ্যালয়কে ঘিরে। এর সদস্য কিংবা উদ্যোক্তরা সর্বজনিন। শর্ত হচ্ছে তাদের হতে হবে ঢাবি’র প্রাক্তন কিংবা বর্তমান প্রবাসী ছাত্র। তারা পুরো বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী যারা অবস্থান করছেন এই দেশে তাদের নেতৃত্বই চলছে সংগঠনটি’র কার্যক্রম। বছরে অন্তত একবার হলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় অবস্থান কারি এসব মেধার সমন্বয় ঘটাতেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু।
ঢাকার ইতিহাস:
ঢাকা হচ্ছে ইংরেজী নাম। অতীতে ইংরেজীতে নামের বানান ছিলো ‘ডাকা’ পরবর্তীতে তা ডাবল ’সি’ উঠে যুক্ত হয় ’এইচ’ তখন থেকেই ঢাকা নামেই ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ‘ঢাকা’। যা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী এবং ঢাকা বিভাগের প্রধান শহর। ঢাকা একটি মেগাসিটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহরও বটে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। ঢাকার মহানগর এলাকার জনসংখ্যা বর্তমান তথ্য মতে,  প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখেরও বেশী। যাকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের নবম বৃহত্তম শহর। এ জন্য যে, সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি ও জনবহুল শহরগুলির অন্যতম হচ্ছে প্রাচীনতম এই শহরটি। ঢাকা শহরকে মসজিদের শহর হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও এখানে বিশ্বের সেরা মসলিন ও জামদানি শাড়ি উৎপাদিত হয়। বিশ্বের রিকশার রাজধানী নামেও পরিচিত ঢাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ সাইকেল রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান একটি সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরানো ঢাকা মুঘল সা¤্রাজ্যের রাজধানী ছিলো। সেই সময়ে এই শহর ‘জাহাঙ্গীর নগর’ নামে পরিচিত ছিলো। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিলো ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীগণ এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে। তৎকালিন সময়ে নবাবগণ ঢাকাকে শাসন করতেন। কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৫০-৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষিত হয়। ইতিপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তান্ডবলীলার মতো একাধিক অস্থির ঘটনার সাক্ষী ব্যস্ততম নগরী ঢাকা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র। এটা প্রশংসিত জাতীয় দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন- জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় শহীদ মিনার স্মৃতি সৌধ, লালবাগের কেল্লা (তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা) ইত্যাদির মূলস্থান। এই শহরের নগরাঞ্চলীয় অবকাঠামোটি বিশ্বে সর্বোন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেষ্ট পরিষেবার অভাব ইত্যাদি শহুরে সমস্যাগুলি এখানে প্রকট। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঢাকার পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে এই শহর প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ টানতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসেন জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এই কারণে ঢাকাও হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী।
পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান গির্জার প্রবেশপথ:
ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, ‘সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে’।
আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ‘মোঘল স¤্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ‘ঢাক’ বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয়। তখন থেকেই শহরের নাম পরিচিতি পায় ঢাকা’। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সা¤্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা স¤্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো। যদিও বর্তমাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ঢাকা নগরীকে দুইভাগে বিভক্ত করে। ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষিণই মূলতঃ মূল নগরী। ঢাকা উত্তর ঢাকার নবীন বর্ধিত উপশহরগুলো নিয়ে গঠিত।
যদিও সমালোচনা রয়েছে ঢাকা শহরকে দু’ভাগে বিভক্তি করা নিয়ে। বিভক্তির প্রথা মূলত সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতানাকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্তির জাতিতে পরিণত এখন বাংলাদেশ। যার প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে প্রবাসেও পড়েছে। এক সময়ে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এখন রাজনীতি, সমিতি কিংবা ক্ষমতা মোহে বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগামী প্রজন্ম দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে উদাসিন বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। এসব বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে; মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে বলেও মনে করছেন তারা। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বৃহত্তর ঢাকা বিভাগ : বেশীর ভাগ জেলার একাধিক, ফরিদপুরের মাত্র একটি সংগঠন

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৫

নিউইয়র্ক: উত্তর আমিরকাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠা নানা সংগঠনের চালচিত্র নিয়ে বাংলা পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসে অঞ্চল ভিত্তিক এসব সংগঠনের নেপথ্যের খবর। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে একাধিক সংগঠনের পেছনে কী কী বিষয় কাজ করছে প্রবাসীদের মাঝে। এবারের আয়োজনে থাকছে বৃহত্তর ঢাকা জেলা। বলা যায় বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগ  হচ্ছে পুরো দেশের প্রাণ। এই ঢাকার রয়েছে নানা ইতিহাস ঐতিহ্য। স্বাধীনতার আগে এবং পরে ঢাকাকে ঘিরেই নানা সময়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কালের সাক্ষী ঢাকা হচ্ছে দেশের রাজধানী। বরিশাল, সিলেট, চিটাগাং-এর সন্দ্বীপের মত শুধু রাজধানী ঢাকার নামে সংগঠনের সংখ্যা অত বেশী না হলেও রয়েছে অত্র বিভাগের অধীনে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কিংবা একাধিক সমিতি-সংগঠন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা প্রবাসীদের এসব সাংগঠনিক বিভাজনের মধ্যে রয়েছে, ক্ষমতার মোহ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তি স্বার্থ তথা আধিপত্য বিস্তার রক্ষার লড়াই।
নবগঠিত রংপুর’সহ বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে সবচে প্রভাবশালী এবং বেশী জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগের অবস্থান। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের রয়েছে রাজধানী ঢাকা’সহ মোট ১৭টি জেলা। যেমন-(১) ঢাকা (২). ফরিদপুর, (৩). গাজীপুর, (৪), গোপালগঞ্জ, (৫). জামালপুর, (৬). কিশোরগঞ্জ, (৭). মাদারীপুর, (৮). মানিকগঞ্জ, (৯). মুন্সিগঞ্জ, (১০). ময়মনসিংহ, (১১) নারায়ণগঞ্জ, (১২). নরসিংদী (১৩). নেত্রকোনা, (১৪). রাজবাড়ী, (১৫). শরিয়তপুর, (১৬) শেরপুর ও (১৭). টাঙ্গাইল জেলা। বাংলাদেশের অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠির মতই এ অঞ্চলের মানুষের গর্ব হচ্ছে ‘আমরা ঢাকা’র মানুষ। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বহির্বিশ্বে ঢাকার অবস্থান অনেক সু-পরিচিত।
Dhaka Division Mapএবারের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ঢাকার বিভাগীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কেন্দ্রীক গড়ে উঠা বিভিন্ন সংগঠনের পরিসেবা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়। ঢাকা  জেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা হচ্ছে সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ। অন্যান্য বিভাগের একই নামে বেশ কয়েকটি সংগঠনের উৎপত্তি হলেও ২০১০ এর দিকে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা’ নামের এই সংগঠন। শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দু’টি প্যানেলের মধ্যে একটি প্যানেল দ্বন্দে জড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বিভাজন।
বিভাজন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন ঢাকা জেলা এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালিন উপদেষ্টা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বর্তমানে তিনি নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি। বিভাজন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসলে আমাদের ঢাকার আদি কিছু ঐতিহ্য রয়েছে। ঢাকা জেলার বাসিন্দারা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। দুর্ভাগ্য ঢাকা জেলা নামের এসোসিয়েশন নিয়ে শুরু হয় গ্রুপিং। বিভাজনের সৃষ্টি হয় নির্বাচনকে ঘিরে। দু’পক্ষের মতবিরোধ থেকে। একটি পক্ষ নির্বাচনে না আসায় কমিশন অন্যপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। যদিও আহ্বায়ক কমিটি থেকেই ব্যরিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্ব দু’গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকতে পারেনি সংগঠনটির দু’পক্ষের নেতারা। বলতে পারেন সিলেকশনের মাধ্যমেই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়’। তিনি জানান, ‘২০১২ সালের আমরা গঠন করি নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি নিজেই। সেখানেও বিভাজন রয়েছে। আমাদের থেকে বেরিয়ে গঠন হয়েছে নবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন। যার নেতৃত্বে রয়েছেন রোকেয়া বেগম। এছাড়াও দোহার সমিতি ও কেরানীগঞ্জ ফাউন্ডেশন রয়েছে এখানে’।
Manikgong Dist. Mapবৃহত্তর ঢাকা বিভাগের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার বর্তমানে রয়েছে দুটি সংগঠন। মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইন্ক প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৮৯ সালের ১৯ আগষ্ট। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান হারুন। বর্তমানে সংগঠনটির তিনি প্রধান-উপদেষ্ঠার দায়িত্বে আছেন বলে জানান। আর অন্যটি রয়েছে ‘মানিকগঞ্জ সোসাইটি’ নামে। মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান জানান, ‘আসলে আমরা সংগঠন করছি জনস্বার্থে। কারো ব্যক্তি স্বার্থে নয়। তবে মানিকগঞ্জ জেলার নামে আরো একটি সংগঠন রয়েছে উত্তর আমেরিকায়। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না’। মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইনক. এর বর্তমান সভাপতি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি পদ-পদবির জন্যই মূলত একটি সংগঠন থেকে আরেকটির সৃষ্টি। ঐক্যবদ্ধ হবার আমাদের একটা উদ্যোগ ছিল। ঢাকা ক্লাবে একটি পার্টিও করলাম। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি একই কারণে। এসব থেকে বেরিয়ে আসা না গেলে; আমরা কিছুই করতে পারবো না। আজকে আমাদের দেশের দিকে থাকালে দেখবেন বড় দলগুলো ভেঙ্গে ভেঁেঙ্গ যাচ্ছে। আর যারা মতের অমিলে আলাদা হচ্ছেন; জোর করে তো তাদের আটকে রাখা যাবে না’।
Tangail Zila Mapঢাকা বিভাগীয় অঞ্চলের আরেকটি জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। ঢাকা শহরের নিকটবর্তী এই জেলাটিতেও রয়েছে সাংগঠনিক বিভাজন। ২০০৪ সালের দিকে ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক’ এর যাত্রা শুরু হয়। মতের অমিল কিংবা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২০১২ সালে ভেঙ্গে তৈরী হয় আরেকটি। যার নাম ‘টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক’। প্রশ্ন ছিল ছোট্ট একটি জেলা সেখানেও বিভাজন? কিন্তু কেন? এর জবাবে ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক এর বর্তমান সভাপতি ফরিদ খান বলেন, ‘আসলে সমিতি কিংবা সংগঠন সৃষ্টি হয় কমিউনিটিকে একটি জায়গা নিয়ে আসার জন্য। পৃথিবীর যে-কোন দেশেই এর নজির আছে। কোন সামাজিক সংগঠন করতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমেই তৈরী হয় একটি কমিউনিটি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত দিকটি ফুটে উঠে। কমিউনিটির স্বার্থে গড়া সংগঠন বরং পৃথক হয়ে যাচ্ছে। বড় থেকে আরো ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। সংগঠন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। এর মাধ্যমে কারো ব্যক্তি কিংবা এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি  নানা রকম উপকারে আসা যায়। তা না করে উল্টো আমরা বিভাজন এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি’।
তবে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির উদাসীনতাও রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা চাইছি এক হতে। আর এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সোসাইটিকে। একটা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করা আমাদের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটি নিজেদের আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন দাবি করলেও বাস্তবে তার কোন ফল আমরা দেখছি না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, জালালাবাদের এত সদস্য সংখ্যা। অপরদিকে, বাংলাদেশ সোসাইটির তা নেই। এটাই আমাদের বড় বাধা। আমরা ভালোবেসে কিছু করতে পারি না। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকি’। প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক’ এর বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান আপেল। তিনি জানান, এর থেকে উত্তরণের আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা কেউ কারো শত্রু নই। তবু কেন জানি আমরা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই।
Faridpur Dist. Mapঢাকার বিভাগের মধ্যে অন্যতম আরেকটি জেলার নাম বৃহত্তর ফরিদপুর। খোঁজ নিয়ে উক্ত জেলায় কোন সাংগঠনিক বিভাজন পাওয়া যায়নি। জেলার নামে সমিতি রয়েছে একটি। যার নাম ‘ফরিদপুর জেলা কল্যাণ সমিতি ইন্ক’। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই সংগঠনটির। বিষয়টি আশ্চর্য মনে হলেও তথ্যটি বাস্তব বলে জানান বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ সাখাওয়াত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের ফরিদপুরে কোন বিভাজন নেই। অন্যান্য জেলা কিংবা বিভাগে একই নামে রয়েছে একাধিক সংগঠন। যা কাম্য নয়। এসবে আসলে আমাদের ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমরা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী হিসেব বসবাস করাই আগামীর প্রজন্মের জন্য ভালো। অন্যথায় আমরা দিনকে দিন পিছিয়ে পড়া জাতি গোষ্ঠিতে রুপান্তরিত হবো’।
ফরিদপুর জেলা একটি সংগঠন হলেও পাশের জেলা মাদারিপুরে রয়েছে একই নামের একাধিক সংগঠন। জেলাটির নামের আগে এবং পরে ‘সমিতি-সোসাইটি কিংবা এসোসিয়েশন’ যোগ করে গঠন হয় এসব সংগঠন। যার মূলে রয়েছে ক্ষমতার মোহ এবং আধিপত্য বিস্তার। ‘মাদারিপুর জেলা সমিতি’র বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন নাসির আহমেদ। অপর আরো তিনটি অংশের সভাপতি হচ্ছেন, আবদুল কাইয়্যুম, বিপ্লব ভু্ইঁয়া, জিয়াউর রহমান টিটু। এ বিষয়ে কথা বলেন, ‘মাদারীপুর জেলা সমিতি’র সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান কবির। তিনি জানান, আসলে এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক এবং দুঃখজনক। আমরা দেশের মত প্রবাসেও বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছি। আমরা সবাই বিদেশে আছি। প্রবাসীরা সবাই একসাথে থাকবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত। কিন্তু বিধি বাম। তা বাস্তবায়নে আমরা উদাসীন। এখানে আমরা তো বেশী লোক নই! তবুও কেন জানি আমাদের নেতা হওয়ার খায়েস। আর এ জন্যই বিভাজন। সবচে বড় কথা হচ্ছে, আমার একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। যা আমাদের এগিয়ে যাওয়ায় বড় বাধা। আর এসব চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা কী রেখে যাবো’?
কথা হয় ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রবাসী শরিয়তপুর জেলার সংগঠন সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় শরিয়তপুর জেলা প্রবাসীদের নিয়ে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি’। ১৯৯৬ সালের দিকে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যার বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন ইমতিয়াজ হাসান জামাল। এরপর মতের অমিল, গঠনতন্ত্র, ভোটার তালিকা তৈরী’সহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ব্যহত হওয়ার অভিযোগে বিভাজনের সৃষ্টি হয়। শরীয়তপুর সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় একটি পক্ষ বেরিয়ে গঠন করে আরেকটি সংগঠন। আর এভাবেই চলে সাংগঠনিক বিভাজন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের দিকে গঠন হয় ‘শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা’। যার বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন রতন সরকার। কথা হয় সংগঠনটির সহ-সভাপতি তৈয়ব হোসেনের। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আসলে এসবের পেছনে অনেক কারণ থাকে। শরীয়তপুর বাসিদের গড়া প্রথম সংগঠনটির কমিটিতে আমরাও ছিলাম। দুই বছর পরে ভোটার তালিকা তৈরী’সহ একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো আনার দাবি উঠে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা করেননি। বরং তারা নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরী করে নির্বাচনে যান। যার জন্যই ভাঙ্গনের সৃষ্টি। পছন্দের লোকদের নিয়ে তালিকা তৈরী করা কেউ মেনে নেয়নি। অনেকেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসেন। মতের অমিল হওয়ায় বেরিয়ে আসা পক্ষ গড়ে তোলেন আরেকটি সংগঠন। সত্যি বলতে এসব আমাদের কাম্য নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই জরুরি ছিল। দেশের মত বিদেশেও বিভক্তির রাজনীতি কিংবা সাংগঠনিক বিভাজন করে আমরা এখানকার মূলধারার কাছে নিজের তুলে ধরতে পারবো না। মতের অমিল থাকতে পারে। তবে অঞ্চল এবং দেশের স্বার্থে প্রবাসে বিভাজন আমাদের ভালো কিছু উপহার দেবে না’।
এছাড়াও ঢাকা বিভাগের মধ্যে আরেকটি জেলার হচ্ছে গোপালগঞ্জ। উত্তর আমেরিকাতে জেলাটির নামে রয়েছে দুটি সংগঠন। ‘গোপালগঞ্জ ডিস্ট্রিক সমিতি ইন্ক’ নামের এই দুটির মধ্যে একটির দায়িত্বে আছেন মতিউর রহমান ফুলু এবং অপর অংশের দায়িত্বে রয়েছেন বিএম জাকির হোসেন হিরু ভুঁইয়া। যদিও বাংলাদেশে এই অঞ্চলের লোকদের নিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন মন্তব্য-বক্তব্যও উঠে আসে বর্তমান সময়ে। একটি বিশেষ এলাকার প্রভাবশালীদের তালিকায় রাখা হয় তাদের। প্রশাসনের উচ্চ-পর্যায়ে এই জেলার বাসিন্দাদের অবস্থান বেশ শক্ত বলেও মনে করেন অনেকে। তবে, বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশী। বাংলা পত্রিকাকে তিনি জানান, ‘আমরা গর্বীত বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর তিনি আর গোপালগঞ্জের ছিলেন না। একটি এলাকার সন্তান থেকে হয়ে গেছেন পুরো দেশ ও জাতির পিতা। কিন্তু প্রবাসে আমরা এসব নিয়ে ভাবিনা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সবাই বাংলাদেশী। তবুও মতের অমিলে আমাদের ভেতরে কিছু বিভাজন সৃষ্টি হয়; তা ঠিক নয়। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার’।
ঢাকা বিভাগীয় বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত একাধিক সমিতি ও সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে। (১) ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা, (২) নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন, (৩) নবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন, (৪) দোহার সমিতি, (৫) কেরানীগঞ্জ ফাউন্ডেশন, (৬) মানিকগঞ্জ সমিতি নর্থ আমেরকিা ইন্ক, ৭) মানিকগঞ্জ সোসাইটি, (৮) প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইন্ক, (৯) টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্ক., (১০) প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি, (১১) শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা,  (১২) মাদারিপুর জেলা সমিতি (মোট ৪টি সংগঠন), (১৩) প্রবাসী শরিয়তপুর সমিতি, (১৪) শরীয়তপুর সমিতি অব নর্থ আমেরিকা, (১৫) গোপালগঞ্জ ডিস্ট্রিক সমিতি ইন্ক (২টি সংগঠন), এছাড়াও অন্যান্য জেলার মধ্যে  গাজীপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোনা, শেরপুরের নামেও রয়েছে এক বা একাধিক সংগঠন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন রয়েছে এখানে। যদিও সংগঠনটি কোন একটি এলাকা ভিত্তিক নয়। ঢাকা নামটা হচ্ছে বিশ্ব বিদ্যালয়কে ঘিরে। এর সদস্য কিংবা উদ্যোক্তরা সর্বজনিন। শর্ত হচ্ছে তাদের হতে হবে ঢাবি’র প্রাক্তন কিংবা বর্তমান প্রবাসী ছাত্র। তারা পুরো বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী যারা অবস্থান করছেন এই দেশে তাদের নেতৃত্বই চলছে সংগঠনটি’র কার্যক্রম। বছরে অন্তত একবার হলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় অবস্থান কারি এসব মেধার সমন্বয় ঘটাতেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু।
ঢাকার ইতিহাস:
ঢাকা হচ্ছে ইংরেজী নাম। অতীতে ইংরেজীতে নামের বানান ছিলো ‘ডাকা’ পরবর্তীতে তা ডাবল ’সি’ উঠে যুক্ত হয় ’এইচ’ তখন থেকেই ঢাকা নামেই ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ‘ঢাকা’। যা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী এবং ঢাকা বিভাগের প্রধান শহর। ঢাকা একটি মেগাসিটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহরও বটে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। ঢাকার মহানগর এলাকার জনসংখ্যা বর্তমান তথ্য মতে,  প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখেরও বেশী। যাকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের নবম বৃহত্তম শহর। এ জন্য যে, সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি ও জনবহুল শহরগুলির অন্যতম হচ্ছে প্রাচীনতম এই শহরটি। ঢাকা শহরকে মসজিদের শহর হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও এখানে বিশ্বের সেরা মসলিন ও জামদানি শাড়ি উৎপাদিত হয়। বিশ্বের রিকশার রাজধানী নামেও পরিচিত ঢাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ সাইকেল রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান একটি সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরানো ঢাকা মুঘল সা¤্রাজ্যের রাজধানী ছিলো। সেই সময়ে এই শহর ‘জাহাঙ্গীর নগর’ নামে পরিচিত ছিলো। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিলো ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীগণ এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে। তৎকালিন সময়ে নবাবগণ ঢাকাকে শাসন করতেন। কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৫০-৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষিত হয়। ইতিপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তান্ডবলীলার মতো একাধিক অস্থির ঘটনার সাক্ষী ব্যস্ততম নগরী ঢাকা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র। এটা প্রশংসিত জাতীয় দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন- জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় শহীদ মিনার স্মৃতি সৌধ, লালবাগের কেল্লা (তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা) ইত্যাদির মূলস্থান। এই শহরের নগরাঞ্চলীয় অবকাঠামোটি বিশ্বে সর্বোন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেষ্ট পরিষেবার অভাব ইত্যাদি শহুরে সমস্যাগুলি এখানে প্রকট। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঢাকার পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে এই শহর প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ টানতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসেন জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এই কারণে ঢাকাও হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী।
পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান গির্জার প্রবেশপথ:
ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, ‘সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে’।
আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ‘মোঘল স¤্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ‘ঢাক’ বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয়। তখন থেকেই শহরের নাম পরিচিতি পায় ঢাকা’। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সা¤্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা স¤্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো। যদিও বর্তমাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ঢাকা নগরীকে দুইভাগে বিভক্ত করে। ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষিণই মূলতঃ মূল নগরী। ঢাকা উত্তর ঢাকার নবীন বর্ধিত উপশহরগুলো নিয়ে গঠিত।
যদিও সমালোচনা রয়েছে ঢাকা শহরকে দু’ভাগে বিভক্তি করা নিয়ে। বিভক্তির প্রথা মূলত সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতানাকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্তির জাতিতে পরিণত এখন বাংলাদেশ। যার প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে প্রবাসেও পড়েছে। এক সময়ে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এখন রাজনীতি, সমিতি কিংবা ক্ষমতা মোহে বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগামী প্রজন্ম দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে উদাসিন বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। এসব বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে; মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে বলেও মনে করছেন তারা। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)