ছয় কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি জালিয়াতিতে জড়িতদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে : সাদেক হোসেন খোকা
- প্রকাশের সময় : ০৭:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৫
- / ৮৯৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ছয় কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিবৃতি প্রচার সরকারের কূট-কৌশলের অংশ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কে চিকিৎসারত বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি জানান, এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই বিশেষ উপদেষ্টা ও দূতকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
গত ১৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সাদেক হোসেন খোকা এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবী করেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রধান অমিত শাহ’র টেলিফোন এবং মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে এই প্রথম দেশের বাইরে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনিও অমিত শাহ’র ফোন করাকে সত্যি দাবী করেন, তবে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিবৃতির দেওয়ার ঘটনায় চেয়ারপারসনের দুই বিশেষ উপদেষ্টা ও বৈদেশিক দূত ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার ও জাহিদ এফ. সরদার সাদী জড়িত স্বীকার করে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানান।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য গোটা দেশকে এক অনিবার্য সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তারা অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছে। আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে জগণের মুখোমুখি। এসব বহিনীর এক শ্রেণীর দলবাজ এবং বিশেষ একটি এলাকার সদস্যরা প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করার এক পৈশাচিক উৎসবে মেতেছে। দেশের সীমান্ত প্রহরায় থাকা বিজিবির সদস্যদেরকে তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব থেকে তুলে এনে বিরোধী দল দমনের কাজে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব বাহিনীর পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের সশস্ত্র ক্যাডারদেরকেও নিয়োজিত করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের কাজে। তিনি আরো বলেন, সরকারের এমন একগুঁয়ে ও আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেশ থেকে গণতন্ত্র আজ পুরোপুরি নির্বাসিত। বিরোধী দলসমূহের ন্যুনতম রাজনৈতিক অধিকারও আজ আর অবশিষ্ট নেই।
লিখিত বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা আরো বলেন, ক্ষমতাসীনরা তথাকথিত ১৪৪ ধারার মধ্যেই খুশি মতো সভা-সমাবেশ এবং বিরোধী দল দমনের উৎসব করছে। অথচ বিরোধী দলের কর্মী- সমর্থকদের রাস্তায়ও দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। কথায় কথায় গুলি, বেধড়ক পিটুনি অথবা গণগ্রেফতার। এই হলো বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্রের চেহারা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে মত প্রকাশের অধিকার তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও এখন সম্পূর্ণরূপে খাঁচায় বন্দী। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় চলছে নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচার। সরকারের নির্দেশ সম্পূর্ণরূেেপ অনুসরণে ব্যর্থ হওয়ায় একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন আতঙ্কে। সর্বত্র এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, বিগত দেড় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। অবৈধ সরকারের নির্দেশে পুলিশ গত ৩ জানুয়ারী বিএনপি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তারা তার গুলশান কার্যালয়ে বর্বরোচিত কায়দায় বন্দী করে রেখেছে। এমন কি তাঁকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার নিষিদ্ধ বিষাক্ত পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করতেও দ্বিধা করেনি সরকারের পেটোয়া বাহিনী। তিনি বলেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের মত অত্যন্ত নিরীহ ও সজ্জন ব্যক্তিকে আজ গুলি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সাবেক কূটনৈতিক সাবিউদ্দিনের উপর হামলা করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের বাড়িতে একের পর এক বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলে দলে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। সরকারের এমন পাশবিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম গড়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি শহর, বন্দর, গ্রাম এমন কি প্রত্যন্ত পাড়া- মহল্লায়ও আপামর জনতার প্রতিরোধ- সংগ্রামের ক্রম:বর্ধমান তীব্রতায় নড়ে উঠেছে স্বৈরশাসকের ভিত। আর তাতেই দিশেহারা হয়ে সরকার অত্যাচার- নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকদের বিভ্রান্ত করতে নানা রকম কূট-কৌশলেরও আশ্রয় গ্রহণ করছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে তারা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে বিরামহীন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
দীর্ঘসময় সপরিবারে নিউইয়র্কে অবস্থানের কারণও ব্যাখা করে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে এই দূর দেশে অবস্থানের কারণে জাতির এই কঠিন দু:সময়ে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সশরীরে অংশ নিতে না পারায় বেদনায় আমি প্রতি মহূর্তে দগ্ধ হচ্ছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পালিয়ে থাকিনি। আমি ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এমন কোন আন্দোলন-সংগ্রাম ছিলো না যেখানে আমি অংশগ্রহণ করিনি। রজপথে গুলিকে আমি ভয় করিনি। এখন দেশের থাকার শারীরিক অবস্থা থাকলে আমি অবশ্যই দেশে থাকতাম।
সাদেক হোসেন খোকার আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র বিবাদমান গ্রুপের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন, ড. শওকত আলী, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, যুবদলের সহ সভাপতি আতিকুল হক আহাদ, সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সচিব সিদ্দিকুর রহমান মান্না প্রমূখ।(দৈনিক ইত্তেফাক)