নিউইয়র্ক ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

২০ টাকায় বিবেক বিক্রি!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:১৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৮
  • / ১৭৬৭ বার পঠিত

শিবলী চৌধুরী কায়েস: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন’ ‘বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত নিউইয়র্কে বসবসাকারি বাংলাদেশীদের হাতে। অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব বলতে গেলে তেমন একটা নেই। তবে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের গ্রহণযোগ্যতা/কদর কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। যেমন- প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার-তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এসময়টিতে নিউইয়র্কের বাইরের অভিবাসীরাও সম্পৃক্ত হন। যদিও তা ভোটারদের নিজ উদ্যোগে নয়! নিবন্ধিত ভোটার তালিকা প্রণয়নে “সম্ভাব্য প্যানেল ও প্রার্থীরা” স্ব স্ব উদ্যোগে মাঠে নামেন। লক্ষ্য একটাই। নিজেদের ভোটব্যাংক সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এ যেন এক অসম প্রতিযোগীতা। কোন প্যানেল কত সংখ্যক ভোটার নিবন্ধিত করতে পারছেন; সেটির উপরই নির্ভর করে সোসাইটির পরবর্তী নেতৃত্ব কার হাতে! এ ধরণের পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পাঠক-বাংলাদেশ সোসাইটির আগামি নির্বাচন সংক্রান্ত আমার একান্তই ব্যাক্তিগত মতামত ও উপলুব্ধির খানিকটা তুলে ধরার চেষ্টা কেবল। যা নিন্মরূপঃ-
এক). ভোটার নিবন্ধ প্রক্রিয়াঃ
২০ ডলার (বাংলাদেশীরা কথার ছলে ‘ডলারকে’ টাকা বলে থাকেন)। সেই ২০ টাকায় ভোটার নিবন্ধন। হালনাগাদ ভোটার তালিকা সোসাইটির ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এবার নিবন্ধিত ভোটার ২৭ হাজার ৫শ’র বেশী। এতে বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাগার বেশ অর্থ শক্তিশালী হয়েছে। সবশেষ তথ্যে জানা গেছে; ভোটার নিবন্ধন নির্ভর অর্থের পরিমান- প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪শ ৬০ ডলার। বর্তমান ২৭ হাজার ভোটারের মধ্যে ৪শ ৮৮জন হচ্ছেন আজীবন সদস্য। তারাও ভোটার। সাধারণ ভোটার নিবন্ধিত করা হয়েছে ২০ ডলারের বিনিময়ে। আর জীবন সদস্য ফি ৫শ ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেশ মোটা-সোটা। কমিউনিটির জনমনে প্রশ্ন- স্বাস্থ্যবান এ সোসাইটির তহবিল কিভাবে খরচ হচ্ছে? এতে কমিউনিটিরই কতটুকু উপকারে আসছে?
এর আগে গেল ২০১৬ সালের নির্বাচন ঘিরেও রেকর্ড সংখ্যক ভোটার নিবন্ধিত করা হয়েছিল। যা ছিল ১৮ হাজার ৫শ ৫৪ জন। এবার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বেশী। যদিও সবশেষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন মাত্র ৫২ শতাংশ ভোটার। তথ্য মতে- সে সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ হাজার ১শ ৫৭ জন। ২০১৬ সালে প্রবাসীরা বাংলাদেশ সোসাইটিতে পরবর্তী দু’বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করেছিলেন। বিনিময়ে কি পেয়েছেন সেটা দেখার কেউ নেই। কারণ একটাই। ওইসব নিবন্ধিত ভোটাররাও ছিলেন ২০ (ডলার) টাকার।
দুই). নির্বাচন কমিশন গঠনঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচন চলতি মাসের ২১ অক্টোবর। তার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ চূড়ান্ত করা হয়। যা সম্পাদন করে থাকে বর্তমান/সবশেষ কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন গঠিত কমিশন-কর্মকর্তারা। ঘোষিত হয় নির্বাচনী-তফসিল। যার মধ্যে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন, জমা দেয়া, যাছাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা। এতসব আয়োজন এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন কেবল প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বাকি। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বোরোরর চারটিতে কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্র সংখ্যা পাঁচটি। এসব তথ্য কমিউনিটির সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এতসব আয়োজনের ফলাফলটা আসলে কি?
তিন). মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের নির্বাচনঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনে ১৯ টি পদের বিপরীতে দু’টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র’সহ ৪৩ জন প্রার্থীর মনোয়নপত্র ক্রয় করেন। এ বাবদ নির্বাচন কমিশনের আয় ২১ হাজার ৫শ ডলার। এরপর প্রার্থীতা চূড়ান্তের সময় মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। যাতে ১৯ টি পদের বিপরীতে দুই প্যানেলের ৩৮ জন ও স্বতন্ত্র দু’জনসহ মোট ৪০জন প্রার্থী তাদের চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র জামা দেন। এতে ‘মনোনয়ন-ফি বাবাদ’ ইসির আয় ৯২ হাজার ৫শ ডলার। ফলে বলা যায়- গঠিত এ নির্বাচন কমিশন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল একটি কমিশন। মনোয়নপত্র বিতরণ নির্ভর ফি ২১ হাজার ৫শ এবং প্রার্থীদের নমিনেশন ফি ৯২ হাজার ৫শ। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ডলার। ভাবা যায়! এসব অর্থ ব্যয় হবে, বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে। মানে মিলিয়ন-ডলারের বেশী ব্যয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রবাসীদের আমব্রেলা খ্যাত এ সংগঠনটির এবারের নির্বাচন।
চার). ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াঃ
শিরোনামেই বলা আছে- ‘বিশ টাকার (ডলারের) কাছে ‘বিবেক-বিক্রি’! প্রতি বছর গানিতিক হারে বৃদ্ধি পায় রেকর্ড সংখ্যক ভোটার। প্রার্থীদের অর্থে ভোটার হওয়া এ আমাদের অবস্থানও তাই অতটা স্বচ্ছ নয়। তবে, যারা কর্মজীবী, তাদের কেউ কেউ ওইদিনের মাইনে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ঠিকই। বিনিয়ময়ে ২০ ডলারের কাছে বিক্রি করেছেন নিজের বিবেক। প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নামেন। উদ্দেশ্য-একটাই; কে কতজন ভোটার বানাবেন। এ প্রতিযোগিতা চলে মাসজুড়ে। হোটেল/রেস্টুরেন্ট কিংবা কমিউনিটির আড্ডায় চলে একই বিষয়। চলতে থাকে- পরিচিত আর আপনজনদের তালিকা চূড়ান্ত করা। মুঠো-ফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ আর মোবাইল নাম্বার। ব্যস! ভোটার ফরম পূরণ সম্পন্ন!! অনেকে আবার জানেনই না যে- তিনি ভোটার!!!
নির্বাচনের দিন, কিংবা আগের দিন পর্যন্ত চলে প্রার্থী আর ভোটারদের মধ্যে কুশল বিনিময়। সেই সাথে চলে পরিচিতি সভা। যাতে থাকে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের নানা ফিরিস্তি। সংশ্লিষ্টদের ভরসা হচ্ছে-পরিচিতজন। এছাড়া প্যানেল কেন্দ্রিক মাঠে সক্রিয় থাকা প্রতিনিধি/আঞ্চলিক/সামাজিক সংগঠনের নেতারা। যারা ওই ভোটারকে মনে করিয়ে দেন- ‘আপনি ভোটার’। ভাই অমুক দিন ভোট। যেহেতু তিনি টাকা খরচ করেন নি; তাই প্রশ্ন করেন, কাকে ভোট দেবো? যার মাধ্যমে ভোটার হয়েছেন; তিনি তার পছন্দের প্রার্থী ও প্যানেলের কথা বলেন। সম্ভব হলে পরিচয় করিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকেন। এতেই খুশি আমরা। এই হচ্ছে রেকর্ড ভোটার নিবন্ধন’র ফসল। তবে, ভোটগ্রহণ ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নে- আদালতের দ্বারস্থ হন কেউ কেউ।
পাঁচ). কমিউনিটির দায়বদ্ধতাঃ
নির্বাচনের দিন। আমাদের মতো ‘বিনে-পূঁজির’ ভোটাররা কেবল অপেক্ষায় থাকি। বড় ধরণের ব্যস্ততা না থাকলে, ক্ষুদে বার্তায় কিংবা মুঠো-ফোনে তথ্য পাই। চলে যাই সবচেয়ে কাছের নির্ধারিত কেন্দ্রে। প্রয়োগ করি নির্ধারিত/নিবন্ধিত ভোটাধিকার। বস্তুত আমরা প্রকৃত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারি কি? আমার মনে হয় ‘না’। ফলে- সোসাইটিতে ঘুরে ফিরে একই মুখের প্রতিনিধিত্ব। অভিযোগ আছে-সবখানেই রয়েছে ‘প্রভাবশালী-সিন্ডিকেটের’ আনাগোনা। তাঁরাই না কি নির্ধারণ করেন; প্যানেল ও প্রার্থীদের পদ। সব কিছু মিলে পরবর্তী দুই বছরের জন্য-যাদের আমারা নির্বাচন করি। এতে ব্যয় হয় ‘মিলিয়ন-ডলার’। প্রিন্ট হয় নিয়মিত প্রকাশিত কমিউনিটির প্রায় সবগগুলো পত্রিকার পাতা। ছাপা হয় ‘ভি-চিহ্নের’ জয়োধ্বনির ছবি। এইটুকুনই আমাদের অর্জন।
ছয়). নির্বাচিত প্রতিনিধিঃ
নির্বাচনের ক’দিন ধরে চলে সাপ্তাহিক পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন আর অভিনন্দের পালা। এরপর শুরু হয় জয় পাওয়া নেতাদের অভিষেক পর্ব! সেখানেও মোটা অঙ্কের খরচ। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব কেবল ‘একুশে পালন, সংশ্লিষ্ট বই প্রকাশনা আর ইফতার পার্টি’ করা। তথ্য রয়েছে- কার্যনির্বাহী কমিটির কর্তাব্যাক্তিরা ক’দিনের মাথায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। কর্মকর্তাদের ১৯ জন বনে যান কয়েক খন্ডের প্রতিনিধি। সিদান্ত গ্রহণ আর আধিপত্য বিস্তারে যে পক্ষ যত বেশী শক্তিশালী; তারাই কেবল থাকেন আলোচনায়। ফলে, ভোটের আগে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদা চলে যায় হিমঘরে। যা কখনো ফিরে আসে না আলোতে। যদিও, মাঝে মধ্যে বাংলাদেশ-কনস্যুলেট পরিসেবা’সহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হন সোসাইটির নেতারা। তাইতো ‘পূঁজিহীন-ভোটে’ কেবল একদিনের ‘বিবেক-বিক্রি’ করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ। বিনিময়ে বছরে একটি ইফতার পার্টি, ঘটা করে একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবস পালন। আর বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তুষ্ট থাকেন সোসাইটির সংশ্লিষ্ট নেতারা।
সাত). বিভাজনের কর্মফলঃ
প্রতি বছর এ একুশ পালন ঘিরেও আমরা বিভাজিত। ওখানে দেখা মেলে (বিএনপি-আওয়ামী লীগের ক্ষমতার লড়াই)! দলীয় শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার থাকে সবার আগে। অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুলেল-শ্রদ্ধা নিবেদন থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পুরো আয়োজন সম্পন্নে সোসাইটির অর্থ ব্যয়ে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হয়। এর মাঝেই ধাক্কাধাক্কিতে চলে “দেশ ও সংস্কৃতি প্রেম”। যা দেখে ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান’ প্রজন্মের মাঝে ‘প্রশ্ন জাগে’- কি হচ্ছে এসব? আর কমিউিনিটি নির্ভর গণমাধ্যম কর্মী আমরা; সবাই ব্যস্ত থাকি নিজ নিজ কর্ম সম্পাদনে। পছন্দের/পক্ষের ব্যাক্তির পুস্পমাল্য অপর্ণের ছবি তোলাই জেন ‘মহৎ-কাজ’। পরবর্তী সপ্তাহের কাগজে যা ছাপা হবে! যাতে থাকবে ‘বিরতিহীন-পদবির-ক্যাপশন’ নির্ভর কমিউনিটি নেতার নাম। স্বপ্নের সোনার হরিণের খোঁজে আসা এসব ‘ব্যাতি-ব্যস্ত’ মানুষগুলোর দিনশেষে অর্জন কি? তা হচ্ছে- পত্রিকার পাতায় একটি সুন্দর ছবি। প্রচারণার আরেক মাধ্যম ফেসবুক তো রয়েছেই। এতেই তৃপ্ত আমার। যা যুক্তরাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে ‘সাত-সাগর-তের-নদীর’ ওপার বাংলায় পৌঁছায়! পরিবার-পরিজনরা গর্বের সহিত তা ‘পাড়া-মহল্লায়’ জানিয়ে দেন। বলেন- দেখেছো? আমার ‘ছেলে/মেয়র জামাই/কন্যা’ আজ কোথায় পৌঁছেছে!! যদিও, আমাদের প্রবাস জীবনের বাস্তব চিত্র দেশোবাসী কতটা জানে- সেটা বলা মুশকিল।
আট). সংগঠনের আধিক্যঃ
কমিউনিটির মাদার সংগঠন বলে বিবেচিত ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’। এছাড়া, নিউইয়র্কে নামে-বেনামে রয়েছে ‘অসংখ্য-সংগঠন’। এ সংখ্যা প্রায় ‘তিন-শতাধিক’। যা বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব সামাজিক সংগঠনের মধ্যে ‘একই নামে’ রয়েছে ‘একাধিক’। বলতে পারি খুবই ‘শক্তিশালী-বিভাজিত’ কমিউনিটি আমরা। না এ দায় শুধু কমিউনিটিরই নয়; অন্যদের/সবার। জাতির বিবেক বলতেও বিভাজন। কমিউনিটি নির্ভর গণমাধ্যমেরও একই চিত্র। সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে বিভাজন চলমান। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ‘পুরস্কার/অ্যাওয়ার্ড/সম্মাননা’ নির্ভর প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন উঠে-“কে দিচ্ছেন-কার স্বীকৃতি?” যাদের দৌরাত্ম কম নয়। প্রতি বছর সামার ঘিরে বিভিন্ন ব্যানারে ‘পথ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। এসবেও থাকে বিভাজনের রেশ। আবার মঞ্চে কে গান করবেন; তা নির্ধারিত থাকে। এর নেপথ্য কারিগর যিনি অর্থের যোগান দাতা কিংবা স্পন্সর’; তিনি। দিনশেষে আমরাদের অর্জন। আমরা বাংলাদেশী। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নই।
নয়). দেশের ভূত প্রবাসেঃ
আমেরিকায় জন্ম নেয়া কিংবা একটু সচেতন যারা, তারাও চায় না যে- ‘বাংলাদেশের বিভাজিত রাজনীতির ছোঁয়া পড়–ক কমিউনিটিতে’। কিন্তু কে শুনবে কার কথা। প্রতিনিয়ত ‘ক্ষমতাসিন ও বিরোধী’ রাজনীনৈতিক-চর্চা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করা। মতের অমিল হলে নিজ সংগঠন কিংবা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান। প্রয়োজনে আরেকটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা। মারামারি /হাতাহাতি থামাতে পুলিশী হস্তক্ষেপ! আটকের পর মুক্তি!! এটাই হচ্ছে নিউইয়র্কে বসবাসকারি বা আমাদের নিত্যদিনের অবস্থান। যা রুটিন ওয়ার্কেও মতো। তাই না?
দশ). স্বপ্নবাজদের চাওয়াঃ
প্রজন্মের সাথে মূলধারার সেতুবন্ধ। এটি কি ঐক্য ছাড়া সম্ভব? দেশীয় রাজনীতি, আধিপত্য আর বিভাজনই কি সব? হতো পারতো এর বিপরীত চিত্র। একটি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়া। যাতে সম্ভব ‘আরো বড় কিছু’ অর্জন। ভাবতেই ভালো লাগে। যখন দেখি; নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থীরা এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। যাদের অবস্থান তৃতীয় বৃহত্তম। এছাড়া- সিটি ক্যাব ইন্ডাস্ট্রি’সহ কর্মক্ষেত্র অনেকদুর এগিয়েছি আমরা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগে বাংলাদেশী-ইমিগ্রেন্টদের অবদানও মূল্যায়িত হচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে- তা তুলে ধরছেন, সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
এগারো). মূলধারায় প্রতিনিধিত্বঃ
বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে কেবল নিউইয়র্কে ৪ লাখেরও বেশী বাংলাদেশীর বাস। পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিউইয়র্ক সিটি ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করি। অনেকের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আফসোস- এতবড় একটি কমিউনিটি হয়েও; আমেরিকান-মূলধারায় রাজনীতিতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। নেই নিউইয়র্ক সিটি কিংবা রাজ্য প্রশাসনেও। অথচ, চেস্টা করলেই আমরা সিটি কাউন্সিলে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি! রাজ্য প্রশাসনের অ্যাসেম্বলী কিংবা সিনেট পরের কথা! তবে, আশারবাণী হচ্ছে- ছোট ছোট কাউন্টিগুলোতে একাধিক ‘শহর বা নগর প্রতিনিধি’ রয়েছেন, যারা বাংলাদেশী-অভিবাসী। আমাদের ছোট-খাটো অর্জনগুলোকে আরো বড় করতে প্রয়োজন ‘ঐক্যবদ্ধ-কমিউনিটি’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন’ তা কি গড়তে পেরেছে? হুম ‘একটি ভবন’ আছে; এটা সত্য। কিন্তু এমন ভবন তো আরো দুটি আঞ্চলিক সংগঠনের রয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি আর বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতির নিজস্ব ভবন আছে। যদিও চিটাগাং সমিতি এখন দু’ভাগে বিভক্ত।
বারো). লেখকের প্রত্যাশাঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে প্রকৃত বিবেকের ব্যহার করুণ। ‘বিশ-ডলারে’ ‘বিবেক-বিক্রি’ করবেন না। একমুখ বার-বার নয়; যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিবেন। সম্ভব হলেও ভোটের আগের দিন পর্যন্ত প্রত্যেকের অতীত কর্মকান্ডের খোঁজ নিবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন। আঞ্চলিক সংগঠন কিংবা কমিউনিটিতে এসব প্রার্থীদের বাস্তবধর্মী অবদানই বা কতটুকু? প্রশ্নটি নিজের বিবেককে করবেন। এবারের নির্বাচনে দু’টি প্যানেলেই অনেক নতুন মুখ রয়েছেন। সোসাইটি কর্মকর্তা হিসেবে অতীতে ভালো করেছেন এমন ব্যাক্তির সংখ্যাও সবার জানা। ঘুরে ফিরে একই মুখের প্রতিনিধিত্বই বা কতটুকু যৌক্তিক! আমরা চাইবো যার মাধ্যমেই ভোটার নিবন্ধিত হই না কেন; প্রতিনিধি নির্বাচনে অন্তত নিজের নুন্যনতম বিবেকের-ব্যবহার। অন্যথায়, প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যাই হোক; ফলাফল সেই একই।
পরিশেষে বলতে চাই; আমার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাস জীবন খুব একটা দীর্ঘ নয়। কমও বলা যায় না। আগামি ২১ অক্টোবরের নির্বাচন’সহ সোসাইটির ৩টি নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে যাচ্ছি। যদিও তা সম্ভব হবে- মহান আল্লাহ সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখলে। ২০১৪, ২০১৬ এবার ২০১৮। অতীতের নির্বাচনেও একজন ক্ষুদ্র গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলাম। চ্যানেলের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়েছে। কমিউনিটির প্রিয় চ্যানেল টাইম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারও করেছি। আগামিরটাও সেরকম হবে। দিনশেষে ভাবছি- ‘আসলেই আমাদের অর্জনটাই বা কি?’ কোন উত্তর পাইনা। তবুও আশা করছি; ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি এগিয়ে নিবে অভিবাসী-বাংলাদেশীদের। দেশের বিভাজিত রাজনীতি নয়; আমেরিকান প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠায় দরকার কমিউনিটিতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। যা গড়ে উঠুক বাংলাদেশ সোসাইটির মধ্য দিয়ে। এমনটিই প্রত্যাশা। (সাপ্তাহিক ঠিকানা)
শিবলী চৌধুরী কায়েস
সাংবাদিক-লেখক, নিউইয়র্ক

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

২০ টাকায় বিবেক বিক্রি!

প্রকাশের সময় : ০৯:১৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

শিবলী চৌধুরী কায়েস: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন’ ‘বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত নিউইয়র্কে বসবসাকারি বাংলাদেশীদের হাতে। অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব বলতে গেলে তেমন একটা নেই। তবে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের গ্রহণযোগ্যতা/কদর কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। যেমন- প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার-তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এসময়টিতে নিউইয়র্কের বাইরের অভিবাসীরাও সম্পৃক্ত হন। যদিও তা ভোটারদের নিজ উদ্যোগে নয়! নিবন্ধিত ভোটার তালিকা প্রণয়নে “সম্ভাব্য প্যানেল ও প্রার্থীরা” স্ব স্ব উদ্যোগে মাঠে নামেন। লক্ষ্য একটাই। নিজেদের ভোটব্যাংক সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এ যেন এক অসম প্রতিযোগীতা। কোন প্যানেল কত সংখ্যক ভোটার নিবন্ধিত করতে পারছেন; সেটির উপরই নির্ভর করে সোসাইটির পরবর্তী নেতৃত্ব কার হাতে! এ ধরণের পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পাঠক-বাংলাদেশ সোসাইটির আগামি নির্বাচন সংক্রান্ত আমার একান্তই ব্যাক্তিগত মতামত ও উপলুব্ধির খানিকটা তুলে ধরার চেষ্টা কেবল। যা নিন্মরূপঃ-
এক). ভোটার নিবন্ধ প্রক্রিয়াঃ
২০ ডলার (বাংলাদেশীরা কথার ছলে ‘ডলারকে’ টাকা বলে থাকেন)। সেই ২০ টাকায় ভোটার নিবন্ধন। হালনাগাদ ভোটার তালিকা সোসাইটির ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এবার নিবন্ধিত ভোটার ২৭ হাজার ৫শ’র বেশী। এতে বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাগার বেশ অর্থ শক্তিশালী হয়েছে। সবশেষ তথ্যে জানা গেছে; ভোটার নিবন্ধন নির্ভর অর্থের পরিমান- প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪শ ৬০ ডলার। বর্তমান ২৭ হাজার ভোটারের মধ্যে ৪শ ৮৮জন হচ্ছেন আজীবন সদস্য। তারাও ভোটার। সাধারণ ভোটার নিবন্ধিত করা হয়েছে ২০ ডলারের বিনিময়ে। আর জীবন সদস্য ফি ৫শ ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেশ মোটা-সোটা। কমিউনিটির জনমনে প্রশ্ন- স্বাস্থ্যবান এ সোসাইটির তহবিল কিভাবে খরচ হচ্ছে? এতে কমিউনিটিরই কতটুকু উপকারে আসছে?
এর আগে গেল ২০১৬ সালের নির্বাচন ঘিরেও রেকর্ড সংখ্যক ভোটার নিবন্ধিত করা হয়েছিল। যা ছিল ১৮ হাজার ৫শ ৫৪ জন। এবার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বেশী। যদিও সবশেষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন মাত্র ৫২ শতাংশ ভোটার। তথ্য মতে- সে সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ হাজার ১শ ৫৭ জন। ২০১৬ সালে প্রবাসীরা বাংলাদেশ সোসাইটিতে পরবর্তী দু’বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করেছিলেন। বিনিময়ে কি পেয়েছেন সেটা দেখার কেউ নেই। কারণ একটাই। ওইসব নিবন্ধিত ভোটাররাও ছিলেন ২০ (ডলার) টাকার।
দুই). নির্বাচন কমিশন গঠনঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচন চলতি মাসের ২১ অক্টোবর। তার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ চূড়ান্ত করা হয়। যা সম্পাদন করে থাকে বর্তমান/সবশেষ কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন গঠিত কমিশন-কর্মকর্তারা। ঘোষিত হয় নির্বাচনী-তফসিল। যার মধ্যে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন, জমা দেয়া, যাছাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা। এতসব আয়োজন এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন কেবল প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বাকি। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বোরোরর চারটিতে কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্র সংখ্যা পাঁচটি। এসব তথ্য কমিউনিটির সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এতসব আয়োজনের ফলাফলটা আসলে কি?
তিন). মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের নির্বাচনঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনে ১৯ টি পদের বিপরীতে দু’টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র’সহ ৪৩ জন প্রার্থীর মনোয়নপত্র ক্রয় করেন। এ বাবদ নির্বাচন কমিশনের আয় ২১ হাজার ৫শ ডলার। এরপর প্রার্থীতা চূড়ান্তের সময় মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। যাতে ১৯ টি পদের বিপরীতে দুই প্যানেলের ৩৮ জন ও স্বতন্ত্র দু’জনসহ মোট ৪০জন প্রার্থী তাদের চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র জামা দেন। এতে ‘মনোনয়ন-ফি বাবাদ’ ইসির আয় ৯২ হাজার ৫শ ডলার। ফলে বলা যায়- গঠিত এ নির্বাচন কমিশন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল একটি কমিশন। মনোয়নপত্র বিতরণ নির্ভর ফি ২১ হাজার ৫শ এবং প্রার্থীদের নমিনেশন ফি ৯২ হাজার ৫শ। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ডলার। ভাবা যায়! এসব অর্থ ব্যয় হবে, বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে। মানে মিলিয়ন-ডলারের বেশী ব্যয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রবাসীদের আমব্রেলা খ্যাত এ সংগঠনটির এবারের নির্বাচন।
চার). ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াঃ
শিরোনামেই বলা আছে- ‘বিশ টাকার (ডলারের) কাছে ‘বিবেক-বিক্রি’! প্রতি বছর গানিতিক হারে বৃদ্ধি পায় রেকর্ড সংখ্যক ভোটার। প্রার্থীদের অর্থে ভোটার হওয়া এ আমাদের অবস্থানও তাই অতটা স্বচ্ছ নয়। তবে, যারা কর্মজীবী, তাদের কেউ কেউ ওইদিনের মাইনে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ঠিকই। বিনিয়ময়ে ২০ ডলারের কাছে বিক্রি করেছেন নিজের বিবেক। প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নামেন। উদ্দেশ্য-একটাই; কে কতজন ভোটার বানাবেন। এ প্রতিযোগিতা চলে মাসজুড়ে। হোটেল/রেস্টুরেন্ট কিংবা কমিউনিটির আড্ডায় চলে একই বিষয়। চলতে থাকে- পরিচিত আর আপনজনদের তালিকা চূড়ান্ত করা। মুঠো-ফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ আর মোবাইল নাম্বার। ব্যস! ভোটার ফরম পূরণ সম্পন্ন!! অনেকে আবার জানেনই না যে- তিনি ভোটার!!!
নির্বাচনের দিন, কিংবা আগের দিন পর্যন্ত চলে প্রার্থী আর ভোটারদের মধ্যে কুশল বিনিময়। সেই সাথে চলে পরিচিতি সভা। যাতে থাকে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের নানা ফিরিস্তি। সংশ্লিষ্টদের ভরসা হচ্ছে-পরিচিতজন। এছাড়া প্যানেল কেন্দ্রিক মাঠে সক্রিয় থাকা প্রতিনিধি/আঞ্চলিক/সামাজিক সংগঠনের নেতারা। যারা ওই ভোটারকে মনে করিয়ে দেন- ‘আপনি ভোটার’। ভাই অমুক দিন ভোট। যেহেতু তিনি টাকা খরচ করেন নি; তাই প্রশ্ন করেন, কাকে ভোট দেবো? যার মাধ্যমে ভোটার হয়েছেন; তিনি তার পছন্দের প্রার্থী ও প্যানেলের কথা বলেন। সম্ভব হলে পরিচয় করিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকেন। এতেই খুশি আমরা। এই হচ্ছে রেকর্ড ভোটার নিবন্ধন’র ফসল। তবে, ভোটগ্রহণ ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নে- আদালতের দ্বারস্থ হন কেউ কেউ।
পাঁচ). কমিউনিটির দায়বদ্ধতাঃ
নির্বাচনের দিন। আমাদের মতো ‘বিনে-পূঁজির’ ভোটাররা কেবল অপেক্ষায় থাকি। বড় ধরণের ব্যস্ততা না থাকলে, ক্ষুদে বার্তায় কিংবা মুঠো-ফোনে তথ্য পাই। চলে যাই সবচেয়ে কাছের নির্ধারিত কেন্দ্রে। প্রয়োগ করি নির্ধারিত/নিবন্ধিত ভোটাধিকার। বস্তুত আমরা প্রকৃত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারি কি? আমার মনে হয় ‘না’। ফলে- সোসাইটিতে ঘুরে ফিরে একই মুখের প্রতিনিধিত্ব। অভিযোগ আছে-সবখানেই রয়েছে ‘প্রভাবশালী-সিন্ডিকেটের’ আনাগোনা। তাঁরাই না কি নির্ধারণ করেন; প্যানেল ও প্রার্থীদের পদ। সব কিছু মিলে পরবর্তী দুই বছরের জন্য-যাদের আমারা নির্বাচন করি। এতে ব্যয় হয় ‘মিলিয়ন-ডলার’। প্রিন্ট হয় নিয়মিত প্রকাশিত কমিউনিটির প্রায় সবগগুলো পত্রিকার পাতা। ছাপা হয় ‘ভি-চিহ্নের’ জয়োধ্বনির ছবি। এইটুকুনই আমাদের অর্জন।
ছয়). নির্বাচিত প্রতিনিধিঃ
নির্বাচনের ক’দিন ধরে চলে সাপ্তাহিক পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন আর অভিনন্দের পালা। এরপর শুরু হয় জয় পাওয়া নেতাদের অভিষেক পর্ব! সেখানেও মোটা অঙ্কের খরচ। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব কেবল ‘একুশে পালন, সংশ্লিষ্ট বই প্রকাশনা আর ইফতার পার্টি’ করা। তথ্য রয়েছে- কার্যনির্বাহী কমিটির কর্তাব্যাক্তিরা ক’দিনের মাথায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। কর্মকর্তাদের ১৯ জন বনে যান কয়েক খন্ডের প্রতিনিধি। সিদান্ত গ্রহণ আর আধিপত্য বিস্তারে যে পক্ষ যত বেশী শক্তিশালী; তারাই কেবল থাকেন আলোচনায়। ফলে, ভোটের আগে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদা চলে যায় হিমঘরে। যা কখনো ফিরে আসে না আলোতে। যদিও, মাঝে মধ্যে বাংলাদেশ-কনস্যুলেট পরিসেবা’সহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হন সোসাইটির নেতারা। তাইতো ‘পূঁজিহীন-ভোটে’ কেবল একদিনের ‘বিবেক-বিক্রি’ করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ। বিনিময়ে বছরে একটি ইফতার পার্টি, ঘটা করে একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবস পালন। আর বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তুষ্ট থাকেন সোসাইটির সংশ্লিষ্ট নেতারা।
সাত). বিভাজনের কর্মফলঃ
প্রতি বছর এ একুশ পালন ঘিরেও আমরা বিভাজিত। ওখানে দেখা মেলে (বিএনপি-আওয়ামী লীগের ক্ষমতার লড়াই)! দলীয় শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার থাকে সবার আগে। অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুলেল-শ্রদ্ধা নিবেদন থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পুরো আয়োজন সম্পন্নে সোসাইটির অর্থ ব্যয়ে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হয়। এর মাঝেই ধাক্কাধাক্কিতে চলে “দেশ ও সংস্কৃতি প্রেম”। যা দেখে ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান’ প্রজন্মের মাঝে ‘প্রশ্ন জাগে’- কি হচ্ছে এসব? আর কমিউিনিটি নির্ভর গণমাধ্যম কর্মী আমরা; সবাই ব্যস্ত থাকি নিজ নিজ কর্ম সম্পাদনে। পছন্দের/পক্ষের ব্যাক্তির পুস্পমাল্য অপর্ণের ছবি তোলাই জেন ‘মহৎ-কাজ’। পরবর্তী সপ্তাহের কাগজে যা ছাপা হবে! যাতে থাকবে ‘বিরতিহীন-পদবির-ক্যাপশন’ নির্ভর কমিউনিটি নেতার নাম। স্বপ্নের সোনার হরিণের খোঁজে আসা এসব ‘ব্যাতি-ব্যস্ত’ মানুষগুলোর দিনশেষে অর্জন কি? তা হচ্ছে- পত্রিকার পাতায় একটি সুন্দর ছবি। প্রচারণার আরেক মাধ্যম ফেসবুক তো রয়েছেই। এতেই তৃপ্ত আমার। যা যুক্তরাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে ‘সাত-সাগর-তের-নদীর’ ওপার বাংলায় পৌঁছায়! পরিবার-পরিজনরা গর্বের সহিত তা ‘পাড়া-মহল্লায়’ জানিয়ে দেন। বলেন- দেখেছো? আমার ‘ছেলে/মেয়র জামাই/কন্যা’ আজ কোথায় পৌঁছেছে!! যদিও, আমাদের প্রবাস জীবনের বাস্তব চিত্র দেশোবাসী কতটা জানে- সেটা বলা মুশকিল।
আট). সংগঠনের আধিক্যঃ
কমিউনিটির মাদার সংগঠন বলে বিবেচিত ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’। এছাড়া, নিউইয়র্কে নামে-বেনামে রয়েছে ‘অসংখ্য-সংগঠন’। এ সংখ্যা প্রায় ‘তিন-শতাধিক’। যা বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব সামাজিক সংগঠনের মধ্যে ‘একই নামে’ রয়েছে ‘একাধিক’। বলতে পারি খুবই ‘শক্তিশালী-বিভাজিত’ কমিউনিটি আমরা। না এ দায় শুধু কমিউনিটিরই নয়; অন্যদের/সবার। জাতির বিবেক বলতেও বিভাজন। কমিউনিটি নির্ভর গণমাধ্যমেরও একই চিত্র। সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে বিভাজন চলমান। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ‘পুরস্কার/অ্যাওয়ার্ড/সম্মাননা’ নির্ভর প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন উঠে-“কে দিচ্ছেন-কার স্বীকৃতি?” যাদের দৌরাত্ম কম নয়। প্রতি বছর সামার ঘিরে বিভিন্ন ব্যানারে ‘পথ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। এসবেও থাকে বিভাজনের রেশ। আবার মঞ্চে কে গান করবেন; তা নির্ধারিত থাকে। এর নেপথ্য কারিগর যিনি অর্থের যোগান দাতা কিংবা স্পন্সর’; তিনি। দিনশেষে আমরাদের অর্জন। আমরা বাংলাদেশী। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নই।
নয়). দেশের ভূত প্রবাসেঃ
আমেরিকায় জন্ম নেয়া কিংবা একটু সচেতন যারা, তারাও চায় না যে- ‘বাংলাদেশের বিভাজিত রাজনীতির ছোঁয়া পড়–ক কমিউনিটিতে’। কিন্তু কে শুনবে কার কথা। প্রতিনিয়ত ‘ক্ষমতাসিন ও বিরোধী’ রাজনীনৈতিক-চর্চা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করা। মতের অমিল হলে নিজ সংগঠন কিংবা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান। প্রয়োজনে আরেকটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা। মারামারি /হাতাহাতি থামাতে পুলিশী হস্তক্ষেপ! আটকের পর মুক্তি!! এটাই হচ্ছে নিউইয়র্কে বসবাসকারি বা আমাদের নিত্যদিনের অবস্থান। যা রুটিন ওয়ার্কেও মতো। তাই না?
দশ). স্বপ্নবাজদের চাওয়াঃ
প্রজন্মের সাথে মূলধারার সেতুবন্ধ। এটি কি ঐক্য ছাড়া সম্ভব? দেশীয় রাজনীতি, আধিপত্য আর বিভাজনই কি সব? হতো পারতো এর বিপরীত চিত্র। একটি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়া। যাতে সম্ভব ‘আরো বড় কিছু’ অর্জন। ভাবতেই ভালো লাগে। যখন দেখি; নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থীরা এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। যাদের অবস্থান তৃতীয় বৃহত্তম। এছাড়া- সিটি ক্যাব ইন্ডাস্ট্রি’সহ কর্মক্ষেত্র অনেকদুর এগিয়েছি আমরা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগে বাংলাদেশী-ইমিগ্রেন্টদের অবদানও মূল্যায়িত হচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে- তা তুলে ধরছেন, সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
এগারো). মূলধারায় প্রতিনিধিত্বঃ
বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে কেবল নিউইয়র্কে ৪ লাখেরও বেশী বাংলাদেশীর বাস। পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিউইয়র্ক সিটি ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করি। অনেকের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আফসোস- এতবড় একটি কমিউনিটি হয়েও; আমেরিকান-মূলধারায় রাজনীতিতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। নেই নিউইয়র্ক সিটি কিংবা রাজ্য প্রশাসনেও। অথচ, চেস্টা করলেই আমরা সিটি কাউন্সিলে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি! রাজ্য প্রশাসনের অ্যাসেম্বলী কিংবা সিনেট পরের কথা! তবে, আশারবাণী হচ্ছে- ছোট ছোট কাউন্টিগুলোতে একাধিক ‘শহর বা নগর প্রতিনিধি’ রয়েছেন, যারা বাংলাদেশী-অভিবাসী। আমাদের ছোট-খাটো অর্জনগুলোকে আরো বড় করতে প্রয়োজন ‘ঐক্যবদ্ধ-কমিউনিটি’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘আমব্রেলা খ্যাত সংগঠন’ তা কি গড়তে পেরেছে? হুম ‘একটি ভবন’ আছে; এটা সত্য। কিন্তু এমন ভবন তো আরো দুটি আঞ্চলিক সংগঠনের রয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি আর বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতির নিজস্ব ভবন আছে। যদিও চিটাগাং সমিতি এখন দু’ভাগে বিভক্ত।
বারো). লেখকের প্রত্যাশাঃ
বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে প্রকৃত বিবেকের ব্যহার করুণ। ‘বিশ-ডলারে’ ‘বিবেক-বিক্রি’ করবেন না। একমুখ বার-বার নয়; যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিবেন। সম্ভব হলেও ভোটের আগের দিন পর্যন্ত প্রত্যেকের অতীত কর্মকান্ডের খোঁজ নিবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন। আঞ্চলিক সংগঠন কিংবা কমিউনিটিতে এসব প্রার্থীদের বাস্তবধর্মী অবদানই বা কতটুকু? প্রশ্নটি নিজের বিবেককে করবেন। এবারের নির্বাচনে দু’টি প্যানেলেই অনেক নতুন মুখ রয়েছেন। সোসাইটি কর্মকর্তা হিসেবে অতীতে ভালো করেছেন এমন ব্যাক্তির সংখ্যাও সবার জানা। ঘুরে ফিরে একই মুখের প্রতিনিধিত্বই বা কতটুকু যৌক্তিক! আমরা চাইবো যার মাধ্যমেই ভোটার নিবন্ধিত হই না কেন; প্রতিনিধি নির্বাচনে অন্তত নিজের নুন্যনতম বিবেকের-ব্যবহার। অন্যথায়, প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যাই হোক; ফলাফল সেই একই।
পরিশেষে বলতে চাই; আমার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাস জীবন খুব একটা দীর্ঘ নয়। কমও বলা যায় না। আগামি ২১ অক্টোবরের নির্বাচন’সহ সোসাইটির ৩টি নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে যাচ্ছি। যদিও তা সম্ভব হবে- মহান আল্লাহ সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখলে। ২০১৪, ২০১৬ এবার ২০১৮। অতীতের নির্বাচনেও একজন ক্ষুদ্র গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলাম। চ্যানেলের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়েছে। কমিউনিটির প্রিয় চ্যানেল টাইম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারও করেছি। আগামিরটাও সেরকম হবে। দিনশেষে ভাবছি- ‘আসলেই আমাদের অর্জনটাই বা কি?’ কোন উত্তর পাইনা। তবুও আশা করছি; ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি এগিয়ে নিবে অভিবাসী-বাংলাদেশীদের। দেশের বিভাজিত রাজনীতি নয়; আমেরিকান প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠায় দরকার কমিউনিটিতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। যা গড়ে উঠুক বাংলাদেশ সোসাইটির মধ্য দিয়ে। এমনটিই প্রত্যাশা। (সাপ্তাহিক ঠিকানা)
শিবলী চৌধুরী কায়েস
সাংবাদিক-লেখক, নিউইয়র্ক