নিউইয়র্ক ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে অন্য রকম মাশরাফি বিন মর্তুজা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:১০:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৯৭৫ বার পঠিত

সালাহউদ্দিন আহমেদ॥ ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীকেট দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ক্রিকেটে বিশ্বকাপ অর্জন করতে হলে ভাগ্যের পাশাপাশি ভালো খেলা ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে দেশের ক্রিকেটের অর্জন ধরে রাখতে নতুন নতুন ক্রিকেটার তৈরী করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশবাসী আর প্রবাসীদের ভালোবাসাই আমাকে, আমাদের ক্রিকেট দলকে এগিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই মিলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘মাশরাফি বিন মর্তুজা রাইভ ইন নিউইয়র্ক’ অনুষ্ঠানে প্রবাসের ভক্ত আর সর্মকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে টাইগার দলে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা উপরোক্ত কথা বলেন। শোটাইম মিউজিক-এর উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের বেলোজিনো পার্টি হলে গত ৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্ন আর উত্তরে উঠে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বরপুত্র মর্তুজার ক্রিকেটার হওয়া, ক্রিকেটার না হলে কি হতেন, বাবা হওয়ার অনুভূতি, টি-২০ খেলায় ফেরা না ফেরা, বাংলাদেশ দলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ কতদূর প্রভৃতি বিষয়। ব্যতিক্রমী আর বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে প্রবাসের মাশরাফি ভক্তরা ‘মাঠের মাশরাফি আর অনুষ্ঠানের মাফরাফি’-কে মিলাতে পারছিলেন না। তাই তো এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন ‘মাঠের টাইগার মাশরাফি আর আজকের এই অনুষ্ঠানের মাশরাফি’র চিত্র এক নয়, মাঠে খেলা স্পীরিড কোথায় পান? আরেক সাংবাদিক পঞ্চমুখ হয়ে বলে উঠেন, ‘আমরা মাশরাফির মধ্যে বাংলাদেশকেই দেখতে পাই, আপনাকে শ্রদ্ধা’। আরেক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো ‘আপনার দেশপ্রেম নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নেই, যা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। এই দেশপ্রেম-এর প্রেরণা কোথায়?’। এমনি অর্ধ শতাধিক প্রশ্নবানে জর্জরিত মাশরাফি তার স্বভাব সুলভবাবে উত্তর দিয়ে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেন। দুই অতিথি ভক্তের ইংরেজীতে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাশারফি হাসি মুখে বলেন, ‘আমি ইংরেজী কম বুঝি, আমাকে বাংলায় প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে সুবিধা হয়’। এতে অনুষ্ঠানস্থলে হাস্যরোল পড়লেও মাশরাফির এই কথার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আর দেশপ্রেমই ফুটে উঠে।
অনুষ্ঠনে অতিথি ভক্ত আর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো আমি ডিফেন্সে অর্থাৎ আর্মি বা পুলিশ বিভাগে চাকরী করা। কিন্তু তা আর হলো না। ক্রিকেটার হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বাবা হওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করা যাবে না। মর্তুজা বলেন, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের দেশের প্রতিটি মানুষ ভালোবাসেন। আর এজন্যই আমরা ক্রিকেটে সাফল্য অর্জন করছি। আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশের নারী ক্রিকেটেও সাফল্য আসছে এবং তাদের সুযোগ-সু্িধার ব্যাপারে ক্রিকেট বোর্ড প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে।
মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমি যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করি না। আর এজন্যই হয়তো সাফল্য অর্জন করতে পারছি। ভুল-শুদ্ধ যাই হোক তাড়াতড়ি সিদ্ধান্ত নিতে আমি পছন্দ করি। আর টি-২০ থেকে যেহেতু বিদায় নিয়েছি তাই এনিয়ে আর ভাবছি না।
শোটাইম মিউজিক-এর কর্ণধার আলমগীর খান আলমের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাত ৯টার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। উপস্থিত দর্শক শ্রোতা আর ভক্তদের কলতালির মধ্যে মঞ্চে আসন নেন মাফরাফি বিন মর্তুজা। আলমের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে মাফরাফির দুই পাশে বসা পৃষ্ঠপোষকদের প্রশ্ন পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন টাইগার দলের ক্যাপটেন। দুই পর্ব মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
শ্বেত-শুভ্র আকষর্ণীয় মঞ্চে বসা টাইগার দলের অধিনায়ককে কখনোই দেশ-বিদেশের ক্রিটে মাঠের মাফরাফিকে মনে হয়নি। দৃশ্যত তিনি ছিলেন এক ন¤্র, ভদ্র, ভীতু টাইপের ‘কাজুমাজু’ এক কিশোর। তার এই আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অবশ্য প্রশ্নোত্তর পর্বের এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই’। তার এই কথাটি তার ভক্তরা মেনে নিতে পারেনি এই জন্য যে, মাঠের মাশরাফি আর এই মাশরাফি-কে এক মনে হচ্ছে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেন, নতুন ক্রিকেটারদের ভালো ক্রিকেটার হতে হলে অধ্যাবসায়ের সাথে পরিশ্রম করতে হবে। তিনি বলেন, বাসা বা দেশের বাইরে তিনি বেরুতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। অবসর পেলেই শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে বিশ্রাম নেন। তবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদের আতিথিয়তা তার ভালো লেগেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে অন্য রকম মাশরাফি বিন মর্তুজা

প্রকাশের সময় : ০১:১০:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৮

সালাহউদ্দিন আহমেদ॥ ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীকেট দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ক্রিকেটে বিশ্বকাপ অর্জন করতে হলে ভাগ্যের পাশাপাশি ভালো খেলা ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে দেশের ক্রিকেটের অর্জন ধরে রাখতে নতুন নতুন ক্রিকেটার তৈরী করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশবাসী আর প্রবাসীদের ভালোবাসাই আমাকে, আমাদের ক্রিকেট দলকে এগিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই মিলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘মাশরাফি বিন মর্তুজা রাইভ ইন নিউইয়র্ক’ অনুষ্ঠানে প্রবাসের ভক্ত আর সর্মকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে টাইগার দলে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা উপরোক্ত কথা বলেন। শোটাইম মিউজিক-এর উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের বেলোজিনো পার্টি হলে গত ৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্ন আর উত্তরে উঠে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বরপুত্র মর্তুজার ক্রিকেটার হওয়া, ক্রিকেটার না হলে কি হতেন, বাবা হওয়ার অনুভূতি, টি-২০ খেলায় ফেরা না ফেরা, বাংলাদেশ দলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ কতদূর প্রভৃতি বিষয়। ব্যতিক্রমী আর বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে প্রবাসের মাশরাফি ভক্তরা ‘মাঠের মাশরাফি আর অনুষ্ঠানের মাফরাফি’-কে মিলাতে পারছিলেন না। তাই তো এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন ‘মাঠের টাইগার মাশরাফি আর আজকের এই অনুষ্ঠানের মাশরাফি’র চিত্র এক নয়, মাঠে খেলা স্পীরিড কোথায় পান? আরেক সাংবাদিক পঞ্চমুখ হয়ে বলে উঠেন, ‘আমরা মাশরাফির মধ্যে বাংলাদেশকেই দেখতে পাই, আপনাকে শ্রদ্ধা’। আরেক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো ‘আপনার দেশপ্রেম নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নেই, যা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। এই দেশপ্রেম-এর প্রেরণা কোথায়?’। এমনি অর্ধ শতাধিক প্রশ্নবানে জর্জরিত মাশরাফি তার স্বভাব সুলভবাবে উত্তর দিয়ে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেন। দুই অতিথি ভক্তের ইংরেজীতে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাশারফি হাসি মুখে বলেন, ‘আমি ইংরেজী কম বুঝি, আমাকে বাংলায় প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে সুবিধা হয়’। এতে অনুষ্ঠানস্থলে হাস্যরোল পড়লেও মাশরাফির এই কথার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আর দেশপ্রেমই ফুটে উঠে।
অনুষ্ঠনে অতিথি ভক্ত আর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো আমি ডিফেন্সে অর্থাৎ আর্মি বা পুলিশ বিভাগে চাকরী করা। কিন্তু তা আর হলো না। ক্রিকেটার হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বাবা হওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করা যাবে না। মর্তুজা বলেন, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের দেশের প্রতিটি মানুষ ভালোবাসেন। আর এজন্যই আমরা ক্রিকেটে সাফল্য অর্জন করছি। আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশের নারী ক্রিকেটেও সাফল্য আসছে এবং তাদের সুযোগ-সু্িধার ব্যাপারে ক্রিকেট বোর্ড প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে।
মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমি যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করি না। আর এজন্যই হয়তো সাফল্য অর্জন করতে পারছি। ভুল-শুদ্ধ যাই হোক তাড়াতড়ি সিদ্ধান্ত নিতে আমি পছন্দ করি। আর টি-২০ থেকে যেহেতু বিদায় নিয়েছি তাই এনিয়ে আর ভাবছি না।
শোটাইম মিউজিক-এর কর্ণধার আলমগীর খান আলমের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাত ৯টার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। উপস্থিত দর্শক শ্রোতা আর ভক্তদের কলতালির মধ্যে মঞ্চে আসন নেন মাফরাফি বিন মর্তুজা। আলমের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে মাফরাফির দুই পাশে বসা পৃষ্ঠপোষকদের প্রশ্ন পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন টাইগার দলের ক্যাপটেন। দুই পর্ব মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
শ্বেত-শুভ্র আকষর্ণীয় মঞ্চে বসা টাইগার দলের অধিনায়ককে কখনোই দেশ-বিদেশের ক্রিটে মাঠের মাফরাফিকে মনে হয়নি। দৃশ্যত তিনি ছিলেন এক ন¤্র, ভদ্র, ভীতু টাইপের ‘কাজুমাজু’ এক কিশোর। তার এই আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অবশ্য প্রশ্নোত্তর পর্বের এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই’। তার এই কথাটি তার ভক্তরা মেনে নিতে পারেনি এই জন্য যে, মাঠের মাশরাফি আর এই মাশরাফি-কে এক মনে হচ্ছে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেন, নতুন ক্রিকেটারদের ভালো ক্রিকেটার হতে হলে অধ্যাবসায়ের সাথে পরিশ্রম করতে হবে। তিনি বলেন, বাসা বা দেশের বাইরে তিনি বেরুতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। অবসর পেলেই শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে বিশ্রাম নেন। তবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদের আতিথিয়তা তার ভালো লেগেছে।