রোজা আর ঈদ নিয়ে আমেরিকান স্কুলের অনুভূতি
- প্রকাশের সময় : ০৯:৫১:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
- / ৮৫০ বার পঠিত
ফারজানা ফারজু: পাহারের মতো দিন। রোজা এবার শুরই করেছি ষোলো ঘন্টার বেশী দিয়ে। আর এখন প্রায় সতেরো ঘন্টার কাছাকাছি। কিন্তু কি আশ্চর্য্য! এই জুনেও যেখানে প্রচন্ড গরমে মানুষের হাঁপিয়ে যাবার কথা, সেখানে মেঘলা দিন, অথবা বৃষ্টি, নয়তো আধো রোদ্র আধো মেঘলা দিন দিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে রোজা। আর মাত্র পাঁচ রোজা, তার পরেই ঈদ। তবে এই রোজা আর ঈদ নিয়ে মনে হয় আমার চেয়ে আমার স্কুলে সবার আরো উৎকন্ঠা ও উৎসাহ বেশী।
রোজা আসবার আগে থেকেই তাদের জিজ্ঞেস করা শুরু হয়েছিলো ‘হোয়েন ইজ ইওর রামাদান ইজ গোয়িং টু স্টার্ট’? ফিফটিন মোর ডেইজ, টেন মোর, ফাইভ মোর……..
এভাবে চলতে চলতে রোজা এসে গেলো। এর পরে শুরু হলো নানা প্রশ্ন, নানা সাক্ষাতকার। এই বছরে কতো ঘন্টা রোজা? কয়টা থেকে কয়টা?
যেহেতু আমাদের স্কুলটাতে দুইশত স্টাফের মধ্যে একমাত্র আমি-ই বাঙালী ও মুসলিম। বাঙালী বাচ্চা আছে অনেক। তাই যে সমস্ত বাবা-মায়েরা ইংলিশে কাঁচা তাদের জন্য আমাকে ডাকার দরকার হয়। সেই সুবাদে স্কুলে আমি বেশ পরিচিত। যেদিক দিয়েই হাঁটি কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করতে থাকে আর কয় রোজা বাকি?
নট ইভেন ড্রিঙ্ক ওয়াটার ?
হাউ ইউ ক্যান স্টে উইদাউট ওয়াটার?
আমি ভাবতেও পারি না পানি ছাড়া সতেরো ঘন্টা।
গড ব্লেস ইউ…….
লাঞ্চ টাইমে টিচার্স লাঞ্চ রুমে এক সাথে অনেকে লাঞ্চ করি। রোজায় খাবার ঝামেলা নাই, তাই
মাঝে মাঝে মাথাটা টেবিলে রেখে রেস্ট নেই। ঠিক ঘুম না, আবার ঘুমও। আর তখন সবার কথার শব্দ কমে যায়। এসময় শুনতে পাই-
‘ফারজানা ইজ ফাস্টিং, ডোন্ট টক টু লাউড।
লেট হার স্লিপ এন্ড রি-লাক্স’।
প্রথম প্রথম কেউ কেউ সামনে খেতেও অ্যাম্বারাস ফিল করতো। রোজার আগের দিন এক বান্ধবী এক স্লাইস পিজা কিনে এনে বলে- ‘তুমি তো পুরা মাস লাঞ্চ করবে না তাই আমারটার সাথে তোমার জন্যও এক স্লাইস কিনে এনেছি। এটা খাও । যদিও জানি, তুমি বাইরের খাবার এতো খাও না।
এর পরে শুরু হয় ঈদের ছুটির অপেক্ষা। স্কুলে এখন আর বলে না ‘মুসলিম হলিডে’। সবাই বলে ‘ঈদ ডে’ নো স্কুল। তিন বছর থেকে নিউইয়র্ক মেয়র ‘বিল ডি ব্লাজিও’ অনেক চেষ্টা করে
ঈদের ছুটি অনুমোদন করেছেন।
গত সপ্তেহের একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি …
এবার আমার কাজ পরেছে প্রি-কের টিচারের সাথে। আমার দায়িত্ব অ্যাসিস্টেন্ট টিচার। অনেক কাজই করতে হয় আমাদের। সেদিন মিস বোরেস বললেন,
-সোমবারে কিন্তু কুইন্স কলেজে ওয়ার্কশপ।
আবার এখানে চলে এসো না।
আর শুক্রবারে বন্ধ। নো স্কুল ।
-শুক্রবারে আবার কিসের বন্ধ মিস বোরেস?
-ওহ মাই গড! আমি তোমারে নিয়া কি করবো ?
সেদিন ঈদ। নিজের ঈদ নিজেরই খবর নাই। আর পুরা স্কুল অপেক্ষা করে আছে সেদিন বন্ধ। দু’জনেই প্রাণখুলে হাসলাম। পরে ভাবলাম কুইন্স কলেজ অনেক দূরে। যাবো না রোজায় এতো দূরে। সেহরি খেয়ে আর ঘুমানো হবে না। সারাদিন ওয়ার্কশপে অনেক টায়ার্ড হয়ে যাবো। এমনিতেই এগুলা বোরিং। সেক্রেটারী জনের কাছে গিয়ে বললাম-
‘জন আমি সোমবারে কুইন্স কলেজে ওয়ার্কশপে
রোজা রেখে যাবো না… কারণ…
কথা শেষ করতে না দিয়েই জন বললো…
‘ডোন্ট গো, স্টে হোম। আই নো ইউ আর ফাস্টিং’।
-আমার কি পার্সোনাল ডে বাকি আছে জন ? মাত্র তো
তিন দিন পার্সোনাল ডে বছরে।
-‘ডোন্ট ওরি, আই উইল ম্যানেজ, ইউ হেভ প্লেন্টি অফ ডে সিক লিভ ইন ইউর ব্যাঙ্ক। ওখান থেকে
একদিন নিয়ে নিবো। পার্সোনাল ডে সেইভ করো আরো ইমার্জেন্সির জন্য।
এই হলো আমার স্কুল, ঈদ ও আমেরিকাতে ঈদের অনুভূতি। আমি আমার স্কুলের সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে, একজন মুসলিম হয়েও আমি তাদের কাছে ঈদ আর রোজা নিয়ে এতোটা সম্মান অর্জন করেছি।
নিউইয়র্ক