ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার : যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ বাংলাদেশী ডিপোর্ট : ভুক্তভোগীদের পরিবারে আহাজারী
- প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
- / ৮৬১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে ১১ জন বাংলাদেশী ডিপোর্ট হয়েছেন। অপর একটি সূত্র মতে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ২৭ জন বাংলাদেশী দেশ ত্যাগের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার মধ্য রাতে বা বুধবার ভোরে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে তাদেরকে ডিপোর্ট করা হয় বলে সংশ্লিস্ট পরিবার সূত্রে জানা গেছে। ডিপোর্টকৃতদের অনেকেই ২৫/৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভাবে বসবাস করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ফেলে যাওয়া পরিবারে এখন শোকের স্তব্ধতা। আর তাদের শিশুদের চোখ অশ্রুসজল। এ খবরে নিউইয়র্ক’সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও সিটিতে বসবাসকারি কাগজপত্রহীন বাংলাদেশীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টার-এ আটক দুই নারী সহ ২৭জন বাংলাদেশী ডিপোর্টেশনের পথে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছিলো। অপরদিকে আটককৃত বাংলাদেশী ভুক্তভোগীদের পরিবারে আহাজারী চলছে। সূত্র মতে, যেকোন সময় তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এদিকে আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের তথ্যাদি চাওয়া মাত্রই দ্রুত আইস-কে প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসকে সতর্ক করা হয়েছে। অপরদিকে ট্রাম্প প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভিবাসীদের তথ্যাদি জানাতে গড়িমসি করায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪টি দেশের বি-১ ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ডিপোর্টের শিকার বাংলাদেশী বাবলু শরিফের দুই মেয়ে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের যেনো বাবার ¯েœহ থেকে বঞ্চিত করা না হয় এজন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এসময় বাবুল শরিফের স্ত্রী, এটর্নী (আইনজীবি) ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক, সাউথ এশিয়ান এডুকেশন স্কলাশীপ এন্ড ট্রেনিং (সেফেস্ট) অর্গানাইজেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মাজেদা উদ্দিন জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে অতি সম্প্রতি দুই নারী সহ ২৭জন বাংলাদেশী ডিপোর্টেশনের পথে রয়েছেন। তারা অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টার-এ আছেন। সূত্র মতে, নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, নিউজাসী, অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে তাদেরকে আন ডকুমেন্টে হিসেবে আইস আটক করেছে। আটককৃতদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করছেন এবং তারা আটক হওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আটককৃতদের মধ্যে নিউইয়র্কের ১০জন বাংলাদেশী রয়েছেন। এরা হলেন: মো: ফরিদুল মওলা, রহমান মজুমদার, সেলিম আহমেদ, শরীফ বাবলু, রহিম চৌধুরী, মোহাম্মদ আম্বিয়া, খায়রুল আম্বিয়া, মোহাম্মদ বাদল রনি, মনিরুল ইসলাম ও আফসার আহমেদ।
আটককৃতদের পরিবারের বরাত দিয়ে মাজেদা উদ্দিন জানান, আটককৃতদের প্রত্যেকের হাতে বিভিন্ন কালারের ব্যান্ড লাগানো আছে। তাতে ‘লো আর হাই’ ইংরেজীতে শব্দ লেখা আছে। আটককৃতদের মধ্যে সেলিম আহমেদ, মোজাম্মেল হক, করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, বাবলু শরীফ, মোহাম্মদ বাদল রনি, মোহাম্মদ ফরিদুল মওলা, মনিরুল ইসলাম, নাসরিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আম্বিয়া ও খায়রুল আম্বিয়াকে বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে (স্থানীয় সময়) বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের বরাত দিয়ে মাজেদা উদ্দিন এই প্রতিনিধিকে জানান।
মাজেদা উদ্দিন বলেন, গত চার মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস ১৪জনকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করেছে। কোন তদন্ত ছাড়াই দূতাবাস ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিচ্ছে এবং দূতাবাস আটককৃতদের পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত পূর্বক যাদের বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই বা যারা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নন, তাদের মুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে আইস-কে সংশ্লিস্টদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট না দিলে তারা আপাতত রক্ষা পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেতে পারে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, পাকিস্তান দূতাবাস দেশটির আটকৃতদের ট্রাভেলস ডকুমেন্ট না দেয়ায় আটককৃত পাকিস্তানীরা বন্ড দিয়ে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার জন্য আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মাজেদা উদ্দিন জানান, বিগত দেড় মাস আগে চারজন বাংলাদেশী এবং গত ৩/৪ মাসে ১৪জন বাংলাদেশীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আনডকুমেন্ট অভিবাসীদের তথ্য আইস-এর কাছে ধীর গতিতে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের বি-১ ভিসা বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে। এবছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ এ সংক্রান্ত হুশিয়ারী পত্র দূতাবাসে পাঠায়। এরপর থেকেই ভিসা প্রক্রিয়া সচল রাখার স্বার্থে দূতাবাস দ্রুত গতিতে ট্রাভেলস ডকুমেন্ট আইস-এর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে। দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকে যুক্তরাস্ট্রৈ বসবাসরত আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশীদের তথ্য দিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের ভিসা আবেদন বাতিল হয়। ওই প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই দূতাবাসকে দ্রুত গতিতে তথ্য দিতে হয়।