ভয়াল ৯/১১ সোমবার

- প্রকাশের সময় : ০২:০৮:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
- / ৭২৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ভয়াল ৯/১১ সোমবার। সভ্যতার ইতিহাসে ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টিকারী ৯/১১ এর ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ ১১ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি পালনের পাশাপাশি ঐদিন নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে। আজ থেকে ১৬ বছর আগে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির একমাত্র প্রতীক বলে বিবেচিত ও বিশ্বের সবচে পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ আঘাত হানা দুটি যাত্রীবাহী বিমানকে মিসাইল হিসাবে ব্যবহার করে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির প্রতীক পেন্টাগনেও একটি বিমানকে ব্যবহার করে ধ্বংস করা হয়। এছাড়াও আরো একটি বিমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পূর্বে পথেই ক্রাশ হয়ে যায়। ঘটনায় সবমিলে প্রাণহানি ঘটে প্রায় তিন হাজার লোকের।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, এক চরম নাটকীয় কায়দায় সন্ত্রাসীদের বিমান হামালায় আক্রান্ত হয় নিউইয়র্ক-প্যান্টাগন। ঘটনার পরপরই পুরো বিশ্বের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মুলত: এই আক্রমনটি একই সাথে বিভিন্ন দিক থেকে সংঘটিত করা হয়েছিল। সমালোচকদের মতে, ‘বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহ এই ঘটনায়কে কেন্দ্র করেই আফগানিস্তান ও ইরাকের বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকান প্রশাসন বিষয়টিকে তাদের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার শক্তি বৃদ্বির অজুহাত হিসাবে ও ব্যবহার করে। তারা এটিকে সেনা, নিরাপত্তা শিল্প, পুলিশি কার্যক্রম, বাজেট বৃদ্বি ও প্রযুক্তিগত বিষয়কে বিপুলভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায়। পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে গোয়েন্দা তথা ইনফরমেশন নজরদারির সুযোগকে কাজে লাগায়। এই আক্রমনটিকে ঘিরে আমেরিকা সীমান্ত এলাকায় সামরীকিকরণ ও অভিবাসী মানুষের উপর বাড়তি নজরদারির শুরু হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার মাইল দূরের দেশ আফগানিস্তানে তখন তালেবান সরকার। আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আলকায়েদা-কে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য দায়ী উল্লেখ করে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কংগ্রেসের অনুমোদন নিয়ে মাত্র এক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে হামলা চালান। দেশটিতে তালেবান সরকারের উচ্ছেদ ঘটে। আলকায়েদা এবং তাদের নেতা ওসামা বিন লাদেনকে তাড়া করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ঘাপটি মেরে থাকা বিন লাদেনকে হত্যা করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এরপরও অবসান হয়নি জঙ্গিবাদের। আলকায়েদা নামের জঙ্গি সংগঠন এখনো একই ভাবধারায় ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব-পশ্চিমের নানা দেশে।
৯/১১-এর ১৬ বছর পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রবাসী আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করছে দিনটিকে। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের স্থানটিতে গড়ে উঠেছে সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল। ১৭৭৬ ফুট উচ্চতার নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ দিনটির পর জাতীয় নিরাপত্তাই হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রতিবছর ভাগ্যহত মানুষদের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ম্যানহাটানস্থ গ্রাউন্ড জিরোতে শুরু হয় দিনটির মূল আনুষ্ঠানিকতা।
নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের হিসেবে সেদিনের হামলায় নিহত হন ২হাজার ৯শ ৯৬জন। সূত্র মতে, সেদিন অন্তত ১০/১৫জন বাংলাদেশী নিহত হন। সরকারি রেকর্ড অনুয়ায়ী নিহতদের তালিকায় রয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আবুল কাসেম চৌধুরী, মোহাম্মদ সাদেক আলী, আশফাক আহমেদ, নাভিদ হোসেন, নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি, সাব্বির আহমেদ, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী এবং ওসমান গনি। সঠিক কাগজপত্রের অভাবে বাংলাদেশীদেরর মধ্যে নিহতরে মধ্যে আরো অনেকেই তালিকার বাইরে থেকে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি কাজ করতেন মার্শ এন্ড মেকলেনান কোম্পানীতে। নুরুল হকের বয়স ছিলো ৩৫ আর শাকিলার ২৬। শাকিলা ১৯৯৯ সালে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম এমআইএস বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। এবং একই সালে এই কোম্পানীতে যোগ দেন তিনি। ঘটনার দিনও কাজ করেছেন স্বামী-স্ত্রী একসাথে।
৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী থাকতেন কুইন্সে। তিনি কাজ করতেন সন্ধ্যার শিফটে উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেস্টুরেন্টে। স্ত্রী ছিলেন প্রেগনেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডাক্তারে কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো। তাই শিফট পরিবর্তন করে ঐদিনের জন্যে সকালের শিফটে কাজে আসেন। নিয়তির নির্মম পরিহাস; সন্তানের মুখ আর দেখে যেতে পারলেন না হতভাগা সালাহউদ্দিন চৌধুরী। ঘটনার দু’দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর তার একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে।
একই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অ্যাডমিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। এরকম আরো অনেকেই আছেন যাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বলতে গেলে নিহত বাংলাদেশী পরিবারগুলোর খোঁজ এখন আর কেউ রাখছে না। এমন প্রশ্নও উঠে এসেছে সবার মুখে মুখে।
এদিকে বরাবরের মতো এবারো সেই ভয়াল ৯/১১ কে স্বরণ করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে নিউইয়র্ক প্রশাসন। পুরো এলাকাটি ঘিরে নেয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনটি উপলক্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আসবেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র, রাজ্য গভর্ণরও সন্ত্রাস দমনে কাজ করা সংস্থাগুলোকে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবছরের মতো এবারের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ থাকবে বেশ লক্ষনীয়। সে লক্ষ্যে ‘গ্রাউন্ড জিরোকে’ নতুন রুপে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে গ্রাউন্ড জিরোতে শুরু হবে স্মরণ অনুষ্ঠান। টিভি চ্যানেলগুলো ঐদিন সকাল ৬টা থেকে গ্রাউন্ড জিরো থেকে লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। আশা করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯/১১-এ গ্রাউন্ড জিরোতে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।