নিউইয়র্ক ১১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নন্দিত বাংলাদেশী কিশোর ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে নিন্দিত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ৬৬৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: মোহাম্মদ ইসলাম নামের এই বালকটি নিউ ইয়র্কের স্টাইভিসেন্ট হাইস্কুলের টুয়েলভ গ্রেডের ছাত্র। হাইস্কুল গ্রেজুয়েট বাংলাদেশী এই বালকের বিস্ময়কর ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয়ের কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন ছাপে প্রথমে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন ও নিউইয়র্ক টাইমস। একে একে সংবাদের শিরোনাম হয় ডেইলি নিউজ সিএনএন’সহ শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমেও। মাত্র ১৭ বছরের বাংলাদেশী কিশোর-বালকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয় কমিউিনিটির গণমাধ্যমও। মুলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশী কমিউনিটির গণমাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করে মোহাম্মদ ইসলামের এই অর্থ আয়ের সাফল্যের খবর। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক রানার’সহ বেশ ক’টি গণমাধ্যম বাংলাদেশী কিশোরের সাফল্য গাঁথা অর্জনকে সাধুবাদ জানিয়ে খবর প্রকাশ করে। ফুটিয়ে তোলা হয় ১৭ বছরের কিশোরের এই সাফল্য শুধু বাংলাদেশীদের নয়; পুরো বিশ্বের সেরা অর্জন হিসেবে। কিন্তু বিধি বাম। মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। মাথায় বাজ পড়ে সবার। যে খবরে উচ্ছ্বসিত হয় স্টাইভিসেন্ট স্কুলে অধ্যায়নরত বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটি। ঠিক তার উল্টো চিত্র প্রকাশিত হয় মাত্র দু’দিনের মাথায়।
দু’দিন আগে ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনের জন্য নন্দিত বাংলাদেশী কিশোর মোহাম্মদ ইসলাম দু’দিন পরেই পরিণত হলেন নিন্দিত ব্যক্তিতে। মূলধারা এবং কমিউনিটির মিডিয়াগুলো যেখানে বড় বড় করে তার সংবাদ ছেপেছে; খোদ দত তারাই এখন উল্টো দুঃখ প্রকাশ করছে। কারণ বাংলাদেশী ঐ কিশোরের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনের খবরটি ছিল সাজানো নাটক এবং মিথ্যা। আসলেই কি তাই? কেনইবা এমন খবর সাজানো হলো, কেনইবা তা এখানকার পত্র-পত্রিকায়গুলো এত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করলো সংবাদটি আবার এখন কেনইবা একেবারে মিথ্যা হয়ে গেল সব? এমন প্রশ্নের উত্তর খঁজতে থাকে কমিউনিটি’সহ সংশ্লিষ্টরা।
স্টক মার্কেটে বিনিয়োগকারি এই কিশোরের আয়ের উৎস খুঁজতে মাঠে নামে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তাদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে আসল খবর। বাংলাদেশী কিশোরের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জন ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা। মুলধারার গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রকাশিত খবরের জন্য দু:খও প্রকাশ করে। একই ভাবে নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন তাদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদন এবং মোহাম্মদ ইসলামের ব্যাংক হিসেব’সহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে দু:খ প্রকাশ করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। মূলধারার যেসব গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়েছেন মোহাম্মদ ইসলাম; তারাও দু:খ প্রকাশ করে সংবাদ ছাপে। একই সাথে খবরে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশী কিশোরের অর্থ আয়ের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। যাকে ঘিরে তোলপাড় কমিউনিটি’সহ তার দীর্ঘদিনের সহপাঠিরা। কী বলছেন তারা।
নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টাইম টেলিভিশনের সাথে আলাপকালে মোহাম্মদ ইসলামের ক্লাসমেট ও স্টাইভিসেন্টের টুয়েলভ গ্রেডের ছাত্র ইউসুফ খান বলেন, ‘দেখুন আমাদের বাবা-মা এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বপ্ন থাকে ভালো মানের স্কুলে অধ্যায়ন করা। সে লক্ষ্যে আমরা স্টাইভিসেন্টে লেখা-পড়ান সুযোগ পেয়েছি। এটা আমাদের পরিবার এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য গর্বের। মোহাম্মদ ইসলামের প্রথম খবরে আমরা অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করি। প্রশ্ন জাগে মনে এ কী করে সম্ভব? কিন্ত যখন দেখি মুলধারার গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছি তখন কিছুটা বিশ্বাস জাগে। কারন মোহাম্মদ ইসলাম অনেক মেধাবি একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু যখন শুনি বিষয়টি মিথ্যা; তখনই কষ্ট পাই। আমাদের মাথা অনেক ছোট হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ভালো ভাবে যাচাই-বাচাই না করে কী ভাবে একটা সংবাদ ছাপে মূলধারার গণমাধ্যম? যাই হোক ভুল তো ভুলই। মোহাম্মদ ইসলামও দু:খ প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করবো ইসলাম তার মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটি’সহ পুরো পরিবারের মুখ উজ্জল করবে। তার জন্য শুভ কামনা রইলো’।
বাংলাদেশী বালকের অবিস্মরণীয় সাফল্য নিয়ে কমিউনিটির আনন্দ উচ্ছাস মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে পরিণত হয় লজ্জায়। এমন মন্তব্য করেন র্শীর্ষ গণমাধ্যম ব্যক্তিরা। টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সাথে আলাপকালে তারা তুলে ধরেন, ‘আগামীতে এসব বিষয়ে আরো যতœবান হয়ে সংবাদ পরিবেশ প্রয়োজনীয়তার কথা’ ।
বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক মনজুর আহমেদ। তিনি জানান, ‘মূলধারার পত্রিকা ভুল করতে পারে। তারা আবার তাদের ভুল স্বীকার করে দায়মুক্তি হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা? আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো কী ভাবে দায়মুক্তি হবে? আমরা যারা ফলাও করে পজেটিভ ওয়েতে এটা ছেপেছি কিংবা প্রকাশ করেছি; আমাদের দায়মুক্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই সংবাদটি ছাপানোর আগে আমার উচিত ছিলো  (মোহাম্মদ ইসলাম) ছেলেটি সম্পর্কে ভালো ভাবে খোঁজ-খবর নেয়া। তার আলাদা ইন্টারভিউ করা। আমরা এসবের কিছুই করি নাই। এমনি সে যে বাংলাদেশী ছেলে, বলতে গেলে এটাও আমরা নিশ্চিত নই’।
টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সাথে কথা বলেন এখন সময়ের সম্পাদক কাজী শামসুল হক। তিনি জানান, ‘নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন কিংবা টাইমস, সিএনন যাই প্রকাশ করুক না কেন; যেহেতু বাংলাদেশী ছেলে সে ক্ষেত্রে আমাদের আরো সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সংবাদ ছাপানো উচিত ছিলো। কিন্তু বলতে গেলে ছেলেটি বাংলাদেশী বলে আমরা আপ্লুত হয়ে গেছি। বাংলাদেশী একটা ছেলের এত বড় অর্জন তা আমাদের আবেগতাড়িত করেছে। তবে, এখান থেকে আরেকটা জিনিস শেখারও আছে। তা হলো মূলধারার গণমাধ্যমগুলো যে ভাবে সংবাদ ছেপেছে; ঠিক একই ভাবে দু:খও প্রকাশ করেছে। আমাদেরও উচিত এই ধারাটি রক্ষা করা। কোন সোর্সের ভুলে একটা সংবাদ প্রকাশিত হতে পারে। সেটা থেকেও শেখার অনেক কিছু রয়েছে। এর এসব সোর্সের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ এবং প্রচারের নজিরও রয়েছে। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভুল তো ভুলই’।
বাংলাদেশী-আমেরিকান কিশোরের বিস্ময়কর অর্থ আয়ের খবরে উচ্ছ্বসিত হওয়া অপরাধ নয়; এমন দাবি করেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক রানারের মুখ্য সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের। তিনি বলেন, ‘শুধু কমিউনিটি নয়; এমন কোন পত্রিকা নেই যারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় নি। খবরটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। সব বাংলা কাগজই আবেগ তাড়িত হয়েউ সংবাদটি ছেপেছে। আমার দ্য রানার পত্রিকাতেও খবরটি ছেপেছি। তবে, তা এক কলামে। আমি অত বড় হেডিং দেয়নি। তবে, সংবাদটি ছাপানোর আগে নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদিত হয়েছে লিখে দিলে ভালো হতো। তখন কিছুটা হলেও দায়িত্ব এড়ানো যেতো। তারপরও বলছি আমরা আহলাদিত হয়েছি কেবল। এই জন্য যে, ছেলেটি বাঙালী ছেলে বলে। পাশাপাশি আমাদের গোটা কমিউনিটিও আহলাদিত হয়েছে। ভালো খবরে উচ্ছ্বসিত হলেও খারাপ খবরে আমরা ব্যথিত। তবুও আশা করছি মোহাম্মদ ইসলাম তার এই কালো অধ্যায়কে মেধা দিয়ে জয় করে নিবে’।
মোহাম্মদ ইসলামের দু:খ প্রকাশ:
এদিকে, যাকে ঘিরে কমিউনিটি’সহ বিশ্ব মিডিয়ায় চলছে তোলপাড়। সেই মোহাম্মদ ইসলামও এক ভিডিও বার্তায় তার কৃতকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। প্রায় ৩০ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ‘আমি নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে ইন্টারভিউ দিয়েছি। আমি আমার আগ্রহের কথা তুলে ধুরেছি। তবে সেখানে মিথ্যার আশ্রয়ও ছিলো। কিন্তু আমাকে ঘিরে এভাবে সংবাদ পরিবেশন হবে কল্পনাও করতে পারিনি। আমার এই ঘটনায় আমি আমার পরিবার ও বাবা-মাকে ছোট করেছি। পাশাপাশি আমার সহপাঠি এবং কমিউনিটিও আমার জন্য লজ্জায় পড়েছেন। আমি সত্যিই অনাকাঙ্খিত এই বিষয়টির জন্য আন্তরিক ভাবে দু:খ প্রকাশ করছি’।
Bangla Patrika Logoবাংলা পত্রিকার দু:খ প্রকাশ:
অন্যদিকে, বাংলাদেশী ১৭ বছরের কিশোর মোহাম্মদ ইসলামের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনকে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রধান শিরোনামে সংবাদ ছাপে সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া খবরটি যে মিথ্যা প্রমাণিত হবে তা কল্পনা করতে পারেনি প্রত্রিকাটির সম্পাদনা বিভাগ। তাই অনেকটা আবেগতাড়িত হয়েই অনাকাঙ্খিত এই সংবাদটি প্রকাশের জন্য আমরা বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি। একই ভাবে সাফল্য কামনা করছি মোহাম্মদ ইসলামের। আগামী দিনে তিনি তার মেধা ও মননে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন। আমাদের সম্পাদকীয় নীতিতে আরো সচেতন দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছি। তাই সকল পাঠক এবং বাংলা পত্রিকার শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আমরা বিষয়টির জন্য ক্ষমা প্রার্থী। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নন্দিত বাংলাদেশী কিশোর ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে নিন্দিত

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: মোহাম্মদ ইসলাম নামের এই বালকটি নিউ ইয়র্কের স্টাইভিসেন্ট হাইস্কুলের টুয়েলভ গ্রেডের ছাত্র। হাইস্কুল গ্রেজুয়েট বাংলাদেশী এই বালকের বিস্ময়কর ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয়ের কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন ছাপে প্রথমে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন ও নিউইয়র্ক টাইমস। একে একে সংবাদের শিরোনাম হয় ডেইলি নিউজ সিএনএন’সহ শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমেও। মাত্র ১৭ বছরের বাংলাদেশী কিশোর-বালকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয় কমিউিনিটির গণমাধ্যমও। মুলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশী কমিউনিটির গণমাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করে মোহাম্মদ ইসলামের এই অর্থ আয়ের সাফল্যের খবর। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক রানার’সহ বেশ ক’টি গণমাধ্যম বাংলাদেশী কিশোরের সাফল্য গাঁথা অর্জনকে সাধুবাদ জানিয়ে খবর প্রকাশ করে। ফুটিয়ে তোলা হয় ১৭ বছরের কিশোরের এই সাফল্য শুধু বাংলাদেশীদের নয়; পুরো বিশ্বের সেরা অর্জন হিসেবে। কিন্তু বিধি বাম। মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। মাথায় বাজ পড়ে সবার। যে খবরে উচ্ছ্বসিত হয় স্টাইভিসেন্ট স্কুলে অধ্যায়নরত বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটি। ঠিক তার উল্টো চিত্র প্রকাশিত হয় মাত্র দু’দিনের মাথায়।
দু’দিন আগে ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনের জন্য নন্দিত বাংলাদেশী কিশোর মোহাম্মদ ইসলাম দু’দিন পরেই পরিণত হলেন নিন্দিত ব্যক্তিতে। মূলধারা এবং কমিউনিটির মিডিয়াগুলো যেখানে বড় বড় করে তার সংবাদ ছেপেছে; খোদ দত তারাই এখন উল্টো দুঃখ প্রকাশ করছে। কারণ বাংলাদেশী ঐ কিশোরের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনের খবরটি ছিল সাজানো নাটক এবং মিথ্যা। আসলেই কি তাই? কেনইবা এমন খবর সাজানো হলো, কেনইবা তা এখানকার পত্র-পত্রিকায়গুলো এত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করলো সংবাদটি আবার এখন কেনইবা একেবারে মিথ্যা হয়ে গেল সব? এমন প্রশ্নের উত্তর খঁজতে থাকে কমিউনিটি’সহ সংশ্লিষ্টরা।
স্টক মার্কেটে বিনিয়োগকারি এই কিশোরের আয়ের উৎস খুঁজতে মাঠে নামে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তাদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে আসল খবর। বাংলাদেশী কিশোরের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জন ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা। মুলধারার গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রকাশিত খবরের জন্য দু:খও প্রকাশ করে। একই ভাবে নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন তাদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদন এবং মোহাম্মদ ইসলামের ব্যাংক হিসেব’সহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে দু:খ প্রকাশ করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। মূলধারার যেসব গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়েছেন মোহাম্মদ ইসলাম; তারাও দু:খ প্রকাশ করে সংবাদ ছাপে। একই সাথে খবরে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশী কিশোরের অর্থ আয়ের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। যাকে ঘিরে তোলপাড় কমিউনিটি’সহ তার দীর্ঘদিনের সহপাঠিরা। কী বলছেন তারা।
নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টাইম টেলিভিশনের সাথে আলাপকালে মোহাম্মদ ইসলামের ক্লাসমেট ও স্টাইভিসেন্টের টুয়েলভ গ্রেডের ছাত্র ইউসুফ খান বলেন, ‘দেখুন আমাদের বাবা-মা এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বপ্ন থাকে ভালো মানের স্কুলে অধ্যায়ন করা। সে লক্ষ্যে আমরা স্টাইভিসেন্টে লেখা-পড়ান সুযোগ পেয়েছি। এটা আমাদের পরিবার এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য গর্বের। মোহাম্মদ ইসলামের প্রথম খবরে আমরা অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করি। প্রশ্ন জাগে মনে এ কী করে সম্ভব? কিন্ত যখন দেখি মুলধারার গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছি তখন কিছুটা বিশ্বাস জাগে। কারন মোহাম্মদ ইসলাম অনেক মেধাবি একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু যখন শুনি বিষয়টি মিথ্যা; তখনই কষ্ট পাই। আমাদের মাথা অনেক ছোট হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ভালো ভাবে যাচাই-বাচাই না করে কী ভাবে একটা সংবাদ ছাপে মূলধারার গণমাধ্যম? যাই হোক ভুল তো ভুলই। মোহাম্মদ ইসলামও দু:খ প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করবো ইসলাম তার মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটি’সহ পুরো পরিবারের মুখ উজ্জল করবে। তার জন্য শুভ কামনা রইলো’।
বাংলাদেশী বালকের অবিস্মরণীয় সাফল্য নিয়ে কমিউনিটির আনন্দ উচ্ছাস মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে পরিণত হয় লজ্জায়। এমন মন্তব্য করেন র্শীর্ষ গণমাধ্যম ব্যক্তিরা। টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সাথে আলাপকালে তারা তুলে ধরেন, ‘আগামীতে এসব বিষয়ে আরো যতœবান হয়ে সংবাদ পরিবেশ প্রয়োজনীয়তার কথা’ ।
বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক মনজুর আহমেদ। তিনি জানান, ‘মূলধারার পত্রিকা ভুল করতে পারে। তারা আবার তাদের ভুল স্বীকার করে দায়মুক্তি হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা? আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো কী ভাবে দায়মুক্তি হবে? আমরা যারা ফলাও করে পজেটিভ ওয়েতে এটা ছেপেছি কিংবা প্রকাশ করেছি; আমাদের দায়মুক্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই সংবাদটি ছাপানোর আগে আমার উচিত ছিলো  (মোহাম্মদ ইসলাম) ছেলেটি সম্পর্কে ভালো ভাবে খোঁজ-খবর নেয়া। তার আলাদা ইন্টারভিউ করা। আমরা এসবের কিছুই করি নাই। এমনি সে যে বাংলাদেশী ছেলে, বলতে গেলে এটাও আমরা নিশ্চিত নই’।
টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সাথে কথা বলেন এখন সময়ের সম্পাদক কাজী শামসুল হক। তিনি জানান, ‘নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন কিংবা টাইমস, সিএনন যাই প্রকাশ করুক না কেন; যেহেতু বাংলাদেশী ছেলে সে ক্ষেত্রে আমাদের আরো সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সংবাদ ছাপানো উচিত ছিলো। কিন্তু বলতে গেলে ছেলেটি বাংলাদেশী বলে আমরা আপ্লুত হয়ে গেছি। বাংলাদেশী একটা ছেলের এত বড় অর্জন তা আমাদের আবেগতাড়িত করেছে। তবে, এখান থেকে আরেকটা জিনিস শেখারও আছে। তা হলো মূলধারার গণমাধ্যমগুলো যে ভাবে সংবাদ ছেপেছে; ঠিক একই ভাবে দু:খও প্রকাশ করেছে। আমাদেরও উচিত এই ধারাটি রক্ষা করা। কোন সোর্সের ভুলে একটা সংবাদ প্রকাশিত হতে পারে। সেটা থেকেও শেখার অনেক কিছু রয়েছে। এর এসব সোর্সের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ এবং প্রচারের নজিরও রয়েছে। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভুল তো ভুলই’।
বাংলাদেশী-আমেরিকান কিশোরের বিস্ময়কর অর্থ আয়ের খবরে উচ্ছ্বসিত হওয়া অপরাধ নয়; এমন দাবি করেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক রানারের মুখ্য সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের। তিনি বলেন, ‘শুধু কমিউনিটি নয়; এমন কোন পত্রিকা নেই যারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় নি। খবরটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। সব বাংলা কাগজই আবেগ তাড়িত হয়েউ সংবাদটি ছেপেছে। আমার দ্য রানার পত্রিকাতেও খবরটি ছেপেছি। তবে, তা এক কলামে। আমি অত বড় হেডিং দেয়নি। তবে, সংবাদটি ছাপানোর আগে নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদিত হয়েছে লিখে দিলে ভালো হতো। তখন কিছুটা হলেও দায়িত্ব এড়ানো যেতো। তারপরও বলছি আমরা আহলাদিত হয়েছি কেবল। এই জন্য যে, ছেলেটি বাঙালী ছেলে বলে। পাশাপাশি আমাদের গোটা কমিউনিটিও আহলাদিত হয়েছে। ভালো খবরে উচ্ছ্বসিত হলেও খারাপ খবরে আমরা ব্যথিত। তবুও আশা করছি মোহাম্মদ ইসলাম তার এই কালো অধ্যায়কে মেধা দিয়ে জয় করে নিবে’।
মোহাম্মদ ইসলামের দু:খ প্রকাশ:
এদিকে, যাকে ঘিরে কমিউনিটি’সহ বিশ্ব মিডিয়ায় চলছে তোলপাড়। সেই মোহাম্মদ ইসলামও এক ভিডিও বার্তায় তার কৃতকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। প্রায় ৩০ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ‘আমি নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে ইন্টারভিউ দিয়েছি। আমি আমার আগ্রহের কথা তুলে ধুরেছি। তবে সেখানে মিথ্যার আশ্রয়ও ছিলো। কিন্তু আমাকে ঘিরে এভাবে সংবাদ পরিবেশন হবে কল্পনাও করতে পারিনি। আমার এই ঘটনায় আমি আমার পরিবার ও বাবা-মাকে ছোট করেছি। পাশাপাশি আমার সহপাঠি এবং কমিউনিটিও আমার জন্য লজ্জায় পড়েছেন। আমি সত্যিই অনাকাঙ্খিত এই বিষয়টির জন্য আন্তরিক ভাবে দু:খ প্রকাশ করছি’।
Bangla Patrika Logoবাংলা পত্রিকার দু:খ প্রকাশ:
অন্যদিকে, বাংলাদেশী ১৭ বছরের কিশোর মোহাম্মদ ইসলামের ৭২ মিলিয়ন ডলার অর্জনকে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রধান শিরোনামে সংবাদ ছাপে সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া খবরটি যে মিথ্যা প্রমাণিত হবে তা কল্পনা করতে পারেনি প্রত্রিকাটির সম্পাদনা বিভাগ। তাই অনেকটা আবেগতাড়িত হয়েই অনাকাঙ্খিত এই সংবাদটি প্রকাশের জন্য আমরা বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি। একই ভাবে সাফল্য কামনা করছি মোহাম্মদ ইসলামের। আগামী দিনে তিনি তার মেধা ও মননে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন। আমাদের সম্পাদকীয় নীতিতে আরো সচেতন দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছি। তাই সকল পাঠক এবং বাংলা পত্রিকার শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আমরা বিষয়টির জন্য ক্ষমা প্রার্থী। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)