নিউইয়র্ক ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশ সোসাইটির বৈশাখী মেলায় উপচে পড়া ভীড়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৭২৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: প্রতিবছরের মতো এবারো বাহারী আয়োজনে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে। নতুন বরণ উপলক্ষ্যে বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল শুক্রবার আয়োজিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক আর ড্রামা সার্কেল-এর আয়োজন ছিলো মনোমুগ্ধকর। সোসাইটি আয়োজিত বছরের প্রথম বৈশাখী মেলায় ছিলো উপচে পড়া হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর ঢল। আর ড্রামা সার্কেল-এর আয়োজন ছিলো জমজমাট। এছাড়া অন্যান্য সংগঠনের আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কমিউনিটির গত উইকেন্ড ছিলো উৎসবমুখর। রং বে রং-এর বাহারী পোশাকে সজ্জিত শিশু-কিশোর-কিশোরী সহ বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের প্রবাসীদের অংশগ্রহণের ফলে অনুষ্ঠানগুলো ভিন্ন মাত্রায় রূপ নেয়। ফলে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস হয়ে উঠে এক টুকরো বাংলাদেশে। খবর ইউএনএ’র।
বাংলাদেশ সোসাইটি: প্রবাসে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আব্রেলা সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক বছরের প্রথম বৈশাখী মেলা, র‌্যালী আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল শুক্রবার সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ বেলাজিনো পার্কিং লটে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো র‌্যালী, ফ্রি পান্তা-ইলিশ আর ভর্তা-ভাত ভোজন, রকমারী পণ্যের স্টল, পোশাকে বাঙালী সাজো, পুথিপাঠ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল তিনটা থেকে মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সোসাইটির অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চললেও মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। অনুষ্ঠানস্থলে ছিলো না তিল ধারণের ঠাঁই। চমৎকায় আবহাওয়ায় সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ ছিলো রেকর্ড সংখ্যক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিলো র‌্যালী। বেলাজিনো পার্কিং লট থেকে শুরু হওয়া র‌্যালীটি স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…….’ গানের সাথে ঢাক-ঢোলের বাজনায় মুখরিত র‌্যালীতে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো: রুহুল আমীন সিদ্দিকী নেতৃত্ব দেন। র‌্যালীর সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য সাদী মিন্টু। সোসাইটির মেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল খালেক খায়ের, সদস্য সচিব আজাদ বাকির, প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দ এম কে জামান ও সমন্বয়কারী সরোয়ার খান বাবু সহ কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী র‌্যালীতে অংশগ্রহন করে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, রং বে রং-এর বাহারী পোশাক আর ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে র‌্যালীতে অংশ নেয়ায় র‌্যালীটি বর্ণাঢ্য রূপ ধারণ করে।
র‌্যালী শেষে বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে এক গুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সোসাইটির ট্রাষ্টি বোর্ডের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি এম আজিজ। এসময় যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মো: শাহাব উদ্দিন, সোসাইটির ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য যথাক্রমে জামাল আহমেদ জনি, আলী ইমাম শিকদার, আজহারুল হক মিলন, মফিজুর রহমান, ওয়াসী চৌধুরী ও এমদাদুল হক কামাল সহ কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তা ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত এবং বৈশাখের গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো……’ পরিবেশনের মদ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো: শামীম আহসান, সোসাইটির সভাপতি কাসাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী সহ অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ সার্টিকেট প্রদান করা হয়।
মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভিন সহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে শাহ মাহবুব, রোকসানা মির্জা, শায়েরা রেজা, বাপ্পী সোম, রানু নেওয়াজ, করীম হাওলাদার প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও সুর ছন্দ, সুর বাহার ও বাফা’র শিল্পীরা সঙ্গীত/নৃত্য পরিবেশন করেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন বিশিষ্ট উপস্থাপিকা শারমিন রেজা ইভা। সহযোগিতায় ছিলেন সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায় সহ নাদিও আইয়ুব ও নাসির আহমেদ।
সোসাইটির অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো র‌্যাফল ড্র। এর প্রথম পুরষ্কার ছিলো ডায়মন্ডের আংটি আর দ্বিতীয় পুরষ্কার ছিলো ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ এয়ার টিকেট। এছাড়াও ছিলো ল্যাপটপ, আইফোন, টেবলেট সহ আরো পুরষ্কার। স্টল ও র‌্যাফর ড্র’র দায়িত্বে ছিলেন সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী সহ আবুল কালাম ভূইয়া ও আহসান হাবীব।
অনুষ্ঠানের অপর আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ ভোজন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ভোজন পর্ব পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত প্রবাসীদের মাঝে বৈশাখের খাবার বিতরণ করা হয় রাত ১০টার দিকে। ভোজন পর্বের নির্ধারিত সময়ে হাজার হাজার প্রবাসীকে আ্যপ্যায়িত করা সম্ভব নয় বিধায় বেশ বিলম্বে এই পর্ব পরিচালিত হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোসাইটির এক কর্মকর্তা এই প্রতিনিধিকে জানান। সূত্র মতে, সোনসাইটির অনুষ্ঠানে দুই হাজার প্রবাসীর জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। গভীর রাতেও শত শত প্রবাসী লাইনে দাঁড়িয়ে ফ্রি খাবার গ্রহণ করেন। পান্তা-ইলিশ ছাড়াও খাবারের মেনুর মধ্যে ছিলো ভর্তা-ভাত। আপ্যায়ন পর্বের দায়িত্বে ছিলেন মো: নওশাদ হোসেন, মাইনুল উদ্দিন মাহবুব ও আবুল কাশেম চৌধুরী।
এদিকে বৈশাখী মেলা উপলক্ষ্যে একাধিক খাবারের স্টল সহ বিভিন্ন সামগ্রীর ২৫টির মতো স্টল ছিলো। ঝাল-মুড়ি আর পোশাক ও অলংকারের স্টলগুলোতে প্রবাসীদের কেনাকাটায় বেশ ভীড় লক্ষ্য করা যায়। স্টলের দায়িত্বে ছিলেন সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী।
ড্রামা সার্কেল: প্রতি বছরের মতো এবারও জমজমাট আয়োজনে বাংলা নতুন বর্ষ বছর বরণ করেছে প্রবাসের অন্যতম সনামধন্য নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেল। সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো ফ্রি পান্তা-ইলিশ আর ভর্তা-ভাত ভোজন, শুভেচ্ছা বক্তব্য, ফ্যাশন শো আর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভোজন পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মোহাম্সদ শাহাব উদ্দিন, অনুষ্ঠানের অতিথি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান, মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, ঢাকার বিনোদন বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব, ডা. মাসুদুল হাসান এবং ড্রামা সার্কেল-এর প্রাণ ও বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনষ্ঠিানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড্রামা সার্কেল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ। সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন ড্রামা সার্কের-এর সভাপতি আবীর আলমগীর। ভোজন পর্বে ৫ শতাধিক প্রবাসীকে আপ্যায়িত করানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ‘সেরা বাঙালী সাজ’-এর পুরষ্কার লাভ করেন কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ও তার স্ত্রী। এছাড়াও ড্রামা সার্কেল-এর কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার স্কট-এর পক্ষ থেকে প্রক্লেমোশন প্রদান করা হয়।
বৈশাখী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানস্থলে ছিলো নানা রকম পিঠে-পুলি, খাবার আর পোশাক-পরিচ্ছেদ-এর একাধিক স্টল।
পরবর্তীতে প্রবাসী শিল্পীদের পরিবেশিত সূচনা সঙ্গীতের পর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চন্দন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, শারমীন মহসীন, শাহরীন সুলতানা, মিথুন জব্বার, সজল, মিরা সিনহা, চন্দ্রা রায়, ডা, নার্গিস রহমান, কান্তা আলমগীর, লেমন চৌধুরী প্রমুখ জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস (বিপা) ও বাফা’র শিল্পীরা সঙ্গেিতর তালে বৈশাখের নৃত্য পরিবেশন করেন।
চমৎকার আবহাওয়ায় শত শত প্রবাসী বাংলাদেশী ড্রামা সার্কেল-এর অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ফলে অনুষ্ঠানস্থ ছিলো দর্শক-শ্রোতায় পরিপূর্ণ। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে ড্রামা সার্কেল জাঁকজমকের সাথে পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশ সোসাইটির বৈশাখী মেলায় উপচে পড়া ভীড়

প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

নিউইয়র্ক: প্রতিবছরের মতো এবারো বাহারী আয়োজনে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে। নতুন বরণ উপলক্ষ্যে বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল শুক্রবার আয়োজিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক আর ড্রামা সার্কেল-এর আয়োজন ছিলো মনোমুগ্ধকর। সোসাইটি আয়োজিত বছরের প্রথম বৈশাখী মেলায় ছিলো উপচে পড়া হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর ঢল। আর ড্রামা সার্কেল-এর আয়োজন ছিলো জমজমাট। এছাড়া অন্যান্য সংগঠনের আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কমিউনিটির গত উইকেন্ড ছিলো উৎসবমুখর। রং বে রং-এর বাহারী পোশাকে সজ্জিত শিশু-কিশোর-কিশোরী সহ বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের প্রবাসীদের অংশগ্রহণের ফলে অনুষ্ঠানগুলো ভিন্ন মাত্রায় রূপ নেয়। ফলে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস হয়ে উঠে এক টুকরো বাংলাদেশে। খবর ইউএনএ’র।
বাংলাদেশ সোসাইটি: প্রবাসে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আব্রেলা সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক বছরের প্রথম বৈশাখী মেলা, র‌্যালী আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল শুক্রবার সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ বেলাজিনো পার্কিং লটে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো র‌্যালী, ফ্রি পান্তা-ইলিশ আর ভর্তা-ভাত ভোজন, রকমারী পণ্যের স্টল, পোশাকে বাঙালী সাজো, পুথিপাঠ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল তিনটা থেকে মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সোসাইটির অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চললেও মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। অনুষ্ঠানস্থলে ছিলো না তিল ধারণের ঠাঁই। চমৎকায় আবহাওয়ায় সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ ছিলো রেকর্ড সংখ্যক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিলো র‌্যালী। বেলাজিনো পার্কিং লট থেকে শুরু হওয়া র‌্যালীটি স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…….’ গানের সাথে ঢাক-ঢোলের বাজনায় মুখরিত র‌্যালীতে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো: রুহুল আমীন সিদ্দিকী নেতৃত্ব দেন। র‌্যালীর সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য সাদী মিন্টু। সোসাইটির মেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল খালেক খায়ের, সদস্য সচিব আজাদ বাকির, প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দ এম কে জামান ও সমন্বয়কারী সরোয়ার খান বাবু সহ কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী র‌্যালীতে অংশগ্রহন করে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, রং বে রং-এর বাহারী পোশাক আর ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে র‌্যালীতে অংশ নেয়ায় র‌্যালীটি বর্ণাঢ্য রূপ ধারণ করে।
র‌্যালী শেষে বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে এক গুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সোসাইটির ট্রাষ্টি বোর্ডের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি এম আজিজ। এসময় যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মো: শাহাব উদ্দিন, সোসাইটির ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য যথাক্রমে জামাল আহমেদ জনি, আলী ইমাম শিকদার, আজহারুল হক মিলন, মফিজুর রহমান, ওয়াসী চৌধুরী ও এমদাদুল হক কামাল সহ কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তা ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত এবং বৈশাখের গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো……’ পরিবেশনের মদ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো: শামীম আহসান, সোসাইটির সভাপতি কাসাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী সহ অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ সার্টিকেট প্রদান করা হয়।
মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভিন সহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে শাহ মাহবুব, রোকসানা মির্জা, শায়েরা রেজা, বাপ্পী সোম, রানু নেওয়াজ, করীম হাওলাদার প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও সুর ছন্দ, সুর বাহার ও বাফা’র শিল্পীরা সঙ্গীত/নৃত্য পরিবেশন করেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন বিশিষ্ট উপস্থাপিকা শারমিন রেজা ইভা। সহযোগিতায় ছিলেন সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায় সহ নাদিও আইয়ুব ও নাসির আহমেদ।
সোসাইটির অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো র‌্যাফল ড্র। এর প্রথম পুরষ্কার ছিলো ডায়মন্ডের আংটি আর দ্বিতীয় পুরষ্কার ছিলো ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ এয়ার টিকেট। এছাড়াও ছিলো ল্যাপটপ, আইফোন, টেবলেট সহ আরো পুরষ্কার। স্টল ও র‌্যাফর ড্র’র দায়িত্বে ছিলেন সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী সহ আবুল কালাম ভূইয়া ও আহসান হাবীব।
অনুষ্ঠানের অপর আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ ভোজন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ভোজন পর্ব পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত প্রবাসীদের মাঝে বৈশাখের খাবার বিতরণ করা হয় রাত ১০টার দিকে। ভোজন পর্বের নির্ধারিত সময়ে হাজার হাজার প্রবাসীকে আ্যপ্যায়িত করা সম্ভব নয় বিধায় বেশ বিলম্বে এই পর্ব পরিচালিত হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোসাইটির এক কর্মকর্তা এই প্রতিনিধিকে জানান। সূত্র মতে, সোনসাইটির অনুষ্ঠানে দুই হাজার প্রবাসীর জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। গভীর রাতেও শত শত প্রবাসী লাইনে দাঁড়িয়ে ফ্রি খাবার গ্রহণ করেন। পান্তা-ইলিশ ছাড়াও খাবারের মেনুর মধ্যে ছিলো ভর্তা-ভাত। আপ্যায়ন পর্বের দায়িত্বে ছিলেন মো: নওশাদ হোসেন, মাইনুল উদ্দিন মাহবুব ও আবুল কাশেম চৌধুরী।
এদিকে বৈশাখী মেলা উপলক্ষ্যে একাধিক খাবারের স্টল সহ বিভিন্ন সামগ্রীর ২৫টির মতো স্টল ছিলো। ঝাল-মুড়ি আর পোশাক ও অলংকারের স্টলগুলোতে প্রবাসীদের কেনাকাটায় বেশ ভীড় লক্ষ্য করা যায়। স্টলের দায়িত্বে ছিলেন সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী।
ড্রামা সার্কেল: প্রতি বছরের মতো এবারও জমজমাট আয়োজনে বাংলা নতুন বর্ষ বছর বরণ করেছে প্রবাসের অন্যতম সনামধন্য নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেল। সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো ফ্রি পান্তা-ইলিশ আর ভর্তা-ভাত ভোজন, শুভেচ্ছা বক্তব্য, ফ্যাশন শো আর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভোজন পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মোহাম্সদ শাহাব উদ্দিন, অনুষ্ঠানের অতিথি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান, মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, ঢাকার বিনোদন বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব, ডা. মাসুদুল হাসান এবং ড্রামা সার্কেল-এর প্রাণ ও বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনষ্ঠিানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড্রামা সার্কেল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ। সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন ড্রামা সার্কের-এর সভাপতি আবীর আলমগীর। ভোজন পর্বে ৫ শতাধিক প্রবাসীকে আপ্যায়িত করানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ‘সেরা বাঙালী সাজ’-এর পুরষ্কার লাভ করেন কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ও তার স্ত্রী। এছাড়াও ড্রামা সার্কেল-এর কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার স্কট-এর পক্ষ থেকে প্রক্লেমোশন প্রদান করা হয়।
বৈশাখী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানস্থলে ছিলো নানা রকম পিঠে-পুলি, খাবার আর পোশাক-পরিচ্ছেদ-এর একাধিক স্টল।
পরবর্তীতে প্রবাসী শিল্পীদের পরিবেশিত সূচনা সঙ্গীতের পর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চন্দন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, শারমীন মহসীন, শাহরীন সুলতানা, মিথুন জব্বার, সজল, মিরা সিনহা, চন্দ্রা রায়, ডা, নার্গিস রহমান, কান্তা আলমগীর, লেমন চৌধুরী প্রমুখ জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস (বিপা) ও বাফা’র শিল্পীরা সঙ্গেিতর তালে বৈশাখের নৃত্য পরিবেশন করেন।
চমৎকার আবহাওয়ায় শত শত প্রবাসী বাংলাদেশী ড্রামা সার্কেল-এর অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ফলে অনুষ্ঠানস্থ ছিলো দর্শক-শ্রোতায় পরিপূর্ণ। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে ড্রামা সার্কেল জাঁকজমকের সাথে পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে।