যে কারণে সমুদ্রের গভীরতায় মাসের পর মাস কাটায় পরিবারটি
- প্রকাশের সময় : ১১:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৭ বার পঠিত
সারা পৃথিবীর শিশুদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে বলতে পারে, তারা তাদের প্রথম হাঁটা শিখেছে আর্কটিকের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্রযাত্রার সময় একটি ইয়টে। কিন্তু টম বলতে পারে। জীবনের প্রথম চার বছরের মধ্যে তিন বছরই কেটেছে তার সমুদ্রপথে। তার বাবা গিসলান বারডো এবং মা ইমানুয়েল পেরি-বারডো সমুদ্র গবেষক এবং আন্ডার দ্য পোল নামে একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। গভীর সমুদ্রের নথি সংরক্ষণের মিশনে আছেন তাঁরা। বারডো পরিবার ধারণা করে, তাদের দুই সন্তান টম (৮) এবং রবিন (১২) তাদের জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পরিবারের গবেষণা নৌকা ‘দ্য হুয়াই’-এ কাটিয়েছে।
শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, গবেষণার কাজেই বারডো পরিবারকে পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে অভিযানে যেতে হয়েছে। বরফের সমুদ্র থেকে শুরু করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রবাল প্রাচীর পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন তারা। তাদের লক্ষ্য সমুদ্রের মেসোফোটিক জোন বা ‘টুইলাইট জোন’ নথিভুক্ত করা। এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০ থেকে ১৫০ মিটার নিচে অবস্থিত।
ইমানুয়েল বলেন, ‘আমরা পরিবার চেয়েছিলাম। তবে সমুদ্র অভিযান ছাড়তে চাইনি। তাই আমরা আমাদের জীবনযাত্রা এবং কাজের নতুন উপায় তৈরি করেছি।’ স্থলভাগে তাদের বাড়ি ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় শহর কনকারনোয়। কিন্তু সমুদ্রযাত্রার সময় ১৮ মিটার লম্বা ইয়টটি তাদের বাড়ি হয়ে ওঠে। যেখানে তারা ১০ জনের একটি দলের সঙ্গে থাকে। এই দলে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, রাঁধুনি এবং একজন শিক্ষকও আছেন।
বিশ্বের ৭০ ভাগ স্থান সমুদ্র দ্বারা আচ্ছাদিত হলেও এটি পৃথিবীর অন্যতম অনাবিষ্কৃত এবং কম বোঝা পরিবেশ। বৈজ্ঞানিকভাবে সমুদ্রতলের ৩০ শতাংশেরও কম অংশ বিশদভাবে মানচিত্রায়িত হয়েছে। ধারণা করা হয়, ৯১ শতাংশ সামুদ্রিক প্রজাতি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে।
তবে এটি জানা গেছে যে, সমুদ্রের ইকোসিস্টেম ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে রয়েছে। বারডো পরিবার মনে করে, সমুদ্রের নিচে যা রয়েছে তা নথিভুক্ত করে তারা এর হুমকির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে এবং পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে।
বারডো পরিবার সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের জলাভূমি অধ্যয়ন করেছে। আন্ডার দ্য পোলের ডিপলাইফ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে পরিবারটি মূলত সমুদ্রের ‘সামুদ্রিক প্রাণীদের অরণ্য’ খুঁজতে দুই-তিন মাসের মিশনে যায়।
এই অরণ্যগুলো প্রবাল ও স্পঞ্জের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ পরিবেশ তৈরি করে। স্থল ভাগের অরণ্যের মতো এগুলোও একটি মাইক্রোক্লাইমেট তৈরি করে যা বিভিন্ন প্রজাতির আশ্রয়স্থল। কিন্তু এগুলো ভঙ্গুর। যদি এই বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়, তাহলে এর প্রভাব অন্যান্য প্রজাতিতেও ছড়িয়ে পড়ে।
গিসলান বারডো বলেন, ‘যদি আপনি এই বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করেন, তাহলে অন্যান্য প্রজাতিও অদৃশ্য হয়ে যাবে। শেষে শুধু পাথরের মরুভূমি বাকি থাকবে।’ প্রতিটি অভিযান সাধারণত ছয় থেকে সাত মাস স্থায়ী হয় এবং এতে ৩০০ থেকে ৪০০টি ডাইভ সম্পন্ন হয়। গিসলান বলেন, ‘১০০ মিটারে সময় দ্রুত চলে যায়। ২০ মিনিট পরেই ওপরে উঠতে হয়।’
গভীর সমুদ্রে ডাইভিং অত্যন্ত জটিল এবং এতে বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ডাইভাররা রিব্রিদার নামে একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, যা নিশ্বাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন হিসেবে পুনর্ব্যবহার করে। এটি দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকার সুযোগ দেয় এবং সমুদ্রের জীবজগতে কম বিরক্তি সৃষ্টি করে।
গিসলান এবং ইমানুয়েল বুঝতে পেরেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গিসলান বলেন, ‘মানবতা তার পরিবেশ ধ্বংস করছে—সমুদ্রে, স্থলে, সর্বত্র। এটি এই শতাব্দীর একটি বিশাল সমস্যা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।’
তাঁদের সন্তান টম এবং রবিনও তাদের এই মিশনের অংশ। তারা বারডো পরিবারের সঙ্গে এমন এক জীবনযাপন করছে যা প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে সাহায্য করবে। সূত্র : আজকের পত্রিকা।